ছায়া নীল!
১৯.
তাড়াতাড়ি করে ব্রাশ করে, পোশাক পাল্টে নিলাম। খুদা লেগেছে খুব, খেতে বসবো তখন সৌরভ হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বলল
– সময় নেই, এখন খেতে হবেনা।
ফুপু বললেন
– এতদূর যাবে না খেয়ে কীভাবে থাকবে??
– বাইরে থেকে খাবার কিনে দিবো বাট এখন সময়ের বড় অভাব।
না খেয়েই আমাকে গাড়িতে উঠতে হলো। ও গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল
– আমার পাশে তোমাকে বসাই না কেনো জানো??
– নাহ, আমার মাথায় তো জট নেই।
– তুমি পাশে থাকলে মনে হবে তাকিয়ে থাকি তারপর এক্সিডেন্ট হবে…!
– ভালো তো মরে গেলেই ভালো। আমার খুদা লাগছে সৌরভ।
– বুজেছি কিন্তু সময় ছিলো না।
গাড়ি তো সে ঝড়ের বেগে ড্রাইভ করতে শুরু করলো। এদিকে পেটে খুদা তার উপর এতো স্পিডে গাড়ি চলছে, কেমন লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না।
গাড়ি থেমে গেলো। সৌরভ বলল
– নামো, এখানে নাস্তা করে যাওয়া যাবে।
ছোটোখাটো রেস্টুরেন্ট এর মতো একটা হোটেল। একে হোটেল বলবো না রেস্টুরেন্ট বলবো??
ও বললো
– নিশ্চয়ই কনফিউজড তুমি এটা হোটেল না রেস্টুরেন্ট ভেবে??
– হ্যা, আমি না বুঝতে পারছি না।
– হাফ রেস্টুরেন্ট হাফ হোটেল।
আমরা বাইরে চেয়ার টেবিল পাতা ওখানেই বসলাম।
– শুনো খিচুড়ি অর্ডার দাও আর সাতে ডিম পোঁচ।
– ওকে।
খাবারের জন্য অপেক্ষা করছি ৫-৬ জন ছেলে আমাদের পাশের টেবিলে এসে বসলো।
আমি চুপচাপ বসেই ছিলাম আর ও মোবাইলে কী যেন করছিলো।
ছেলে গুলো খুব বাজে বাজে কথা বলছিলো আর হাসছিলো। বেশিরভাগ কথা গুলোই মেয়েলি বিষয়ক। এইখানে আমি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মেয়ে নেই।
সৌরভের সামনে আমার লজ্জা লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো গাড়িতে ফিরে যাই। সৌরভ হয়তোবা খেয়াল করছে। ওর চোখমুখ শক্ত হয়ে যাচ্ছিলো। খাবার খেয়ে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম।
হাসপাতালে এসে সরাসরি ডাক্তারের কাছে চেকাপ করালাম। মেডিসিন চেঞ্জ করে দিলেন। আর আমাকে উদ্দেশ্য করে ডাক্তার বললেন
– পুলিশ কেস হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু মিস্টার সৌরভের রিকুয়েস্টে করি নাই। বুঝেছেন??
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম। তারপর মেডিসিন কিনে সৌরভ বলল
– আমার অফিসে কাজ আছে।
– আমি কই যাবো??
– তুমি আমার সাথে থাকবা তারপর একসাথে বাসায় যাওয়া যাবে।
ওর অফিস রুমটা সুন্দর বিশেষ করে সাজানোটা।সৌরভ কে বললাম
– চেয়ারে বসে থাকতে হবে??
সৌরভ আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে অফিস রুমের উত্তর কোণার দরজা খুলে ভিতরে নিয়ে গেলো।
– আমার বিশ্রামকক্ষ। তোমার জন্য উন্মুক্ত। এখানে বসে টেলিভিশন দেখো, ফ্রিজে খাবার আছে খাও। আর বোরিং লাগলে আমি তো আছি।
ওর অফিস বিল্ডিং টাও সুন্দর। দোতলা ভবন, নিচতলায় গাড়ি পার্ক করা হয় আর দোতলায় বিশাল হল রুমে কর্মকর্তা রা কাজ করছে।
– এই শুনো না।
– বলো কী বলবা??
– তুমি নিজেই এই ব্যবসা খুলেছো??
– বাবার ছিলো। একা ভালো লাগছেনা এখানে থাকতে??
কথাটা বলে ও আমার কপালের চুলে হাত দিয়ে বিলি কাটতে শুরু করলো।
– নাহ।
ও আরেক হাত দিয়ে প্যান্টের পিছনের পকেট থেকে পিস্তল বের করে বিছানার উপর ছুড়ে মারলো। তারপর বলল
– মেজাজ গরম হয়েছিল এতক্ষণ।
– কেনো??
– থাক বাদ দাও। আমি যাই অনেক কাজ বাকি আছে।
ও চলে গেলো। বিছানার উপর শুয়ে টেলিভিশন ছাড়লাম। কিন্তু ঘুম আসছিলো। তাই টেলিভিশন অফ করে চোখ বুজলাম। চোখ বুজার সাথে সাথেই সেই বিশ্রী হাত ভেসে উঠলো।
সাথে সাথে চোখ খুললাম। কিন্তু আশেপাশে তো কিছুই দেখছি না।
চলবে…..!
#Maria_kabir