ছায়া নীল ! ৩১

0
1950

ছায়া নীল !

৩১.

Maria Kabir
বড় ফুপুকে বললাম
– আমি কী দোষ করেছি যে,আমার সাথে এরকম করছে?
– তোর মার প্রতিশোধ তোর উপর নিচ্ছে.. নাকি জানি। হয়তোবা তোর মাকে কোনোভাবে কষ্ট দিতে চেয়েছিল। তাই তোকে দিয়ে..
– মা তো আমাকে ভালবাসে না। আর আমার কোনো ক্ষতিতে তার কিছুই যায় আসবে না।
– তোর সুইসাইড করার চেষ্টায় বিয়ে ভেঙেছে। এতে এলাকায় তোর বদনাম হয়েছে। তোর মাকেও এই ব্যাপার টা নিয়ে দোষারোপ করা হয়েছে। তোর মার আত্মসম্মানবোধ টা বেশি তো তাই করেছে। এসব নিয়ে আলোচনা না করে চিন্তা কর কীভাবে এই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
– বাসা চেঞ্জ করলেই তো হয়।
– সৌরভ বলল যে ওর অফিসের রুমেও নাকি তুই ভয় পেয়েছিস?
– হ্যা, যদি চোখ বুজতে পারি সাথে সাথেই বিকট হাত আমাকে ধরতে আসছিলো।
-ওকে থামাতে হবে। কীভাবে জানি না।তবে বাসা চেঞ্জ করে কোনো লাভ হবেনা।
ফুপু বিছানা ছেড়ে উঠে চলে গেলেন।
কিছুক্ষণ পর সৌরভ রুমে ঢুকলো। গভীর চিন্তায় সে মগ্ন। উদাসীন চলাফেরায় বোঝা যাচ্ছে। আমার পাশে বসে বলল
– এখন কেমন আছো?
– আমি ভালো আছি। তোমার এই অবস্থা কেনো? খাও নাই কিছু?
– নাহ, ভালো লাগছেনা খেতে।মাথার মধ্যে একটাই চিন্তা কীভাবে এই ঝামেলা থেকে বের হওয়া যায়।
– ফুপুর সাথে কথা বলোনি?
– হ্যা, আজকে তোমাকে ঘুমে রেখে মাকে নিয়ে বের হয়েছিলাম। অনেক বুঝালাম কিন্তু কোনো লাভ হলো না।
– কী বলে?
– বাদ দাও শারলিন। শারলিন আমি একটু ঘুমাবো।
আমি সরে বসলাম ও বালিশে মাথা রেখে বলল
– খুব খিদে পেয়েছে বড় খালার কাছে গিয়ে বলো, আমি খুদা লেগেছে।
ফুপুর কাছে এই কথা বলার সাথে সাথে ফুপু ফ্রিজ থেকে বিরিয়ানি বের করে গরম করতে দিলেন। ফুপু বললেন
– সৌরভ, আমার হাতের বিরিয়ানি খুব পছন্দ করে। তোকে শিখিয়ে দিবো। তারপর ওকে তিনবেলা রান্না করে খাওয়াবি।
– আমারো খুদা লেগেছে।
বড় ফুপু হাসতে হাসতে বললেন
– বুঝেছি বিরিয়ানি দেখে খুদা লেগেছে।
খাবার নিয়ে রুমে যাওয়ার পর দেখলাম ও ঘুমিয়ে গেছে।
খাবার পাশের ছোট্ট টেবিলে রেখে দিয়ে ওর পাশে শুয়ে পরলাম।
মেজো ফুপু কোথায়, কী করছে? একটা মানুষ এতোটা সাহসী কীভাবে হতে পারে?
আর আমার মায়ের সাথে তার ঝামেলা কিন্তু সে আমার সাথে কেনো এমন করছে?
সৌরভের হাতের উপর আমার হাত পরাতে বুঝতে পারলাম ওর জ্বর আসছে। মাথায় হাত দিয়ে বুঝতে পারলাম অনেক জ্বর। বিছানার পাশে চাদর রাখা ছিলো। ওর গায়ে চাদর দিয়ে দিলাম। বড় ফুপুকে ডেকে আনলাম।
বড় ফুপু পানিপট্টি দিতে বলে গেলেন।
পানিপট্টিতেও কাজ হচ্ছে না। ওর শরীরের তাপমাত্রা বেড়েই যাচ্ছে। আর জ্বরের ঘোরে ও আবোলতাবোল কথা বলছে।
রাতে জ্বর আরো বাড়লো।চোখের সামনে এভাবে ওকে কষ্ট পেতে দেখে আমার মনে হচ্ছে,যেকোনো মূল্যে ওকে শান্তি দিতে চাই।
বড় ফুপু ডাক্তার ডেকে আনলেন। ডাক্তার ইনজেকশন দিলেন আর কিছু মেডিসিন দিলেন। আর শরীর দূর্বল বলে সেলাইন দিয়ে গেলেন।

ইনজেকশন দেয়ার ৩০ মিনিট পর ওর শরীরের তাপমাত্রা কমতে শুরু করলো।
ওর পাশ থেকে উঠে জানালার ধারে এলাম।
রুমের মধ্যে গুমোট লাগছিলো। রাতে জানালা খুলতে সাহস পাচ্ছিলাম না। তারপরও জানালা টা খুললাম। জানালা দিয়ে পাশের খোলা জায়গা দেখা যাচ্ছিলো। আর দেখলাম মেজো ফুপু দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি হাসছেন। এতো দূর থেকেও তার হাসি দেখা যাচ্ছে।

চলবে…..!

#Maria_kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে