জীবনেরডায়েরি২
পার্ট: ১৬
–তমা এই তমা (হঠাৎ রিয়ার ডাকে হুশ ফিরলো)
–কিরে তমা তোকে খুশি খুশি লাগছে
–হুম কারন কিডনির ব্যবস্থা হয়ে গেছে
–আমি বুঝতে পারছি না যে মেয়ের জন্য তোর জীবনটা নষ্ট হয়ে গেলো সেই মেয়েকেই বাঁচানোর জন্য এতো চেষ্টা কেন করছিস
–তুই বুঝবি নারে
–হুম আমি তো পিচ্ছি কিছু বুঝি না তা কিডনি কোথায় পেলি
–পেয়েছি এখন বলা যাবে না আগে নিপার অপারেশন হউক
–এই তোর মতলব কি বল তো কিডনি কোথায় পেলি সত্যি করে বল
–সময় হলে বলবো এখন যা একা থাকতে দে
–হুম
রিয়া চলে গেলো, সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম নিপাকে একটি কিডনি দিব তাতে নিপাও বাঁচবে শ্রাবনকে নিয়ে আমিও বাঁচবো আব্বু আর তুলিকে নিয়ে কিন্তু আমি কিডনি দিব শুনলে তো কেউ রাজি হবে না তাহলে দিব কিভাবে
না কাউকে বলা যাবে না এমনকি শ্রাবনকেও না, আগে ডক্টর এর সাথে কথা বলি সব ঠিক করি তারপর দেখা যাবে, সময় খুব অল্প যত তাড়াতাড়ি অপারেশন করা হবে ততোই ভালো
নিপার চিকিৎসা যে ডক্টর করছেন উনার সামনে বসে আছি
ডক্টর: সব তো শুনলাম মা কিন্তু
আমি: চাচ্চু প্লিজ কোনো কিন্তু না আর আমি তো কাউকে খুন করতে চাইছি না একটি প্রাণ বাঁচাতে চাচ্ছি
–তা ঠিক তাও মা এভাবে একজন কে বাঁচাতে গিয়ে অন্যজন কে…..
–আমি তো আর মারা যাবো না দুটি কিডনি নিয়ে দুজন বেঁচে থাকবো
–ঠিক আছে আমি দেখছি
–চাচ্চু প্লিজ বিষয়টা যেন লোকানো থাকে আমার পরিবারের কেউ জানলে কিডনি দেওয়া আর হবে না
–তোমাকে তো নিম্নেও দুদিন হসপিটালে ভর্তি থাকতে হবে তাহলে লুকিয়ে কিভাবে সম্ভব
–এসব আমি ব্যবস্থা করবো আপনি শুধু অপারেশন এর ব্যবস্থা করুন আর শ্রাবনকে বলুন কিডনি আপনি পেয়েছেন
–ওকে
–সব ব্যবস্থা করে আমাকে জানিয়ে দিবেন কখন হসপিটালে এসে ভর্তি হতে হবে
–ঠিক আছে মা
–আসি চাচ্চু
হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে আসলাম, রিক্সায় বসে আছি আর ভাবছি আমি কোনো ভুল করছি না তো….?
ভুল হবে কেন একজন মানুষের প্রাণ বাঁচানো কি কোনো অপরাধ নাকি, আমি তো কোনো অপরাধ করছি না একজন কে বাঁচাবো তাতে একজন মা তার সন্তান কে ফিরে পাবে, একজন বোন তার বড় বোনকে ফিরে পাবে, আর একজন প্রেমিক ফিরে পাবে তার ভালোবাসা, সবাই ভালো থাকবে এর চেয়ে ভালো কিছু আর আছে নাকি, নাহ এই কাজে কোনো ভুল হবে না কিন্তু বাসায় কি বলবো দুদিন যে হসপিটালে থাকতে হবে আমাকে
বাসায় এসে শুয়ে পরলাম ভালো লাগছে না কিছু, হঠাৎ তুলি আসলো
–আপু এই সময় শুয়ে আছ যে
–এমনি
–আপু একটা কথা
–বল
–আমি আবার স্কুলে ভর্তি হতে চাচ্ছি
–ঠিক আছে ভর্তি করে দিব
–আপু তোমার কি হইছে
–কই কি
–একদম চুপচাপ হয়ে গেছ
বেশি মহান হতে গেলে এমনই হয় (কথাটা শুনে দরজায় থাকালাম রিয়া এসে হাজির)
রিয়া: আর কতো মহান হবি
আমি: রিয়া এভাবে বলছিস কেন
রিয়া: তো কি বলবো শ্রাবন যেহেতু বলছে ও তোকেই ভালোবাসে তাহলে কেন নিপার হাতে তুলে দিতে চাচ্ছিস
আমি: তোরও বিশ্বাস হয় শ্রাবন আমাকে ভালোবাসে
রিয়া: হ্যা
আমি: পাগল হয়ে গেছিস
তুলি: আপু রিয়া আপু পাগল হয়নি তুমি পাগল হইছ
আমি: তুলি তুইও
তুলি: আমি ছোট এসব বুঝি না তাও তোমার অবস্থা দেখে এইটুকু বুঝতে পারছি তুমি পাগল হয়ে গেছ
আমি: তোরা দুইটা আমার রুম থেকে যা তো
রিয়া: সত্যি কথা সবসময় তেতোই লাগে বলেই তুলিকে নিয়ে চলে গেলো
আর পারছি না খুব কষ্ট হচ্ছে চোখ ফেটে যেন পানি না রক্ত আসতে চাইছে, আমি কি করবো এখন শ্রাবনকে আমার করে নিলে নিপার কাছে স্বার্থপর হয়ে যাবো যদি নিপার কাছে দিয়ে দেই আমার আপনজনরা কষ্ট পাবে আমি তো পাবোই, কোন পথ বেচে নিবো আমি এখন….?
উফফফ খুব কষ্ট হচ্ছে আর পারছি নাহ
শুয়ে শুয়ে ভাবছি আব্বুকে কি বলে দুদিনের জন্য হসপিটালে যাবো হঠাৎ রহিম চাচার কথা মনে পরলো, তাড়াতাড়ি ফোন দিলাম
–হ্যালো
–চাচা একটু সাহায্য করবা
–কি মা বল
–আমি দুদিনের জন্য একটু বাইরে যেতে চাচ্ছি কিন্তু বাসায় বলা যাবে না অন্যকিছু বলে যেতে হবে তুমি একটু মিথ্যে বলবে আমার জন্য
–কি মিথ্যে
–আমি বাসায় বলে যাবো এতিমখানার কাজে বাইরে যাচ্ছি আমার বাসার কেউ যদি তোমাকে জিজ্ঞেস করে তাহলে তুমিও বলো এতিমখানার কাজেই পাঠিয়েছ
–তা না হয় বলবো কিন্তু মা তুমি যাবে কোথায় যদি তোমার কোনো বিপদ হয়
–ভালো কাজেই যাচ্ছি চাচা চিন্তা করো না
–ঠিক আছে মা
–রাখি চাচা
ফোন রেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম অন্তত বাসার জামেলা তো মিটে গেলো এখন নিপার অপারেশনটা ভালো ভাবে হলেই হয়, ফোনটা বেজে উঠলো শ্রাবন ফোন দিয়েছে হয়তো কিডনি পাওয়া গেছে এইটা জানতে পেরেছে, রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–তমা কিডনি পাওয়া গেছে
–কোথায় পেলে
–ডক্টর বললো হসপিটালেই পাওয়া গেছে
–ঠিক আছে ডক্টর কে বলো অপারেশন এর ব্যবস্থা করতে আর ব্যাংক থেকে টাকা তুলে রেখেছি বাসায় এসে নিয়ে যাও
–ঠিক আছে আসছি
নিপা সুস্থ হলেই শ্রাবন সারাজীবন এর জন্য আমার থেকে পর হয়ে যাবে আমাকেও এই শহর ছেড়ে চলে যেতে হবে, শহর ছেড়ে যাবো কোনো দুঃখ নেই শ্রাবন ভালো থাকলেই হলো, ওকে ভালো রাখতে এর চেয়ে বড় কিছুও আমি করতে রাজি, এসব আনমনে হয়ে ভাবছি তখনি হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো……
চলবে?