ছায়া নীল! ২০

0
1999

ছায়া নীল!

২০.

Maria Kabir

কপাল ঘামে ভিজে আছে। ওকে ডাকা যাবেনা। আমার জন্যে এমনিতেই অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। এখন ঘুমানো যাবে না। টেলিভিশন ছেড়ে খুঁজতে থাকলাম কোনো ভালো মুভি হচ্ছে নাকি। পেয়েও গেলাম। ইংলিশ মুভি টাইটানিক। অসম্ভব ভালো একটা মুভি একবার দেখলে বারবার দেখতে ইচ্ছে করে। ভয় টা আস্তে আস্তে কেটে যেতে লাগলো। মুভিতে এতোই মগ্ন হয়ে রইলাম যে সময় সেটাও খেয়াল নেই।
মুভির শেষ মুহূর্তে আমার গাল বেয়ে পানি টপটপ করে পরছে। সৌরভ ঠিক এই সময়ে রুমে ঢুকলো। মনে হলো একটু অবাক হলো। জিজ্ঞেস করলো
– আবার কী হয়েছে??
কথা বলার সাথে সাথে ও টেলিভিশনের দিকে তাকালো তারপর হেসে বলল
– ওহ এই কাণ্ড!
চোখেরজল মুছে বললাম
– কত কষ্টের কাহিনী দেখেছো। রোজ, জ্যাককে ছাড়া কীভাবে থাকবে??
– আচ্ছা বুঝলাম। একটা প্রশ্নের উত্তর দাও।
– হুম, বলো।
– শারলিন, নীল কে ছাড়া কীভাবে থাকবে??
ওর মুখের দিকে তাকালাম। এই প্রশ্ন কেন করলো??
– বুঝলাম না?
– খাবার এসে যাবে তুমি গোসল করে নিতে পারো। না না থাক তোমার হাত ভেজানো যাবে না।
– নীল অনেকদিন গোসল করি না। কেমন বিশ্রী লাগছে।
– শারলিন আর মাত্র ২ দিন। তারপর পুকুরে লাফাবা তাতেও কিছু হবেনা।
– পুকুর কই পাবো??
– আমাদের বাসায় আছে। হাত মুখ ধুয়ে নাও। আমি খাবার রেডি করছি।
হাত মুখ ধুয়ে বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখি বিছানার উপর চাদর বিছিয়ে খাবার রাখা হয়েছে।
আমাকে দেখে বলল
– পিওর বাঙালি খাবার। কোনো হোটেল থেকে আনা না।
– তাহলে তুমি রেঁধেছ??
– আমার দ্বারা সম্ভব না। আমাদের পিয়নের বউ হেব্বি রান্না করতে পারে। ওনাকেই ঠিক করা আমার।
– বুঝেছি।
খাবার খাওয়ার সময় ওকে বললাম
– আমার সেই ভয় পাওয়ার কারণ টা জানো??
– আমি একটা কারণ খুঁজে পেয়েছি। অবশ্যই তুমিও পেয়েছো। তোমার টা আগে শুনি।
– তোমাদের বাসায় খারাপ কিছু আছে। ভূত টাইপের।
– তোমার হাতের রক্ত খেতে চেয়েছিলো??
– হুম।
আমার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। সেই রাতের কথা মনে পড়ে গেলো।
– তুমি খাও। আমি বলছি কারণটা কী। তোমার ভেতর এই ধরনের ভয় অনেক আগে ঢুকে গেছে। মানুষের মস্তিষ্কের একটা অংশে এই ভয়টা জমা থাকে। যখন ওই ধরনের অর্থাৎ একটু পুরাতন বাড়ি বা গল্পে, মুভিতে ভূত থাকার আলামত বলে দেয় ওরকম কিছু দেখলেই সেই ভয়টা জেগে উঠে।
তারপর ও চুপ হয়ে গেলো। আমার কথা গুলোতে বিশ্বাস হচ্ছে। ছোটোবেলায় দাদীর কাছ থেকে অনেক ভূতের গল্প শুনেছি। এমনকি আমি প্রচুর হরোর মুভিও দেখি। ও আবার বলল
– আমাদের বাড়িটা অনেক পুরাতন। ভাঙা চোড়া তাই তোমার কাছে ভুতুড়ে মনে হয়েছে। মস্তিষ্কের সেই ভয় তোমার ঘুমের ঘোরে হানা দিয়েছে। তাছাড়া আর কিছুই না।
– সত্যি তো??
– হ্যা অবশ্যই। ভয়টাকে জয় না করতে পারলে তোমাকে সেই ভয় তাড়া করে ফিরবে।
– বুঝলাম না??
– মনে করো আমার রুমে তোমার আর একা ঘুমানো সম্ভব না। ভয়টাকে জয় না করতে পারলে একসময় তুমি কোনো রুমেই একা থাকতে পারবে না।
– একটু আগেও চোখ বুজেছিলাম কিন্তু আবার সেই হাত…
– বলেছি না তোমাকে।
– এখন কী করতে হবে বলো??
– কোনো সাইক্রাটিসই বলতে পারবে। আমি তো এটুকু জানতাম তাই বললাম।
– নীল আমাকে সাহায্য করো। আমি আর পারছি না, আমি ক্লান্ত।
– এতেই তুমি হেরে গেলে?? তুমি তো এতো সহজে হার মানার মেয়ে না।
– আচ্ছা একটা প্রশ্ন করবো ঠিক উত্তর দিবে??
– হ্যা করো।
– স্বপ্নের ব্যাখ্যা টা আমাকে দিলা না। আমি জানতে চাই কীভাবে???
– বলবো। আগে খেয়ে নাও। শান্তি মতো বসে বলা যাবে।

চলবে………!

#Maria_kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে