ছায়া নীল !
২৬.
সৌরভ বলল
– চোখ নামালে কেন?
– মুগ্ধতা দেখে, এতো মুগ্ধতা আমি কখনো তোমার চোখে দেখিনি।
– কখনো বিয়ের শাড়ীতে এতো কাছ থেকে দেখিনি বলে।
কখনো এই আলো ছায়ার খেলাতে এতো কাছ থেকে আমার স্বপ্নময়ীকে তো দেখিনি বলে!
ওর এসব কথায় আমার মাঝে নতুন আশা জেগে উঠছে। মনে হচ্ছে, পুরোনো কথা থাক না।
ও মোমবাতি নিভিয়ে দিলো। পুরো অন্ধকার নেমে এলো আমাদের মাঝে।
সৌরভ বলল
– ভয় করছে?
– হুম, কিছুটা।
– অন্ধকার ভীতি আছে নাকি?
– জানি না।
– তাহলে?
– জানি না। তোমাকে হারানোর ভয় করছে। মনে হচ্ছে এই ঘোর অন্ধকারে তুমি হারিয়ে যাবে।
– এটা সাময়িক অন্ধকার। ইচ্ছে করে করেছি।
– জানি তো।
– তাহলে?
– জানি না।
– আচ্ছা তুমি জানোটা কী?
– তোমাকে আমার চাই এটুকু জানি।
– পেয়েছো তো ।
– হ্যা কিন্তু….
– কিন্তু কী?
নিশ্বাস ভারী হতে শুরু করেছে…….
সৌরভের ডাকে ঘুম ভাঙলো। হাতে খাবারের ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে খুব হাসিখুশী মুডে দেখলাম। আমি বললাম
– কয়টা বাজে নীল?
ও একটু হেসে বলল
– ১১ টা বাজে। খুব খিদে পেয়েছে বলেই তোমার ঘুম ভাঙালাম।
– তুমি খেয়ে নিলেই তো পারতে বা আমাকে ডাকলেও পারতে।
– নাহ, কতোদিন পর শান্তিতে ঘুমালে তাই ডাকতে ইচ্ছে করছিলো না।
– তুমি অফিসে যাবে না?
– না। এখন বাসায় যাবো। ফার্নিচার আর মালপত্র নিতে হবে।
– কেনো?
– বাসার সবকিছুই পুরাতন মডেলের তাই নতুন মডেলের কিছু ফার্নিচার কিনলাম।
– করো টাকাপয়সা খরচ। তাছাড়া আর কী করবা?
– বাদ দাও লেকচার। নাস্তা করে সবকিছু গুছিয়ে রাখো।
নাস্তা করার ইচ্ছে নাই। রীতিমত জোড় করে।
সবকিছু গুছিয়ে আবার জার্নি করতে হবে। জায়গা আর পায়নি বাড়ি করার। ভুতুড়ে বাড়ি আর বিশাল বিশাল গাছে ভরপুর।
বিকালবেলা বাসায় পৌঁছালাম। ও ফার্নিচার এর সাথে ৫-৬ জন লোক এনেছে। তারাই সবকিছু গুছিয়ে দিচ্ছে। আমার বাধ্য হয়ে ফুপুর রুমে বসে থাকতে হচ্ছে। ফুপু কোনো কথা বলছেনা। আসার পর থেকে তার মুখে একটাও কথা শুনিনি। তার মুখে কোনো বিরক্তি নেই কিন্তু স্বস্তিও নেই। আমি নিজেই কথা বলতে গিয়ে লজ্জায় পড়েছি। কোনো উত্তর পাইনি।
সন্ধ্যার পর সৌরভ এসে আমাকে বলল
– লোকজন চলে গেছে, তুমি আসো।
আমি রুম থেকে বের হবার পর সৌরভ বলল
– শারলিন রান্না করা আছে নাকি দেখো তো?
– যদি না থাকে?
– তুমি কষ্ট করে শুধু ভাত রান্না করে দিও।
– কষ্ট হবেনা।
আমি রান্নাঘরের দিকে গেলাম। খাবার রাখার র্যাক খুঁজে দেখলাম রান্না করা নাই।
চাল কোথায় রেখেছে সেটাও খুঁজে পাচ্ছি না। সৌরভ আর ফুপুর কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। দুজনেই জোড়ে জোড়ে কথা বলছে। কিন্তু কী বলছে সেটা বোঝা যাচ্ছেনা। সৌরভের কণ্ঠস্বরে বুঝতে পারছি যে ও খুব রেগে যাচ্ছে। ফুপুর কণ্ঠস্বর শান্ত কিন্তু অবাক কাণ্ড হচ্ছে তাদের কথা আমি বুঝতে পারছিনা। ফুপুর রুমের দিকে যাচ্ছি তখন সৌরভও বের হয়ে আসলো। ওর চোখ লাল আর শরীর কাঁপছে। আমাকে বলল
– এখানে কী করছো?
– মানে চাল খুঁজে পাচ্ছি না তাই ভাবলাম।
– এসো আমার সাথে….
ওর শরীর কাঁপছে কিন্তু কণ্ঠস্বর শান্ত। একটু আগেও ওর কণ্ঠস্বর এতোটা শান্ত ছিলোনা।
কে স্বাভাবিক আর কে অস্বাভাবিক আমি বুঝতে পারছি না।
চলবে……..!
#Maria_kabir