ছায়া নীল! ১৮

0
1998

ছায়া নীল!

১৮.

Maria Kabir
আমি বললাম
– নাহ।
সৌরভ বলল
– নিশ্চয়ই মায়ের রান্না খেয়ে চেহারার এই হাল হয়েছে।
কথাটা বলেই হাসতে শুরু করলো। হাসা অবস্থায় বলল
– প্রথম প্রথম খুবই বাজে লাগবে। পরে অভ্যেস হবে তবে জিহ্বার কোনো স্বাদকোরক জীবিত থাকবে না।
– ভালো তো। তুমি তো ছোটোবেলা থেকেই তার হাতের রান্না খাও। তাহলে তো তোমার জিহ্বা বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই।
– তা ঠিক বলেছো। এইজন্য ভেবেছি শেফ বিয়ে করবে।
– মুর্দা জিহ্বাকে পুনরায় জীবিত করার জন্য।
– ওহ শারলিন তুমি তো অনেক ক্লেভার।
– ছাই, তাহলে তো তুহিন লোকটাকেই বিয়ে করতাম। গাধার মতো তোমার জন্য নিজের বিপদ ডেকে আনতাম না।
সৌরভ আমার এ কথার কোনো প্রতি উত্তর দিলো না। আমি সেই ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে মোবাইলে গেমস খেলতে শুরু করলাম।
নাক ডাকলে ঘুম আসে নাকি। ঘুমাতেও ভয় লাগছে আবার সেই হাত যদি।
টেম্পল রান খেলতে মজাই লাগে। তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে সৌরভ আমার পাশে বসলো।আমি না দেখার ভান করে খেলায় ব্যস্ত রইলাম। ও আমার আরো কাছে এসে বসলো। আমিও দূরে সরে গেলাম। ও আবারো কাছে এসে বসলো। এভাবে সরে বসতে বসতে একসময় আর জায়গা নাই সরে বসার।
ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
– এগুলা কোন ধরনের শয়তানি??
– শয়তানির কী আছে? তোমার পাশে আমি বসবো না তো কে বসবে?? ওহ তুহিন পাশে বসবে??
– কীসব বাজে কথা বলছো।
– কই, তুমি তো একটু আগেই বললে তুহিন কে বিয়ে করার কথা।
– সেটা পারসোনাল ব্যাপার আমার। তোমার পারসোনাল ব্যাপারে তো আমি নাক গলাই না।
– আমার পারসোনাল বলতে তো তেমন কিছুই নেই।
– সে তুমিই জানো। আমার পাশে থেকে সরো। আমার অসহ্য লাগছে তোমাকে।
– আমাকে এতো তাড়াতাড়ি অসহ্য লাগছে??
আমি চলে যাবার জন্য উঠলাম ও আমার হাত ধরে টেনে পাশে বসালো।
– শেফ বিয়ে করবো তাই এতো রাগ?? বিয়ে করলে কী করবা?
– কিছুই করবো না। চেয়ে চেয়ে দেখবো একটা শয়তান আমার জীবন থেকে বিদায় নিছে।
তারপর সৌরভ ওর প্যান্টের পিছনে হাত দিয়ে কী যেন বের করার চেষ্টা করছে। পিস্তল বের করলো।
জীবনে এই প্রথম কাছ থেকে পিস্তল দেখলাম। পিস্তল হাতে নাড়াচাড়া করছে আর বলল
– এর থেকে ভালো আইডিয়া আমার কাছে আছে।
তারপর আমার হাতে পিস্তল দিয়ে বলল
– এটায় গুলি লোড করা আছে। ৫-৬ টা আছে।
হাতে পিস্তল নিয়ে কেমন ভয় লাগতে শুরু করলো।আমি আস্তে আস্তে বললাম
– তো??
– কিছুনা, যতক্ষণ রাগ থাকবে ততক্ষণ আমার বুকের বামপাশ টাতে একটার পর একটা গুলি ঢুকিয়ে দিতে থাকবা।
– তারপর??
– তাতেও রাগ না কমলে আমার পকেটে আরো গুলি আছে লোড করে নিবা।
– আমি শুট করতে পারি না আর তো গুলি লোড।বাদ দাও তো এসব।
– ভয় লাগছে??
পিস্তল টা সোফায় রেখে দিলাম। মন বলছে ওকে জড়িয়ে ধরে বলি, তোমাকে ছাড়া আমার কী হবে??
কিন্তু আমার ভিতরের কেউ একজন বলছে, না।
– ভয় কেনো লাগবে? যে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করতে পারে সে অন্যকে হত্যা কেনো করতে পারবে না?
– তাহলে কী?
– আমি যে বিন্দুকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত আবর্তিত হচ্ছি সেই বিন্দুকে কীভাবে মুছে ফেলি।
– কিন্তু বিন্দু টা তো ভুল বিন্দু।
– নাও তো হতে পারে। আর এইসব বিশ্রী জিনিষ আমাকে দেখাবে না।
– লাইসেন্স করা আর্মস। দেখতেই হবে তোমাকে। আর অভ্যেসও করতে হবে, আমার সাথে থাকছো যে।
– বাহ কী বিরাট যুক্তি। যাও খেয়ে মাথা ঠাণ্ডা করো।
– মার রান্না খাবার খেলে মাথা ঠাণ্ডা হবেনা, গরম হবে।আমি খেয়ে এসেছি।
তারপর কিছুক্ষণ চুপচাপ কাটলো। ও কীভাবে যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কেমন অস্বস্তিকর লাগছিলো। বাধ্য হয়ে বললাম
– প্লিজ ওভাবে তাকিয়ে থেকো না।
– তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
– এটা তো আগেও ছিলাম। নতুন কোনো কথা না।
– হ্যা কিন্তু কিছু কিছু সময় সেই সৌন্দর্য টাকে অন্যরকম লাগে। দেখোই না চাঁদ কে প্রতিনিয়ত দেখছি কিন্তু সবসময় তো সুন্দর লাগে না।
– বুঝলাম, কিন্তু আমার এই কালি পরা চোখ বিশিষ্ট চেহারায় নতুন কোনো সৌন্দর্য নামক কিছুই নাই।
– মনে পড়েছে তোমাকে ডাক্তারের কাছে আবার যেতে হবে।
– আবার লং জার্নি উফফ। ঘুমাবা না??
– নাহ দুপুরে লম্বা ঘুম দিয়েছি। জানি তুমি আজকেও ঘুমাতে দিবা না।
– নাহ আজকে ফুপুর পাশে ঘুমাবো তাই সমস্যা নেই। তুমি ঘুমাও।
– আজকে গতকালের যুক্তি খাটছে না। অন্যকিছু।
– বুঝেছি, সারারাত বসে বসে আমাকে হা করে দেখবে।
– হুম। দেখবো তুমি কী দিয়ে তৈরি? এতো ভালবাসতে কীভাবে পারো?? আমার আগের সে তো ভালবাসতে পারেনি।
– যাও তো ঘুমাও। আর আমাকেও যেতে দাও।

পুরো পাগল, আর আমার চেয়েও জেদি। পিস্তল নিয়ে হাজির। ফুপুর পাশে শোয়ার পর নাক ডাকার শব্দ কানে আসছে। আলাদা একটা ছন্দে নাক ডাকছে।আহা, এযে মহান ছন্দময় সুর।
শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পরলাম। ঘুম ভাঙলো ফুপুর ডাকে।
– এই ওঠ, ডাক্তারের কাছে যাওয়া লাগবে বলে??
– হুম। কয়টা বাজে??
– ৯ টা। সৌরভ এখনি চলে যাবে। তাড়াতাড়ি ওঠ……

চলবে……!

#Maria_kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে