ছায়া সঙ্গী(part ৫)
নাহার
পিউ বুঝতে পারছিল না ভূতের এবর্সন কীভাবে করাবে। কিন্তু অনেক কষ্টে অকে রাজি করিয়েছি অন্তত চেষ্টা করে দেখার জন্য। এখন মোহনা রাজি হচ্ছেনা।বাসা থেকে বের হলেই নাকি ভূতটা ওকে মেররে ফেলবে। আমি পিউ এর সাথে কথা বলে মোহনার খাবারে মেডিসিন মিশিয়ে দিলাম।
তারপর অনেক্ষণ হয়ে গেল কিন্তু মোহনার আচরণে কোনো পরিবর্তন হচ্ছিলো না। আমি বারবার মোহনাকে জিজ্ঞেস করলাম ওর পেটে ব্যথা হচ্ছে কিনা। ও বারবার ই বলল যে কোনো ব্যথা হচ্ছে না। আমি বুঝতে পারলাম মানুষের মধ্যে যে অসুধ খাটে সেটা হয়ত ভূতেরেদের মধ্যে খাটেনা। নিজের ঘরে এসে আমি ডায়েরীটা নিয়ে পড়া শুরু করলাম।
এখন ইশিতার লেখা পড়ছি-
মিস্টার ডেভিডের ডায়েরীটা আমি প্রাচীন এক জাদুঘর থেকে চুরি করেছি। আমার প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল এটার প্রতি। চুরি করা ভাল না হলেও আমায় করতে হল। আমি ওদের অনেক উচ্চমূল্য দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তবুও তারা রাজি হল না। এক প্রকার বাধ্য হয়েই এটা চুরি করতে হল। এখন আমি এটাতেই লেখছি। প্রাচীন ডায়েরীতে লেখার সুখ অন্যরকম।
ওর সুখ নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই আমি ২/৩ পাতা পর থেকে পড়া শুরু করলাম।
ডায়েরীতে কী লেখা আছে তার ব্যাপারে আজ আমি আমার সব থেকে প্রিয় বন্ধু মোহনাকে জানিয়েছি। ও এইসব ব্যাপারে প্রচন্ড ইন্টারেস্টেড ও পারলে এখনি সুন্দরবন চলে যায়। কিন্তু আমি বলেছি এটা করা ঠিক হবে না। আমাদের ও ক্ষতি হতে পারে। কে শোনে কার কথা। ব্যাপারটা গোপন রেখেই আরো কিছু ফ্রেন্ডস দের সাথে নিয়ে ও সুন্দরবন ট্যুর এর ব্যবস্থা করে ফেলল। কৌতুহল আমার ভিতরেও আছে তাই অগত্যা আমায় ওর সাথে যেতেই হবে।
কিছুদূড়েই বিশাল সমুদ্র। সমুদ্র আর আকাশ এর মিলন ঘটেছে। সেই অদ্ভুত প্রাণিটার দেখা পাই বা না পাই সুন্দরবন আসা আমাদের স্বার্থক। এখানকার বেশিরভাগ গাছ গুলোই প্রবল ভাবে অভিযোজিত হয়েছে। অনেক গাছের ই বীজ ফল অবস্থায় গাছে থাকতেই অঙুরিত হয়। তারপর একসময় ভারী হয়ে নিচে কর্দমাক্ত মাটিতে পরে আটকে যায়। এটা না হলে হয়ত জোয়ার ভাটার কারণে কোথায় ভেসে যেত।
আমাদের অই প্রাণিটাকে দেখতে হলে রাতে বের হতে হবে। দিনে অই প্রণি বের হবেনা। কারণ সেটা আলো ভয় পায়। আমি আর মোহনা একই তাবু নিয়েছি। রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে খুব সাবধানে আমরা বের হলাম।
চারিদিকে অন্ধকার। আমাদের দুজনের হাতে দুটো টর্চ আমার কাছে একটা প্রাচীন ম্যাপ। মিস্টার ডেভিড যে রাস্তা দিয়ে হাটাচালা করতেন সেটা এখন কণ্টকাকীর্ণ। তবুও আমাদের সেই রাস্তাই ব্যবহার করতে হচ্ছে। অন্য রাস্তায় গেলে সেই অদ্ভুত প্রাণির দেখা যদি না পাওয়া যায়। হাটতে হাটতে পা ব্যথা হওয়ার পর আমরা সমুদ্রের কাছে পোঁছালাম। এখন জোয়ার চলছে। গর্জন দিয়ে সমুদ্র বারবার নিজের মহত্ত্ব ঘোষণা করছে।
আমরা অবশ্য সেদিকে কান দিচ্ছিনা। হাটতে থাকছি সমুদ্রের তীর ঘেষে। জলদস্যুদের নিয়ে ভয় আছে কিন্তু আমাদের কাছে ইলেক্ট্রনিক টর্চ।যেগুলায় সুইচ টিপলেই সামনে থাকা জিনিসটায় ২২০ ভোল্ট এর কারেন্ট লাগে। আমি বানিয়েছি,নিজের সিকুউরিটির জন্য। একটা মোহনাকেও বানিয়ে দিতে হয়েছে। আমার সব কিছুতেই নাকি ওর ভাগ। আমরা সারারাত সমুদ্রের তীরে হাটলাম কিছুই দেখতে পারলাম না। ভোর হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই। সবাই জেগে উঠলে আমরা কোথায় তাই নিয়ে কানাকানি শুরু হয়ে যাবে। তাই আমরা সাবধানে তাবুতে ফিরে এলাম।
সারাদিন সুন্দরবন এ হরিণ বাঘ ভাল্লুক ইত্যাদির ছবি তুলে ফিরল সবাই। আর আমরা দুজন ঘুমিয়ে কাটালাম। আমরা এমনি বেশ ঘুম কাতুরে। তার উপর আবার গতকাল ঘুম হয়নি। যাইহোক গতকাল রাতের মত আজ রাতেও সবাই গুউমানোর পর আমরা বেড়িয়ে পড়লাম। হাটতে হাটতে যখন সমুদ্রের তীরে পৌঁছেছি তখন ই হঠাৎ মোহনাকে অস্বাভাবিক লাগা শুরু করল। ও বারবার বলছে ও যেন কিছু অনুভব করছে। কিন্তু আমি এমন কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না।আমি ওকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম কিন্তু ও শান্ত না হয়ে আমার পিছনে অদ্ভুতভাবে তাকালো। মোহনার হাতের টর্চটা ভয়ে ইতিমধ্যে ই পরে গেছে।
আমার টর্চটা মোহনার দিকে তাক করা ওকে ভয় পেতে দেখে আমি অন্যদিকে টর্চ ঘুরালাম সেখানে কিছু নেই। অথচ মোহনা ক্রমাগত চিৎকার করছে সে নাকি নীল প্রাণিটা দেখছে। আমার মনে পড়ল আলোয় ওটা দেখা যায়না আমি আলো নিভালাম।আর সাথে সাথে ধুয়ার কুণ্ডলী পাকানো একটি মানবসদৃশ কিছু একটা সামনে দেখতে পেলাম। যার ধোয়া গুলো ক্রমাগত নড়ছিল। জানিনা সেটি মোহনাকে কেন অদ্ভুত ভাবে দেখছিল। আমি তখন বোধ শক্তি শূন্য হয়ে গেছিলাম। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি আমার মাথার পিছনে হাত রাখল আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম। আমার শুধু একটা কথাই মনে আসছিল এখন মোহনা যতই চিৎকার করুক।
আমাদের বাঁচানোর মত কেও নেই।আমার যখন জ্ঞান ফিরল তখন ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। আমার মাথায় তখন এলটাই চিন্তা কাজ করছিল মোহনা কোথায়। আমি আমার চারিদিকে তাকালাম মোহনা কোথাও নাই। হঠাৎ একটা গাছের নিচে আমি মোহনাকে দেখতে পাই। একদম নগ্ন হয়ে পড়ে আছে মোহনার দেহটা। সারা শরীরে দাগ খামছি কামড়ের। রক্তে ভেসে গেছে চারিদিক। আমি নিজের উড়না দিয়ে ওকে কভার করলাম। ওর পালস চেক করে বুঝলাম বেঁচে আছে কিন্তু কোনো জ্ঞান নেই। সমুদ্রের পানি এনে ওর চোখেমুখে ছড়িয়ে দিলাম।মোহনার জ্ঞান ফিরল। ও কিছু বলতে চাচ্ছিলো। কিন্তু আমি ওকে কিছু বলতে দিলাম না। আমাদের তাড়াতাড়ি তাবুতে ফিরা জরুরি। আমার উড়না টা ছাড়া ওর গায়ে আর কোনো সূতাও নেই।
আসেপাসেও কাপড় দেখছিনা।এই অবস্থায় অকে কেও দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে। তাই এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি পারা যায় কেটে পরাই ভাল।তাড়াতাড়ি ওকে নিয়ে তাবুতে ফিরে এলাম। হাটতে পারছিলো না। আমি সাপোর্ট দিচ্ছিলাম। ওর সাথে কি হয়েছে আমার বুঝতে অসুবিধা হল না। কিন্তু অই জিনিসটা ওর সাথে এটা কীভাবে করল? তাবুতে ফিরার কিছুক্ষণের মধ্যেই মোহনা জ্ঞান হারালো আবার। আমি একটা কাপড় ভিজিয়ে ওর সারা শরীর মুছে দিলাম। ওর ক্ষত গুলায় এন্টি সেপ্টিক লাগায়ে দিলাম। আচ্ছা মোহনা কি অই জিনিসটা কর্তৃক রেইপড হয়েছে? নাকি কোনো জলদশ্যু ছিল। কিন্তু জলদশ্যু ত আমায় ছেড়ে দিবেনা!
লর্ড ডেভিড এর কথা মনে পরল তার সাথেও তো এমনি হয়েছিল। হয়ত সন্তান উৎপাদন করার জন্যই এরা মানুষের সাথে শারিরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। কিন্তু ওরা ত নিজেদের মধ্যেও এটা করতে পারে। আমার মাথা কাজ করতেছিল না। হঠাৎ দেখি একটা মশা মোহনার চারিদিকে পিন পিন করছে। আচ্ছা মশা কামড়ালে ত ম্যালেরিয়া হয়। ম্যালেরিয়া মশার শরীরে সাচ্ছন্দে বসবাস করতে পারে। কিন্তু তারা মানুষেত শরীর ব্যবহার করে জীবন চক্র সম্পন্ন করার জন্য। অই অজানা প্রাণিটিও হয়ত একই কারণে মানুষের শরীর ব্যবহার করছে।মোহনার জ্ঞান ফিরল। সাথেসাথেই ও চিৎকার করা শুরু করল সাথে বিলাপ। যার কোনো অর্থই আমার বোধগম্য হলনা। একটু ধাতস্থ হওয়ার পর মোহনা বিবরণ দিলো পৃথিবীর এক বিশাল রহস্যের। ও বলল,,,,
#চলবে।
প্রিয় পাঠক আপনারা যদি আমাদের (গল্প পোকা ডট কম ) ওয়েব সাইটের অ্যাপ্লিকেশনটি এখনো ডাউনলোড না করে থাকেন তাহলে নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করে এখনি গল্প পোকা মোবাইল অ্যাপসটি ডাউনলোড করুন => ??????
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.golpopoka.android