জীবনেরডায়েরি২
পার্ট: ১৪
ফোন রেখে চুপ হয়ে বসে আছি, আসলে এখন আমার হাসার কথা নাকি কান্নার কথা বুঝতেছি না, সব কষ্ট গুলো আজ চোখের সামনে ভাসছে এতো কষ্ট সহ্য করলাম তাও শ্রাবনকে ভালোবাসি, আকাশের সাথে বিয়ে হলো আকাশকে মেনে নেই নি উল্টো কতকিছু করে আকাশ আর মেঘা আপুকে মিলিয়ে দিলাম, ডিভোর্স নিয়েও শ্রাবনের অপেক্ষা করলাম, কে কি বললো তা কানে নেই নি শ্রাবনকে ভালবেসে গেছি অপেক্ষা করেছি প্রতিটি মুহূর্তে ওর জন্য,
এতো কিছু হয়ে গেলো তাও শ্রাবনকে ভালোবাসি আর ও কিনা….
রিয়া: তমা কি ভাবছিস(রিয়ার ডাকে হুশ ফিরলো)
–হুম কিছুনা
–ভেবে আর কি হবে শ্রাবন তোকে আর ভালোবাসে না ভুলে যা
–দুবছর আগেই পারিনি ভুলতে আর এখন
–দুবছর আগে অন্তত এই ভরসা টুকু ছিল যে শ্রাবন শুধু তোকেই ভালোবাসে এখন তো সেই ভরসা টুকুও নেই
–আমার প্রতি শ্রাবনের ভালোবাসা হয়তো নেই কিন্তু আমি তো ওকে ভালোবাসি
–এক তরফা ভালোবাসার কোনো মুল্য নেই
–জানি তাও সারাজীবন ভালোবেসে যাবো হউক তা এক তরফা
–এমন একটা ছেলের জন্য নিজের জীবনটা নষ্ট করবি
–নষ্ট করলাম কই দূর থেকে শুধু ভালোবাসবো
–ও তো নিপাকে নিয়ে সুখেই থাকবে
–ওর সুখেই আমার সুখ
–তোকে বুঝানোর মতো ক্ষমতা আমার নেই
–হুম বাদ দে এখন কিডনি পেলেই হলো
–আগে তো টাকার ব্যবস্থা হউক
–টাকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে
–কে করেছে
–আমি
–তুই এতো টাকা কোথায় পেলি
–আব্বু আমার জন্য ব্যাংকে রেখেছিলেন সেখান থেকেই দিব
–(ঠাস)
–তাপ্পর দিলি কেন
–তো কি তোকে আদর করবো কি পেয়েছিস তুই যা খুশি তাই করবি যে মেয়ের জন্য তোর জীবনটা নষ্ট হয়ে গেলো সেই মেয়ের জন্য বাবার এতো কষ্ট করে জমানো টাকা খরচ করবি
–হ্যা করবো কারন নিপাকে শ্রাবন ভালোবাসে নিপার কিছু হলে শ্রাবন কষ্ট পাবে আর আমি ওর কষ্ট সহ্য করতে পারবো না
–কি আমার দরদী রে কষ্ট সহ্য করতে পারবে না ও কিভাবে পারে তোর কষ্ট সহ্য করতে ও কিভাবে পারলো তোকে ভুলে নিপার হাত ধরতে
–দেখ রিয়া যা হবার হয়ে গেছে এসব নিয়ে ভেবে লাভ নেই মেয়েটা সুস্থ হয়ে গেলেই আমি এখান থেকে চলে যাবো
–হ্যা যাবাই তো তুমি তো মহান একবার নিজের স্বামী কে অন্য মেয়েকে দিয়ে দিয়েছ যার জন্য এতোকিছু করেছ এখন তাকেও অন্য মেয়েকে দিয়ে দাও
–তো কি করবো, আমি কি শ্রাবনকে কেড়ে নিয়ে আসবো নিপার কাছ থেকে
–আমি হলে তাই করতাম
–শ্রাবন আসতেছে কোনো উল্টাপাল্টা কথা বলবি না
–হুম
শ্রাবনকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে কিডনি পাওয়া যায়নি, ওর এমন মলিন মুখ দেখতে আর ভালো লাগছে না
শ্রাবন: তমা
–হুম পাওনি
–নাহ
–খুব ভালোবাস নিপাকে তাই না
–আর কতবার বলবো আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি
–হুম তা তো বুঝাই যাচ্ছে
–নিপার জন্য এতোকিছু করছি দেখেই তো এই কথা বলছ আচ্ছা তমা তুমিই বল আমি যখন অসুস্থ ছিলাম নিপা আমাকে ওর ভালোবাসা যত্ন দিয়ে সুস্থ করে তুলেছে এখন ওর এমন অবস্থায় কি আমি পাশে থাকবো না
–হুম
চুপ হয়ে বসে আছি কি বলবো শ্রাবনকে….?
মন থেকে ভালোবাসে নিপাকে আর মুখে বলে ভালোবাসে আমাকে এখানে আর কি বা বলার আছে….?
থাকুক ও ওর মতো আমি দূরে চলে যাবো দূর থেকেই ভালোবাসবো
শ্রাবন: তমা চুপ হয়ে আছ কেন
–কিছু বলার নাই যে
–ভুল বুঝছ তুমি আমাকে
–হতেও পারে
–ভুল বুঝনা প্লিজ আমি তোমাকেই ভালবাসি
–আচ্ছা আমি বাসায় যাই টাকার ব্যবস্থা করি
–তোমার আব্বু কি দিবেন
–বাসায় গিয়ে দেখি
–হুম
রিয়াকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম, রিয়া এখনো ক্ষেপে আছে আমার উপর আচ্ছা আমার কি করার আছে….?
আব্বুর কাছে গেলাম দেখি কি হয়
–আব্বু
–হুম বল
–টাকাটা
–আগে বল কি করবি
–আমার একজন প্রিয় মানুষ অসুস্থ তার চিকিৎসায় টাকাটা লাগবে
–মানুষটা কে
–আমি বলছি আঙ্কেল(কথাটা শুনে ফিছনে থাকালাম রিয়া আসছে এখন কি হবে এসব বললে তো আব্বু টাকা দিবেন না)
–রিয়া প্লিজ তোর কিছু বলা লাগবে না
–কেন বললে টাকাটা পাবি না তাই
ওর দিকে কিছুক্ষণ থাকিয়ে আব্বুর রুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম জানি ওকে থামাতে পারবো না ও আব্বুকে বলবেই
বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম ভাবছি আব্বু যদি টাকা না দেন তাহলে কি করবো….?
আচ্ছা টাকা পাওয়ার পর যদি কিডনি না পাওয়া যায় তখন….?
নিপা তো মারা যাবে আর নিপা মারা গেলে…
–তমা (ফিছনে থাকিয়ে দেখি আব্বু)
–হ্যা আব্বু বল
–বাবার কাছ থেকে কবে থেকে কথা লুকাতে শিখলি
–(নিশ্চুপ)
–রিয়া আমাকে সব বলেছে তুই যা সিদ্ধান্ত নিয়েছিস সেটাই কি করবি
–এছাড়া আর কি করার আছে আব্বু
–শ্রাবনকে ছাড়া থাকতে পারবি
–জানিনা তবে ওর থেকে অনেক দূরে চলে যাবো নিপা সুস্থ হলে এই শহর ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবো যেখানে আমার ভালোবাসায় কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াবে না আমি শ্রাবনকে নিজের মতো করে ভালোবাসতে পারবো দূর থেকে
আব্বু তুমি আর তুলি যাবে আমার সাথে তোমাদের দুজনকে নিয়ে আর শ্রাবনের স্মৃতি নিয়েই নাহয় কাটিয়ে দিব বাকিটা জীবন
আব্বু নিশ্চুপ হয়ে আমার দিকে থাকিয়ে আছেন চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে হয়তো নিজের মেয়ের এমন কষ্ট সহ্য করতে পারছেন না, পারবেন কিভাবে কষ্ট তো আমার জীবনে একবার আসেনি বার বার আসছে, নিয়তিটাও বড় অদ্ভুত নাহলে আমার জীবনে এমন কষ্ট কেন বার বার আসছে…..
চলবে?