Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"ছায়া মানবছায়া মানব পর্ব-৮০ এবং শেষ পর্ব

ছায়া মানব পর্ব-৮০ এবং শেষ পর্ব

#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম

৮০. ( অন্তিম পার্ট )

জীবনের তরী থামে আর চলে
থেমে থাকে জীবন এটা কে বলে?
এর মাঝে কতজন আসে আর যায়
ঘর ভেঙ্গে, ঘর বাঁধে অজানা নায়_

ছোট্ট কয়টা লাইন দিনলিপিতে টুকে নিয়েই আরিশ অহনার ঘুমন্ত মুখশ্রী দেখল। এলবাম, ডায়রী আর মাহতিমের পোশাক জড়িয়ে ধরে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। চোখের কার্নিশে তার জল জমা। আরিশ উঠে গিয়ে তার পাশে বসে। ছয়টি মাস কেটে গেছে কিভাবে টের পায়নি সে। পুরোটা সময় অহনাকে দিয়েছে। তার অবুঝ আবদারগুলো পূরণ করেছে। বিয়ের বন্ধন নয় বন্ধুত্বের বন্ধন থেকে কাছে থেকেছে। সঙ্গ দিয়েছে।

মোড়ল দরজায় হাক দেয়। আরিশ অপ্রস্তুত ভাবে উঠে গিয়ে বাবাকে ঘরে আসতে বলে। মোড়ল অহনার অবস্থা দেখল। চিন্তার ভাঁজ তার কপালে প্রতিটা সময় থাকে। জিজ্ঞেস করল,’ এখন কেমন আছে মেয়েটা?’

আরিশ ছোট করে উত্তর দেয়,’ ভালো।’

মোড়ল আরিশের দিকে সম্পূর্ণ নজর দিয়ে তার পিঠে হাত রাখে,
‘ জীবনটা এভাবে চলে না। এবার একটা সিদ্ধান্ত নে। আর কতদিন একা থাকবি? এবার অন্তত বিয়েটা করে নে। লাবণী অপেক্ষা করে আছে।’

আরিশ মোড়লের চোখের দিকে দৃষ্টি দিতে পারল না। মাথা নিচু করেই বলল,’ যাকে ভালোবাসিনি তাকে বিয়ে করা মানে অসম্মান করা। আমি চাই না লাবণীকে অসম্মান করতে। সেও ভালো একজন জীবনসঙ্গী আশা করে, যে তাকে ভালোবাসবে, পাশে থাকবে। আমি সেটা কখনোই হয়ে উঠতে পারব না।’

‘ অহনাকে নিয়ে ভাবিস না, আমরা সামলে নেব। তুই হয়তো সে একা হয়ে যাবে ভেবে এমনটা করছিস। অহনাকে আমি আগেই আমার মেয়ে বলেছি। তার খেয়াল আমি রাখতে পারব। তুই এবার বিয়েটা করে জীবন গুছিয়ে নে।’

‘ উঁহুম বাবা! আমি অহনাকে নিয়েই সুখে আছি। বিবাহ বন্ধনের আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনের বন্ধন। লাবণীর সাথে কখনো আমার বনিবনা ছিল না। তাই আর জোর করোনা।’

‘ আচ্ছা মানলাম লাবণীকে ভালো লাগেনা। কিন্তু দেশেতো আর মেয়ের অভাব পড়েনি তাই না? আমি অনেকগুলো মেয়েকে জানি, তুই মত দিলে আলোচনা করব।’

‘ না বাবা, বিয়ে না করেও আমি অহনাকে নিয়ে সুখে আছি। আমি আর কিছু চাই না। আপাতত বিয়ে করার জন্য কখনো বলোনা।’

মোড়ল হতাশ মনে বেরিয়ে গেল। পর্দার আড়াল থেকে পুরোটাই লক্ষ্য করল লাবণী। বাড়ি কাছে থাকায় সে প্রতিদিন‌ই নিয়ম করে আসে। শেষ আশা, হয়তো আরিশ তাকে কোনোদিন ভালোবাসবে। সেই আশায় আজও দিনাতিপাত করছে। কিন্তু আজ আবারো আরিশ প্রমাণ করে দিল, সে তাকে ভালোবাসেনি। নির্বাক অশ্রু গড়িয়ে পড়ে লাবণীর চোখ থেকে। এত অপেক্ষার পরেও সে আরিশের মন পেল না। ব্যর্থ প্রেমিকা সে। একপাক্ষিক ভালোবেসে গেল সবসময়।

লাবণী আরিশের সাথে কথা বলতে ঘরে ঢুকে। তার আগে দু’হাতের পিঠ দিয়ে চোখের জল মুছে নেয়। কিছুটা হাসার চেষ্টা করে অহনার পাশে গিয়ে বসে। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

রুমি অন্তঃসত্ত্বা। বড্ড বেশি খেয়াল রাখছে মতি। প্রতিটা সময় তাকে আগলে রাখছে। একদম ভালো হয়ে গেছে সে। রুমির কথা খুব ভাবে, তাকে ছাড়া আর কারো কথা ভাবেনা। রুমি তাকে পরীক্ষা করার জন্য তার কিছু বান্ধবীকে কাজে লাগিয়েছিল। কিন্তু মতি তাদের পাত্তা দেয়নি। রুমিকে সে সত্যিকারের ভালোবেসেছিল। সকল অবুঝ আবদার পূরণ করেছে। সর্বক্ষণ খেয়াল রাখে। তাদের ভালোবাসা কানায় কানায় পূর্ণ হয়।

আয়শা আদ্রিতাকে ডাকতে এসে দেখল সে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। আয়শা সন্দিহান চোখে তাকায় আদ্রিতার দিকে। ঠেলে বলে,’ এই অবেলায় শুয়ে আছিস কেন?’

আদ্রিতা হকচকিয়ে উঠে,’ মা, আমি কি মা’রা যাইনি?’

‘ মর’ণ দশা! ম’রে যাওয়ার কি হলো শুনি?’

‘‌আমাকে কি তোমার জীবিত মনে হচ্ছে?’

‘ বেলা গড়িয়েছে, উঠে আয়। ম’রার মত ঘরে পড়ে থাকলে মরাই ভাববে সবাই।’

আদ্রিতা চারিদিকে তাকিয়ে নিজে নিজেই বলল,’ তার মানে আমি বেঁচে আছি।’

তৎক্ষণাৎ কল করে হ্যারিকে। হ্যারির সাথে আদ্রিতার ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। একে অপরকে ভালোবাসে। প্ল্যান করেছে আদ্রিতা গ্রাজুয়েশন শেষ করলেই বাড়িতে বিয়ের কথা বলবে। হ্যারি ওপাশ থেকে বলল,’ আ’ছাড় খাচ্ছি, পরে কল করো।’

আদ্রিতা তপ্ত হয়ে বলল,’ একা একা খাচ্ছ কেন? আমার জন্য‌ও নিয়ে আসো।’

‘ কেন, তোমার কি আ’ছাড় খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে? তাহলে বাইরে গিয়ে কাঁদায় উল্টে পড়ো।’

‘ স্যরি হাঁড়ি, আমি ভেবেছি আচার!’

‘ একদম হাঁড়ি বলবে না। আমার নাম হ্যারি।’

‘ সে যাই হোক। আমি এটা ভেবে অবাক হচ্ছি। আমি এখনো বেঁচে আছি!’

‘ কেন এমনটা মনে হলো?’

‘ তুমি জানো না, আমি এবারের পরীক্ষায় টেনেটুনে পাশ করেছি। ভাইয়া দেখতে পেলে আগুন পাখি ছেড়ে দেবে আমার উপর। তাই ভয়ে ম’রে যাব ভেবেছি, চিৎ হয়ে শুয়ে ছিলাম, তবুও ম’রিনি কেন?’

‘ চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলে কেউ মরে যায় না। পাগলি মেয়ে।’

‘ তাহলে কিভাবে মরব? ভাইয়া জীবিত দেখলে নিজেই মে’রে ফেলবে।’

‘ ডোন্ট ওরি আদুরী, আমার বুকে শুয়ে পড়ো, তাহলেই তুমি ম’রে যেতে পারবে শান্তিতে।’

‘ তোমাকে কোথায় পাব এখন?’

‘ আ’ছাড় খেয়েছি। বাসায় গিয়ে চেঞ্জ করব। তারপর র‌ওনা দেব তোমার বাড়ি। রাতে অপেক্ষা করো, আসব আমি।’

‘ সত্যি? অনেকদিন দেখিনা তোমায়।’

‘ একদম পাক্কা। জানালা খোলা রেখো, আর মনের দরজাটাও।’

‘ উঁহু, আগে এসো।’

লাবণী আরিশকে দেখল। হাস্যোজ্জ্বল চেহারাকে মলিন করে বলল,’ আমাকে তোমার কখনো ভালো লাগেনি। তাও আমার তোমাকেই ভালো লাগে।’

আরিশ ব্রু উঁচিয়ে তাকায়। নির্লিপ্ত কন্ঠে শুধায়,’ কিছু বলার থাকলে বলো।’

‘ না, বলার নেই। ছিল অনেক কথা, এখন ফুরিয়ে গেছে। সত্যি বলতে মুখে জড়তা ভীড় করেছে।’

আরিশ পূর্ণ দৃষ্টি দেয় লাবণীর দিকে,’ আমার জন্য এখনো অপেক্ষা করছ কেন? আমি আগেই বলেছি, তোমার প্রতি আমার কোনো অনুভূতি নেই।’

‘ এটা তোমার ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু আমি চেষ্টা করেও তোমাকে ভুলতে পারিনি।’

‘ এখনো আগের মতই চাও?’

‘ সবসময় চাইব!’

‘ বিয়ে করবে না কখনো?’

লাবণী তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়,’ ভালোবাসা ছাড়া বিয়ে কি করে হয়? আমি না‌ হয় তোমার স্মৃতি নিয়েই থাকব। এতে অন্তত তোমার কোনো সমস্যা নেই?’

‘ নিজের ভালোটাই বুঝতে চাইছ না কেন? তোমার জন্য আমি যোগ্য ন‌ই। তুমি আরো ভালো কাউকে ডিজার্ভ করো।’

‘ থাক, এসব আর শুনতে চাই না। পুরনো হয়ে গেছে কথাগুলো। আমি তোমায় প্রতিদিন দেখতে পাই, এটাই আমার শান্তি। বাকি সময়টাও এভাবেই কাটাতে পারব। ভেবো না আমাকে নিয়ে।’

চোখের জল লুকিয়ে এক তৃপ্তির হাসি দেয় লাবণী। নির্বাক হয়ে আরিশের দিকে তাকিয়ে চলে যায় ঘর থেকে।

আরিশ চঞ্চল হয়ে পড়ে। অহনার ঘুমন্ত চোখে একবার স্পর্শ করে কাঁথা টেনে দেয়। বাচ্চাদের মত ঘুমাচ্ছে অহনা। ঠোঁট দুটো মাঝে মাঝে নড়ছে। আরিশ আলতো করে অহনার হাত ধরে। মুঠো করে চুমু খায়। অহনা চমকে উঠে। ঘুম উড়ে গেছে তার। হকচকিয়ে উঠে বসে। এক ঝটকায় আরিশের হাত ছাড়িয়ে নেয়,’ আপনাকে কতবার বলেছি, আমাকে ছুঁবেন না।’

আরিশ বিচলিত হয়ে পড়ে,
‘ আমি….’

‘ কিছু বলতে হবে না।’

অহনা বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় চলে যায়। দূরে তাকিয়ে আবারো হাসে। সে মাহতিমকে দেখতে পাচ্ছে। আবার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। আরিশ পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। অহনা উৎফুল্ল কন্ঠে বলে,’ দেখুন, মাহতিম আসছে। কত সুদর্শন আমার মাহতিম। আমার কাছেই আসছে।’
পরপরই বলল,’ আবার চলে গেল। একদম আমার কথা শুনেনা। আমার কাছে আসতে বলি, কিন্তু সে দূরেই থাকে। এখন কোথায় গেছে? নদীর পাড়ে নয়তো? আমাকে সেখানে নিয়ে চলুন।’

আরিশ অহনার সকল অবুঝ আবদার পূরণ করে। এক কথায় অহনাকে নদীর পাড়ে নিতে সম্মতি জানায়। অহনা ডায়রিটা হাতে নিয়ে পথ চলে আরিশের সাথে।

রাস্তার দু’পাশেই অহনা মাহতিমকে দেখে। নিজে নিজে হাসে। মুগ্ধ নয়নে দেখে।

তারা নদীর পাড়ে পৌঁছে যায়। পুরনো স্মৃতিগুলো মাথায় আঘা’ত করে অহনার। আরিশকে শক্ত করে চেপে ধরে,’আমার মাথা ব্যথা করছে খুব। আমাকে ঠিক করে দিন। সহ্য হচ্ছে না। বিচ্ছিরি একটা ব্যথা অনুভব করছি।’

আরিশ অহনাকে আলিঙ্গন করতে গেলেই অহনা দু’কদম পিছিয়ে যায়,
‘ নাহ! আপনি আমাকে ছুঁবেন না। আপনার স্পর্শ আমার ভালো লাগে না। আমার মাহতিমের স্পর্শ ভালো লাগে। ও কেন এখনো আসছে না। আর কত দেরি করবে?’

হাতে থাকা ডায়রিটার দিকে তাকায় অহনা। ভেতর থেকে দু’ভাঁজ করা চিঠিটা চোখের সামনে মেলে ধরে। এই ছয় মাসে চিঠিখানা হাজারবার পড়েছে সে।

আবারো পড়া শুরু করে। হাত দুটো কম্পিত। চোখের সামনে শব্দগুলো ফুটে ওঠে,

আমার আহি,
অবিশ্বাস করো না। আমি কথা দিয়েছিলাম তোমাকে, ছেড়ে যাব না কখনো। কিন্তু ভাগ্য আমার সাথে কি খেলা খেলল। আমি আমার দেওয়া কথা রাখতে পারিনি। আমি রাখতে পারিনি তোমাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি। আমি ব্যর্থ প্রেমিক। যে কিনা পাশে থাকতে পারেনি তার ভালোবাসার। ছেড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। কি করব বলো? এই প্রকৃতিও বিরোধীতা করছে আমাদের ভালোবাসায়। সেও চায় না আমরা এক হ‌ই। পৃথিবীর প্রতিটি বালুকণা চায় আমরা আলাদা হয়ে যাই। তারা আমাকে মেনে নিতে রাজি নয়। এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে বুকের ভেতরটায় কেউ হাতুড়ি দিয়ে পে’টাচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে ভীষণ। লিখতে গিয়ে হাত কাঁপছে। শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না। কী বলে লিখলে তুমি আমার ভেতরটা বুঝতে পারবে? কিভাবে সংজ্ঞায়িত করলে আমার প্রতি তোমার আর কোনো অভিযোগ থাকবে না?
তোমার আর আমার দেখা হয়েছিল একটা দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে। ভাবিনি সেই দূর্ঘটনা থেকেই ভালোবাসার জন্ম নেবে। ভাবিনি এতটা ভালোবেসে ফেলব। কিন্তু বিচ্ছেদ আমাদের ভবিতব্য, হয়তো এটাই ছিল আমাদের লিখন খাতায়। কে খন্ডাতে পারে সে ভবিতব্য? পেয়ে গিয়ে ভেবেছিলাম পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ আমি। ভবিতব্য বলে দিল, আমি একজন লুজার। আমি পারিনি তোমাকে জিতে নিতে।
যখন জেনেছি আমার সময় ফুরিয়ে এসেছে, আমি আর বেশিদিন থাকতে পারব না তোমার সাথে। জানো, কতটা কষ্ট হয়েছিল? অনুভব করতে পারবে সেই কষ্টের আংশিক? হৃদয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করেছিল। আমার সহ্য হচ্ছিল না মুহূর্তটা। চোখ দুটোও ঝাপসা হয়ে এসেছিল। বার বার পুরনো স্মৃতিগুলো আ’ঘাত করছিল আমাকে। এত ভালোবাসা, এত প্রেম, এত স্বপ্ন সব কেমন ভুলে গেলাম আমি।
একজন আর্মি অফিসার কখনো নিজের দায়িত্ব ভুলেনা। সে কখনো কথার খেলাপ করে না। কিন্তু, আমি করলাম। আমি স্বার্থপর হয়ে গেলাম তোমার ক্ষেত্রে। বার বার বলেছি আমি তোমার পাশেই থাকব আজীবন। মিথ্যে বলেছিলাম। হ্যাঁ, আমি সত্যি বলিনি, তুমি কষ্ট পাবে বলে। বার বার মিথ্যের হাতছানি দিয়ে বলেছি এই হাত কখনো ছাড়ব না। দেখো, কেমন ছেড়ে দিলাম। ক্ষমা করে দিও আমায়। আমি চাইনি তোমাকে কষ্ট দিতে। আমি কখনোই চাইনি তোমাকে ঠকাতে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আহি। আর লিখতে পারছি না। হাতটা থেমে এসেছে। ক্রমেই রেষারেষি বন্ধ হতে চাইছে। কাগজের টুকরোটা এখনো পুরো লেখা হয়নি। কলম থেমে গিয়েছে। আমার হাত চলছে না। কান্নার শব্দ কি কখনো লিখে প্রকাশ করার যায়? যায় না, তাই আমিও পারছি না।
বুকের যে পাশটায় হৃদয়ের বসবাস সেটা এখন পঙ্গু হয়ে গিয়েছে। তার কার্যকলাপ সে বন্ধ করে দিয়েছে। সেও ঘোর বিরোধীতা করছে। একমাত্র তুমি ছাড়া আর কেউ আমাকে চায় না। সবাই তাড়িয়ে দিচ্ছে। তারা বোঝে না ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্ট কি! তারা বোঝে না প্রেম মানে কি! তারা বোঝে না বিচ্ছেদের বেদনা কতটা ভয়াবহ! তারা কখনোই বোঝেনা নির্বাক আত্ম চিৎকারের শব্দ! তাহলে কি করে তারা আমাদের মিলন চাইবে?
বলো তুমি, কি করলে আমি তোমাকে পেয়ে যাব? আদৌ কি তা সম্ভব? না! সম্ভব নয়। তাই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যাচ্ছি আমি।
আমার জন্য কষ্ট পেও না তুমি। আরিশ অনেক ভালো ছেলে। সে যথেষ্ট ভালোবাসে তোমাকে। তোমাকে আগলে রাখবে সে সবসময়। তুমি তাকে মেনে নিলে সুখী হবে। আমার জন্য অযথা কষ্ট পাবে কেন? আমি কখনোই তোমাকে কাছে রাখতে পারিনি। আমার জন্য তুমি তোমার বাবাকে হারালে। আমার জন্য তুমি এখন একা হয়ে গেলে। না অতীতে তোমাকে সুখী করতে পেরেছি না বর্তমানে। আমি শুধু তোমার দুঃখের কারণ হলাম পদে পদে। সে ঘৃণা থেকেও আমাকে ভুলে যেতে পারো‌। আমাকে ভেবে কখনোই চোখের জল ফেলবে না। কষ্ট করে হলেও ভুলে যেও।
আর কি বলব বলো! স্বল্প ভাষা ফুরিয়ে গেছে। যে ছোট্ট সংসারের স্বপ্ন দেখেছিলাম তাও হারিয়ে গেছে। এরপর আমি হারিয়ে যাব। ভাবতেই বুকের বাঁ পাশটায় প্রচন্ড ব্যথা করছে। চিনচিন করছে সমস্ত শরীর। জ্বালা করছে প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।
ভুল বুঝোনা, মাফ করে দিও। আমি কথা দিয়ে কথা রাখতে পারিনি। আমার একটাই চাওয়া তুমি ভালো থেকো। সর্বদা হাসিখুশি থেকো। ভালোবাসি আমার আহি। খুব বেশি ভালোবাসি।
-তোমার মাহতিম

চিঠিখানা সম্পূর্ণ করতেই অহনা ডুকরে উঠে। আরিশ তাকে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যায়। প্রতিবার‌ই চিঠিখানা পড়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে অহনা। আরিশের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,’ জানেন, মাহতিম কি বলেছে এই চিঠিতে?’

আরিশ উদ্বিগ্ন চোখে তাকায়। অহনা বলল,’ সে বলেছে আপনাকে মেনে নিলে আমি সুখী হব।’

আরিশ কিছুটা খুশি হলেও অহনা তার খুশিতে ব্যাঘাত ঘটিয়ে বলল,’ কিন্তু আমি সেই সুখ চাই না। মাহতিম বলেছে আপনাকে মেনে নিতে, তাই মেনে নিলাম একজন বন্ধু হিসেবে। কিন্তু সে বলেনি আপনাকে বিয়ে করতে। তাই এ আশা ছেড়ে দিন। আমি কখনোই আপনাকে বিয়ে করব না। আমি আমার ভালোবাসার স্মৃতি নিয়েই বাকি দিনগুলো কাটাতে চাই।’

আরিশ মৃদু হাসে,’ আমি কখনোই তোমাকে বলব না, আমাকে বিয়ে করো। আমি তোমাকে খুশি দেখতে চাই। সেটাই করে যাচ্ছি। আর সারাজীবন তোমাকে খুশি রাখার দায়িত্ব নিলাম। ভয় নেই, আমি কখনোই তোমাকে বলব না আমাকে ভালোবাসো।’

অহনার হ্যালুসিনেশন শুরু হয়ে যায়। দেখতে পায় নদীর পাড় বেয়ে মাহতিম উঠে আসছে। উত্তেজনায় অহনা অদৃশ্য কাউকে জড়িয়ে ধরে। তার মনে হচ্ছিল মাহতিম এসেছে। আবেগে আপ্লুত হয়ে যায়,’ তুমি এসেছ! আমি জানতাম তুমি আসবে। আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি তুমি। কি করে ছাড়ি বলো? সারাজীবন আমার সাথে বেঁধে রাখব তোমাকে। তোমার বুকে মাথা রেখে কাটিয়ে দেব হাজার যুগ। এই বুকের স্পর্শ আমার প্রতিটি সময়। তোমার গায়ের গন্ধ আমার নিত্যদিনের পঠন। ভালোবাসি তোমায় আমার অদৃশ্য ভালোবাসা। অনেক বেশি ভালোবাসি তোমায়।’

– সমাপ্ত

( মনের আনন্দ থেকেই লিখেছি। এবং অন্তিম পর্যায়ে এসেছি। হয়তো অনেকের মনে কষ্ট দিয়েছি খুব। ক্ষমাপ্রার্থী আমি।
সবার থেকে গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। ভালোবাসার পাঠক পাঠিকাদের আবারো অনেক ভালোবাসা জানাই, যারা প্রথম থেকে গল্পটা এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছেন। মূলত আপনাদের থেকেই আমি শক্তি পাই, তেজ পাই পরবর্তী পর্ব লেখার। এভাবেই হয়তো আজ শেষ করে দিলাম। খুব শিঘ্রই সিজন ২ নিয়ে হাজির হব। ততদিনে নিশ্চয় ভালোবাসা কমিয়ে দেবেন না! আশা করি সর্বদা পাশে থাকবেন। আপনারাই আমার এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। আপনারাই আমার অদৃশ্য ভালোবাসা ❤️ )

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ