ছায়া নীল! ২.

0
3167

ছায়া নীল! ২.

Maria Kabir

রুমে আমি একা। আমার চোখ বারবার ময়লার ঝুড়ির দিকেই যাচ্ছে। মন বলছে, কাগজের টুকরো গুলোকে আবার জোড়া দেই।
আবারো পায়ের শব্দ। আমার রুমের দিকেই আসছে। হাটার শব্দে মনে হচ্ছে আফরোজা।
আমার দরজায় এসেই থেমে গেলো।
তাকিয়ে দেখি আফরোজা।
আমি বললাম
– আয় বোস আমার পাশে।
ও আমার পাশে এসে বসলো। ও কোনো কথা বলছে না। আর আমারো ইচ্ছে নেই।
একই কথা বারবার বলতে আর ভালো লাগেনা।
কেউ আমাকে বুঝে না, বুঝতে চায়না। সবাই ভাবে আমি মিথ্যে বলি।
আফরোজা বলল
– শারলিন।
– হ্যা বল।
– বিয়েটা করে নে।
– নীল বলতে যদি কেউ থাকতো, তাহলে সে তোর কাছে চলে আসতো।
– ও আমার কাছে আসবে না। আমাকেই ওর কাছে যেতে হবে।
– কীভাবে???
– জানি না। তবে আমি সত্যি ওকে পাবো।
– শোন পাগলামি করিস না।একটু পরেই তোর বিয়ে।
– তুই এখান থেকে যা। যা বলছি, তোকে আমার দেখতে ইচ্ছে করছে না।
– সত্যি সবসময় তিতাই হয়।
– ও আমাকে খুব ভালবাসে। ওকে আমি পাবোই।
– ছাই ভালবাসে। যার অস্তিত্ব শুধুই স্বপ্নে, যার শুধুই ছায়া দেখেছিস, যে প্রতিনিয়ত তোকে কষ্টই দিয়ে যায় সে তোকে কীভাবে ভালবাসবে?
– তুই বুঝবি না ওসব।
আফরোজা উঠে চলে গেলো রুম থেকে। ছোফায় হেলান দিয়ে চোখ বুজলাম। দুচোখে ঘুম ভর করলো।
আমি গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। ঘুমের মধ্যে একটা আচ্ছন্নভাব সৃষ্টি হচ্ছে।
একটা স্বপ্নের ঘোরে চলে এলাম আমি। মনে হচ্ছে দূরে ও দাঁড়িয়ে আছে।
আমি দৌড়াতে শুরু করলাম,ওকে ধরার জন্য প্রাণপণে!
ওকে আমি জড়িয়ে ধরলাম। ও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
জড়িয়ে ধরা অবস্থায় বললাম
– তুমি আসো না কেনো?
ও বললো
– কই? এইযে এসেছি!
– এভাবে না নীল, বাস্তবে আসো না।
– এসে কী হবে শুনি?
– ওরা আমাকে জোড় করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে।
– আচ্ছা করো বিয়ে আমি যাই।
– নাহ, আমি বিয়ে করবো না। আমি তোমাকে বিয়ে করবো।
– তুমি তাহলে বিয়ে করো না। আর নিজেকে এতো কষ্ট দিচ্ছো কেনো?

কেউ আমাকে ঝাঁকাচ্ছে। ঘুম ভেঙে গেলো সাথে স্বপ্নটাও ভেঙে গেলো।
দেখি আফরোজা হাতে তোয়ালে নিয়ে আমার কপাল মুছে দিচ্ছে।
আমি বললাম
– তোকে এখানে কে আসতে বলেছে?
– আরে তুই কাঁদছিলি। তোর কান্নার শব্দ পেয়েই তো ছুটে এসেছি।
স্বপ্নে যা যা দেখেছি সেগুলো মনে করার চেষ্টা করলাম।
ওকে যখন স্বপ্নে দেখি তখন স্বপ্নের মাঝে একটা আচ্ছন্নভাব থাকে।
স্বপ্ন সাদা কালো বলে ওর ফেস টা আমার দেখা হয়নি। এটা আমি অনেক আগে ভেবেছিলাম। কিন্তু পরে শুনেছি যে,
স্বপ্নে তাদেরই দেখা যায়, যাদের তুমি জীবনে কোনো একদিন দেখেছো।
কিন্তু ওকে তো আমি কোনোদিনও দেখিনি। তাই ওর ফেসটা আমি স্বপ্নে আনতে পারি না।
কিন্তু ওর বেলায় এই যুক্তিও খাটে না। কারণ ওর দেহের একটা অবয়ব বা ছায়া আমি দেখতে পারি।
ওর সাথে কথা হয় কিন্তু কণ্ঠটা কেমন সেটা আমি কখনওই মনে রাখতে পারিনি।
স্বপ্নের মাঝে যখন ও চলে যায় সেই যাওয়ার সময় একটা ছায়া পরে, সেই ছায়াটাই আমার মেমোরিতে থেকে যায়।
আজও ওর সেই ছায়াটা মেমোরিতে থাকতো কিন্তু আফরোজার এই ঝাঁকানিতে সব গেলো

আমি আফরোজা কে বললাম
– একটু আগেও ওকে আমি স্বপ্নে দেখেছি।ও আমাকে বিয়ে করতে নিষেধ করেছে।
আফরোজা বলল
– তুই বিয়ে করতে চাচ্ছিস না তাই স্বপ্নে এইরকম একটা ক্যারেক্টার তৈরি করেছে তোর অবচেতন মন। তারপর…….

– আফরোজা চুপ কর। তোকে কতবার বলবো ও আমার অবচেতন মনের তৈরি কোনো ক্যারেক্টার না।
– তাহলে কী? শারলিন বল আমায় ও কে?
– আমি জানি না। তবে আমি বিয়ে করতে পারবো না।
– তুই বিয়ে কর। দেখবি ওকে তুই ভুলে যাবি।
– না, আমি ওকে ভুলতে চাই না।
ড্রয়িংরুম থেকে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ আসছে।
আফরোজা উঠে চলে গেলো কী হয়েছে দেখার জন্য।
আমাদের বাসার বারান্দা দিয়ে সব রুমেই যাওয়া যায়। ঘোরানো সিস্টেম বারান্দা।
রাত কখন হয়েছে টেরও পাইনি। বিয়ে তো অনেক আগেই হয়ে যাওয়ার কথা এখনও হচ্ছে না কেনো?
যাই হোক আমাকে এই বিয়ে থামাতেই হবে।
ময়লার ঝুড়ির দিকে আবার চোখ পড়লো। কেউ আমাকে টানছে ওই ঝুড়ির দিকে। বসে থাকতে না পেরে ময়লার ঝুড়ির কাছে গেলাম।
কাগজের টুকরো গুলোকে একটা একটা করে উঠালাম। ঘরের জানালা দরজা সবই খোলা।
বাতাস আসছে। বারান্দার যে দরজা সেটা খোলা থাকলে বাতাস বেশি আসে।
খুব ঠাণ্ডা লাগতে শুরু করলো। সব গুলো টুকরো উঠানো হয়ে গেলো।
ড্রেসিং টেবিলে রাখার জন্য উঠে দাঁড়ালাম। আমি যেখানে ছিলাম সেখান থেকে বারান্দায় সরাসরি চোখ যায়।
আমার রুমের দরজার সাথে একটা ছায়া দেখতে পেলাম।
দেখে আমি চমকে উঠলাম। এতদিন যাকে স্বপ্ন দেখেছি তার ছায়া টুকুই শুধু আমার মনে থাকে।
সেই ছায়া বাস্তবে আমার সামনে।ও চলে যাবার সময় যেই ছায়া পড়ে সেই ছায়া। আমার দিকে পিছন ফিরে থাকা সেই ছায়া আর মাত্র কয়েক পদক্ষেপ পরে দাঁড়িয়ে আছে।

চলবে………!

#Maria_kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে