ছায়া নীল! ২২

0
1947

ছায়া নীল!

২২.

Maria Kabir
সৌরভ আমার সামনে চেয়ার টেনে নিয়ে বসলো। তারপর বলল
-একটা বাজে কিছু ঘটে গেছে। আমার ইচ্ছে ছিলো বলবো না। তারপর ভাবলাম বলে দেয়াটা ভালো।
– কী ঘটেছে??
– তোমার মা মানুষ টা কেমন তোমার মনে হয়??
– ভালো না।
– আমার মতে, খুব নিচুস্তরের একজন মানুষ। আমি তো খারাপ, আমার চেয়েও উঁচু মানের।
– কী ঘটেছে বলবা?? আর আমার মায়ের বদনাম আমার কাছেই করছো?
– আসলে সত্যিটা বলছি। তোমার মহীয়সী মাতা, তার সকল সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছেন। তারপর সেই টাকা নিয়ে ভেগে গেছেন।
– মানে?? বাবার সম্পত্তি মায়ের নামে ছিলো।
– যার নামে তারই তো সম্পত্তি। বসত বাড়ি আর যা যা ছিলো সব বিক্রি করেছেন। আর তোমার বাবা তোমার চিন্তায় ব্যাকুল। তার একমাত্র মেয়েকে কই রাখবে??
তোমার নানী বাড়িতে তোমার যাওয়া নিষেধ। আর অন্য কেউ নিতেও চায়না।
– আমাকে একটা চাকরী দিবে?? তোমার অফিসে??
– ইন্টার পাশে তো পিয়নের চাকরী। করবা??
– পেট চললেই হবে!
– আমার মা আর তোমার বাবা মিলে একটা উপায় খুঁজে বের করেছেন। সেটা হচ্ছে – আমার গলায় তোমাকে ঝোলাবেন। আমার আপত্তি নেই। দোষ আমারি তাই ভুগতেও হবে আমাকে।
– নাহ, তুমি যা করেছো তাতে আমি…
– তুমি কি ভেবেছো?? তোমার ইচ্ছায় সব হবে??
– মানে? কী বলতে চাও তুমি?? তোমার মতো একটা রাবিশকে বিয়ে করবো?
– হ্যা তাই করবে। তুমি আমাকে ছেড়ে যাবার মেয়ে না।
– যদি যাই??
– পারবে না।অফিস আজকে ৪ টায় ছুটি হয়ে গেছে।
হাতের ঘড়ি দেখে বলল
– এখন ৪.৩০ বাজে। ৩০ মিনিটের মধ্যে সবাই এখানে আসবে।
– আমাকে কাফন পড়াতে??
– নাহ বিয়ে পড়াতে আসবে। তারপর তোমার বাবা যেখানে চোখ যাওয়ার সেখানে চলে যাবেন। তারপর থেকে তুমি আমার।
– আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না। আর ওই ভূতের বাড়িতে থাকবো না।
– কিছুদিন থাকতে হবে, এখানকার বাড়িটা বসবাসযোগ্য হতে আরো ৩ মাস লাগবে।
– আসুক সবাই বিয়ে আমি করছি না।
– আমি ১০০% শিওর তুমি করবে। আমার কাছে ৩ টা লজিক আছে। ৩ টাই শক্তিশালী লজিক। শুনবে?
– নাহ।
– শুনো। ১. তুমি আমাকে ছাড়া নিজেকে ভাবতেও পারো না।
২. তোমার বাবার চোখের পানি দেখে তুমি আমাকে ১ বার কেনো হাজার বার বিয়ে করতে রাজি হবে।
৩. তোমার উপর একমাত্র আমার অধিকার অন্য কারো না। আর অধিকার তুমিই দিয়েছো।
– উইল করে দিয়েছিলাম নাকি??
– হ্যা, অলিখিত উইল।
আমি কিছু বলতে যাবো তখন দরজায় নক পরলো। ও দরজা খুলে একটা লাগেজ নিয়ে আবার দরজা আটকে দিলো।
লাগেজ টা বিছানার উপর রেখে বলল
– এখানে বিয়ের শাড়ী আর গহনা আছে। পড়ে নাও। তোমার বাবার কাছে তেমন সময় নেই।
– আমি পড়বো না।
– আচ্ছা তোমাকে এই ফকিন্নি মার্কা পোশাকেই বিয়ে করবো। পরে আফসোস করবা এই ভেবে যে, ইশ আমার বিয়ের শাড়ি নেই ।
আরে মেয়ে খারাপ কিছু নেই। সব দামী দামী জিনিষ। তোমার তুহিন লোকটার আনা শাড়ীর থেকে দামী।
তুহিনের আনা শাড়ী আমি আগুনে পুড়িয়েছি।
আমি অবাক হলাম ওর কথা শুনে।
– বুঝতে পারছো না?? হাসপাতালে তো আর তোমাকে বিয়ের শাড়ীতে রাখবে না। আমাকে দিয়েছে। রাগটা বেচারা শাড়ীর উপর উঠিয়েছি।
আমি বাচাল প্রকৃতির মানুষ। প্রচুর কথা বলি।
বাবা চলে এলেন। ৩০ মিনিট হবার আগেই। সাথে আরো দুজন ছেলে আর হুজুর টাইপের একজন লোক। কথাবার্তায় মনে হলো সে সম্মানিত কাজি সাহেব।
বাবা আমার হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল
– মা রে আমাকে মাফ করিস। তোমার বাবা হওয়া সত্ত্বেও তোর কোনো ভরণপোষণ করার ক্ষমতা আমার নেই। তোর মা যা করলো।
– বাবা তুমি যেখানে যাবে সেখানেই আমি যাবো তুমি আমাকে সাথে নিয়ে চলো।
– নাহ, মা তুই এতো কষ্ট করতে পারবি না। তোর মেজো ফুপুর ছেলে একটা সোনার টুকরা ছেলে। তুই ওকে বিয়ে কর। আমি শান্তি পাবো।
– বাবা না।
– মা, মানা করিস না। এর চেয়ে ভালো কোনো উপায় আমি খুঁজে পাচ্ছি না। একটা চাকরী যে করবি সেটাও পারবি না।
– কেনো??
– মা আমার কথা মেনে নে। তুই ইনশাআল্লাহ সুখী হবি।
ফকিন্নি মার্কা পোশাক পড়েই কাবিননামায় সিগনেচার করলাম।
বাবা আমাদের দুজনকে দোয়া দিয়ে চলে গেলেন। বাবাকে আজকে নিস্ব লাগছে। আমারও কেমন যেন ফাঁকাফাঁকা লাগছে।
সৌরভ বলল
– নো টেনশন প্লিজ। তোমার বাবা ভালোই থাকবে।
কথাটা বলার সময় আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম। অবাক হলাম ওর চোখের ভাষা আমি বুঝতে পারছি না।
একটা মানুষ আমার সাথে এতো খারাপ কিছু করেছে আর আমি তার প্রত্যেকটা কথা মেনে নিচ্ছি। এমনকি ও যা যা বলছে তার বিরুদ্ধে কথা বললেও তা ঠিকি মেনে নিচ্ছি।
আমি এখন পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত যে, ও আগেও আমার উপর প্রভাব বিস্তার করতো, এখনো করছে এবং ভবিষ্যৎ এ করবেও।
আমি চাইলেও এটা উপেক্ষা করতে পারবো না।

চলবে……!

#Maria_kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে