ছায়া নীল ! ৩৩.

0
1961

ছায়া নীল !

৩৩.

Maria Kabir
সারাদিন বাসায় বড় ফুপুর সাথে ভালোই কাটলো। মানুষ টা এতো রসিক আগে জানা ছিলো না। কিছুক্ষণ পর পর হাসি চেপে বলছে
– কীরে সুখবর কবে দিবি?
প্রথমে প্রশ্নটা আমি বুঝতে পারিনি। অনেকক্ষণ ভাবার পর বুঝতে পেরেছি। বুঝতে পারার সাথে সাথে আমার খুব লজ্জা লাগতে শুরু করেছে। বড় ফুপুর দিকে তাকাতে পারছি না।
সৌরভ আসলো সন্ধ্যায়। ওর মুখে বিষাদের ছায়া খেলা করছে। মাকে যে ও খুব ভালবাসে সেটা বুঝতে পারছি। ও ওর
সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছে ফুপুকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কিন্তু পারছেনা।
আচ্ছা ও কী জানে? ঘুমন্ত মানুষকে ডেকে তোলা যায় কিন্তু যে ঘুমের ভান ধরে তাকে ডেকে তোলা যায়না।
বড় ফুপুর সাথে কী নিয়ে কথা বলল বুঝতে পারলাম না। খুব আস্তে আস্তে কথা বলল। হয়তোবা তারা চাচ্ছেনা আমাকে জানাতে।
ও রুমে চলে গেলো। বড় ফুপু আমাকে বলল
– আরে রুমে যা, ব্যাটাছেলে বাড়ি ফিরলে তাদের সাথে সাথে থাকতে হয়।
কথাটা শুনে আমি কিছুক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম।
আমাকে ঠেলে ঠুলে রুমে পাঠালো।
আমাকে দেখে ও বলল
– আচ্ছা শারলিন, আমাকে নীল বলে ডাকতে পারবে?
– হ্যা।
ও হঠাৎ এই কথা কেনো বলছে??
– তুমি দূরে কেনো? পাশে বসো। আর খাওয়া দাওয়া করছো?
– হ্যা, দুপুরবেলা খেয়েছি। তুমি খাও নি?
– নাহ, সারাক্ষণ মনে হচ্ছিলো তোমাকে হারিয়ে ফেলবো।
আমি বিছানার উপর ওর পাশে গিয়ে বসলাম।
ও আমাকে কাছে টেনে নিলো। চুলগুলোতে বিলি কাটতে কাটতে বলল
– তুমি গুছিয়ে থাকতে পারো না? নাকি সারাক্ষণ আমার চিন্তায় থাকো। কখন আমি আসবো। তাই না?
আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম।
ও যে কতোটা অস্থির হয়ে আছে সেটা নিশ্বাসের উঠানামায় বুঝতে পারছি।
আমি বললাম
– নীল বললে হ্যাপি হবা?
ও বলল
– হ্যা হবো। আর তুমি আমার ছায়া, দুজনের নাম মিলে কী হয় জানো তো?
– হ্যা জানি।
– বলো তাহলে।
– ছায়া নীল।
ও বিড়বিড় করে ছায়া নীল শব্দটা উচ্চারণ করছে।
জানি না, ও পাগল হয়ে গেলো নাকি? পাগলরা নাকি একই কথা বারবার বলে।
হঠাৎ মনে হলো কেউ আমাকে ডাকছে। কেউ আমাকে জানালার দিকে টানছে। এদিকে ও আমার হাত খুব শক্ত করে ধরে আছে।
আমি উঠে যেতে চাচ্ছি কিন্তু ও দিচ্ছেনা।
কোনোভাবেই উঠতে পারলাম না।
ও বলল
– খবরদার এখান থেকে নড়বা না।
একসময় ও জানালার কাছে গিয়ে জানালা খুলে দাঁড়ালো। তারপর কী যেন খুঁজতে শুরু করলো।
তারপর একটু জোড়ে বলল
– মা তুমি কোথায় ? মা শুনতে পাচ্ছো?
কী চাও বলোতো??

কিছুক্ষণ পর ও আমাকে টেনে নিয়ে বাড়ির বাইরে নিয়ে গেলো।
জানালার নিচটাতে ও আর আমি এসে দাঁড়ালাম। ও ওর মাকে উদ্দেশ্য করে বলল
– মা, তোমার ওকে লাগবে তো? নাও নিয়ে এসেছি। এখন তো সামনে আসো।
মেজো ফুপু গাছের আড়াল থেকে বের হয়ে আমাদের থেকে দূরে দাঁড়ালেন।
চোখেমুখে হাসি খেলা করছে। মেজো ফুপু নীলকে উদ্দেশ্য করে বলল
– সত্যি দিয়ে দিবি?
নীল বলল
– হ্যা, তবে শর্তটা মনে আছে তো?
মেজো ফুপু হাসতে হাসতে বললেন
– হ্যা অবশ্যই। তুই কথা রেখেছিস আমিও রাখবো।

চলবে……….!

#Maria_kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে