ছায়া সঙ্গী(part ৩)

0
1713

ছায়া সঙ্গী(part ৩)
নাহার
পিছন থেকে কেও একটা ভীষণ শীতল হাত আমার ঘাড়ের উপর রাখল। এক অদ্ভুত আতংক গ্রাস করল আমায় আর আমি পিছনে তাকালাম। যা দেখলাম তা আমার হৃদস্পন্দন থামিয়ে দিল। সেই নীল ছায়াটা আমার ঘাড়ে হাত দিয়ে রেখেছে।

 

এতক্ষণ যে স্পর্শ টা আমার কাছে প্রচন্ড রকম শীতল লাগছিল তা হঠাৎ ই আমার কাছে ভীষণ উত্তপ্ত মনে হচ্ছে । যেনো অই হাতটা আমার ঘাড় থেকে না সরালে আমার ঘাড়টা একটা রোস্ট এর মত ফ্রাই হয়ে যাবে। আমার মাথা কাজ করছিল না। আমি যে দৌড়ে পালাব আমার কাছে সেই পথ নেই কারণ আমি এক চুল ও নড়তে পারছিনা। আমার এক হাতে ডায়েরী অন্য হাতে মোবাইল ফোন যেখানে ফ্ল্যাশ জলছে। হঠাৎ আমার মাথায় এল ছায়াটা আলোয় টিকতে পারেনা। তাই খুব কষ্টে হাতটা ছায়াটার দিকে আলো ফেললাম।

 

ছায়াটা সেখান থেকে পালালো কিন্তু পরক্ষণই আমি আমার পিছনে স্পর্শ পেলাম। আমি যেদিকেই আলো ধরছিলাম ছায়াটা অন্য দিক থেকে আমায় এট্যাক করছিলো। এইভাবে এত শক্তিশালী ছায়ার সাথে আমার পারা সম্ভব না। আর এই ঘুটঘুটে অন্ধকার দূর করা একটা ফ্লেশ এর পক্ষে সম্ভব না।

 

আমাকে তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমি ফ্লেশ লাইটটা আমার মাথার উপর ধরলাম যাতে আমার চারিদিকে আলোক বৃত্ত তৈরী হয়। আর অই আলোকবৃত্ত ভেদ করে ছায়াটা যেন আমায় ছুতে না পারে। আর এইভাবেই আমি দৌড়াতে শুরু করলাম। আস্তে আস্তে লোকালয় এ চলে আসলাম। কিছু কিছু মানুষ আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকাচ্ছিলো আমি গাহ্য করলাম না। কারণ এখন এটা গ্রাহ্য করার সময় না।

 

তারা নিশ্চই আমায় পাগল ভাবছে। কিন্তু আমার কিছু করার নেই জীবন বাঁচাতে না হয় পাগল ই হলাম। আমি শহরে পৌঁছেছি। চারিদিকে নানা রঙের আলোক বর্ণালি। কিন্তু নিজের মাথার উপর থেকে ফ্লেশ সরানোর ক্ষমতা আমার নেই। আমার হাত যেন জ্যাম হয়ে গেছে। তারাও যেন জানে বাঁচতে হলে দৌড়াতে হবে আর ঠিক এই ভাবেই। এক হাতে ডায়েরী অন্য হাতে ফ্লেশ সহ মোবাইল এবং একটা অর্ধেক পুড়ে যাওয়া শার্ট পড়া একজন লোককে দেখতে নিশ্চই শহরবাসীর ভীষণ বিধঘুটে লাগছিল। কিন্তু আমি দৌড়াচ্ছি যতক্ষণ অবধি মোহনার বাড়িতে না পৌছাই। দূরত্বটা কম হলেও আমার মনে হল আমি একটা মরুভূমি অতিক্রম করলাম।

 

বাসায় ঢুকতেই দেখি দাড়োয়ান আপা হাই তুলে তুলে ঘুমাচ্ছেন। আমি এইযে ডাকছি গেট খুলছেনা। উল্টা বলছে এই সময়ে নাকি ভিক্ষা দেয়না। নিজের প্রতি নিজেরি করুণা হওয়া শুরু করল। এই মহিলা ত দেখি আমার দিকে তাকাচ্ছেনা অবধি গেইট খুলবে কি? আমি গেটের সামনে বড় লাইটটার নিচে দাড়িয়ে মোহনার বাবাকে ফোন করে বললাম দাড়োয়ান গেইট খুলছেনা। আমার ফোন পেয়ে যেন তিনি আত্মায় পানি পেয়েছেন।

 

তিনি দাড়োয়ানকে ফোন না করে নিজেই নেমে এলেন গেইট খুলতে। তাকে দেখে দাড়োয়ান আপাও দাড়িয়ে গেছেন। তারপর তাকে দিয়ে গেইট খুলিয়ে তিনি আমার দিকে তাকালেন। দাড়োয়ান আপা ইতিমধ্যে বেশ কয়েক দফা বকা খেয়ে কাঁচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছেন।শশুর মশাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। যেন কোনো ভূত দেখেছেন। তারপর গম্ভীরভাবে জিজ্ঞেস করলেন আমার এই অবস্থা কিভাবে হল? আমার ঘাড় এমন ভাবে পুড়েছে যেন সেখানে কেও এসিড রেখেছিল। তিনি আমার জন্য বাসায় ডাক্তারের ব্যবস্থা করলেন। কারণ রাতের বেলা আমার পক্ষে বাইরে যাওয়া ভীষণ ক্ষতিকর হতে পারে।

 

ডাক্তার এসে বিভিন্ন অষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিল। আমায় রেস্ট এ থাকতে বলল। আমি আমার শশুরমশাই কে ডেকে বললাম তার মেয়ে যতদিন না সুস্থ হচ্ছে ততদিন আমি তার সাথে এক ঘরে থাকব না। উনার মুখেও কোনো রা নেই। তিনি আমার জীবনটা যে ভয়ানক সংকটে ফেলে দিয়েছেন তা নিয়ে নিজেই ভীষণ দুঃখে আছেন। এখন যদি আমি তার কাছে আইফেল টাওয়ার দাবী করি সেটাও হয়ত তিনি আমায় দিবেন। যাইহোক আমি তাকে পুরো কাহিনী আদ্যপ্রান্ত বুঝিয়ে বললাম। তারপর বললাম এই বাড়িতে যেন কখনোই অন্ধকার না হয়। মোহনা বা আমার আশেপাশে ত কক্ষনো না। তিনি আমার কথায় সায় দিয়ে একটা এক্সট্রা জেনারেটর এর ব্যবস্থা করলেন। কারেন্ট গেলে আইপি এস জলবে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই জেনারেটর।সমস্ত ব্যবস্থা ই আমার ভাল লাগছিল। নিজের পুরো ঘা টা ভীষণ জালা করছে।

 

সেটা না হলে আমি কাল ই সুন্দরবন এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যেতাম। কিন্তু এখন এই শরীর নিয়ে আমার পক্ষে এক পা ও হাটাহাটি করা সম্ভব না। তাই নিজের ঘরে আরাম কেদারায় ছুয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছি। আমার কিছুদিন থেকে অনিদ্রা হয়েছে। খুব ঘুম পায় মনে হয় চোখ খুলে রাখতে পারিনা কিন্তু আমার মস্তিষ্ক সজাগ থাকে। আমি বুঝতে পারি যে আমি ঘুমাই নি।এইভাবে অনেক্ষণ থাকার পর আমার নিজের প্রতি বিরক্তি এসে গেল। নিশ্চই কোনো কিছু নিয়ে আমার স্নায়ু উত্তেজিত হয়ে আছে যেটা আমার ঘুমকে প্রতিহত করছে। আমি উঠে পড়লাম এইভাবে ঘুমানো সম্ভব নয়। রান্নাঘর থেকে এক কাপ ব্লেক কফি বানিয়ে এনে নিজের ঘুম দূর করলাম। ভেবেছিলাম ডায়েরীটা কাল দিনে পরব। আজ সারাদিন প্রচণ্ড ধকল গেছে। কিন্তু তা আর হয়ে উঠলো না।এই ডায়েরীটাই হয়ত আমায় ঘুমুতে দিচ্ছেনা। বিছানার উপর বসে মেলে ধরলাম ডায়েরীটা। প্রাচীন কাগজে লিখা। প্রথম কিছু অংশ দোয়াত কলমে লিখা হবে। ডায়েরীর উপর পরিচয় দেয়া। ডায়েরীটা প্রায় দেড়শত বছর আগের। তৎকালীন খুলনার নীলকরের প্রধাণ লর্ড ডেভিড এর।প্রচণ্ড অত্যাচারী শাসক ছিলেন লর্ড ডেভিড। তিনি নিজেই নিজের ডায়েরীতে এটা লিখেছেন। তার শাস্তি দেয়ার পদ্ধতি এমন ছিল যে তিনি মানুষের ছাল ছিলে সেখানে লবণ আর মরিচ গুড়া ঢুকিয়ে দিতেন।খাজনা আদায়ে দেরী হলে প্রচণ্ড মার ধর করতেন। তার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অনে কৃষক অকালে মারা যায়। কিন্তু পঞ্চাসোর্ধ বয়সে এসে তিনি ঠাণ্ডা হয়ে যান। তার ঝোক পরে যায় এডভেঞ্চার এ। কাছেই সুন্দরবন তার সাথে সমুদ্র সব কিছুর প্রতি এক অদ্ভুত আকর্ষণ অনুভব করতে শুরু করেন। কিন্তু এই আকর্ষণ ঈ তার কাল হয়ে দাড়ালো।

 

তিনি দিন নেই রাত নেই সুন্দর বনে পড়ে থাকতে লাগলেন। বাঘ, ভাল্লুক, সিংহ বিভিন্ন জানোয়ারের ভয় ছিল কিন্তু তিনি সাথে করে সৈনিক এবং গ্রামের লোক নিয়ে যেতেন।সাথে বিভিন্ন অশ্র ত থাকতই। তার বিপদ হলে সেদিকে গ্রামের লোকদের ঠেলে দিতেন নিজে বেঁচে যেতেন। তার নেশা এতই বেড়ে গিয়েছিল যে তিনি দিনে যাওয়ার পাশাপাশি রাতেও যাওয়া শুরু করলেন। প্রকৃতীর কুলে বসে থাকতে নাক তার ভাল লাগত। মাঝেমাঝে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতেন সমুদ্রের তীরের ডেউ এর দিকে। রাতের বেলা ফসফরাসের কারণে ঢেউ গুলো জলজল করত যা তার রাতে সমুদ্রের প্রতি আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছিল।এমনি একদিন তিনি রাতে বেড়িয়েছেন সমুদ্রের তীরে। অমাবস্যা বলে স্থানীয় কাওকে ভয় দেখিয়েও আনা যায়নি।

তাই তিনি সাথে দুজন সৈন্য নিয়েই বেড়িয়েছেন। মানুষ কম তাই জঙলে যাওয়া হয়নি। সমুদ্রের তীর ঘেষে হাটছেন তার সৈন্য একজন পিছনে একজন সামনে। হঠাৎ তিনি পিছনে তাকিয়ে বিস্ফারিত হয়ে গেলেন।
#চলবে

প্রিয় পাঠক আপনারা যদি আমাদের (গল্প পোকা ডট কম ) ওয়েব সাইটের অ্যাপ্লিকেশনটি এখনো ডাউনলোড না করে থাকেন তাহলে নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করে এখনি গল্প পোকা মোবাইল অ্যাপসটি ডাউনলোড করুন => ??????

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.golpopoka.android

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে