জীবনেরডায়েরি২
পার্ট: ১০
টেবিলে বসে আছি আর ভাবছি কে ফোন দিতে পারে, একটু পর শ্রাবন আসলো মুখটা একদম মলিন
–কি হয়েছে
–কিছুনা
–হুম খেয়ে নাও
–আর খাবো না
–মানে একটা পরোটাও তো খাওনি
–খিদে নেই
–আজব তো এতোক্ষণ খিদে লাগছে বলে পাগল বানিয়ে দিছ আর এখন বলছ খিদে নেই
–হুম
–ফোন কে দিয়েছিল
–অফিস থেকে
–অফিস থেকে ফোন দিলে তো মন খারাপ হবার কথা না সত্যি করে বল কে ফোন দিয়েছিল
নিশ্চুপ হয়ে কিছু সময় আমার দিকে থাকিয়ে রইল তারপর বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো, আমি স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছি ও এমন করলো কেন ভেবে পাচ্ছি না
সারাদিন শ্রাবন একবারও ফোন দেয়নি আমিও দেইনি, সন্ধ্যায় ফোন দিয়ে বললো ওদের বাসায় যেতে রাগ করে ফোন কেটে দিয়েছি
বারান্দায় বসে আছি ভাল লাগছে না কিছু শ্রাবন সকালে এমন করলো কেন মাথায় আসছে না হঠাৎ পিছন দিক থেকে কেউ জরিয়ে ধরলো, ঘুরে থাকালাম না জানি শ্রাবন এসেছে ওর স্পর্শ আমার খুব চেনা
–রেগে আছ কেন
–না তো
–সকালে মাথা ঠিক ছিল না
–হুম
–তমা আমি চাচ্ছি এক সপ্তাহের ভিতরে বিয়েটা হয়ে যাক
–এতো তাড়া কিসের
–তোমাকে আমার করে পাবার
–শুধু এটাই নাকি অন্য কিছু
–মানে
–কিছু না
–আমি আম্মুকে বলবো তোমার আব্বুর সাথে কথা বলার জন্য
–হুম
–এবার তো একটা হাসি দাও
আর কিছু না বলে ওর বুকে মুখ গুঁজে দিলাম, ওকে ছাড়া তো আমি কিছু ভাবতে পারিনা আর ও কিনা আমাকে কষ্ট দেয়
সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি ড্রইংরুমে সবাই বসা, একটু এগিয়ে গিয়ে শুনলাম বিয়ের কথা হচ্ছে, বারান্দায় এসে দাড়িয়ে রইলাম, ভাবছি আমার বিয়ে হয়ে গেলে আব্বু আর তুলির কি হবে, এখন তো আব্বুর চাকরিও নেই বাড়িটা তো আম্মু বিক্রি করে দিয়েছে, এই ভাড়া বাসায় কতোদিন আর….?
হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ শুনে পিছনে থাকালাম শ্রাবন এসেছে
–এখানে দাড়িয়ে আছ কেন
–এমনি
–কি ভাবছ
–অনেক কিছু
–কি কি
–আমার বিয়ে হয়ে গেলে আব্বু আর তুলিকে দেখবে কে
–আমি দেখবো
–মানে
–সবাই একসাথে থাকবো চিন্তা করো না
–হুম
শ্রাবন আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে চুলে মুখ গুঁজে দিলো, আমি ভাবছি শ্রাবন কি সত্যি আব্বুর আর তুলির দায়িত্ব নিবে এইটা কি সম্ভব
দুপুরে শুয়ে আছি রিয়া আর তুলি নাচতে নাচতে এসে বললো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে দুই সপ্তাহ পর বিয়ে, আমি কিছু বললাম না মনের ভিতর কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে শেষ পর্যন্ত শ্রাবন আমার হবে ভাবতেই ভালো লাগছে, এতো দিনের সব স্বপ্ন সত্যি হতে যাচ্ছে আর কি চাই আমার
অনেক দিন হলো এতিমখানায় যাওয়া হয় না তাই আজ এতিমখানায় আসলাম, সারাদিন বাচ্চাদের সাথে কাটালাম, রহিম চাচা কে বিয়ের কথা বলতেই উনি অনেক খুশি হয়েছেন, খুশি তো হবেনই এই দুইটা বছর আমার কষ্টগুলো যে উনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন
এক সপ্তাহ কেটে গেলো, আর এক সপ্তাহ পর বিয়ে ভাবতেই ভালো লাগছে, আমি শ্রাবনের জন্য বউ সাজবো হিহিহি
আজকে সকালটা শুরু হলো শ্রাবনের মিষ্টি কন্ঠ শুনে, ওর ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো
–হ্যালো
–একটু বাহিরে যেতে চাচ্ছিলাম
–কেন
–তোমার সাথে কিছু কথা ছিল কথা গুলো বলা হবে আর সাথে কিছু শপিং করবো
–ওকে
–রেডি হয়ে নাও আমি আসছি
–আচ্ছা
ফোন রেখে রেডি হয়ে নিলাম, আজ অনেক দিন পর শ্রাবনের সাথে বাইরে ঘুরতে যাচ্ছি তাই গোলাপি রঙের একটা শাড়ি পড়েছি, চোখে কাজল দিয়েছি, আর চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছি
ড্রইংরুমে গিয়ে দেখি শ্রাবন বসে বসে আমার জন্য অপেক্ষা করছে, আমি যেতেই ও হা করে আমার দিকে থাকিয়ে রইল, আমি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে আব্বু আর রিয়া কে বলতে চলে গেলাম, আব্বু আর রিয়া কে বলে বেড়িয়ে পড়লাম আমরা
রিক্সায় পাশাপাশি বসে আছি দুজন
–একদম পরীর মতো লাগতেছে
–তাই বুঝি
–জ্বী
–আচ্ছা কি যেন বলতে চাইছিলে বল
–আসলে তমা কথা গুলো না বললেও হত কিন্তু আমি চাইনা আমাদের দুজনের মধ্যে কোনো কিছু গোপন থাকুক
–ঠিক আছে বল
–আগে বলো রাগ করবা না
–ওকে করবো না এখন তো বলো
–আসলে তমা আমি যখন কক্সবাজার ছিলাম তখন……
হঠাৎ ওর ফোনটা বেজে উঠলো, ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে রিসিভ করছে না, কয়েকবার আমার দিকে থাকিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো, ওপাশ থেকে কে কি বলেছে জানিনা কিন্তু ওর মুখ দেখে মনে হচ্ছে কোনো সমস্যা হয়েছে, ফোনটা রেখে আমাকে বললো
–তমা আমাকে হসপিটাল যেতে হবে তুমি বাসায় চলে যাও
–হসপিটালে কেন
–বাসায় এসে সব বলবো
–ঠিক আছে আমিও যাই তোমার সাথে
–না তোমার যেতে হবে না
–আমি যাবোই
আমি জিদ করাতে আমাকে সাথে নিয়ে হসপিটালে গেলো, ভেবে পাচ্ছি না কার এমন কি হলো যে ও এমন অস্থির হয়ে হসপিটালে আসলো
একটা কেবিনের সামনে গিয়ে ও দাঁড়াল একজন মহিলা আর একটি মেয়ে কাদতেছে, শ্রাবনকে দেখেই মেয়েটি এসে বললো ভাইয়া আপু এক্সিডেন্ট করেছে অবস্থা খুব খারাপ…..
চলবে?