ছায়া সঙ্গী  part 2

0
1849

ছায়া সঙ্গী  part 2

#নাহার
পিউ নিজের চশমাটা খুলল চোখ থেকে। তারপর উড়না দিয়ে মুছে আবার কম্পিউটারের দিকে তাকালো। মেয়েটা বাকরুদ্ধ হয়ে আছে। আমি জানতে চাইলাম কি হয়েছে পিউ যা বলল তাতে আমার রক্ত হীম হয়ে গেল। মোহনার পেটে কোনো বাচ্চা দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু কিছুটা যায়গা জুড়ে ধোয়ার মত কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। আমার মাথা কাজ করছে না। এসব হচ্ছে টা কি? পিউ নিজেও কিছু বুঝতে পারছেনা। আমি পিউ এর কাছে জানতে চাইলাম ধোয়াটার রঙ কেমন। পিউ বলল আল্ট্রাসোনোগ্রাফি তে সব সাদাকালো দেখায় তাই সে এক্সাক্ট রঙ বলতে পারবেনা। আমার গলার পানি শুকিয়ে গেছে শেষপর্যন্ত আমি একটা ভূতের বাচ্চার বাবা হলাম? অসম্ভব।

 

আমি মোহনাকে নিয়ে বাড়ি চলে এলাম। এই রহস্য সমাধান করার একমাত্র উপায় আমায় সুন্দরবন যেতে হবে। কিন্তু সুন্দরবন একা একা কীভাবে যাব। আর মোহনা কোথায় গিয়েছিল তা ই বা আমি জানব কীভাবে। আমি ঠিক করলাম মোহনার সাথে সুন্দরবন ট্রিপে মোহনার যে সব ফ্রেন্ডস রা গিয়েছিল তাদের সাথে যোগাযোগ করব। মোহনা হসপিটাল থেকে আসার পর থেকে চুপ চাপ। আমার সাথে কোনোভাবেই কোনো কথা বলছেনা। বাসায় এসেই নিজের ঘরে গেছে সব আলো জালিয়ে খাটের উপর বসে আছে। আর একটু পর পর অদ্ভুত ভাবে কেপে উঠছে। কি যেন বিরবর করছে আমি বুঝতে পারছিনা। আমি মোহনাকে জিজ্ঞেস করলাম ওর কোন ফ্রেন্ড ওর সাথে সেদিন সুন্দরবন গিয়েছিল। ও কিছুই বলেনি। শুধু কাঁপতেই থাকে। আমি বুঝিনা এত কাঁপাকাপির কি আছে। ভূত যদি থেকে থাকে ত আছে। ওর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় ও তবে আছে। আমাদের সেই উপায়টা খুজে বের করতে হবে। কিন্তু সমস্যা হল, ভূত মহাশয় বড়ই মেজাজী। কখন কি ছুড়ে মাথায় মারে তার কোনো ঠিক ঠিকানা নাই। সো সাবধানে থাকতে হবে।

 

আমি মোহনার বাবার কাছে গেলাম জানতে। সব মিলিয়ে মোহনার আরো পাঁচজন মেয়ে ফ্রেন্ড এবং আটজন ছেলে ফ্রেন্ড গিয়েছিল অই ট্রিপে। মোহনা আর একটা মেয়ে একই তাবুতে ছিল। অই মেয়েটার নাম ইশিতা। আমি এখন ইশিতার বাসায় যাচ্ছি। ইশিতার বাসা এখান থেকে প্রায় কিলো দুই এক দূরে।আমি একটা ট্যাক্সি করে সেখানে গেলাম। শশুরের গাড়িতে উঠার সংকোচটা এখনো আমার কাটেনি।ইশিতার বাসায় পৌছতে আমার দশ মিনিটের চেয়েও কম সময় লাগল। যায়গাটা অনেক পুরোনো নীর্জন। নিশ্চই এরা খুব নীর্জনতা প্রিয়। তাই এরকম একটা যায়গায় বাড়ি করেছে। হাটতে হাটতে বাসার কলিং বেল এর কাছে চলে গেলাম। টিপ দিয়ে কলিংবেল বাজানোর অনেক্ষণ পর ও যখন কেও দরজা খুলতে এলোনা তখন রাগে আমি দরজায় একটা লাথ্যি দিলাম। অবাক করার কথা হল সাথে সাথে ই দরজাটা খুলে গেল।
পুরো বাড়িটা অন্ধকার করে রাখা। এখন পড়ন্ত বিকেল সূর্যের আলো খুব ক্ষীণ। তারপর ও এই বাড়িতে ঢুকে বুঝার উপায় নেই এটা দিনের বেলা। মনে হচ্ছে এখন বুঝি মধ্যরাত। আমি আমার ফোনের ফ্ল্যাশ জালিয়ে চারিদিকে দৃষ্টি দিলাম। দুনিয়ার পুরোনো আমলের যত জিনিস থাকতে পারে তার সব কিছুই যেন এই বাড়িতে আছে। আওয়াজ দিতে থাকলাম বাড়িতে কেও আছে কিনা। কিন্তু আমার আওয়াজ যেন এই প্রাসাদতুল্য বাড়িটাতে নারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল।কেও একজন শিড়ি বেয়ে নিচে নামছে এমন আওয়াজ হল আমি সেদিকে তাকিয়ে দেখি একজন অতিশয় বৃদ্ধা মহিলা। আমি তার কাছে গেলাম। তিনি আমি কে কোথা থেকে এসেছি বাড়িতে ঢুকলাম কীভাবে এইসব জানতে চাইলেন। আমি আমার পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলাম ইশিতার কথা। ইশিতার কথা শুনে তিনি ঝরঝর করে কেঁদে দিলেন। তিনি বললেন তিনি ইশিতার মা। আর ইশিতা ছ মাস হল মারা গেছে।

 

ইশিতা যে মারা যেতে পারে এমনটা আমি মোটেও আশা করিনি। বৃদ্ধা মহিলাই বললেন অই ট্রিপের পর ইশিতার আচরণ ভীষণ অদ্ভুত ছিল। ও অন্ধকার সহ্য করতে পারত না। সব সময় আলোতে থাকত। সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করত যেখানে ইশিতা ছিল একজন অত্যন্ত ভদ্র এবং শান্ত মেয়ে। নিজের মেয়ের হঠাৎ এইরুপ পরিবর্তনে তিনি অনেক শংকিত হয়ে যান এবং ইশিতাকে সাইক্রিটিস্ট দেখান। কিন্তু কোনো লাভ হয়না। ইশিতা সুইসাইড করে ফেলে। বৃদ্ধা মহিলা এইসব বলে বিলাপ করে কান্না শুরু করে তাকে কীভাবে শান্তনা দিব তার ভাষা আমার কাছে ছিলোনা তাই আমি সেখান থেকে প্রস্থানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ তিনি আমায় জিজ্ঞেস করলেন আমি এসব কেন জানতে চাচ্ছি তখন আমি মোহনার ঘটনা খুলে বললাম। তিনি আমায় বললেন তার কাছে ইশিতার ডায়েরী আছে। যেখান থেকে হয়ত আমি সেদিনের ট্রিপের ব্যাপারে কিছু জানতে পারি। আমি অনেক খুশি হলাম হয়ত সেই ডায়েরী এই রহস্যের জট খুলবে এই ভেবে। তখন ভদ্র মহিলা হাতের লাটি দিয়ে হাতড়ে হাতড়ে উপরে চলে গেল এবং একটা পুরোনো দিনের ডায়েরী এনে দিল।ডায়েরী টা দেখে মোটেও একুশ শতকের মনে হচ্ছেনা। আমার কেমন যেনো ডাউট হল। উনি নিজেই বললেন ইশিতার এন্টিক জিনিস খুব পছন্দ ছিল। ডায়েরী খাতাটা ইংরেজ আমলের কোনো সাহেবের প্রথম কিছু পৃষ্ঠায় যৎসামান্য তার কিছু লেখাও আছে।

 

 

অই লোকটি ডিপ্রেশন এর কারণে আত্মহত্যা করেন। আমি জানতে চাইলাম মহিলা এই ডায়েরী পড়েছেন কিনা?
উনি উত্তর দিলেন এটা তার কখনোই পড়া হয়নি। আমি তার কাছে বিদায় নিলাম। আমার একটা জিনিস খটকা লাগছিল পুরো বাড়ি অন্ধকার কেন। তাই পিছন ফিরে তার কাছে জানতে চাইলাম। তিনি জানালেন তিনি অন্ধ। বাড়ি অন্ধকার থাকা বা আলোক উজ্জল থাকা তার কাছে সমান। সত্যি ই আমার কমন সেন্স এত্ত কম। মহিলা লাঠি নিয়ে ঘুরছেন তাও বুঝলাম না।
আগেই বলেছিলাম বাড়িটা আমার শশুরবাড়ির কাছেই। আর খুব ই নীর্জণ যায়গা তাই গাড়ি ঘোড়া পাওয়া যাচ্ছিলো না। আমিও আর খুঁজার চেষ্টা করলাম না।তাই আমি আর রিক্সা বা গাড়ি নেই নি। সন্ধার মিষ্টি আলোয় চাইলেই হাটাহাটি করা যায়।আজ যেনো খুব তাড়াতাড়ি অন্ধকার নামছে। হাটলে বিশ ত্রিশ মিনিটের রাস্তা হবে কিন্তু আমার পা চলছে না। সারা রাস্তা ফাঁকা। চারিদিকের গাছা গাছালি এক আদিভৌতিক পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। তবুও পরিবেশটা খুব সুন্দর। পশ্চিমাকাশে লাল আলো খেলা করছে। সাথে হালকা বাতাস। একসময় আমি খুব প্রকৃতি প্রেমী ছিলাম। ভাবতাম এমন ই কোনো পরিবেশে স্বপ্নের রাজকন্না নিয়ে ঘুরব। সাথে থাকবে ডি এস এল আর ক্যামেরা।
তার আর হল কই?
আসে পাশে কোথাও কোনো মানুষ নেই। কিন্তু এক দুই মিনিট থেকে আমার মনে হচ্ছে কেও আমার পেছন পেছন হাটছে। যদিও আমি আমার ফ্ল্যাশ লাইটের আলো পিছনে ফেলে দেখলাম সেখানে কেও নেই। কিন্তু অনুভূতি টা তীব্র। এখন ত পা এর আওয়াজ ও পাচ্ছি। যেন কোনো মানুষ খালি পায়ে হাটছে। রাস্তার কিছু কুকুর তাদের স্বরে ডাকতে ডাকতে পালিয়ে গেল। পিছন থেকে কেও একটা ভীষণ শীতল হাত আমার ঘাড়ের উপর রাখল। এক অদ্ভুত আতংক গ্রাস করল আমায় আর আমি পিছনে তাকালাম। যা দেখলাম তা আমার হৃদস্পন্দন থামিয়ে দিল।
#চলবে

প্রিয় পাঠক আপনারা যদি আমাদের (গল্প পোকা ডট কম ) ওয়েব সাইটের অ্যাপ্লিকেশনটি এখনো ডাউনলোড না করে থাকেন তাহলে নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করে এখনি গল্প পোকা মোবাইল অ্যাপসটি ডাউনলোড করুন => ??????

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.golpopoka.android

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে