ছায়া নীল !
২৮.
আমি দৌড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলাম কিন্তু পারছি না। মনে হচ্ছে কেউ আমার পায়ে পাথর বেধে দিয়েছে। আমি দৌড়ানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছি আর মানুষ না কী বলবো বুঝতে পারছি না, আমার দিকে উল্টো হেটে এগিয়ে আসছে।
আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে ভয়ে।জিনিষ টা কাছে আসলেই আমি মারা যাবো। এটা কখনো নীল হতে পারেনা। নীল আমাকে অনেক ভালবাসে। ও আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবেনা।
মনে হলো কেউ আমার হাত ধরলো। আর বলল
– শারলিন তুমি এখানে কেনো?
আমি সেই কণ্ঠস্বরের দিকে তাকিয়ে দেখি নীল। ভয় পেয়ে গেলাম, ভাবলাম ওটাই এদিক দিয়ে এসেছে নাকি?
আমি হাত ছাড়িয়ে দূরে সরে গিয়ে বললাম
– আপনি কে?
– আরে আমি সৌরভ। তোমাকে রুমে না পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে আমি এখানে এসে দেখি তুমি রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছো।
ভয় কিছুটা কমাতে ওর কণ্ঠস্বর চিনতে পেরে ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম
– তুমি তো এখানে নিয়ে এলে!
– আমি? আমি তো বাথরুমে ছিলাম।
– তাহলে দরজা খুলতে দেখলাম, আমাকে ইশারায় ডাকলে। তুমি এই পানিতে নামলে।
– শারলিন পানিতে নামলে আমার শরীর ভেজা থাকবে কিন্তু আমার শরীর তো শুকনা।
আমি ওকে জড়িয়ে ধরে ছিলাম তাই সহজে বুঝতে পারলাম যে ওর শরীর শুকনা।
আমি বুঝতেই পারছি না কী হচ্ছে?? আশেপাশে সব অন্ধকার হয়ে গেলো, আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। মাটিতে লুটিয়ে পরলাম। চোখ যখন ভাঙলো তখন বুঝলাম আমি বিছানায় শুয়ে আছি। আমাদের রুমে লাইট জ্বালানো। এখনো সকাল হয়নি। সৌরভ বিছানার উপর আমার পাশে বসে বসে ঝিমুচ্ছে। আমি বললাম
– ঘুমাও তুমি।
ও চমকে উঠে বলল
– নাহ তুমি কোথায় না কোথায় চলে যাও।
আমি উঠে বসলাম তারপর বললাম
– তুমিই নিয়ে গিয়েছিলে।
সৌরভ বিস্ময় ভরা কণ্ঠে বলল
– আমি তোমাকে নিয়ে যাবো কেনো? আর নিয়ে গেলেই বা তোমাকে ভয় কেন দেখাবো?
– সেটাই তো আমার প্রশ্ন।
– আমি বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখি তুমি বিছানায় নাই। ভাবলাম পানি পান করতে গিয়েছো। অনেকক্ষণ শুয়ে থাকার পর যখন তুমি এলেনা তখন রুম থেকে বেড়িয়ে দেখি মেইন দরজা খোলা। আমি খুঁজতে খুঁজতে আধমরা হয়ে গেছি। পরে ভাবলাম তুমি পুকুরপাড় এর কথা বলেছিলে।
– তুমি সত্যি বলছো তো? আমি তোমাকে অনেক বিশ্বাস করি নীল অনেক…
– শারলিন তুমি অনেক ভয় পেয়ে আছো। যেভাবেই হোক তোমার ভয় কাটানো দরকার।
– কীভাবে??
– ওই জিনিষ টার কাছে গিয়ে তোমার ভয় কাটাতে হবে।
– তুমি কীভাবে জানলে আমি কী দেখেছি?
– তুমি অজ্ঞান হয়ে যাবার পর থেকে জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত অনর্গল একই কথা বলছিলে। কিছুক্ষণ পর পর ভয়ে কেপে উঠছিলে।
– আমি কী করবো??
– এই বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে আমাদের। কিন্তু…… বাসা বদলানো হলেও এটা পিছু ছাড়বে না।অফিসের পাশের রুমেও তুমি ভয় পেয়েছিলে তাই না?
– হুম। আমি যা দেখেছি তুমিও দেখেছো?
– নাহ, আমি শুধু দেখেছি তুমি রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছো।
– তুমি ভয় পাও নাই এতো রাতে একা এই জংগলে মানে এরকম ঝোপঝাড়ে?
– শারলিন আমি অনেক সাহসী। তবে এখন সাহস কমেছে। কারণ এখন আমি একা নই। আমার নিজের প্রতি কোনো ভালবাসাই নাই কিন্তু শারলিন তুমি আমার যতোটা কাছে এসেছো ততটাই আমি ভিতু হয়ে যাচ্ছি। সবসময় একটা ভয় একটা ভীতি কাজ করে তোমাকে ঘিরে। আসলেই এটা সত্যি * ভালবাসার মানুষের খুব কাছে যাওয়া ঠিক না। * হুমায়ূন স্যার ঠিকি বলেছেন।
আমি দূরে যেতে পারবো না। না হয় আমি এর শেষ দেখেই দম ছাড়বো আর তা না হলে আমি এর একটা বিহীত করবো।
চলবে…..!
#Maria_kabir