ছায়া নীল।
১৭.
Maria Kabir
সকাল যখন হলো তখন সৌরভ বলল
– ঘুমাও তো।
– নাহ নাহ আমি এই বাড়িতে ঘুমাতে পারবো না।
– দেখো আমি আর মা এখানে ১০-১২ বছর যাবত আছি। আমরা তো কিছুই দেখতে বা অনুভব করতে পারিনি।
– আমি সত্যি বলছি, সত্যি একটা হাত…
– শারলিন তোমার ভুল। অনেক স্ট্রেসে আছো তাই এরকম আবোলতাবোল স্বপ্ন দেখেছো।
– আমাকে একটা মহিলা হোস্টেল খুঁজে দাও। আমি চলে যাই।
– দেখো আমার ব্যবসায় লাল বাতি জ্বলছে। তোমার জন্যে একমাত্র।
– শুরুটা তুমি করেছিলে।
– আমার ব্যবসা ঠিক করে যখন সময় পাবো তখন খুঁজে দেখবো। তোমার মতো মেয়ের জন্য আমি আর সময় নষ্ট করতে পারবো না।
– তোমার খুঁজতে হবেনা। আমিই খুঁজে নিবো। আমাকে শুধু আমার বাসায় দিয়ে আসো।
– আমি তোমাকে একটু আগেই বলেছি, তোমার জন্যে আমার সময় নেই। বহুত ফাজলামি করেছো এখন আর না।
আমার আর সহ্য হচ্ছে না। ওর রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় এসে বসলাম।
সত্যি মা ঠিকি বলে, আমি খুব খারাপ। আমিই চলে যাবো এখান থেকে। গন্তব্য হীন ভাবে হেটে যাবো মরলে মরবো বাচলে বাঁচবো। তাও যারা আমাকে ঘৃণা করে তাদের কাছে থাকবো না।
সোফার সামনে রাখা টিটেবিলে পাউরুটি আর কলা রেখে সৌরভ বলল
– আমি বের হচ্ছি এই বাড়ি থেকে এক পা বের হলে তোমার পা ভেঙে ঘরে বসায় রাখবো।
– আমাকে খুঁজে পাবে কোথায়?
– সেটা আমি বুঝবো।খেয়ে নিবে। রাগ আমার সাথে খাবারের সাথে না।
সৌরভ দ্রুত চলে গেলো। গাড়ির শব্দ পেলাম। তারপর খেয়ে নিলাম। মেডিসিন খেয়ে ওর রুমে রাখা আয়নায় নিজেকে একটু দেখছি। চেহারা আর চেহারা নেই। চোখের নিচে কালি পরেছে। চুল রুক্ষমূর্তি ধারণ করেছে। আয়নায় কারো যেন ছায়া দেখতে পেলাম।গতকালের রাতের ঘটনা মনে পড়ে গেলো। পিছনে ফিরে দেখি ফুপু। ফুপু আমাকে বলল
– কিরে কিছু খেয়েছিস?
– হুম।
– একটু অসুস্থ ছিলাম তো তাই দেরি হলো উঠতে।
– ঠিক আছে ফুপু।
ফুপু খুব সুন্দর, আমার তো মনে হচ্ছে ফুপু আমার কপি।
ফুপু বলল
– তুই আমার দর্পণ। মনে হচ্ছে বয়স্ক নূরের সামনে ১৯ বছরের নূর দাঁড়িয়ে আছে।
– আপনি বেশি সুন্দর।
– নাহ রে সমান সমান। আমি আমার সৌরভের জন্য এমন একটাই মেয়ে খুজছি।যাই হোক বাদ দে, কী খাবি দুপুরবেলা??
– আপনার ইচ্ছা।
– আচ্ছা তুই আমার সাথে সাথে থাকবি। রান্নাবাড়া দেখলে শিখতে পারবি।
ফুপু বেশি কথা বলেন না। পুরো বাড়িতে আমরা দুজন।
দুপুরবেলা খাওয়ার সময় ফুপু বলল
– দুপুরে একা খেতে হয়। ভালো লাগেনা। আমার একজন সংগী হলো।
– সৌরভ ভায়া আসে না?
– ওর কোনো ঠিক নাই। সেই সকালে যায় আর রাতে ফিরে। তাও গভীর রাতে।
– আপনার কষ্ট হয়না?
– অভ্যেস হয়ে গেছে।
খাবার মোটেও ভালো হয়নি। খুব কষ্ট হলো খেতে। খাওয়ার পর খুব অস্থির লাগছিলো। ফুপু আর আমি রাতে খেয়ে শুয়ে পরলাম। গেস্ট রুমের চাবি ফুপু খুঁজে পাচ্ছেনা। তাই আমাকে তার রুমেই ঘুমুতে হলো।
শোয়ার সাথে সাথে ফুপু নাক ডাকতে শুরু করলো। গতকালের ভয় আর এই নাক ডাকাতে ঘুম আসছে না।
মেইন গেট খোলার শব্দ পেলাম। ফুপুর পাশ থেকে নীরবে উঠে রুম থেকে বের হলাম।
সৌরভ জুতা খুলছিলো।
আমাকে দেখে বলল
– কী খুব miss করেছো তাই না???
চলবে……!
#Maria_kabir