জীবনেরডায়েরি২
পার্ট: ১
দুইটা বছর অনেক কষ্টে পার করলাম এতো খুঁজার পর শেষ পর্যন্ত আকাশ আর মেঘা আপু কে খুঁজে পেলাম অবশ্য আমি খুঁজে পাইনি ওরাই আমাকে খুঁজে বের করেছে, ওদের যেহেতু পেয়েছি সবাইকে খুঁজে পাবো ইনশাল্লাহ
সকাল বেলা বারান্দায় বসে কপি খেতে খেতে এসব ভাবছি হঠাৎ মেসেজ টোন বেজে উঠলো, ওপেন করে দেখি অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে “খুব ভালো আছিস তাই না কিন্তু বেশি দিন আর ভালো থাকবি না তুই আমার সব প্লেন মাটি করে দিয়েছিস আমি তোর জীবন নষ্ট করে দিব”
মেসেজটা পড়ে খুব অভাক হলাম আমি আবার কবে কার প্লেন মাটি করলাম নাম্বারও তো চিনি না কে হতে পারে যে এভাবে আমাকে হুমকি দিলো
মেসেজটার কথা ভাবতে ভাবতে এতিমখানায় চলে আসলাম, সারাদিন মেসেজটার কথা মাথা থেকে সরাতে পারিনি, আমার জীবন তো এমনিতেই কষ্টে ভরা এখন আবার কে আসছে জীবন নিয়ে খেলতে কে জানে
রাতে খেতে বসছি তখন আবার মেসেজ টোন বেজে উঠলো ওপেন করে দেখি সকালের নাম্বার “আমার কি ক্ষতি করেছিস বুঝতে পারছিস না তাই তো আমিই বলে দিচ্ছি তোর বাবার একটা জমি আছে যেটার কথা তোরা কেউ জানিস না জমিটা তোর নামে আমার ওই জমিটা চাই”
মেসেজটা পড়ে আশ্চর্য হলাম আমার নামে জমি আছে অথচ আমিই জানিনা আব্বু তো কখনো এই জমির কথা বলেননি আর এই জমিতে কি এমন আছে যে এই লোকটার জমিটা চাই-ই-চাই, আচ্ছা লোকটা কে হতে পারে আম্মু নাকি অন্য কেউ…? মাথায় আসছে না আব্বুকে খুঁজে পেলে হয়তো জানতে পারতাম কিন্তু আব্বুকে পাবো কোথায়
সকালে কারো ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো নাম্বার না দেখেই রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–আমার ঘুম হারাম করে খুব আরামে ঘুমাচ্ছিস তোর সব আরাম আমি নষ্ট করে দিব
–কে আপনি
ফোনটা কেটে দিল কন্ঠটা কেমন যেন চিনাচিনা লাগছে কিন্তু মনে করতে পারছি না, অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারলাম না
ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা করেই এতিমখানায় চলে আসলাম, হঠাৎ মেঘা আপু ফোন দিলেন
–হ্যালো
–তমা আকাশের ট্রান্সফার হয়েছে তোমার বাসা থেকে বেশি দূরে না আমরা ভাবছি তোমার বাসার কাছেই একটা বাসা নিব
–ভালো হবে একা একা আর ভালো লাগে না
–আগামীকালই আমরা আসছি
–আচ্ছা
যাক শেষ পর্যন্ত একাকীত্বটা কিছু কাটবে, মেঘা আপুদের তো পাশে পাব কিন্তু আব্বুকে কোথায় খুঁজব, আব্বুর কথা মনে পরতেই খুব কান্না পেলো আমার সাথেই কেন এতোসব হলো সবাইকে হারালাম
রাতে বারান্দায় বসে বসে ভাবছি দুবছর আগে কক্সবাজার শ্রাবনকে দেখেছিলাম কিন্তু পরে আর খুঁজে পাইনি হয়তো ও এখন কক্সবাজারেই আছে, ওকে খুঁজতে কি কক্সবাজার যাবো কিন্তু গিয়ে কি লাভ আমি এখনো ওকে ভালোবাসি কিন্তু ও তো আর আমায় ভালোবাসে না, খুঁজে পাওয়ার পর যদি ও বলে আমায় ভালোবাসে না তখন কি করবো আর আমি তো এখন ডিভোর্সি না শ্রাবন আমায় মেনে নিবে না শ্রাবনের মা মেনে নিবে তারচেয়ে খুঁজে না পাওয়াটাই ভাল, এসব ভাবতে ভাবতে অনেক রাত করে ঘুমালাম
সকালে কলিংবেল এর শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো, দরজা খুলে তো আমি অভাক এতো সকালে মেঘা আপুরা
আকাশ: অভাক হচ্ছ কেন
আমি: এতো সকালে তোমরা
মেঘা আপু: ঘড়ি দেখেছ (কথাটা শুনে দেয়ালে ঘড়ির দিকে থাকালাম এগারোটা বাজে দেখে নিজেই লজ্জা পেলাম)
আকাশ: অবশ্যই রাতে দেরি করে ঘুমিয়েছ
আমি: হুম
মেঘা আপু: মায়ের কথা জিজ্ঞেস করলে না যে
আমি: ওহ উনি কোথায়
আকাশ: গাড়িতে
আমি গিয়ে আন্টিকে (আকাশের মা) সালাম করে বাসায় নিয়ে আসলাম, নতুন বাসা না পাওয়া পর্যন্ত ওরা আমার কাছেই থাকবে তাই অনেক ভালো লাগছে
আজ আর এতিমখানায় গেলাম না মেঘা আপু আর আমি মিলে দুপুরের রান্না করলাম
দুপুরে সবাই মিলে খেতে বসছি তখন মেসেজ টোন বেজে উঠলো সেই নাম্বার থেকেই মেসেজ এসেছে “কিরে আকাশ কে ডিভোর্স দিয়ে এখন আবার তোর বাসায় ওদের জায়গা দিলি আকাশ কে আবার প্রয়োজন নাকি” মেসেজটা পরে খুব রাগ উঠলো কিন্তু ভেবে পেলাম না কে হতে পারে যে আমার সব কিছুতে নজর রাখছে
আকাশ: তমা কি হয়েছে
আমি: না তেমন কিছু না
আকাশ: তোমাকে চিন্তিত লাগছে কেন
মোবাইলটা আকাশের কাছে দিয়ে সব মেসেজ পড়তে বললাম
আকাশ: কে হতে পারে
আমি: জানিনা
আকাশ: আচ্ছা তুমি টেনশন করো না আমি একটু এয়ারপোর্ট যাবো এসে ফোন করে দেখবো কে এইটা
আমি: হুম
বিকেলে মেঘা আপু আর আমি বারান্দায় বসে গল্প করছি হঠাৎ আকাশ ফোন দিল
আমি: হ্যালো
–তমা তাড়াতাড়ি এয়ারপোর্ট আস
–কেন
–তোমার জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ আছে
–বলবা তো কি
–এসে নিজের চোখেই দেখ
আর কিছু না ভেবে মেঘা আপু কে নিয়ে এয়ারপোর্ট যাওয়ার জন্য বেড়িয়ে পরলাম, গাড়িতে বসে আছি রাস্তা যেন শেষ হচ্ছে না, জানিনা আমার জন্য কি সারপ্রাইজ আছে
এয়ারপোর্ট এসে পৌছেঁই আকাশ কে ফোন দিলাম, ও এসে আমাদের ওর সাথে যেতে বললো, আকাশের পিছন পিছন যাচ্ছি আর চারদিকে চোখ বুলাচ্ছি কি সারপ্রাইজ তা খুঁজছি হঠাৎ একটা জায়গায় গিয়ে আমার চোখ স্থির হয়ে গেলো, আমি স্বপ্ন দেখছি নাকি বাস্তব বুঝতে পারছি না, অভাক হয়ে সামনে থাকিয়ে আছি চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি ঝরতেছে……
চলবে?