ছায়া নীল!
৭.
আমি বললাম
-শুরুটা আমি করেছিলাম নাকি তুমি???তুমি আমার স্বপ্নে এসেছিলে, আমি তোমাকে ডেকে আনি নি। মনে পড়ে??? নাকি ভুলে গেছো???
– হ্যা আমিই শুরুটা করেছি। কিন্তু সামান্য স্বপ্নে যার অস্তিত্ব তার প্রতি এতোটা পাগল হওয়াটা ঠিক না।
– আমি কি একাই পাগল হয়েছি??? নাকি প্রতিটা স্বপ্নে তুমি আমাকে প্রতিবার তোমার দিকে টেনেছো???
ও চুপ করে আছে। কোনো কথা বলছে না।
আমি বললাম
– কী কোনো কথা নাই কেনো?? সামান্য স্বপ্ন না আমার কাছে। আমার কাছে অনেক বেশি দামী সেই শুরু থেকে আজকের স্বপ্নটা।
– শারলিন শান্ত হও।
– কেনো শান্ত হবো?? সত্যিটা সহ্য হচ্ছে না??
– তুমি অসুস্থ তাই।
– আমাকে যেহেতু তোমার প্রয়োজন নেই তাহলে আমাকে বাঁচালে কেনো???
– তুমি একজন মানুষ। চোখের সামনে একজন মানুষ কে সুইসাইড করতে দেখা যায় না।
– তুমি তো আমার সামনে ছিলে না।মিথ্যা কেনো বলছো???
– তোমার রুমের জানালার পাশে যে রাস্তা আমি ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তোমার জানালা খোলা ছিলো।
– আমার জানালার পাশে কী করছিলে??? আমি তো তোমার কেউ নই।
কথাটা বলে আমার খুব খারাপ লাগা শুরু হলো।
যার জন্য আমি এতো কিছু করলাম। নিজের শরীরকে শরীর মনে করিনি। দিনের পর দিন শুধু নিজেকে কষ্টই দিয়ে গেছি। শুধু ওকে কাছে পাবো বলে।
কিন্তু কী হলো?? সেই উল্টো আমাকে কথা শোনাচ্ছে।
কাঁদতে শুরু করলাম। তুহিন লোকটার সাথে বিয়ে ঠিক হবার পর থেকে অনেক কষ্ট ভুগেছি।
এই তো প্রথম না। এসএসসি এক্সাম দেয়ার পর থেকে কতবার যে,আমি বিয়ে ভেঙেছি আর মায়ের হাতে মার খেয়েছি তার হিসেব নাই।
আমি মাথা নিচু করে আছি। সৌরভ বলল
– কান্নাকাটি বন্ধ করো। এমনিতেই আজ ২ দিন যাবত অনেক স্ট্রেস এ আছি।
– আমি তো খুব সুখে আছি।
– তুমি ২ দিন যাবত অজ্ঞান হয়ে ছিলে। তোমার কিছু হয়ে গেলে……
– ভালোই হতো সব ঝামেলা শেষ হয়ে যেতো।
সৌরভ আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল
– তোমাকে সামনাসামনি এক পলক দেখবো বলেই আমি তোমার রুমের আশপাশ দিয়ে ঘুরাঘুরি করছিলাম। তোমার বারান্দায় এসে ঝামেলায় পড়ে গেলাম। ধরা খাওয়ার মতোই অবস্থা হয়ে গিয়েছিলো। তুমি খেলে আছাড়।
আছাড় না খেলেই ভালো হতো। তোমার অবস্থা এতো খারাপ হতো না।
– তুমি কেনো আমার সাথে এমন করলে???
– প্লিজ একটু শান্ত হও না। পরেও জানা যাবে।
– পরে কেনো?? বলা তো যায় না পরে সময় টা নাও আসতে পারে।
– কী বললা তুমি??? এই শারলিন আবার কিছু করার চেষ্টা করলে সত্যি বলছি আমি কিন্তু চলে যাবো।
– তুমি এতদিন কেনো সামনে আসোনি??আর স্বপ্নের ব্যাপার টা মাথায় আসছে না। কীভাবে কী ???
– পরে একদিন। এখন চিন্তা করো তোমার মা কী করবে???
– মানে???
– তোমার তো জানার কথা না। তোমার এই মহান কাজে তোমার বিয়ে ভেঙেছে। ভালোই হয়েছে। কিন্তু বিশাল কেলেঙ্কারি হয়ে গেছে ।
– কী আর হবে??? আমি পাগল, মানসিক রোগী বা অন্য কারো সাথে লাইন আছে বা ভূতে ধরেছে।
সৌরভ হেসে বলল
– শেষের দুটো কারেক্ট আছে।
– খুব মজা লাগছে তাই না।
– হ্যা কিছুটা। তোমাকে এতো কাছে পাবো ভাবিনি।
ওর এই কথাতে মনে পড়লো ও আর আমি খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছি। এই প্রথম কারো খুব কাছে দাঁড়িয়ে।
সৌরভ হেসে বললো
– কোনো সমস্যা নেই আমি তোমাকে এই অবস্থায় স্পর্শ করবো না।
– হুম।
– মেডিসিন ঠিক মতো খাবে, খাবার ঠিক মতো খাবে। আর আমাকে মনে করবে।
– তুমি কই যাবে???
– তোমার মা আমাকে আর আমার মাকে সহ্য করতে পারে না।
– মা তো নেই এখন।
– আসবে তো তাই না??? রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গেছে তোমার মা। আজিব ব্যাপার মেয়ে রাগ করে বাপের বাড়ি আসবে তা না মা রাগ করে বাপের বাড়ি যায়।
এ কথা বলে ও অট্টহাসিতে মত্ত হয়ে গেলো।
আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। ওর মেজাজ কিছুক্ষণ পর পর বদলে যাচ্ছে।
আমি ওকে বুঝতে পারছি না। এই বলে আমাকে তার প্রয়োজন নেই আবার এই বলে আমার জন্য সে কষ্টে আছে।
আমি তো একটা পাগল আর এ তো মনে হয় মহাপাগল।
চলবে…….!
#Maria_kabir