#জনম_জনমে
#পর্বসংখ্যা_৯
#ইসরাত_ইতি
জারিফের হাত থেকে অরিনকে কোনোমতে ছাড়িয়ে নেন জবা আর জেসমিন। জারিফ পুনরায় তে’ড়ে গিয়ে বলে,“ফের আমার আশেপাশে দেখলে থা’বড়া মেরে চেহারার মানচিত্র চেঞ্জ করে ফেলবো।”
জাহিদা আনাম জারিফকে ধাক্কা মে’রে সরিয়ে দিয়ে ধ’ম’কে ওঠে,“কি হচ্ছে কি জারিফ! এসব কোন ধরনের অ’স’ভ্যতামি!”
অরিন এতটাই আ’ত’ঙ্কি’ত হয়ে পরেছে যে সে কান্না অবধি করতে পারছে না। মায়ের পেছনে গিয়ে লুকিয়ে আছে।
জারিফ মায়ের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,“কি মেয়ে পছন্দ করো মা আমার জন্য? দেখলেই তো থুথু দিতে ইচ্ছে করে। তুমি না ভালো মা? আরো বেস্ট কাউকে খুঁজে বের করো।”
জাহিদা আনাম নির্বাক। জারিফ বিছানা থেকে শার্ট টা উঠিয়ে গায়ে চাপিয়ে ফোন আর বাইকের চাবি নেয়। তারপর হন্তদন্ত হয়ে সদর দরজার দিকে যেতে যেতে বলে,“তোমার পছন্দ করা এই পাত্রী রিজেক্টেড। বিকেলে এসে যেনো ওর ঐ বদন না দেখি!”
★★★
অগ্রহায়ণের শুরুতে,প্রকৃতি ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদল করে নিজের। দুপুরে কাঠ ফাটা রোদ,রাতের বাতাস নাতিশীতোষ্ণ। তবে ভোরের দিকটা আশ্চর্য রকমের ঠান্ডা। গাঁয়ে চাদর না টেনে উপায় নেই, কখনো কখনো এই পাতলা চাদরেও শীত মানতে চাচ্ছে না যেন। ঘরের জানালাটা রাতে খোলাই ছিলো, ভোর রাতের মৃদু মন্দ বাতাস ঢুকে ঘরের শোভা বর্ধনে ব্যবহৃত ফুলদানিতে থাকা প্লাস্টিকের টিউলিপ গুলোকে নাচাচ্ছে। ঘরের বাতি নেভানো থাকলেও বেলকনি থেকে আসা আলোতে দোলা সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে শক্ত করে আকড়ে ধরে রেখেছে স্বামী নামের মানুষটা। লোকটা হয়তো বুঝতে পেরেছে তার বৌ পালাতে পারে,তবে লোকটা জানে না দোলারা বাস্তবতা থেকে পালাতে পারেনা। আর সেটা যদি নিজের দোষে হয় তবে তো কথাই নেই! দোলার দোষ, দোলার ভুল,দোলার অন্যায়, দোলার পাপ, দোলার মহাপাপ। সবকিছু দোলারই ছিলো। দোলা সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে অলিখিত একটা লিস্ট করে ফেলে সবকিছুর।
নাম্বার এক: দোলা একজন ত্রুটিপূর্ণ মহিলার গর্ভে জন্ম নিয়েছে।
নাম্বার দুই: দোলা নিষিদ্ধ মানুষকে ভালোবেসে ফেলেছে।
নাম্বার তিন: একজন মায়ের অনুভূতির দাম দিতে গিয়ে ঐ মানুষটাকে ভেঙেছে।
নাম্বার চার: দোলা নিঃস্বার্থ হতে গিয়ে স্বার্থপর হয়েছে।
আরো আরো আরো লম্বা এই লিস্ট টা, দোলা আর এগোতে পারলো না সামনে। এতো এতো দোষ দোলার। সে তুলনায় দোলার এই শাস্তিটা এখন ঠিক লাগছে দোলার কাছে। দোলা মনে মনে ভাবলো এমনই চলুক, ওর এই অনূভুতিহীন, ভালোবাসাবাসিহীন, প্রেমহীন, দরদ বিহীন ছোঁয়া ছুয়ি এই কদিনে সয়ে গিয়েছে। শাস্তি টা তেমন কঠিন নয়, সামান্য কষ্ট হয়, দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করা যায়। এই স্পর্শ গুলো দোলা শাস্তি হিসেবেই চায়, যদি কখনও দোলা এই স্পর্শের মাঝে দরদ,স্নেহ,টান খুঁজে পায় তাহলে যে মুখপুড়ি দোলার শাস্তি হলো না।
তৌসিফ নড়েচড়ে উঠে হাতের বাঁধন দৃঢ় করে। দোলার হাসি পেলো, দোলা কি পালাবে? না। বাস্তবতা থেকে তো একদমই না। এই যে পাশে শুয়ে থাকা মানুষটা,এই মানুষটা একটা আস্ত বাস্তবতা বৈ কিছুই না।
বাস্তবতার প্রসঙ্গে দোলা ভাবতে থাকলো,স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে হয়তো বাস্তবতা হচ্ছে দেওয়া এবং নেওয়া। এইতো রাতে দোলার পা দু’টোতে এক জোড়া দামী পায়েল পরিয়ে দিলো শেখ তৌসিফ আহমেদ। এটা হচ্ছে দেওয়া। তারপর যখন দোলার সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চাইলো,দোলা অনুরোধের সুরে বলেছিলো,“আমার না আজ একটু মাথা ব্যথা করছে। আজ থাক!”
লোকটা শুনলোই না, সে দিয়েছে, এখন যে তার নেওয়ার পালা। নয়তো হিসেব বরাবর হবে কি করে ? শুধু কন্ঠে একটু দরদ ঢেলে বলেছিলো,“মাথা ব্যথা একদম ভ্যানিশ করে দেবো জান।”
দোলা মানতে না চাইলে মেজাজ দেখালো, চ’ড় থাপ্পড় খাওয়ার আগেই দোলা রাজি হয়ে গেলো।
দোলার মাথা ব্যথা রাতে আসলেই ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছিলো,কারন ব্যথা টা উপলব্ধি করার মতো অনূভুতি অবশিষ্ট ছিলোনা। প্রত্যেকবার অনূভুতি শূন্য হয়ে পরে থাকে।
গলার কাছে পুরুষালি উষ্ণ অধরের স্পর্শে দোলা বুঝতে পারে তার জীবনের বাস্তবতা জেগে উঠেছে। আবারও, আরও এক দফা দেওয়া নেওয়ার হিসেব শুরু হবে এই ভোররাতে,দোলা অভ্যস্ত হয়ে উঠছে এতে।
কিন্তু না,এবার লোকটা যেন একটু সদয় হয়েছে দোলার প্রতি। ঘুমঘুম কন্ঠে জানতে চাইলো,“রাতে শরীর খারাপ লাগছিলো বললে। এখন ঠিক আছো?”
আটঘন্টা! আট ঘন্টা পরে লোকটা আগ্রাসী স্বামীর চরিত্র থেকে বেরিয়েছে, হঠাৎ তার মনে পরেছে তার বৌয়ের শরীর ভালো নেই।
দোলার নীরবতা ভাঙতে তৌসিফ আর একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে বলে,“বলো জান। এখন মাথা ব্যথা করছে?”
দোলা অস্ফুট স্বরে বলে,“নাহ।”
দোলার চুলের মধ্যে আঙুল বিচরণ করে তৌসিফের। আঙুল গুলো কিছুক্ষণের ব্যবধানে অবাধ্য হয়ে দোলার স্পর্শকাতর স্থান ছোঁয়। ঐ যে শুনলো,দোলার শরীর এখন ঠিক আছে। আরো একবার আস্কারা পেলো স্বামীত্ব ফলাতে। কারন এটাই বাস্তবতা। আর কার জীবনে হয় কি না দোলা জানে না, তবে দোলার জীবনে হচ্ছে। বাস্তবতা যা এড়ানোর উপায় নেই।
★★★
শেখ বাড়ির ছোটো ছেলের বৌ দোলার কাজ কর্মের প্রশংসায় পঞ্চমুখ শ্বশুর বাড়ির সবাই। কাজের লোক থাকা সত্ত্বেও সবকিছু হাতে হাতে করে। দোলা যে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে এসব করে তা জানে না কেউই। বারোদিন পেরিয়েছে বিয়ের। তিনদিন ব্যাপী রিসিপশন শেষ হয়েছে সপ্তাহখানেক আগে,বাড়ি থেকে মেহমান সব চলে গিয়েছে। বাড়িটা আগের মতোই ফাঁকা। তৌসিফ সদরের অফিসে বসা শুরু করেছে। দিনটা দোলার ইউরার সাথে কাটে,রাতটা কাটে স্বামীর সাথে দেওয়া নেওয়ার হিসেব করে। দোলার প্রাত্যহিক রুটিন এখন থেকে এটাই। মাঝে মাঝে দোলাদের বাড়ি থেকে দোলার ফুপু,চাচীরা আসে দোলার সুখ দেখতে,নির্লজ্জের মতো। দোলা বাক্স খুলে খুলে তাদেরকে তার সুখ দেখায়। দামী পায়েল,দামী ব্রেসলেট, নতুন গয়না। আরো কত সুখ দোলার। আলমারি ভর্তি সুখ দোলার। অন্যের কাছ থেকে ধার করে শাড়ি পরা দোলার আলমারি ভর্তি শাড়ি, থুড়ি সুখ। ওয়্যারড্রোবে আছে তিন চার রঙের পাতলা ফিনফিনে দামী নাইটি। যেগুলো মাঝে মাঝে রাতে স্বামী আদেশ দিলে পরে স্বামীর সামনে যেতে হয়। দোলার ইচ্ছে করে ফুপু চাচীদের সেসবও দেখিয়ে দিতে। গয়নার ডিজাইন দেখে দোলার চাচী ফুপুরা বলে তাদের জামাই কতো রুচিশীল! নাইটিগুলো দেখলে বলবে তাদের জামাই কত শৌখিন!
কথাটা ভাবতে ভাবতেই দোলা হেসে ওঠে। রান্নাঘরে আনমনে দাঁড়িয়ে ছিলো দোলা। একা একা পাগলের মতো কিছুক্ষণ হাসার পর টের পায় দু’চোখে পানি জমেছে । এতো ব্যস্ত জীবনেও হুট করে কখনো কখনো ঐ মানুষটার মুখটা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। কানে শুনতে পায় কেউ বললো,“চলনা একটু স্বার্থপর হই।”
এটা কি ঠিক? ঠিক না তো। সেদিন তৃপ্তির সাথে ফোনালাপের সময় শুনেছে মানুষটা রোগা হয়ে গিয়েছে এই কদিনে। দোলার খুব ইচ্ছা করেছিলো মামীকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করতে কেনো এই হাল? সে মা হয়ে কি করছে এখন?
★★★
রিসিপশনে পুরুষ বলতে জারিফ একাই। এই অফিসে জারিফ এর আগেও দুবার এসেছে। শেষবার এসেছিলো জুলাইয়ে, ইন্টারভিউ দিতে। চাকরিটা তখন কনফার্ম ছিলো না।
এতো মহিলাদের মধ্যে জারিফের সংকোচ বোধ হচ্ছে কিছুটা। কিন্তু সে পাত্তা না দিয়ে ফোন ঘাঁটতে থাকে। সময় গড়াতেই তার ডাক পরে। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ায় সে।
তার সামনে এই অফিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক,মুখ হাসি হাসি করে তাকিয়ে আছে তারই দিকে। জারিফ পাথুরে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার কি করা উচিত এখন? হাসির বিনিময়ে হাসি ফিরিয়ে দেওয়া উচিত?
লোকটা জারিফের দিকে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দিয়ে বলে,“চারমাস ধরে পেন্ডিংয়ে ছিলেন। নিন আপনার অ্যাপয়েনমেন্ট লেটার।”
জারিফ একদৃষ্টে তার হাতের অ্যাপয়েনমেন্ট লেটারটার দিকে তাকিয়ে। লোকটা বলতে থাকে,“এখন কেমন বোধ করছেন? চাকরি টা পেয়ে কেমন লাগছে?”
জারিফ লোকটার কথায় গা দুলিয়ে হাসতে থাকে। লোকটা রীতিমতো অবাক, হতবাক। জারিফ লোকটাকে আরো অবাক করে দিয়ে অ্যাপয়েনমেন্ট লেটার টা ছিঁড়ে ফেলে হাসতে হাসতেই বলে,“জঘন্য লাগছে।”
★★★
দেবদাসের এই গল্পটাতে পারুও চেষ্টা করছিলো মেনে না নিলেও মানিয়ে নিতে, চলছিলো সবকিছু চলার মতোই। দুলির দেবদা কখনও চন্দ্রমুখীর কাছে যায়নি,আর না এসেছে পারুর সিংহদুয়ারে।দুলির দেবদা কখনো তার সিংহদুয়ারে এসে মুখ থুবড়ে না পরলেও পারুর গল্পের শেষ পরিচ্ছেদ লেখার সময় হয়ে এলো।
“কফিইই”
সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে তৌসিফ গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে। রান্নাঘরে ব্যস্ত থাকা দোলার ঘোর কে’টে যায়। সে ভুলেই গিয়েছিলো তৌসিফ আজ বাড়িতে। স্বামীর আদেশ পেয়ে দোলা তাড়াহুড়ো করে কফির পানি ফুটিয়ে নেয়।
কফি বানানোর সময় ফারিন বললো,“একি দোলা! তৌসিফ তো এক চামচ চিনি খায়। তুমি তো চিনি দিয়েই যাচ্ছো!”
ফারিনের কথায় দোলার অন্যমনস্ক ভাব কেটে যায়,হাতে কফির মগটা তুলে ঠান্ডা গলায় বলে,“অসুবিধে নেই। উনি এই কফি ছুঁয়েও দেখবে না।”
ফারিন দোলার কথা বুঝলো না। দোলা হেঁটে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। ফারিনকে বলা দোলার কথার মানে হলো কফি ছিলো একটা ইশারা। এই ভরদুপুরে শেখ তৌসিফ আহমেদের তার বৌকে চাই। ডাইনিং টেবিলে বসা বাবা ভাইয়ের সামনে বৌকে সরাসরি ডাকতে পারছিলো না। তাই কফি চেয়েছে। দোলা এই কদিনে তার স্বামীর ইশারাও শিখে গিয়েছে। দোলা কি লক্ষি বৌ!
ঘরে ঢুকে বেড সাইডের টেবিলে কফির মগ টা রাখতেই তৌসিফ দোলাকে বলে ওঠে,“দরজার লাগিয়ে এসো।”
★★★
অ্যাপয়েন্ট লেটার ছিঁড়ে জারিফ শহর চষতে বেরোয়। ছুটে যায় তার পছন্দের জায়গাগুলোতে,তার দুলির পছন্দের জায়গা গুলোতে। ইদানিং জারিফ বাইক নিয়েও বেরোয় না। হাঁটতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে সে।
সকালে ঘুম থেকে ওঠে, মাকে দেখিয়ে সুন্দর ভাবে নাস্তা খেয়ে বেরিয়ে যায়,ভালো লাগলে দুয়েকটা টিউশনি করায়। ছকবাঁধা জীবন ভালো লাগে না জারিফের। ছুটে যায় কুটুম বাড়িতে খেতে। রাতে ফজিলাতুন্নেসা ছাত্রীনিবাসের পেছনের গলিতে যায়। রুম নাম্বার তিনশো চারে এখনো কোনো ছাত্রী ওঠেনি। কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে মশার কামড় খেয়ে রাত করে বাড়ি ফিরে মাকে দেখিয়ে রাতের খাবার খায়। ঘরের দরজা খোলা রেখে বিছানায় গিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে নিজের মাথাটাকে বালিশের নিচে ঢুকিয়ে নেয়। তবে জারিফ এখন আর কাঁদে না। ওভাবে ঘুমাতে ভালো লাগে তাই ঘুমায়।
হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে জারিফ তার স্টুডেন্টের বাসার সামনে যায়,সেখানে তার বাইকটা পার্ক করে রাখা,আজ অনেকদিন পরে বাইকে উঠবে সে, উদ্দেশ্য উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাইওয়েতে ঘুরবে। ভবঘুরে জীবনে আজ একটু অ্যাডভেঞ্চার করবে সে।
★★★
দোলা সিটিকিনি তুলে স্বামীর দিকে ঘুরে তাকায়। না আজ ভরদুপুরে ডাকার কারন দেওয়া-নেওয়া নয়,কারন অন্যকিছু!
তৌসিফ নির্বিকার চিত্তে হাতের ফোনে থাকা জারিফ আর দোলার ছবি গুলো থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দোলার দিকে তাকায়। দোলা ততক্ষণে বুঝে গিয়েছে কি ঘটেছে। সে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। তারপর ধীরে ধীরে মেঝেতে বসে, হাঁটু মুড়ে। তৌসিফ ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলে,“তো এজন্য প্রথমে মত দাওনি বিয়েতে। তো তারপর কেনো দিলে?”
দোলা শুকনো গলায় কাঠ কাঠ বলে,“আপনার টাকা দেখে। আপনি বড়লোক দেখে রাজি হয়েছি।”
তৌসিফ হাসে। কিছুক্ষণ হেসে দোলার সামনে হাঁটু ভেঙে বসে বলে,“তোমরা মফস্বলের মেয়েরাও খুব চালু। এতো গভীর প্রনয় ছিলো অথচ আমি খোঁজ লাগিয়েও কিছু জানতে পারলাম না। অবশ্য আমার এসবে কিছু যেতো আসতো না। বিয়ে তোমাকে করতামই।”
দোলা কোনো জবাব দেয়না। শুধু ফিচেল হাসে। তৌসিফ হাতের ফোন থেকে ছবিগুলো ডিলিট করে ফেলে খুবই শান্ত ভঙ্গিতে দোলাকে বলে,“বিয়ের দিন সন্দেহ হয়েছিলো যদিও। এনিওয়ে, ওসব নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই। তুমি শেখ তৌসিফ আহমেদের বৌ এটাই চিরন্তন সত্যি। এবং তৌসিফ আহমেদ খুব ভালো করে জানে কিভাবে বৌ পালতে হয়! আজ থেকে বাড়ির বাইরে যাওয়া,কোনো বান্ধবীদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ। পরিক্ষার সময় আমার সাথে যাবে।”
দোলাও সাথে সাথে তাচ্ছিল্যের সহিত জবাব দেয়,“জো হুকুম মেরে আকাহ।”
তৌসিফ উঠে দাঁড়াতেই দোলার ফোন বেজে ওঠে, দোলা উঠে ফোনটা তুলে হাতে নিতেই তৌসিফ বলে,“কলটা রিসিভ করে লাউড স্পিকারে দাও।”
দোলা তাই করে। ওপাশ থেকে তৃপ্তির কান্নাভেজা গলার আওয়াজ ভেসে আসে,“দুলি রে! জারিফ ভাইয়ের অ্যা’ক্সি’ডেন্ট হয়েছে!”
★★★
দুলির দেবদা মুখ থুবড়ে তার সিংহদুয়ারে এসে পরেনি। তবে দেবদার ঘোর বিপদ অবশেষে হয়েইছে। হয়তো তার দুলির কারনেই।
খবরটা পেয়ে দোলা বিকট চিৎকার দিয়ে ওঠে। চিৎকারে তালা লেগে যায় শেখ বাড়ির সবার কানে। ছুটে আসে সবাই,কি হয়েছে জানতে চায়।
দোলা ত’ড়পাতে থাকে। শেখ তৌসিফ আহমেদ শান্ত চোখে দেখতে থাকে দোলাকে।
সত্যিটা জেনে পুরো শেখ বাড়িতে ছি ছি পরে গেলো। বাড়ির বৌ পরপুরুষের জন্য চোখের পানি ফেলছে? কি পাপ! এতো মহাপাপ! আগে হলে দোররা মে’রে মে’রে মেরেই ফেলতো!
দোলা কারো কথা গাঁয়ে মাখলো না, সে একটুও কার্পন্য করলো না তার দেবদার জন্য গলা ফাটিয়ে কাঁদতে।
শেখ তৌসিফ আহমেদ বৌকে নিয়ন্ত্রণের আনার সম্পূর্ণ চেষ্টা করলো, টেনে হিচরে ঘরে ঢোকালো। দোলা শুধু বলেই যাচ্ছে,“আমাকে একটি বারের জন্য যেতে দিন! অল্প কিছু সময়!”
তৌসিফ শান্ত ভঙ্গিতে বলে,“না! তুমি আমার স্ত্রী!”
দোলাকে ধমকাতে লাগলেন তার ভাসুর, শ্বশুর। দোলা যেন সেসব কিছু গায়েই মাখলো না। সে ছুটে পা বাড়াতে চাইলো সামনে। পেছন থেকে বৈধ পুরুষ তার পথরোধ করলো। দোলা উন্মাদের মতো কেঁ’দে কেঁ’দে বলে,“অল্প কিছু সময়!”
_তুমি আমার স্ত্রী দোলা। ভুলে যেওনা।
_হ্যা জানি। জানি তো। বিশ্বাস করুন,আপনি রাতে সময়মতো আপনার স্ত্রীকে আপনার বিছানায় পাবেন। শুধু অল্প কিছু সময়ের জন্য যেতে দিন।
কি ভয়ংকর কথা বলে ফেললো বাড়ির বৌ শ্বশুর ভাসুরের সামনে। ছিঃছিৎকারে গুমোট হয়ে উঠলো পরিবেশ। মুখ ফিরিয়ে যে যার ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো, তৌসিফকে বুঝিয়ে দিয়ে গেলো বৌয়ের রাশ টানতে। নইলে শেখ বাড়ির মান ধুলোয় মিশে যাবে।
দোলা নিজের হাত ছাড়াতে ব্যস্ত, আর্তনাদ করেই যাচ্ছে,“দয়া করে যেতে দিন।”
_না। তুমি আমার স্ত্রী।
_দয়া চাইছি! এ জীবনে আর কখনও কিছু চাইবো না আপনার থেকে। শুধু এক ঘন্টা! আর কখনও আপনার বাড়ি থেকে বেরোবো না আমি, আমার সীমা হবে আপনার রান্নাঘর আর বিছানা।
হাতজোড় করে তৌসিফকে দোলা।।
তৌসিফ নির্বিকার ঘরের ভেতরে টেনে ঢোকানোর চেষ্টা করে দোলাকে।
দোলা ধা’ক্কা দিয়ে পা বাড়ায় সামনে। তৌসিফ শান্ত স্বরেই বলতে থাকে,“শোনো দোলা,আজ যদি এ বাড়ি থেকে আমার অনুমতি ব্যতীত তুমি বের হও তাহলে দুনিয়ার কাছে তুমি ভ্রষ্টাচারিনী হবে ।”
দোলা শুনলো,তবে পা থামালো না। হন্তদন্ত হয়ে ছুটতে ছুটতে সিঁড়ি ভাঙে। ছুটতে থাকে সিংহদুয়ারের দিকে। তার দেবদা এলো না! সে যাবে। যাবেই!
তৌসিফ দোতলায় শান্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে,ফারিনের দিকে তাকিয়ে বলে,“ঘরের ভেতর যাও। আজ এখানে যাই হয়ে যাক না কেনো আমি না বলা পর্যন্ত ঘর থেকে বেরোবে না,কেউই।”
ফারিন চলে যায় দেবরের আদেশে। তৌসিফ পকেট থেকে ফোনটা বের করে গেট দাড়োয়ানকে কল দেয়, তারপর অত্যন্ত শান্ত কিন্তু দৃঢ় স্বরে বলে,“গেটে তালা দাও!”
চলমান…..