ছায়া নীল !
৩৪.
Maria Kabir
ও আমার হাত ছেড়ে দিয়ে ফুপুর উদ্দেশ্যে বলল
– তুমি কি সত্যি আমার মা?
ফুপু আমাদের দিকে একটু এগিয়ে এসে বলল
– কেনো এই প্রশ্ন করলি?
ও একটু ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল
– একজন মা তার সন্তানের জন্য সবকিছু করতে পারে। সন্তান ভূতের ভয় পেলে তাকে আগলে রাখে কিন্তু মা তুমি তো উল্টো আমাকে ভূতের ভয় দেখিয়েছো। ছোটোবেলায় আমাকে তুমি লালনপালন করোনি, করেছে বড় খালা। সেই আমাকে মায়ের আদরে বড় করেছে। মায়ের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তার সন্তানের জন্য সকল ত্যাগ স্বীকার। তোমার মাঝে আমি দেখিনি। তুমি সবসময় নিজের টা নিয়ে ভেবেছো।
ও থেমে গেলো।মেজো ফুপু বললেন
– আমি তোকে পেটে ধরেছি, জন্ম দিয়েছি।
ও বিদ্রুপের হাসি হেসে বলল
– জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না। সেটা তুমি প্রমাণ করেছো। বড় খালা আমার সবকিছু দেখাশোনা করেছেন। সেই আমাকে মায়ের আদরে মানুষ করেছেন। সুতরাং তুমি আমার জন্মদাত্রী কিন্তু মা নও। আমার মা হচ্ছে বড় খালা।
মেজো ফুপু ধমকে উঠে বললেন
– লালনপালন তো সবাই করতে পারে। কয়জন পেটে ধরতে পারে? আমি তোর মা, বড় আপা না।
ও চিৎকার করে বলল
– মা হলে, তুমি আমার খুশি, আনন্দ কেড়ে নেয়ার চিন্তা করতে না। তুমি ভালোভাবেই জানো, আমার সুখ – শান্তি সব শারলিনকে ঘিরে। তুমি ওকে প্রতিনিয়ত কষ্ট দিতে পারতে না। ও কষ্ট পেলে আমিও পাই। আমারো খারাপ লাগে। তোমার জন্য ও সুইসাইড করতে গিয়েছিলো। তুমি আমাকে ব্ল্যাক ম্যাজিক শিখিয়েছো। ব্ল্যাক ম্যাজিক যারা করে তাদের জন্য জান্নাত হারাম। তুমি কোনো মায়ের পর্যায়ে পরো না। তুমি একজন স্বার্থপর জন্মদাত্রী।
– তুই জানিস না, ওর মার জন্যে আমি বিধবা হয়েছি। তোর বাবা মারা গেছে।
– ওর মার জন্য না। তোমার নিজের স্বভাবের জন্যে। তুমি নিজে কী সেটা কখনো খেয়াল করেছো? তুমি নিজের দোষ অন্যের উপর কীকারণে চাপাও? তুমি আমার মা নও। শারলিনকে লাগবে তোমার? নিয়ে কী করবে আমি জানি না বুঝি? তুমি কোনো মানুষের পর্যায়ে পরো না।
মেজো ফুপু কোনো কথা বলছেনা। সেই আগের মতো হাসি নেই তার মুখে। মেজো ফুপু আমাদের দিকে এগিয়ে আসলেন।
ফুপুর হাতে একটা কাঁচের বোতল দেখলাম। ফুপুকে এগিয়ে আসতে দেখে সৌরভ বলল
– মা, এসিড কার উপর মারবে?
মেজো ফুপু কোনো উত্তর দিলেন না। সৌরভের সামনে এসে দাঁড়ালেন ফুপু। আমি ওর পিছনে নিজেকে আড়াল করে দাঁড়ালাম। ফুপু বললেন
– আমি তোকে অনেক ভালবাসি বাবা।
ও বলল
– তোমার কোনো কথাই আমি বিশ্বাস করিনা। তুমি মানুষ যদি হতে তাহলে একজন মৃত ব্যক্তির লাশ ফরমালিন দিয়ে রাখতে পারতে না।
– আগে তো এমন বলতি না। এখন কেনো বলছিস? ওই মেয়ের জন্য বলছিস? এখন আমি পর আর শারলিন কাছের হয়ে গেলো।
– মা তুমি আবারো একই কাজ করছো? তোমার এসব বিশ্রী কর্মকাণ্ড সহ্য করার ক্ষমতা আর নেই। আমি ক্লান্ত মা, খুব ক্লান্ত।
– আমি বিশ্রী কোনো কাজ করছিনা। আমার উপর হওয়া অবিচারের বিচার করছি।
– তুমি নিজেই তোমার উপর অবিচার করেছো।
– চুপ কর। আমার থেকে বেশি বুঝবি না।
– তোমার কোনো কথাই আমি শুনবো না।
মেজো ফুপু হুট করে বোতলের মুখ খুললেন। সৌরভ, ফুপুর কাছ থেকে দূরে সরে দাঁড়ালো। ওর আড়ালে দাঁড়িয়ে ফুপু কী করছেন দেখতে পারছিলাম।
সৌরভ ফুপুর হাত থেকে বোতল কেড়ে নিতে হাত বাড়ালো। দুজনের মধ্যে সেই বোতল নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে গেলো। এমনিতেই বোতলের মুখ খোলা তার উপর যেভাবে কাড়াকাড়ি চলছিলো তাতে মনে হলো যেকোনো একজনের গায়ের উপর এসিড পরবে।
বোতল কাড়াকাড়ি করতে গিয়ে ফুপুর শরীরে এসিড পরে গেলো। সাথে সাথে ফুপু চিল্লানো শুরু করলো। মাটিতে পরে গেলেন। সৌরভ নড়াচড়া করছে না,সেই আগের মতো দাঁড়িয়ে আছে। বড় ফুপু এসে মেজো ফুপুকে ধরলেন। বড় ফুপু বললেন
– সৌরভ গাড়ি বের কর। হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
সৌরভ কোনো উত্তর দিলো না। সেই আগের মতোই দাঁড়িয়ে রইলো। বড় ফুপু আবারো সেই কথাই বললেন। কিন্তু ওর কোনো প্রতিউত্তর পেলেন না।
ও মাটিতে বসে পরলো মেজো ফুপুর পাশে।
মেজো ফুপু অসহ্য যন্ত্রণায় চিৎকার করছে। বড় ফুপু বলতে লাগলেন
– মেজো সব ঠিক হয়ে যাবে একটু সহ্য কর। এক্ষুণি হাসপাতালে নিয়ে যাবো।
নীলের উদ্দেশ্যে বললেন
– কীরে গাড়ি বের কর তোর মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবো।
ওর কোনো পরিবর্তন দেখলাম না। শুধু চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো।
চলবে……..!
#Maria_kabir