#ছায়া_৪র্থ_পর্ব(অন্তিম পর্ব)
#Misk_Al_Maruf
কথা শেষ করার আগেই অন্ধকারে মিলিয়ে থাকা লোকটি দৌড়ে এসে সিয়ামের মাথা বরাবর ভারি কিছু একটা দিয়ে প্রকাণ্ড বেগে আঘাত করে। সাথে সাথেই মেঝেতে লুটিয়ে পরে সিয়াম। কিন্তু অজ্ঞান হবার আগে চিৎকার দিতে ভুলে না সে। কারণ এই চিৎকারের মধ্যেইতো আসল খুনির পরিচয় নিহিত।
গভীর রাতে এমন চিৎকারের আওয়াজ শুনে হিমেলসহ বাড়ির সকলেই ঘুম থেকে জেগে ওঠে। চিৎকারের উৎস খুঁজতে সকলেই নিজেদের রুম থেকে বেড়িয়ে সিয়ামের রুমের দিকে রওনা দেয়। কিন্তু হিমেল সেখানে সিয়ামের কোনো অস্তিত্ব না পেয়ে হঠাৎই সে খেয়াল করে লায়লা বেগম তথা ওর মায়ের রুমের দরজাটি খোলা। কৌতূহলবসত দরজার কাছাকাছি আসতেই হিমেল সিয়ামকে মেঝেতে অজ্ঞান অবস্থায় আবিষ্কার করে। রক্তে যেভাবে মেঝেটা লাল হয়ে আছে তাতে বুঝতে বাকি থাকে না যে আরো কিছুক্ষণ যদি ওকে এভাবে ফেলে রাখা হয় তবে মারাত্মক কিছু ঘটে যেতে পারে ওর সাথে।
হিমেলের ছোট বোনের স্বামী সবুজ সিয়ামের এমন মুমূর্ষু অবস্থা দেখে তৎক্ষনাৎ উত্তেজিত কন্ঠে হিমেলকে বললো,
“তুমি এখনি ওরে হসপিটালে নেওয়ার ব্যাবস্থা করো তানা হইলে খুব খারাপ কিছু ঘইটা যাইবো।”
সবুজের কথামতো হিমেল আর একমুহূর্ত দেরি না করে বেশ হন্তদন্ত হয়ে সিয়ামকে কোলে তুলে নিলো। হিমেল গ্রামের মধ্যে অন্যতম সুদর্শন এবং শক্তিশালী পুরুষ হওয়াতে সিয়ামকে কোলে নিতে ওর তেমন বেগ পেতে হলো না। কিন্তু কোলে নেওয়ার পরমুহূর্তেই হিমেলের চোখ যায় লায়লা বেগমের খাঁটের নিচে থাকা ব্রিটিশ আমলের ট্রাংকটির দিকে। মনে হচ্ছে কেউ যেন সেটির তালাটি ভেঙ্গে ভিতরের জিনিসপত্র চুরি করার চেষ্টা করেছিলো। মুহূর্তেই ওর সামনে সকল কিছু পরিষ্কার হয়ে যায়, বুঝতে পারে এসবের কারণেই সিয়ামের এই অবস্থা করেছে ঐ অজ্ঞাত চোরটি। কিন্তু কে সেই অজ্ঞাত চোর?
সিয়াম আধো আধো ভঙ্গিতে চোখ দুটো খুলতেই খেয়াল করে পাশেই হিমেল বেশ ক্লান্ত অবস্থায় ওর জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় বসে আছে। বুঝাই যাচ্ছে কাল রাতের ঘটনার পর নিজের চোখের পাতা একটুও এক করতে পারেনি। সিয়াম যখনি উঠতে যাবে তখনি সে নিজের মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করে। হিমেল বেশ উৎকন্ঠা নিয়ে বললো,
“আরে উঠিস না, শুয়ে থাক। ডাক্তার বলেছে তোকে বিশ্রাম নিতে।”
সিয়াম ওর কথার কোনো তোয়াক্কা না করে উৎফুল্ল কন্ঠে বললো,
“দোস্ত, আসল খুনিকে ধরার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছি অনেকটাই। সুমিকে আদালতে উঠানোরও বেশি সময় নেই। এখন যদি আর একমুহূর্ত দেরি করি তাহলে তুই সুমিকে যেমন চিরতরের জন্য হারাবি তেমনি তোর মা’কে বিষ দেওয়া সেই অজ্ঞাত পুরুষের শাস্তিও কোনোদিন হবে না। দেশের আইন ব্যবস্থা সম্পর্কে তুই না জানলেও আমি ভালো করেই জানি, একবার যদি কাউকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো যায় তবে জেল থেকে বের হওয়াটা যতটাই কঠিন তার চেয়েও বেশি কঠিন আসল অপরাধীকে পুনরায় আদালতের কাঠগড়ায় নিয়ে আসাটা। এখন তুইই সিদ্ধান্ত নে যে আমাকে এখানে বিশ্রামে রাখবি নাকি তুই তোর বউকে বাঁচাবি?”
হিমেল সিয়ামের কথা শুনে প্রথমে বেশ উৎফুল্ল হলেও পরক্ষণেই চিন্তিত মুখাবয়বে বলে,
“কিন্তু তুইতো এখনো অসুস্থ, মাথায় কাঁচা ব্যান্ডেজ আর বেশি দৌড়াদৌড়ি করলে আরো সমস্যা হইবো। এই অবস্থায় কি তোরে বাসায় নেওয়া ঠিক হইবো?”
“শোন, এখানে আমার কি হলো না হলো সেটা আমি ম্যানেজ করে নেবো, কিন্তু আজ যদি আমি তোর বউকে মিথ্যা মামলা থেকে বাঁচাতে না পারি তাহলে এখানে আসাটাই ছিল আমার জন্য বৃথা। তুই ডাক্তারকে ভুলভাল বুঝিয়ে এখনি বাসায় চল, আর একমুহূর্ত দেরি করা যাবে না।”
সিয়াম আর হিমেল বসে আছে থানায়। একটু পরই সুমিকে জেলা আদালতে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে দায়িত্বরত পুলিশ অফিসার এবং কনস্টেবলদের। সিয়াম কিছুক্ষণ পরপরই হিমেলের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই খেয়াল করছে ছেলেটি সুমিকে দেখার জন্য বেশ পায়চারী করছে পাশাপাশি সে ওকে অন্তত পক্ষে কয়েকশত বার জিজ্ঞেস করেছে এইসব ঘটনার পিছনে কার হাত ছিল? কিন্তু বারবারই সে এক রহস্যজনক হাসি দিয়ে ওকে বলেছে,
“এটা তোর জন্য একটি সারপ্রাইজ। এখন বলবো না, আদালতে গেলেই প্রমাণসহ দেখতে পাবি। তখন নিজেই অবাক হয়ে যাবি খুনিকে দেখে”
সিয়ামের কথা শুনে হিমেল কোনো কথা বলে না বরং চুপচাপ স্থির হয়ে জায়গা মতো বসে থাকে। তার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে সিয়াম সত্যি সত্যিই তার মায়ের আসল খুনিকে ধরিয়ে দিতে পারবে।
বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর হঠাৎই ওসির রুম থেকে সিয়ামের ডাক পরে।
ওসি সাহেব সিয়ামের কথা শোনার পর হতভম্ব হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকেন। তিনি সকল সাক্ষ্য প্রমাণ দেখার পরও নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছেন না। অজস্র কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“আপনি সবকিছু সঠিক বলছেন তো?”
ওসি সাহেবের এমন প্রশ্নে সিয়াম বেশ বিরক্ত স্বরে বললো,
“শুনুন আমি এখানে আদিমকালের কেচ্ছা কাহিনী শুনাতে আসিনি আপনাকে। সকল প্রমাণ আপনার সামনেই আছে, এরপরও যদি বিশ্বাস না করেন তাহলে আমার কিছু করার নেই। আপনাকে আগেই বলেছি আমি পিবিআইতে আছি। আমরা সাধারণ পুলিশদের মতো গোবড় মাথায় গোয়েন্দাগিরি করিনা বরং নিজের সর্বস্ব দিয়ে এবং মাথা খাটিয়েই পিবিআই কাজ করি।”
সিয়ামের কথা শোনার পর ওসি সাহেব কিছুটা নড়েচড়ে বসলেন বোধহয়। পরক্ষণেই তিনি বললেন,
“আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু আমরা কি তাহলে ঐ বেটাকে এখনই এ্যারেষ্ট করবো?”
“না সেটার আর প্রয়োজন নেই কারণ আসামি নিজেই আদালতে উপস্থিত থাকবে তাই আপনাদের ফাও কষ্ট না করাটাই ভালো।”
“হুম সেটাও ঠিক বলেছেন! তাহলে আমরা এখনি রওনা দেই।”
সুমিকে কোর্টে উঠানো হয়েছে। কোর্টের সামনে থাকা চেয়ার গুলোর একপাশে সুমির বৃদ্ধ বাবা মা ও ছোট ভাই এবং অপর পাশে সিয়াম হিমেলসহ সাথী ও বিথীর স্বামী, পাশাপাশি হিমেলের দুই চাচাতো ভাই জামাল কামালও ছিল। সুমির বাবা মা’কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারা গ্রামের একদমই সহজ সরল মানুষ। তারাও ভেবে নিয়েছেন লায়লা বেগমকে বিষ তার মেয়েই দিয়েছে তাই সুমির কেইস লড়ার জন্য কোনো উকিলেরও শরণাপন্ন হননি তারা। অপরদিকে হিমেল চাইলেও সুমির পক্ষে কোনো উকিল নিতে পারবেনা কেননা স্বাভাবিক ভাবেই হিমেলের বড় বোন এই বিষয়টা কখনোই মেনে নিতে পারবে না।
প্রথমেই বাদী পক্ষের উকিল একে একে সুমির অতীতে করা শাশুড়ির সাথে দুর্ব্যবহারের কথা আদালতে উপস্থাপন করতে থাকে। কারণ সুমিকে খুনি প্রমাণ করার জন্য এসব বলা একরকম ওয়াজিব কাজের মতোই বলা চলে। উকিল সাহেব এক এক করে আসামীকে দোষী প্রমাণের ভিত্তি মজবুত করার জন্য সাক্ষ্যদাতা হিসেবে হিমেলের দুই বোন এবং বড় ভগ্নিপতি ফারুকের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। এক এক করে যখন সবাই সুমির বিরুদ্ধে কথা বলছিল তখন অনেকটা অসহায়ের মতোই সুমি আর নিজের আবেগকে প্রশমিত করতে না পেরে কাঠগড়ার স্বস্থানে দাঁড়িয়েই হু হু করে কেঁদে ওঠে। তার এই কান্নার শব্দ এই মুহূর্তে অনেকের কাছে বিরক্তিকর মনে হলেও সিয়ামের ঠিকই ওর প্রতি কিঞ্চিত মায়া অনুভূত হয়। শেষমেশ যখন হিমেলকেও সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ডাকা হয় তখন সেও অনেকটা নিরূপায় হয়েই বড় বোনের ভয়ে সুমির বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে বাধ্য হয়। সিয়াম হিমেলের এই রূপ দেখে রাগ করার বিনিময়ে কিছুটা রহস্যজনক বাঁকা হাসি দেয়। হয়তো এই হাসির মাঝেই অনেক কিছু লুকিয়ে আাছে।
সবার সাক্ষ্য নেওয়ার পর বিচারক সকলের উদ্দেশ্যে বললেন,
“আমরা অলরেডি আসামীর বিপক্ষে একাধিক সাক্ষ্য পেয়েছি যদি আসামীর পক্ষে কেউ কিছু বলতে চান তাহলে বলতে পারেন।”
সাথে সাথেই সিয়াম হাত তুলে সায় দিতেই সবাই অবাক নয়নে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। হিমেল যদিও অবাক হয় না কিন্তু হিমেলের পরিবার এবং সুমির পরিবারের সকলেই হতভম্ব হয়ে যায় ওর এমন কান্ডে। ধীরগতিতে যথাস্থানে পৌঁছাতেই হিমেল বলা শুরু করে,
“আমরা প্রতিদিনই পেপার পত্রিকা কিংবা টিভি চ্যানেলে অজস্র খুনের ঘটনা শুনে থাকি। অবাক করা বিষয় হলো সামান্য কিছু উদ্দেশ্যকে হাসিল করার জন্য কিংবা সামান্য একটুখানি শত্রুতার জন্য মানুষ অন্যের জীবন নিতেও দ্বিধা করেনা। তাদের খুনের ধরনটাও থাকে বেশ ইউনিক। খুনি নিজেকে রক্ষা করার জন্য এতোটাই নিখুঁতভাবে খুন করে যে অধিকাংশই ধরাছোঁয়ার বাহিরে চলে যায়। আজ হয়তো সবাই একটি নির্দোষ মেয়েকে শাশুড়ির সাথে সামান্য ভুল বোঝাবুঝির কারণে অপরাধী বানাচ্ছে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয় কিন্তু আমি যখন এই মেয়েটিকে নির্দোষ প্রমাণ করার পর আসল খুনির মুখোষটা আপনাদের সামনে উন্মোচন করবো তখন আপনাদের অবাক হবার সীমা থাকবে না কেননা আমি নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।”
এতটুকু বলে সিয়াম কিছুটা থেমে যেতেই উকিল সাহেব বেশ উৎফুল্ল স্বরে বললেন,
“তাহলে কে খুনি?”
সিয়াম বেশ নির্লিপ্ত স্বরে উত্তর দিলো,
“আর কেউ নয় স্বয়ং আমার প্রাণ প্রিয় বন্ধু হিমেল।”
কথাটি শোনার সাথে সাথে কোর্টে উপস্থিত সকলের মাথাতেই বাজ পরলো বোধহয়। মুহূর্তেই হিমেল উত্তেজিত কন্ঠে বললো,
“কি বলতাছোস তুই এগুলা? তুই মাথায় বারি খাওয়ার পর কি পাগল হইয়া গেলি না কি?”
সিয়াম মুচকি হেসে উত্তর দেয়,
“না বন্ধু পাগল হইনি, তবে পাগল হতাম যদি গতকাল রাতে আমার মাথায় তুই আঘাত না করে অন্য কেউ আঘাত করতো।”
সিয়ামের এমন উদ্ভট কথা শুনে এবার উকিল সাহেব বললেন,
“আপনার কথা শুনে আমার নিজেরই আপনাকে পাগল মনে হচ্ছে। সে কে-ইবা নিজের মা’কে খুন করতে যাবে? এটাতো কোনো পাগলেও করবে না।”
“হুম আপনি ঠিকই বলেছেন কিন্তু যেখানে হিমেল কখনোই লায়লা বেগমের পেটের সন্তান ছিল না সেখানেও কি আপনি বলবেন যে সে খুন করতে পারবে না?”
“মানে, কী বলতে চাচ্ছেন আপনি?”
“মানে হিমেল ছিল লায়লা বেগমের পালক ছেলে। পরপর যখন ওনার দুই মেয়ে হয় তখন তিনি একটি ছেলের জন্য প্রচন্ড হা-হুতাশ করছিলেন। কিন্তু সাথীকে জন্মদানের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তিনি সন্তান জন্মদানে অক্ষম হয়ে পরেন। তখন হিমেলের বাবা ব্যাবসায়িক সূত্রে নিজ গ্রামে ছেড়ে ওর মা’কে নিয়ে অন্যত্র পাড়ি জমান। মূলত এটা তাদের ব্যবসায়িক কাজের জন্য নয় বরং হিমেলের মা’কে একটি পুত্র সন্তান পালক এনে দিয়ে নিজেদের সন্তান হিসেবে সেই ছেলেকে আপন পুত্রের মর্যাদায় ভূষিত করাটাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। কিন্তু হিমেলকে দত্তক নেওয়ার পর আসল সত্যটা তারা বেশিদিন আত্মীয় স্বজনের কাছে গোপন রাখতে পারেননি। একপর্যায়ে হিমেল বড় হয় এবং সেও আসল সত্যটা জেনে ফেলে। লায়লা বেগম ওকে মাতৃস্নেহে বড় করলেও সে ভিতর থেকে অনুভব করে তিনি বোধহয় ওকে প্রাপ্য ভালোবাসাটা দিচ্ছেন না। হিমেলের বাবার মৃত্যুর পর সে অনেকটাই উড়নচণ্ডী স্বভাবের হয়ে যায়। মায়ের অমতে সে নিজের পছন্দমতো সুমিকে বিয়ে করে এবং একারণে লায়লা বেগমের চোখের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় সুমি। এতোটুকু পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাকই ছিলো কিন্তু বিপত্তি বাধে গত কয়েকমাস আগে। হিমেল আচমকাই নিজের খারাপ ব্যবসায়িক পার্টনারের পাল্লায় পরে জুয়ায় আসক্ত হয়ে যায়। পাশাপাশি সুমির সাথে সম্পর্ক থাকা অবস্থাতেও সে অন্যান্য মেয়েদের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। একপর্যায়ে সুমিকে তার আর ভালো লাগে না কিন্তু এটা সে সরাসরি প্রকাশ করার সাহসও পায় না। কেননা সুমিকে সে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলো। অপরদিকে জুয়া খেলে ব্যাবসায় প্রচুর লস হওয়ার কারণে তার প্রচুর টাকার দরকার ছিল তাই লায়লা বেগমকে খুন করার মাধ্যমে সে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া প্রচুর অর্থের মালিক হতো। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিথী ও সাথীর সম্পত্তির ভাগ না দিয়ে পুরো সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়া তাই দুই বোনকে না জানিয়ে লায়লা বেগমের ট্রাংক থেকে দলিল টি রাতের অন্ধকারে একান্তে নিয়ে যেতে চেয়েছিল সে। হিমেল এখানে এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছে। প্রথমত লায়লা বেগমকে মেরে সকল সম্পত্তির মালিকানা পাওয়ার ষড়যন্ত্র করেছে দ্বিতীয়ত বউ শাশুড়ির ঝগড়াকে পুঁজি করে সুমিকে নিজের পথ থেকে সরাতে চেয়েছে। তবে আমার কাছে সবথেকে কষ্টের বিষয় ছিলো যেই মা হিমেলকে রাস্তা থেকে তুলে এনে আপন মাতৃস্নেহে বড় করেছে আজ সেই মা’কেই সে সুস্থ চেতনাকে বলি দিয়ে সামান্য কিছু অর্থের জন্য খুন করেছে। আমার মতে ওদের মতো পুরুষদের তিনবার ফাঁসি হওয়া উচিত।”
এই বলেই সিয়াম কঠোর দৃষ্টিতে হিমেলের দিকে তাকায় কিন্তু সে কোনো কথা না বলে মাথা নিচু করে মেঝের দিকে তাকিয়ে থাকে।
এতক্ষণ যাবৎ সবাই অবাক নয়নে সিয়ামের কথা শুনছিল। কেউ ভাবতেই পারেনি যে লায়লা বেগমের খুনের পিছনে এত বড় একটি রহস্য লুকিয়ে ছিল।
সিয়াম যদি পরশু দিন রাতে হিমেলের আড়ালে তার প্রেয়সীর সাথে কথোপকথন শুনতে না পেত তাহলে কখনোই সে আজ নিজের বন্ধুকে এত নিচু জায়গাতে ভাবার সুযোগও পেত না। সেদিন রাতের কথোপকথনই লায়লা বেগমকে বিষক্রিয়ায় হত্যার সকল ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দেয়। হয়তো সিয়াম এই দুদিন হিমেলের সাথে অভিনয় করেছিল ঠিকই কিন্তু গতকাল রাতে যখন হিমেল লায়লা বেগমের ট্রাংক থেকে দলিল চুরি করার চেষ্টা করেছিল তখন সহসাই সে বুঝে গিয়েছিল ওটা হিমেল বৈ কি কেউ না।
সিয়াম নিজের কর্মস্থলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে ভেবেছিল বহুবছর গ্রামে এসে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করবে ঠিক নিজের মনের মতোই। কিন্তু সেটা আর হলো কই? গ্রামে এসে সত্যকে জয় করতে গিয়ে আজ সে নিজের বন্ধুর কাছেই এক স্বার্থপর ব্যক্তিত্ব।
হিমেলের দুই বোন সাথী বিথী সিয়ামকে আরো কিছুদিন থাকার জন্য জোরাজুরি করলেও সে আর ইচ্ছা প্রকাশ করলো না। সুমি মেয়েটা কেন যেন সিয়ামের সাথে জেল থেকে নির্দোষ হয়ে ছাড়া পাওয়ার পর একটি কথাও বলেনি যদিও ওর বাবা মা ঠিকই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিল। তবে সুমির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করার একটি ব্যাখ্যা সে দাঁড় করিয়েছে, হ্যাঁ মেয়েটি হিমেলকে প্রচন্ড ভালোবাসতো আর এখনও বাসে। তাই হিমেলকে দোষী না বানিয়ে যদি তাকেই জেলে পাঠানো হতো তাহলেও সে বোধহয় মাথা পেতেই নিতো। মেয়ে জাতিটা আসলেই অদ্ভুত, একবার কাউকে মন দিয়ে ফেললে যদি তাকে কেঁটেও ফেলা হয় তবুও তার মনের মানুষটি পরিবর্তন করার সাধ্য কারোরই নেই।
গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে হাঁটার সময় সিয়াম নিজের অর্ধাঙ্গিনী মিষ্টি মেয়েটির কথা ভাবতেই তার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে, সেওতো তাকে সুমির মতোই ভালোবাসে। পরক্ষণেই হিমেলদের মতো পুরুষদের কথা ভাবতেই মুখটা কালো হয়ে যায়। এরাইতো নারীদের দুর্বলতাকে পুঁজি করে যুগ যুগ ধরে ওদেরকে ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে। আসলেই কি পুরুষ ধোঁকাবাজ? প্রশ্নটা থেকেই যায়…
(সমাপ্ত)
.
[ভুলত্রুটি মার্জনীয়]
(সকলের গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি)