ছোটঘরের ভালোবাসা সিজন ২ পর্বঃ ০৩
– আবির খান
রিয়া চলে যায়। আধা ঘণ্টা হয়ে গেলো কিন্তু আবিরের কোন খবর নাই। তাই রিয়া নিজে উপরে আবিরের রুমে যায়। আস্তে আস্তে গুটিপায়ে ভিতরে ঢুকে দেখে আবির রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। রিয়া আস্তে আস্তে ওর কাছে যায়। কাছে গিয়ে বুঝে আবির কান্না করছে। এরপর রিয়া যা করে তাতে আবিরও অবাক হয়ে যায়।
রিয়া আস্তে করে আবিরকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আবির কেপে উঠে। আবির তারাতারি ঘুরে তাকিয়ে দেখে রিয়া। রিয়া আবার সামনে থেকে জড়িয়ে ধরে। এবার অনেকটা শক্ত করেই জড়িয়ে ধরে।
এক অজানা অনুভূতির টানেই আবির আটকে যায়। সেও রিয়াকে সব ভুলে জড়িয়ে ধরে। হয়তো আবেগের বসে। চোখের জল কিন্তু এখনো বন্ধ হয়নি। অবিরাম পরছে। তবে শুধু একজনের নয় এখন যে দুজনের। আবিরের বুকটা যে ভিজে গিয়েছে নোনা জলে তা বুঝতে আর বাকি নেই। কিন্তু কেন??আমার জন্য?? কেনই বা আমার জন্য?? কেন এই জড়িয়ে ধরা?? হয়তো এর উত্তর আমার জানা হয়তো অজানা। কিন্তু ওর এই জড়িয়ে ধরা মনটাকে কেমন যেন শান্ত করে। বেচে থাকার সাহস দেয় এই জড়িয়ে ধরা। সেদিনও জড়িয়ে ধরেছিলো। তবে আজকের টা কেন যেন অন্য রকম। আসলে আবিরেরও এখন কাউকে দরকার ছিলো যার সাথে কষ্টটা ভাগাভাগি করে নিবে৷
যারা বলে ছেলেদের কাদতে হয় না, নরম হতে হয় না, সবসময় শক্ত থাকতে হয় আসলে তারা ভুল। তাদের এই ভুল শিক্ষা একসময় একটা ছেলেকে এতোই শক্ত করে দেয় যে তার মন পাথরের মতো হয়ে যায়। ফলে সে যদি কোন ভুলও করে তবে তার মধ্যে সে ভুলের কোন অনুশোচনাবোধ আর কাজ করে না। ফলে সে একটার পর একটা ভুল করেই যায়। যার শিকার হয় তার আসেপাশের মানুষগুলো। হয়তো মা বাবা, হয়তো বোন কিংবা বিয়ে করা বউ। তাই মাঝে মাঝে ছেলেদেরও কাদতে দিতে হয় তাহলে তার মনটা নরম হয় ভিতরে চাপা রাগ, দুঃখ, কষ্টগুলো সব ওই নোনা জলের সাথে বের হয়ে যায়। কান্না শেষে সে আবার নতুন হয়ে ফিরে আসে এই মায়ার জগতে। অনেকটা কান্নাকাটি হয়েছে আবির আর রিয়ার।
আবিরঃ রিয়া…এভাবে কাদছো কেন??আর আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে আছো কেন? আঙ্কেল দেখলে খারাপ মনে করবে তো। ছাড়ো এখন।
রিয়াঃ করলে করুক। (কাদো কণ্ঠে)
আবিরঃ আচ্ছা তুমি এভাবে কাদছো কেন??
রিয়াঃ আমাকে এভাবে না বলে চলে গিয়েছিলে কেন??জানো কত দিন তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু তোমার কোন খবরই পাইনি। কতটা ভয় পেয়েছি কতটা কষ্ট পেয়েছি জানো??জানোও না বুঝতেও চাও না।(বুকের মাঝে মাথা চেপে আরো কাদছে)
আবিরঃ আচ্ছা আচ্ছা সব বুঝলাম। কিন্তু কিসের জন্য এই অপেক্ষা এই না পাওয়ার কষ্ট?? আর এই অমূল্য চোখের অশ্রু??
রিয়া মাথা তুলে আবিরের চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আবিরও রিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
রিয়াঃ কি উত্তর পেলে??
আবিরঃ রিয়া এই উত্তর মানা আমার দ্বারা সম্ভব না। আমি নিস্ব। তোমার বাবা আমাকে বিশ্বাস করে তার বিশ্বাস আমি ভাঙতে পারবো না।
রিয়াঃ আচ্ছা আবির তুমি কি বোকার রাজা নাকি সর্দার??
আবিরঃ কেন কেন??
রিয়াঃ বাবা যে নিজে আমাকে তোমার কাছে দিয়ে গেছে তুমি কি তা বুঝ না??
আবিরঃ তা যা হোক। আমি যেদিন নিজ পায়ে দাড়াতে পারবো সেদিন আমি তোমার ওই চোখের কথাকে মেনে নিবো। এখন এসব সম্ভব না।
রিয়াঃ বেটা তোরে সায়েস্তা কিভাবে করতে হবে তা আমার জানা আছে। এহ নিজেকে কত্তো ভালো বানিয়ে রাখছে। বোকা নাকি। রানী সহ রাজ্য পাচ্ছে তাও নিতে চাচ্ছে না। মানুষ এতো সৎ কিভাবে হয়। বাবু তোমাকে যে এই রানীকে নিতেই হবে। রাজ্য না নেও। কিন্তু রানী তোমাকে ছাড়ছে মা।(মনে মনে)
আবিরঃ কি ভাবছো???আর এখন ছাড়ো। সেই ধরেই রেখেছো।
রিয়াঃ এহ আসছে ছাড়াতে। মশাই আর ছাড়ছি না।(মনে মনে)
রিয়াঃ আচ্ছা এখন বলোতো আমি কি অনেক খারাপ?? তোমার সাথে খারাপ আচরণ করছি বলে আমাকে তোমার মনে জায়গা দিচ্ছি না??(অসহায় কণ্ঠে)
আবিরঃ না না কে বলেছে তুমি খারাপ??
রিয়াঃ কেন আমাদের এই গল্পের পাঠকরা। তারা বলে আমি নাকি ভালো না অনেক অহংকারী মেয়ে।
আবিরঃ না না তুমি ভালো। তবে হ্যা তারা এটা সত্যি বলেছে যে তোমার মাঝে বেশি না একটু অহংকার কাজ করে।
রিয়াঃ কেন জানো??কারণ ছোট কাল থেকে একাই বড় হয়েছি। মাকে জন্মের পর আর দেখতে পাইনি। বাবা সময় দিতো না তা না, সময় দিতো। কিন্তু মা তো মাই তাই না?? মাই তো সব শিখায়। বাবা আমাকে সব সময় কোন কিছু চাওয়ার আগেই সব এনে দিতেন। তাই হয়তো আমি একটু অহংকারী হয়ে পরেছি। আর একটা মেয়ের মা ছাড়া বড় হওয়া কতটা কঠিন তা আমি বলে বুঝাতে পারবো না। আর এতে যদি আমি একটুও অহংকারী হয়ে যাই তাতে কি আমার দোষ আছে বলো??
আবিরঃ একটুও না। সত্যিই তোমাকে আমি একটুও বুঝতে পারিনি। আমাকে মাফ করে দিও।
রিয়াঃ জানো তুমিতো বাবা মা দুজনের আদর পেয়েছো আর আমি শুধু বাবার। মা কেমন হয় তা জানতাম না। বিভিন্ন গল্প পরে মা কেমন হয়, মায়ের আদর যত্ন কেমন হয় জেনেছি। খুব ইচ্ছে হয় কেউ যদি মায়ের মতো আদর করতো।
এদিকে রিয়ার এভাবে মায়ের কথা শুনে আবিরের মনটাও অনেক খারাপ হয়ে যায়। মাকে ছাড়া থাকাটা আসলেই অনেক কঠিন। রিয়া আবিরকে জড়িয়ে ধরে সাথে আবিরও। এবার আর কোন সমস্যা নেই তাদের মাঝে। মন থেকেই দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরেছে। দুঃখ – কষ্টগুলো সব একে অপরের মাঝে ভাগাভাগি করে নিচ্ছে।
এদিকে,
রিয়ার বাবাঃ রফিক সাহেব কাজ শুরু করে দিন। দলিলটা আমি খুব তারাতারি চাই। এটা আমার মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য। কারণ সামনে খুব বড় বিপদ আসছে। আপনি জলদি কাজ শেষ করুন।
লোকঃ স্যার এতো তারাতাড়ি করাটা কি ঠিক হবে??
বাবাঃ হবে রফিক সাহেব হবে। আমার তার প্রতি আমার চেয়েও বেশি বিশ্বাস আছে। আপনি তারাতাড়ি দলিলটা রেডি করুন। রাখছি। মা রিয়া …আবির বাবা….কই তোরা??
আবিরঃ রিয়া আঙ্কেল ডাকছে ছাড়ো।
রিয়াঃ আরেকটু জড়িয়ে ধরে থাকি না ভালো লাগছেতো।
আবিরঃ তোমার এভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরতে লজ্জা করে না বুঝি??(মজা করে)
রিয়াঃ মনের মানুষকে কাছে টেনে নিতে কিসের লজ্জা।
আবিরঃ আমি তোমার মনের মানুষ??
রিয়াঃ নাহ। তুমি কেন হতে যাবে। ওইযে ওই বাসার ছেলেটা আমার মনের মানুষ। দেখি ছাড়ো আমাকে কতক্ষণ যাবত আমাকে ধরে রেখেছে। চলো খেতে চলো। উফফ।(রসিকতা করে)
আবিরঃ যাহ বাবাহ। আমি কখন ওকে ধরে রাখলাম। মেয়েটাও না। কিভাবে মনটাকে ভালো করে দিতে হয় তা বেশ জানে। কিন্তু নিজের ভিতরে কত কষ্ট লুকিয়ে রাখে।
রিয়াঃ কি আসবে না??নাকি আবার জড়িয়ে ধরার ইচ্ছা আছে?? (মজা করে)
আবিরঃ না না আসছি। পাগল মেয়ে। হাহা।
আবিরের হাসিটা কিন্তু রিয়ার চোখ এড়ালো না। কিছু সময় মুগ্ধ হয়ে দেখে ওকে নিয়ে নিচে চলে আসে খেতে।
রিয়ার বাবাঃ কিরে সেই কখন গেলি আসার কোন নাম নেই??
রিয়াঃ না মানে বাবা হয়েছে কি। (লজ্জা পাচ্ছে)
বাবাঃ হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না। তাহলে আজ আর খাওয়াই হবে না। হাহা। তা আবির বাবা এখন কেমন লাগছে??
আবিরঃ আঙ্কেল…
বাবাঃ বাবা…আঙ্কেল বলতে না করেছি না। তুমিও আমাকে বাবা বলে ডাকো। আঙ্কেল ডাকটা কেমন পর পর লাগে।
আবিরঃ আচ্ছা আঙ্ক ওহ সরি বাবা।
বাবাঃ এইতো এখন ভালো লাগছে। তা বলো কেমন লাগছে আমার মেয়ের ভালোব….
রিয়াঃ বাবা কি বলছো???
বাবাঃ মানে আমার মেয়ে রিয়াকে কেমন লেগেছে?? হা হা।
আবিরঃ ওর মতো ভালো মেয়ে আর একটাও হয় না। অন্যের দুঃখটা ঠিকই নিয়ে নিতে পারে শুধু নিজেরটা কাউকে বলে না।
বাবাঃ ঠিক বলেছো বাবা। মা মরা মেয়েটা আমার এমনই। তুমি পারবে ওর সব দুঃখ মুছে দিতে। এটা আমার বিশ্বাস।
আবিরঃ জ্বি বাবা।
রিয়াঃ আমার কোন দুঃখ নাই। আর আমি নাকি পঁচা সবাই বলে।
বাবাঃ নারে মা তারা তোকে নিয়ে হিংসে করে। তুই যে আবিরকে…
রিয়াঃ না বাবা থামলে কেন বলো বলো না। বলেই দেও আজ। (রাগী ভাবে)
বাবাঃ ওকে ওকে সরি। হাহা
আবিরঃ রিয়া কি আমাকে বাবা??
বাবাঃ তা বলা যাবে না তাহলে আমার খবর আছে। রিয়ার দিকে তাকিয়ে।
আবিরঃ আচ্ছা।
অবশ্য আবির বুঝতে পেরেছে যে রিয়া ওকে অনেক ভালোবাসে। কারণ কাউকে ভালো লাগলে কেউ জড়িয়ে ধরে না। কিন্তু ভালোবাসার মানুষকেই শুধু জড়িয়ে ধরা যায়।
এরপর সবাই খাওয়া শেষ করে ঘুমাতে চলে যায়। আবির মনটা এখন ভালো কিন্তু ও খুব ক্লান্ত থাকায় নরম বিছানায় শুয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পরে। কিন্তু মাঝ রাতে হঠাৎ….
চলবে…?