ছোটঘরের ভালোবাসা সিজন ২ পর্বঃ ০৪
– আবির খান
এরপর সবাই খাওয়া শেষ করে ঘুমাতে চলে যায়। আবির মনটা এখন ভালো কিন্তু ও খুব ক্লান্ত থাকায় নরম বিছানায় শুয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পরে। কিন্তু মাঝ রাতে হঠাৎ আবিরের ঘুম ভেঙে যায়। আবির অনুভব করছে কেউ তার শরীর লেপটে ধরে আছে। আবির নিচে তাকাতেই যেন ভুত দেখলো। এ যে রিয়া৷
আবিরঃ মেয়েটা পাগল নাকি?? কিভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। বাবা যদি সকালে এসে দেখে কি খারাপটাই না মনে করবে আমাকে। ওহ কি শক্ত করে ধরে আছে। মনে হচ্ছে ও না ধরলে কেউ আমাকে ওর কাছ থেকে নিয়ে যাবে।
আবির অনেক চেষ্টা করলো রিয়ার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে কিন্তু পারলো না। রিয়া আবিরের বুকের সাথে নিজেকে শক্ত করে চেপে ধরে পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে। মনে হচ্ছে এটাই ওর ঘুমানোর জায়গা।
আবির আর কি করবে। শেষমেশ ঘুমিয়ে থাকে রিয়ার সাথেই। কিন্তু আবির যেন এখন আরো বড় সমস্যায় পরলো। কারণ রিয়ার মতো এতো অপরূপ সুন্দরী মেয়ে যদি এভাবে পাশে ঘুমিয়ে থাকে তবে কারই বা ঘুম আসে। তাও আবির অনেকটা চেষ্টা করলো ঘুমানোর জন্য কিন্তু নাহ আজ আর ঘুম আসছেই না।
আবিরের পিছে জানালা থাকায় চাঁদের আলো রিয়ার মুখে এসে পরে। সে আলোয় রিয়ার মুখটা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠে। রিয়ার ঘুমন্ত মুখটা কতটা সুন্দর হতে পারে তা আজ আবির মুগ্ধ হয়ে দেখছে। হঠাৎই রিয়ার চুলগুলো ওর মুখের উপর এসে পরে। ঢেকে দেয় রিয়ার মায়াবী মুখটা।
আবির ভাবছে, চুলগুলো কি সরিয়ে দিবে? যদি আবিরের স্পর্শে রিয়া জেগে যায়? না সরিয়েও পারছে না। কারণ রিয়ার মায়াবী মুখটা দেখতে খুব ভালোই লাগছিলো আবিরের। এরকম কিছুক্ষন নিজের সাথে লড়াই করে শেষমেশ আবির চুলগুলো সরিয়ে দিবে বলেই ঠিক করে। কারণ আজ রাতটা রিয়ার এই মায়াবী মুখ দেখেই কাটাবে বলে ঠিক করেছে আবির।
আবির আস্তে করে দু আঙুল দিয়ে রিয়ার চুলগুলো সরিয়ে দেয়। হ্যাঁ এখন রিয়ার মায়াবী মুখটা ভালো ভাবে দেখা যাচ্ছে। আবির শুধু মুগ্ধ হয়ে দেখছে আর দেখছে। একসময় আবিরের নয়নজোড়া ক্লান্ত হয়ে লেগে যায়। আর আবির হারিয়ে যায় ঘুমের দেশে।
সকালের ঝলমলে রোদ এসে পরে রিয়ার চোখের উপর। সেই সাথে রিয়ারও ঘুম ভেঙে যায়। রিয়া নিজেকে আবিষ্কার করে আবিরের বুকের কাছে। অবশ্য সে জানে যে সে আবিরের কাছেই ঘুমিয়েছে। আবিরের বুকের প্রতিটি স্পন্দন শুনতে পাচ্ছে রিয়া।
রিয়া এবার আস্তে করে আবিরের মুখের দিকে তাকায়। ঘুমন্ত আবিরকে কি যে সুন্দর লাগছে। একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগছে। আবির দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম কিন্তু এখন ওকে খুব বাচ্চা বাচ্চা লাগছে।
রিয়া আস্তে করে একটু উপরে উঠে আসে যাতে ঘুমন্ত আবিরকে আরো ভালো করে দেখা যায়। রিয়া আবিকে মুগ্ধ হয়ে দেখছে। এই আবির যে ওর হবে তা ও কখনো ভাবে নি। কিন্তু সেই আবিরই আজ ওর কতটা কাছে। ভালোবাসার মানুষটা কত কাছে।
কাল রাতে রিয়ার মোটেও ঘুম আসছিলো না। মনটা পরে ছিলো এই ভালোবাসার মানুষটার কাছে। রিয়ার ভয় হচ্ছিল আবির যদি আবার ওকে ছেড়ে চলে যায়। তাই মাঝ রাতে আবিরের কাছেই এসে ঘুমিয়ে পরে।
রিয়ার হঠাৎ নজর যায় আবিরের ঠোঁটের দিকে। কি সুন্দর লাগছে। খুব টানছে রিয়াকে। রিয়া আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। এক অজানা টানে আস্তে আস্তে এগুতে থাকে ওই ঠোঁটজোড়ার মিষ্টি স্বাদ নেওয়ার জন্য। দূরত্বটা এখন খুবই কম। আর একটু পথ বাকি। ঠিক সেই মুহূর্তেই আবির ওর চোখ খুলে তাকাল।
রিয়াকে এভাবে এতো কাছে দেখে আবিরের চোখগুলো বড় হয়ে যায়। ঘটনার আকশ্মিকতায় রিয়াও ওর চোখ বড় করে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। দুজনের নিশ্বাস একে অপরের উপর পরছে।
আবিরঃ কি হচ্ছে কি??
রিয়াঃ কই কি হচ্ছে??হতেই বা দিলে কই??
আবিরঃ তুমি এভাবে এখানে কেন??
রিয়াঃ আমি কি জানি।
আবিরঃ তুমি না তোমার রুমে ঘুমিয়ে ছিলে??
রিয়াঃ হ্যাঁ।
আবিরঃ তাহলে এভাবে এখানে??
রিয়াঃ তাইতো আমি এখানে কিভাবে আসলাম। তুমি নিয়ে এসেছো নিশ্চয়ই।
আবিরঃ কিহ!!!আমি???মজা করছো না??নিজে এখন ধরা খেয়ে আমার উপর চাপিয়ে দিচ্ছো।
রিয়াঃ ধরা যখন খেয়েছি তাহলে ইচ্ছেটা পূরণ করেই ফেলি কি বলো।
আবিরঃ মান….
আবির আর কিছু বলতে পারে না। তার আগেই রিয়া আবিরকে তার দ্বিতীয় পরম স্পর্শ বুলিয়ে দেয় আবিরের ঠোঁটে। কিছুক্ষন পর রিয়া আবিরকে ছেড়ে উঠে এক দৌড়ে চলে যায় রুমের বাইরে।
আবির ভাবছে কি হলো একটু আগে তার সাথে। কিন্তু যা হয়েছে তা ভালোই ছিলো। এই রিয়াকে আর ছাড়ছে না আবির। যেভাবে হোক তার স্বপ্ন পূরনের পাশাপাশি আজ থেকে রিয়াও তার সঙ্গী। সারাজীবন তাকে আগলে রাখবে এই বুকে। রিয়াকে আবির ভালোবাসতো অনেক আগে থেকেই। আবিরও আজ বুঝে গেলো যে রিয়াও তাকে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু এই মুহূর্তে রিয়ার কাছ থেকে একটু দূরে দূরে থাকতে হবে। কারণ মেয়েটা বেশ আবেগি। আবেগের বসে কি না কি করে নিজেও বুঝে না।
আবির উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এসে দেখে রিয়া তার বাবাকে খাবার বেরে দিচ্ছে। রিয়া আবিরের দিকে তাকাতে লজ্জা পাচ্ছে সাথে আবিরও।
বাবাঃ আরে আবির বাবা। আসো আসো খেতে বসো।
আবির রিয়ার বাবার পাশের চেয়ারটাই বসলো।
বাবাঃ রিয়া মা তুইও বস।
রিয়া আবিরের ঠিক সামনেই বসলো।
সবাই খাওয়া শুরু করল। খাবারের মাঝে রিয়ার বাবা,
বাবাঃ তা বাবা আবির রাতে ঘুম কেমন হলো??
বাবার আচমকা এরকম প্রশ্নে আবিরের গলায় খাবার আটকে যায়। আবির কাশছে।
বাবাঃ আরে আরে কি হলো। পানি খাও পানি খাও।
রিয়া তারাতারি আবিরকে পানি ঢেলে দিলো। আবির এক ঢোগে পানিটুকু সব খেয়ে ফেলল।
বাবাঃ কি এখন ঠিক আছে??
আবিরঃ জ্বি বাবা।
বাবাঃ যাক। তা রিয়া মা শুন, তুই আর আবির যেহেতু একই ভারসিটিতে পড়িস তোদেরতো সামনের মাস থেকে ভারসিটি ফাইনাল পরীক্ষা। তাহলে বাবা তুমি আর রিয়া মিলে পরীক্ষাটা দিয়ে ফেলো। জানো তোমায় না পেয়ে রিয়া আর সেদিনের পর থেকে এখনো ভারসিটিতে যায় নি। ভারসিটির দুজন টপার ভারসিটিতে নেই বলে স্যাররা অনেক টেনশনে আছে। তাই তোমরা আজ থেকেই ভারসিটিতে যাওয়া শুরু করো। কি বলিস মা??
রিয়াঃ হ্যাঁ অনেক ভালো হবে।
বাবাঃ কি আবির তুমি যাবে না??
আবিরঃ জ্বি বাবা অবশ্যই। আপনারা আমার জন্য যা করছেন। সত্যিই তা আসলেই কেউ করে না।
বাবাঃ আপনজনের জন্য সব করা যায়।
রিয়াঃ আবির তাহলে আজই যাই চলো।
আবিরঃ আচ্ছা।
সবাই খাবার শেষ করে। আবির আর রিয়া চলে যায় রেডি হতে। আর রিয়ার বাবাও চলে যায় তার অফিসে।
আবির রেডি হয়ে বসে আছে তার রুমে। মায়ের কথা অনেক মনে পরছে। মনটা বিষন্ন বিষন্ন লাগছে। ঠিক সেই মুহূর্তে রিয়া এসে আবিরের সামনে দাঁড়ায়। আবির মাথা তুলে তাকিয়ে যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। তার সামনে সাক্ষাৎ পরী দাঁড়িয়ে আছে। আবির হা করে তাকিয়ে আছে রিয়ার দিকে।
রিয়া আজ কালো কালারের জামা পরেছে। সাথে কালো জুতা। চুলগুলো পিছনে ছেড়ে দিয়েছে। ঠোঁটে হালকা লিপিস্টিক। চোখে কাজল। এককথায় রিয়াকে ডার্ক প্রিন্সেস লাগছে। রিয়ার অনেক লজ্জা লাগছে ভালোবাসার মানুষটা এভাবে তাকিয়ে আছে।
রিয়াঃ কি আর কত দেখবে??যাবে না??
আবিরঃ….
রিয়াঃ আবির…(জোরে ডাক দেয়)
আবিরের এবার ঘোর ভেঙে যায়।
আবিরঃ হ্যাঁ হ্যাঁ কি বলো।
রিয়াঃ যাবে না??
আবিরঃ হুম। কিন্তু তার আগে একটা কথা বলার ছিলো।
রিয়াঃ হুম বলো।(কাছে গিয়ে)
আবিরঃ তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। অনেক মানে অনেক। তবে আমার একটা অনুরোধ আছে রাখবে??
রিয়াঃ একটা কেন দুইটা বলো।
আবিরঃ তোমার বোরখা আছে??
রিয়াঃ হ্যাঁ। (অবাক হয়ে)
আবিরঃ যদি কিছু না মনে করো তাহলে আজ বোরখা পরে যাবে প্লিজ??
রিয়া বিষয়টা বেশ বুঝতে পেরেছে। যে আবির চায়না বাইরের কেউ তাকে দেখুক। কারণ রিয়াকে এখন দেখার অধিকার শুধু আবিরের।
রিয়াঃ অবশ্যই পরবো। তুমি বসো আমি পরে আসছি।(মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল)
আবিরও অনেক খুশি হলো। ও চায় না ওর রিয়াকে কেউ এভাবে দেখুক। এতে ওর ও ক্ষতি সাথে আবিরেরও। রিয়া একটু পরই বোরখা পরে চলে আসলো। রিয়াকে বোরখাতেও বেশ সুন্দর লাগছে।
আবির ভাবতেও পারেনি রিয়া রাজি হয়ে যাবে। তাই খুশিতে রিয়াকে জড়িয়ে ধরে।
আবিরঃ অনেক অনেক ধন্যবাদ। তোমাকে এই বোরখাতেও অনেক সুন্দর লাগছে।
রিয়াঃ যদি প্রতিদিন আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরো তাহলে এখন থেকে সব সময় বোরখা পরেই বাইরে যাবো।
আবিরঃ আচ্ছা যাও প্রতি দিনই জড়িয়ে ধরবো। কিন্তু আমাকে প্রমিজ করো তুমি এখন থেকে সবসময় বোরখা পরে বাইরে যাবে।
রিয়াঃ এইযে তোমাকে ধরে প্রমিজ করছি। একটা জিনিস চাবো দিবে??
আবিরঃ কি বলো??আমিতো আজ পর্যন্ত কিছুই দিতে পারিনি তোমাকে। দেখি এটা দিতে পারি কিনা।
রিয়াঃ অবশ্যই পারবে। কারণ এটা শুধু তুমিই দিবে সবসময়।
আবিরঃ কি??
রিয়াঃ আমার কপালে একটা চুমু দিবে প্লিজ??
আবিরঃ এটা কি ঠিক??
রিয়াঃ প্লিজ মাত্র একটা।
আবিরঃ আচ্ছা। এই নেও।
এরপর আবির রিয়ার কপালে চুমু একে দেয়। রিয়া অনেক খুশি হয়। তারপর তারা একসাথে ভারসিটিতে চলে যায়।
ভারসিটিতে আবির আর রিয়াকে একসাথে দেখে অনেকে খুশি হয় আবার অনেকে অনেক আশ্চর্যও হয় রিয়ার পরিবর্তন আর আবিরের সাথে দেখে। সবচেয়ে বেশি সানজিদা।
এরপর রিয়া আর আবির মিলে একসাথে ভালো করে পড়ে ভারসিটি ফাইনাল পরীক্ষা দেয়। দুজনেরই পরীক্ষা অনেক অনেক ভালো হয়েছে। এখন তারা একদম ফ্রী।
কয়েকদিন পর,
রিয়াঃ আবির প্লিজ আজ চলো না একটু শপিং এ যাই। কতদিন হলো বাসা থেকে বের হইনা।
আবিরঃ কিন্তু বাবা যে বাসা থেকে বের হতে না করলো। কি জানি একটা সমস্যা আছে।
রিয়াঃ কোনো সমস্যা নেই। প্লিজ চলো না।
আবিরঃ বাবা না করেছে তো।
রিয়াঃ প্লিজ প্লিজ চলো না। কিচ্ছু হবে না।
এরপর রিয়ার অনেক অনুরোধে আবির যেতে রাজি হয়।
শপিং প্রায় শেষ। রিয়া তাও কিসের জন্য যেন ঘুরছে।
আবিরঃ হয়েছে রিয়া এখন চলো??আমার এখানে কেমন জানি লাগছে।
রিয়াঃ কেন?? শরীর খারাপ??
আবিরঃ না। মনটা কেমন জানি করছে।
রিয়াঃ আচ্ছা চলো তাহলে।
পার্কিং লটে,
আবিরঃ রিয়া তুমি দাড়াও আমি গাড়ি নিয়ে আসছি।
রিয়াঃ আচ্ছা।
একটুপরই হঠাৎ আবির দৌড়ে এসে রিয়ার সামনে এসে দাঁড়ায়। রিয়া আবিরকে দেখে আশ্চর্য হয়ে যায়। আর বিকট করে একটা শব্দ হয়। আবিরের বুকের বাম পাশ থেকে রক্ত ঝরছে। আবির ঠাস করে নিচে পরে যায়।
রিয়াঃ আবিরররর……..(বলে জোরে চিৎকার দেয়)
চলবে…. ?