ছায়া সঙ্গী(part ৪)
#নাহার
সামনে আধহাত দূড়ে একটা নীল অববয়ব দাড়িয়ে। যার নিজের শরীর থেকেই নীল আলো ঠিকরে বের হচ্ছে।ডেভিড প্রচণ্ড চমকে হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন অবয়ব টার দিকে। শরীরের গঠন বলে দিচ্ছে এটা কোনো নারী। কিন্তু এ মানুষ না তা বুঝা যাচ্ছে। ডেভিড খুব কষ্টে তার অপর সৈনিক কে ডাকলেন কিন্তু সে সেখানে ছিলো না। সঙে আনা আলো গুলো নিভে গিয়েছিলো। সেই নারী অবয়বটি ডেভিডকে তার সাথে মিলিত হতে বাধ্য করে। এরপর ডেভিডের আর কিছুই মনে নেই। খুব সকালে তাকে সমুদ্রের উপকূল থেকে উদ্ধার করে কিছু মাঝি। তারপর থেকেই তার খারাপ দিন শুরু হতে থাকে। তিনি মাঝেমাঝে ই সেই নীল অবয়বটি দেখতে পেতেন। অইটার পেট আস্তে আস্তে ফুলতে থাকল।
তিনি কোনো মেয়ের সাথে কথা বললে ইভেন তাকালেও সেই মেয়ের লাশ পরেরদিন সমুদ্রে ভাসতে দেখা যেত। তার স্ত্রী ভয়ে দেশ ত্যাগ করে। তিনি প্রচন্ড বিষন্নতায় আক্রান্ত হোন।তবুও এইভাবেই তার দিন চলতে থাকে। একদিন তিনি দেখেন অই নীল অবয়বটা হাত দিয়ে আরেকটি নীল অবয়ব ধরে রেখেছে। সেটা যেন ঠিক আগেরটার মত। কিন্তু আকারে শিশু। তার মনে ক্ষীণ সন্দেহ হতে থাকল এই ভৌতিক বাচ্চাটার পিতা হয়ত সে নিজেই। এই জিনিসগুলা আলো সহ্য করতে পারত না আর তাকেও আলোর কাছে যেতে দিত না। এসব পরাভৌতিক জিনিস কাওকে বললে বিশ্বাস করত না। উল্টো লোকে তাকে পাগল ভাবতে শুরু করে। রাগে দুঃখে লজ্জায় তিনি আত্মহত্যা করেন।
রুদ্ধশ্বাস এ এই কাহিনী টুকু পড়ার পর আমার বুঝতে এতটুকুও অশুবিধা হলনা আমার মোহনার সাথে কি হচ্ছে। আর যা হচ্ছে তার জন্য আমার মোহনা মোটেও দোষী নয়। আমার মোহনাকে আমাকেই ঠিক করতে হবে যেভাবেই হোক।
ডায়েরীর বাকি অংশে ইশিতার হাতের লেখায় ভর্তি ও কি লিখেছে আমি তা পড়ার জন্য ভীষণ ব্যাগ্র হয়ে আছি। কিন্তু আমায় প্রচণ্ড ঘুম গ্রাস করে ফেলল। আজ আর আমার পক্ষে কিছু পড়া সম্ভব না। কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। একটা সকালের অপেক্ষা সকালটা যেন ভাল হয় আল্লাহ তুমি সহায় হয়ো।
খুব সকালে পাখির কিচিড়মিচিড়ে ঘুম ভাঙল আমার। ঘুম যেন আমার ক্লান্তিগুলো আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। কাল তিনটার পর ঘুম এসেছি আর এখন সাড়ে পাঁচটা বাজে। চারিদিকে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। হঠাৎ খেয়াল হল আমার ঘরে ইলেক্ট্রিসিটি নেই। এটা এই বাড়িতে হওয়া অসম্ভব কারণ এখানে একটা আইপিএস আর একটা জেনারেটর আছে। বিদ্যুৎ গেলে প্রথমে আইপিএস এবং তারপর জেনারেটর জলবে।
কিন্তু বাস্তবে ঘরে কোনো লাইট জলছে না আর আমি এখনো অক্ষত আছি দেখে আমার ভাল লাগল কিন্তু পরক্ষণই মোহনার চিন্তা আমায় গ্রাস করে ফেলল। নিজের ফোন দিয়ে দাড়োয়ান আপাকে বললাম তাড়াতাড়ি জেনারেটর অন করতে। রাতে নাকি খুব ঝড় হয়েছে আর তাতেই ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেছে ।
আই পি এস এতগুলা লাইটের লোড নিতে না পেরে অফ হয়ে গেছে আর তিনি ঘুমিয়ে গেছিলেন জন্য জেনারেটর চালাতে পারেন নি। আমার প্রচণ্ড রাগ হচ্ছিল তার উপর। কিন্তু এখন রাগ করে লাভ নেই। তিনি কয়েক মিনিটের মধ্যেই জেনারেটর চালালেন। আর পুরো বাড়ি আলোকিতো হয়ে গেল। আমি এক প্রকার ছুটে মোহনার ঘরে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি মোহবা অচেতন অবস্থায় পরে আছে। তার সারা শরীরে মাইর এর দাগ। কোথাও খামচির তো কোথাও থাপ্পড়ের। শরীরের বিভিন্ন অংশ লাল নীল হয়ে আছে। এখনো ভোরের আলো ঠিক ভাবে ফুটেনি। তাই ওকে নিয়ে বাইরে যাওয়া সম্ভব না।
তবে আমার উপর ও আক্রমণ হতে পারে।
আমি কাজের মহিলাকে বললাম তাড়াতাড়ি পানি আনতে আর ছুটে গেলাম শশুর আব্বার ঘরে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি পুরো ঘর তছনছ অবস্থায়। আর আমার শশুর আব্বা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছেন। হার্টবিট নিশ্বাস চেক করে বুঝতে পারলাম তিনি আর বেঁচে নেই।
সারা বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শশুর আব্বুর উকিল ফ্রেন্ড এসেছেন। সব সম্পত্তি নাকি তিনি আমার নামে করে দিয়ে গেছেন! জীবন বাঁচেনা আমি সম্পত্তি দিয়ে কি করব?
পোস্ট মোর্টাম রিপোর্টে এসেছে তার হার্ট অস্বাভাবিক ভাবে পুড়ে গেছে। হার্ট পুড়তে হলে প্রথমে বুকের চামড়া পুড়তে হবে। কিন্তু তা হয়নি শুধু হার্ট ই পুড়েছে। ডাক্তাররা কেও বুঝতে পারছে না এটা কীভাবে সম্ভব কিন্তু এটাই হয়েছে।
আমি বুঝতে পারছিনা আমি কীভাবে বেঁচে আছি। মোহনাকে হয়ত এইজন্যে ছেড়েছে কারণ ওর পেটে অই ভূতের একটা অংশ আছে। কিন্তু আমাকে ছেড়ে দেওয়ার ত কোনো কারণ দেখছি না। অবশেষে আমি কারণটা খুজে পেলাম। রাতে আমার পড়তে অসুবিধা হচ্ছিল বলে একটা ছোট টর্চ জ্বালিয়ে রেখেছিলাম ঠিক আমার মাথার উপরে। হয়ত সেটার কারণেই আমি আজ বেঁচে গেছি। সেটা এখনো ক্ষীণ আলো দিচ্ছে।
আমার শশুরের ব্যবসাপাতি আমায় ই সামলাতে হবে। কিন্তু আমি তার উকিল বন্ধুকে একমাস এসব সামলাতে বললাম। এই একমাসে আমার অনেক কাজ কর্যে হবে। শশুরমশাই এর দাফন কাফনের ব্যবস্থা করলাম। তারপর নিজের বাড়ি ফিরে এলাম। মোহনা কে ডাক্তার দেখানো হয়েছে কিন্তু ও যখন থেকে শুনেছে ওর বাবা মারা গেছে তখন থেকে ও অদ্ভুত ভাবে একই যায়গায় বসে আছে। নাড়া চড়া দূড়ের কথা চোখের পাপড়িও ফেলছেনা।
আমি মোহনার কাছে গেলাম ওকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু কে শোনে কার কথা ও আমার উপর ভীষণ ভাবে ক্ষেপে আছে যেন সব কিছুর জন্য আমি ই দায়ী। ও আমায় বলল আমার জন্য নাকি এসব হয়েছে। আমি যদি পণ্ডিতি করে ওকে ডাক্তারের কাছে না নিয়ে যেতাম আর ইশিতার ব্যপারে খবরাখবর না নিতাম তাহলে নাকি এসব কিছুই হতনা। অই ছায়াটা নাকি আমার উপর ক্ষেপে যেয়েই মোহনার বাবাকে মেরে ফেলেছে।
আমার ভীষণ অনুশোচনা হচ্ছিলো কথাগুলো শুনে।আমি এরকম চাইনি।
কিন্তু সত্যি যখন এরকম হয়েই গেছে আমি এই প্রবলেম সলভ করে ছাড়ব নিজের জীবন দিয়ে হলেও। মোহনাকে বললাম রেডি হতে আমি ওকে হসপিটালে নিয়ে যাব। ও কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। আমি ওকে আসল কারণ বলিনি বলেছি রেগুলার চেক আপের জন্য যেতে হবে। আসল কারণ হচ্ছে আমি চাচ্ছি ওর এবর্সন করাতে। পিউ বুঝতে পারছিল না ভূতের এবর্সন কীভাবে করাবে। কিন্তু অনেক কষ্টে অকে রাজি করিয়েছি অন্তত চেষ্টা করে দেখার জন্য। এখন মোহনা রাজি হচ্ছেনা।বাসা থেকে বের হলেই নাকি ভূতটা ওকে মেররে ফেলবে। আমি পিউ এর সাথে কথা বলে মোহনার খাবারে মেডিসিন মিশিয়ে দিলাম।
তারপর,,,,
#চলবে
Lubna Nahar
প্রিয় পাঠক আপনারা যদি আমাদের (গল্প পোকা ডট কম ) ওয়েব সাইটের অ্যাপ্লিকেশনটি এখনো ডাউনলোড না করে থাকেন তাহলে নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করে এখনি গল্প পোকা মোবাইল অ্যাপসটি ডাউনলোড করুন => ??????
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.golpopoka.android