#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম
৫৬.
আশিশ সামনে এগিয়ে আসা আগন্তুককে বিন্দুমাত্র ভয় পায় না। ঘৃণায় চোখ মুখ খিঁচে কিছু বলতে যায়। তখনি বুঝতে পারে, তার কথা বলার সুযোগ নেই, মুখে কাপড় বাঁধা। হাতদুটোও বাঁধা রয়েছে। চেয়ারের সাথে শক্ত করে তাকে বাঁধা হয়েছে।
আরিশ এগিয়ে আসে। আশিশ নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে। আরিশ আশিশের মুখের কাপড়টা সরিয়ে দিতেই সে চিৎকার করে উঠে,’ তোদের আমি ছাড়ব না। দেখে নিস। এবার এখান থেকে ছাড়া পাই, তোদের কি হাল করব দেখবি শুধু।’
আরিশ হেসে আশিশের মুখোমুখি একটা ভাঙ্গা চেয়ার টেনে বসে। আশিশের ঠিক কানের কাছে গিয়ে বলল,’ ছেড়ে না হয় দিলাম। কিন্তু বাঁচবি কি করে? পুলিশ খুঁজছে তোকে।’
আশিশের ঠোঁট থেকে র’ক্ত ঝড়ছে। জিভ দিয়ে তা লেহন করে, নোনতা স্বাদ তার। গত দু’দিন তাকে খাবার কিছু দেওয়া হয়নি। প্রতি দুইদিন পরপর হালকা প্রোটিন দেওয়া হয়েছে। তার বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু শক্তি দরকার তা ঐ প্রোটিন মিল্ক থেকে পাওয়া যায়। আশিশ বেঁচে আছে ঠিকই কিন্তু উদরে ভীষণ ক্ষুধা।
আশিশ বলল,’ আমার খাবার চাই। খুব খিদে পেয়েছে।’
‘ এ মুহুর্তে খাবার দেওয়া যাবে না। কাল সকালের আগে তোর সব খাওয়া বন্ধ।’
‘ আমাকে আটকে রেখেছিস কেন?’
‘ বোকা নাকি? তুই জানিস না?’
‘আমাকে ছেড়ে দে। আমি তোকে এত টাকা দেব যে জীবনেও এত টাকা একসাথে দেখিসনি। আমি তোকে রাতারাতি বড়লোক করে দেব।’
আরিশ কষে একটা থা’প্পর মারে আশিশকে,’ সবাইকে নিজের মতো টাকার পেছনে দৌড়ানো কু’কুর মনে করিস নাকি? এতকিছুর পরেও তোর এখনো দেমাগ আছে?’
‘ তুই জানিস না, কতবড় ভুল করছিস। ছাড়ব না তোদের। আমি বেরুলেই তোরা নিজেদের মৃ’ত্যু দেখতে পাবি চোখের সামনে।’
‘ আগেতো বেরিয়ে দেখা এখান থেকে। মানলাম তোকে ছেড়ে দিলাম। কিন্তু বাইরে গেলেই পুলিশ তোকে ধরে নেবে। আমরা মূলত তোকে বাচাচ্ছি।’
আশিশ অবাক চোখে তাকায়। আরিশ বলল,’ হিয়া, তোর গার্লফ্রেন্ড। তাকে মে’রে পানির ট্যাঙ্কে ফেলে দিলি। মনে নেই? ওর খু’নের তদন্ত করা হয়েছে। সব প্রমাণ থেকে এটাই প্রতীয়মান যে, তুই তাকে খু’ন করছিস।’
‘ কিন্তু সবাই দেখল কি করে? কেউতো দেখার কথা না।’
আরিশ আশিশের মুখ বরাবর লা’থি মারে,’ খু’ন করে এখন আবার জিজ্ঞেস করছিস সবাই জানল কি করে? তোকে আমি শেষ করেই দিতাম কিন্তু মাহতিমের আদেশ। তোকে সহজে মারবে না। তুই এতগুলো প্রাণ নিয়েছিস, সাধারণ মৃ’ত্যু তোর জন্য না। তোকে একটু একটু করে প্রতিদিন মৃ’ত্যু য’ন্ত্রনা দিয়ে মারবে। যেন তুই প্রতিদিন মৃ’ত্যুর স্বাদ নিতে পারিস। তোর বেঁচে থাকার অধিকার নেই এবং সহজে মরে যাওয়ার অধিকারটাও নেই। একটা মেয়েকে কতটা নির্দয়ভাবে মারলি। তোকে মানুষ বলা যায় না।
হিয়াকে আশিশ আরো পনেরো দিন আগে মেরেছে। এতদিনে তার শরীরে পচন ধরেছিল। আশিশের আশাপশে কিছু মানুষের বসতি ছিল। তারা এক প্রকার দুর্গন্ধ অনুভব করত প্রতিদিন। আজ সেটা এতটাই বিচ্ছিরি হলো যে কেউ ঘর থেকেও বের হতে পারছিল না। লা’শের পচন ধরেছিল, এর গন্ধই চারিদিকে ছড়িয়েছিল। লোকজন খুঁজে দেখে, কিছুই পায় না। আশিশের বাড়িতে কেউ নেই। কিন্তু তার ছাদ থেকেই এমন বিশ্রী গন্ধ আসছে বলে সবাই জানায়। কয়েকজন বিষয়টা দেখার জন্য ছাদে যায়। দুজন ছেলে সব পরীক্ষা করেও কিছু পায় না সবশেষে তাদের মনে হয় ট্যাঙ্ক থেকেই এমন গন্ধ আসছে। তাই তারা উৎসুক হয়ে ট্যাঙ্কের ডালা খুলে। দুর্গন্ধে তাদের বমি চলে আসে। খুব দ্রুত পুলিশ ডাক দেওয়া হয়। তারা পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে। ট্যাঙ্কের পানিতেই একটা আংটি পড়ে ছিল। সবার বয়ান মতে এটা আশিশের। এবং আরিশের হুডির একটা চেইন পড়ে থাকে নিচে। সবশেষে তার ঘরের নাজেহাল অবস্থা এবং হিয়ার পার্স পাওয়া যায়। তারা যে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছিল তার প্রমাণ থেকেও এটা স্পষ্ট হয় যে খু’নি আশিশ। পুলিশ তাকে খোঁজার সব রকম ব্যবস্থা করে রেখেছে।
মাহতিম আসে আশিশের কাছে। মাহতিমকে সামনে দেখেই আশিশ মন ভোলানো কথা বলতে শুরু করে। সে ভেবেছিল মাহতিমের মন গলে যাবে এবং তাকে ছেড়ে দেবে। কিন্তু হাজারটা ঘৃণা নিয়ে মাহতিম তার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। মাহতিম চাইলেই সাথে সাথে আশিশকে মেরে ফেলতে পারত। কিন্তু সে এটা করছে না।
পনেরো দিন আগে সে আশিশের কাছে গিয়ে দেখল সে হিয়াকেও খু’ন করেছে। আরো কোনো খু’ন হওয়ার আগে মাহতিম আশিশকে অর্ধ অজ্ঞান করে আরিশের বাংলোর স্টোর রুমে নিয়ে আসে। আশিশ বেঁচে থাকলে হয়তো আরো অনেকগুলো প্রাণ চলে যাবে।
মাহতিমের রাগ চেপে বসে মনের মধ্যে। আশিশ এতো অপরাধ করেছে যে মাহতিম চায়নি তাকে সাধারণ মৃ’ত্যু দিতে। সে চেয়েছিল সব মানুষের খু’নের বদলা নিতে। তাই পনেরো দিন ধরে তাকে মৃত্যুর হাতছানি দিচ্ছে।
এক পর্যায়ে আশিশের সহ্যের সীমা পার হয়ে যায়। সে মাহতিমকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল,’ আমাকে মেরে ফেল। আমি আর সহ্য করতে পারছি না এই কষ্ট।’
‘, এত সহজে তোকে মারব না। আরো সহ্য করতে হবে তোকে। যেভাবে মানুষকে পিঁপড়ার মতো মেরেছিস, সেভাবেই তোকে শাস্তি পেতে হবে।’
মাহতিম আশিশকে আঘাত করে শান্তি পাচ্ছে না। কষ্ট হচ্ছে তার। চলে যেতে চাইলে হঠাৎ তার পুরনো কিছু কথা মনে পড়ে। সে এখনো জানে না তাকে কে মেরেছিল। এটা কি আশিশ নাকি অন্য কেউ?
মাহতিম আশিশকে বলল,’ আমি জানি না কে আমাকে মেরেছিল। সেটা কি তুই?’
আশিশ অপরাধবোধ নিয়ে বলল,’ হ্যাঁ আমি।’
‘ কিভাবে করতে পারলি এমনটা? আমিতো তোর বন্ধু ছিলাম তাই না?’
‘ আমার কাছে স্বার্থটাই বড়। তোকে শুধু ব্যবহার করেছি।’
‘ কিন্তু কিভাবে? আমাকে যখন পুলিশ নিয়ে যাচ্ছিল তখন আমার স্পষ্ট মনে আছে, কেউ পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে আমাকে পালাতে বলেছিল। আমি পালাতে চাইনি। একটু পর দেখলাম সবকিছু অন্ধকার। আমি কতগুলো মুখোশধারী লোকের সামনে বাঁধা অবস্থায় ছিলাম।’
‘ আমার লোকেরা তোকে পুশিশের হাত থেকে এনেছে। তাদের বোকা বানিয়ে আমার কাছে নিয়ে এসেছিল। অনুজ, আমি আর আমার কিছু লোক সেখানে ছিল। আমিই তোর বুকে ছু’রি চালিয়েছিলাম। এখন তুই আমাকেও মেরে ফেল। আমি বাঁচতে চাই না।’
কথাগুলো মাহতিমের হৃদয়ে তীরের মতো বিঁধে যায়। প্রিয় বন্ধু তার সাথে বিশ্বাসঘা’তকতা করেছে। তার পুরো পরিবারকে শেষ করে দিয়েছে। মাহতিমের বুকটা খাঁ খাঁ করে উঠে। মাহতিম বলল,’ এতেও তোর শান্তি হলো না। আমার পরিবারকেও তুই মেরেছিলি। অহনাকেও মারার চেষ্টা করেছিলি কিন্তু সে বেঁচে যায়।’
‘ তোকে মারার পর তোর পরিবারকে মেরেছি। অহনাকে মারতে গিয়েছিলাম। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে তাকে টার্গেট করে আমি আক্রমণ করি। গাড়ি চাপা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বেঁচে যায়। হাসপাতালেও মারার চেষ্টা করি। কিন্তু পারিনি তার বাবার জন্য। সকালে আরেকবার মারার জন্য যেতেই শুনি তার মেমোরি লস হয়েছে। তাই ওকে মারার চিন্তা বাদ দিয়েছি।’
মাহতিম আর এসব কথা শুনতে পারছিল না। পাশে থাকা ছু’রিটা দিয়ে আশিশের বুকে কয়েকবার আ’ঘাত করে বসে। প্রথম আঘাতেই আশিশের প্রাণ চলে গিয়েছিল। তবুও অনবরত আ’ঘাত করতে থাকে। এক পর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মাহতিম। ইচ্ছে করছিল আশিশের বুক থেকে তার হৃৎপিণ্ডটা বের করে নিতে। অথচ তার প্রাণ নেই। ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে আছে।
আরিশ সান্ত্বনার জন্য মাহতিমের কাঁধে হাত রাখে। মাহতিম আরিশের গলা জড়িয়ে ধরে,
‘ ভাই, আমার সব শেষ করে দিল ও। আমি সব হারালাম ওর জন্য। পরিবার, সমর্থক সবশেষে ভালোবাসাকেও।’
চলবে….
#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম
৫৭.
খোলা জানালায় মুখ ভার করে বাইরে তাকিয়ে আছে অহনা। টুপটাপ করে বৃষ্টি পড়ছে। মাহতিম পাশেই দাঁড়িয়ে একনজরে তাকিয়ে আছে অহনার দিকে। তার মনে হচ্ছে, পুরো জনম অহনাকে দেখে কাটিয়ে দিলেও সময়টা খুব অল্প হয়ে যাবে। অহনার বাবা মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে। বিষন্নতা তাকে ঘিরে ধরেছে। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। পাশ ফিরে মাহতিমকে বলল,’ খুব শিঘ্রই একটা কাজ খুঁজে নেব। ঘরে তেমন কিছু অবশিষ্ট নেই। আমাকে কিছু একটা করতেই হবে।’
আরিশ হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকে। ঘামছে অনবরত। মাহতিমকে উদ্দেশ্য করে বলে,’ পুলিশ আমাকে খুঁজছে। খুব শিঘ্রই ধরে নেবে।’
মাহতিম আঁতকে উঠে,’ কেন? কি হয়েছে?’
‘ রাজ নামের ছেলেটা পুলিশকে বলেছে আমি এবং আপনি আশিশকে খুন করতে পারি। একটু আগেই আমার একজন কনস্টেবল এই খবরটা দিল। আপনিতো মৃত সবার কাছে। তাই তারা আমাকে খুঁজতে আমার বাড়িতে যায়। বাবা বলেছিল আমি বাংলোতে আছি। আপনি আশিশকে শেষ করার পর আমি তাকে ঐ জায়গা থেকে সরানোর প্ল্যান করতেই পুলিশের গাড়ির আওয়াজ পাই। আমি পালিয়ে এসেছি। কিন্তু তারা লা’শ দেখে আমাকেই সন্দেহ করবে।’
মাহতিম ভেবে উঠতে পারছে না কি করবে। অহনা অবাক হয়ে যায় তাদের কথোপকথন শুনে,’ মাহতিম! তুমি কাউকে খু’ন করেছ? আর উনি কার কথা বলছে, এটা কি সেই আশিশ যে আমার বাবাকে মে’রেছিল?’
মাহতিম বলল,’ হ্যাঁ! আমি তার পাপের শাস্তি দিয়েছি। সেই আমার পুরো পরিবারকে হ’ত্যা করেছে, তোমার বাবাকে, কয়েকজন এজেন্ট আর আর্মি অফিসারকেও মেরেছে। তাই তাকে শাস্তি দিয়েছি।’
মাহতিম আরিশকে উদ্দেশ্য করে বলল,’ আপনি ভয় পাবেন না। আমি কিছু একটা করছি।’
বলতে না বলতেই পুলিশ অহনার বাড়িতে এসে হাজির হয়। পালানোর সুযোগ নেই আরিশের। পুলিশ ঘিরে ফেলেছে। ইন্সপেক্টর রন এবং রিজু একসাথে এসেছে। আরিশ এমনটা করতে পারেনা বলে দুজনেই জানে। কিন্তু তাদের ডিউটি করতেই হবে। রিজু বড় করে বলল,’ দরজা খুলুন। আপনি পালাতে পারবেন না। আমরা আপনাকে ঘিরে ফেলেছি। দয়া করে আত্মসমর্পণ করুন।’
মাহতিম বলল,’ ভয় পাবেন না। কয়েক ঘন্টা পরেই আপনাকে ছেড়ে দেবে। দরজা খুলে দিন। আর শুনুন, যতবারই জিজ্ঞেস করবে আপনি কোথায় ছিলেন, বারবার বলবেন আপনি অহনার সাথে ছিলেন এই বাড়িতে।’
আরিশ দরজা খুলে দেয়। রন হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যায় আরিশকে। মাহতিমও আরিশের সাথে সাথে চলে যায়।
অহনা ঘরে একা। কিছুক্ষণ পর মিথিলা আসে। আরিশ তাকে যথাযথ পারিশ্রমিক দেয় অহনার পাশে থাকার জন্য। বিষয়টা অহনাকে জানায়নি তাহলে সে অমত করত। মেয়েটিও উৎসুক ছিল। অহনার সাথে থাকলেই সে মোটা অঙ্কের টাকা পাচ্ছে।
মিথিলা এসেই ঘর গোছাতে থাকে। অহনা তাকে না করে। মিথিলা অহনার সাথে অনেক কাজ করে বলে দ্বিধায় পড়ে অহনা। অহনার কাছে তেমন কিছুই নেই মিথিলাকে দেওয়ার মতো। অনেকদিন ধরে অহনার খেয়াল রাখছে।
অহনা বলল,’ তোর হয়তো কষ্ট হয় এতো কাজ করতে। তোকে আর কিছু করতে হবে না। আমিই সব করে নেব।’
‘ কি বলো আপু? তুমি নিজেই তো সব করো। আমিতো শুধু সঙ্গ দিই। চিন্তা করো না, আর কিছুদিন পরতো শশুর বাড়ি চলে যাবে। তখন কি আর তোমার পাশে থাকার সুযোগ পাবো? বড়লোকের বউ হলেতো ভুলেই যাবে।’
‘ তোদেরকে আমি কখনোই ভুলব না। দেখে নিস, সবসময় মনে থাকবে।’
‘ আচ্ছা অহনা আপু, তোমারতো একটা দেবর আছে তাই না?’
‘ হুম আছে।’ অনেকটা ভেঙ্গ করেই বলল অহনা। মতির উপর তার খুব রাগ।
‘ আমি কি দেখতে সুন্দর নই?’
‘ তুই হলি ছোট পরী। অনেক সুন্দর তুই।’
‘ তাহলে তোমার বিয়ের পর, তোমার ঐ দেবরকে আমায় দিয়ে দিও। আমরা জা হয়ে থাকব।’
অহনার চোখ কপালে উঠে যায়,’ একদম এমন কথা বলবি না। আমি কখনোই তোর জীবন নষ্ট হতে দেব না।’
‘ আমি জানি সে তোমার সাথে অন্যায় করেছে, কিন্তু বিয়ের পর ঠিক হয়ে যাবে।’
‘ এতো পাঁকা কথা বলছিস কেন? আচ্ছা শোন, ঐ গোবরে পোকাকে তোর বিয়ে করতে হবে না। তুই বললে আরিশকে বলব তোকে বিয়ে করতে।’
মিথিলার ব্রু জোড়া কুঁচকে আসে,’ এসব কি বলছ আপু? তোমার হবু বরকে তুমি আমায় দিয়ে দেবে?’
‘ তুই বললে দিয়ে দেব। উনাকে এমনিতেও আমি বিয়ে করতে চাই না।’
‘সবাই বলে, তোমার মাথায় বুদ্ধি নেই, গোবর পোড়া। এখন আমার মনে হচ্ছে, ঐ গোবরটাও তোমার মাথায় আংশিক পরিমাণেও নেই। থাকলে অন্তত ফসল হতো। কেউ নাকি এমন পাত্রকে হাতছাড়া করে।’
‘ ধুর বোকা! ভালোবাসা কখনো অবস্থান দেখে হয়না। মনের মিলনে ভালোবাসার জন্ম নেয়। অনুভূতি সবসময় একজনকে খুঁজে মরে। আরিশের প্রতি আমার তেমন কোনো ভাবনা নেই। তাহলে তুই বল, আমি কিভাবে তাকে বিয়ে করতে পারি?’
‘ তার মানে, তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো?’
অহনা নিশ্চুপ। বলার মতো উত্তর সে খুঁজে পাচ্ছে না। হঠাৎ অহনার ফোন বেজে ওঠে। ইরা ফোন করেছে। অহনা উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করল,’ হৃদয় ভাইয়া কেমন আছে এখন?’
ওপাশ থেকে ইরা বলে,’ এখন অনেকটাই ব্যাটার ফিল করছে। আজকেই বেড ছাড়বে। বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে। আর তিনদিনের পুরোপুরি চাঙা হয়ে উঠবে।’
‘ তুই কি হাসপাতালেই এতদিন ছিলি?’
‘ হুম, রাত দিন ওর পাশেই ছিলাম।’
‘ ওর বাড়ির লোক এসেছিল?’
‘ হু! আর একটা দারুন খবর আছে। তাই কল করলাম, আমি অনেক এক্সাইটেড তোকে বলার জন্য।’
‘ কি এমন ঘটনা বলতো?’
‘ হৃদয়ের বাড়ির লোক আমাকে মেনে নিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই আমার বিয়ে। আজকেই তারা বিয়ের দিন ঠিক করবে।’
অহনাও অনেকটা খুশি হয়। মুখে হাসি ফুটে উঠে, বলল,’ কিভাবে হৃদয় ভাইয়ার গম্ভীর ফ্যামিলিকে ম্যানেজ করলি?’
‘ আমি ম্যানেজ করার মতো অবস্থায় ছিলাম না। এতোদিন তার পাশে থেকে খেয়াল রেখেছিলাম, তার জন্য নামাজ পড়ে দোয়া করেছি, রাত জেগে পাহারা দিয়েছি, সময় মতো ঔষধ খাওয়ানো, যত্ন নেওয়া সব করেছি। আমি এসব ভালোবাসা থেকেই করেছি, কিন্তু ওর মা এসব দেখেই নাকি আমাকে পছন্দ করে ফেলেছে। প্রথমে যখন হাসপাতাল যাই, তখন তারা আমাকে পছন্দ করেনি। বাড়ি ফিরে যেতে বলেছিল। কিন্তু আজ সকালেই ওর মা-বাবা একসাথে এসে আমাকে বলেছে। আমি লজ্জায় কোনো কথা না বলে বাইরে চলে এসেছিলাম। সবার আড়ালে ডান্স করলাম। আমার স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে।’
‘ অনেক খুশি হলাম এটা শুনে, এখন ট্রিট চাই।’
‘ কবে চাস সেটা বল।’
‘ সবার সাথে যোগাযোগ করে নিই।’
নিজের বিয়ে হবে জেনে কত খুশি ইরা। অহনাও অজানা এক ভালো লাগা অনুভব করে। অহনার বাবা মারা যাওয়ার দিন হৃদয় বাইক এক্সিডেন্ট করে। কান্না করতে করতে ইরা ছুটে যায়। কোনো অঘটন হবে ভেবে আরিশ রুমিকেও তার সাথে পাঠিয়ে দেয়। আরিশ অহনার পাশে আছে ভেবে রুমি ইরাকে সামলাতে চলে যায়।
অহনার বাবাকে দাফন করে হ্যারি, টিকু সন্ধ্যার পর চলে গিয়েছিল। গ্রামে তাদের থাকার জায়গা নেই। রোস্তম থাকলে তবুও হতো। কিন্তু বাড়িতে অহনা একা ছিল। ছেলে বন্ধুরা রাতে থাকলে পাঁচজনে পাঁচ কথা বলতো, তাই তারা চলে যায়। মাঝে মাঝে এসে দেখে যেত। ময়নার বাবা অসুস্থ বলে সেও অহনার কাছে থাকতে পারেনি। দেখা করেই চলে গিয়েছিল। ভরসা দিয়ে গিয়েছিল আরিশ সাথে আছে বলে।
অহনা আরিশের জন্য চিন্তা করছে। মাহতিমের দায়ভার সে নিজের কাঁধে নিয়ে নিয়েছে। অহনার মায়া হলো তার জন্য। অহনা ইন্সপেক্টর রিজুকে কল করে। রিজু কলটা ধরেই বলল,’ অহনা ম্যাডাম যে। আপনি সেই সিক্রেট গার্ল!’
‘ আমি কোনো সিক্রেট গার্ল না, আমি অহনা।’
‘ আমি জানি। কিন্তু আপনার বিষয়টা আমাকে এখনো ভাবাচ্ছে। আপনার হাজবেন্ড আছে, কিন্তু সেটা কেউ জানে না। আপনি আবার আরেকজনকে বিয়েও করছেন এবং সবার কাছে আপনি অনেক লক্ষী মেয়ে। আপনার বিষয়ে খবর নিয়ে সুনাম ছাড়া আর কিছু শুনিনি, বিয়ের কথা বাদই দিলাম।’
‘ কারণ আমি কোনো বিয়ে করিনি। করব কিছুদিন পর।’
‘ তাহলে তিনি কে ছিলেন যিনি আমাকে বলেছিলেন আপনাকে বাঁচাতে? অদ্ভুত ব্যাপার হলো যে নাম্বার থেকে ওনি কল করেছিলেন সে নাম্বারের কোনো অস্তিত্ব ছিলই না কখনো। নাম্বারের শেষ লোকেশন বলতেও কিছু নেই। কেমন ভূতুড়ে কান্ড মনে হলো আমার কাছে।’
‘ এই জগতটাই একটা সিক্রেট মিশন। এখানে অনেককিছুই আমাদের চোখের সামনে ঘটে কিন্তু সেটা আড়ালে ধরা দেয়, আবার কিছু জিনিস আড়ালে হলেও সম্মুখে বেরিয়ে আসে।’
‘ আপনার এই বিষয়গুলো ভাবতে গিয়ে আমার মাথায় এতটা চাপ পড়েছে যে, আমার চাকরি জীবনে কোনো কেস নিয়েও আমি এতটা ভাবিনি।’
‘ এটা আপনার ব্যর্থতা। এখন শুনুন আমার কথা।’
‘ জ্বী বলুন! আপনার বাকি কথাটা শুনেই না হয় পুরোপুরি কোমায় যাব।’
‘ আমি বলতে চেয়েছি আরিশ কেমন আছে? ওনাকে কি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে?’
‘ আমার মনে হয় না ওনি এমন কোনো অপরাধ করেছেন যার জন্য তাকে জেলে আনতে হয়। হয়তো কোনো ব্যাপার আছে। চিন্তা করবেন না, ওনি ঠিক আছে একদম। আমার কাছেই আছে। জেলে এখনো নেওয়া হয়নি। কারণ তিনি বলেছেন প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত যেন তাকে জেলে না নেওয়া হয়। তবে তার বাড়ি থেকেই যেহেতু লা’শ পাওয়া গেছে তাই সন্দেহ করা হচ্ছে।’
‘ ওনি খু’ন করেনি। অন্যকেউ করেছে।’
‘ আপনি কি জানেন কে করেছে?’
‘ সেটা আপনি কখনোই জানতে পারবেন না। আরিশ যেহেতু নির্দোষ তাই সেও ফিরে আসবে।’
অহনা কলটা রেখে দেয়। রিজু আরো চিন্তায় পড়ে যায়। নিজেকে নিজে শাঁসায়, চাকরি জীবনে এমন নির্বুদ্ধিতার পরিচয় সে কখনো দেয়নি। অথচ অহনার মতো একটা পিচ্চি মেয়ের কাছে হার মেনে গেল। তার সম্পর্কে কিছুই জানতে পারল না। সব কেমন মুছে গেল শুধু স্মৃতিটা ছাড়া।
চার ঘন্টা পর রিপোর্ট আসে আশিশের। আরিশের মনটা আনচান করছিল। রিপোর্টে কি আছে জানতে উৎসুক হয়ে পড়ে।
চলবে…..
#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম
৫৮.
রিপোর্টটা পড়েই ইন্সপেক্টর রন অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। মুখে উচ্চারণ করে,’হাউ ইজ দ্যাট পসিবল? আই কান্ট বিলিভ ইট।’
রিজূ তার হাত থেকে পেপারসগুলো নিয়ে নেয়। চোখ দিতেই দেখতে পায় অস্বাভাবিক সবকিছু। রিজু রনের দিকে তাকিয়ে বলল,’ আমার কখনোই এটা বিশ্বাস হবে না। আমার কেন? কোনো মানুষের এটা বিশ্বাস হবে না। যে এই রিপোর্ট তৈরি করেছে তাকে ডেকে আনো এখানে। ডাক্তারই বুঝিয়ে দেবে।’
‘ আমি জানতাম আমাকে ডাকা হবে। তাই নিজেই চলে এলাম।’
রিজু ডাক্তার সিহাব বেহরানকে দেখেই এগিয়ে যায়,’ আমরা কেউ এই রিপোর্ট বুঝতে পারছি না।’
‘ বুঝতে নয়, বিশ্বাস করতে পারছেন না।’
রন এগিয়ে আসে,’ দয়া করে আপনার মেশিনগুলো ঠিক করুন, যেগুলো দিয়ে পরীক্ষা করেছেন। এমন আজগুবি কথা কেউ কখনো শুনেনি।’
সিহাব বেহরান চশমাটা ঠিক করে বলতে শুরু করল,’ এক্সেকলি! প্রথমে আমিও এটাই ভেবেছিলাম। তাই চারবার পরীক্ষা করি। প্রতিবার একই ফল আসছিল দেখে ভাবলাম মেশিন নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাই মেশিনটা ভালো করে দেখলাম। কিন্তু কোনো সমস্যা পাইনি। তাই আরেকটা ডেডবডি পরীক্ষা করে দেখলাম। আশ্চর্যের বিষয় হলো, সেটার সব ফলাফল ঠিক এসেছে। আমি একে একে আরো চারটি ডেডবডি পরীক্ষা করলাম। সব ঠিক আছে। কিন্তু এই একটার বেলায় আবার একই সমস্যা। এই লোককে কেউ স্পর্শও করেনি। অথচ তার পুরো শরীর ক্ষ’তবি’ক্ষত। ছু’রির চিহৃ বুঝা যাচ্ছে কিন্তু পরীক্ষায় এমন কিছুই আসছে না। তাকে একদম সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ মনে হচ্ছিল। বুক আর পেট প্রায় আলাদা হয়ে গেছে ছু’রি বা ধা’রালো কিছুর আঘাতে, কিন্তু না আছে কোনো ফিঙ্গার প্রিন্ট না আছে কোনো কিছুর আ’ঘাত লাগার মত প্রমাণ। এক ঘন্টার সব তৈরি করা যেত কিন্তু এটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমি প্রায় পাগল হয়ে গেছি। এখনো বুঝতে পারছি না এটা কিভাবে সম্ভব? একটা মানুষকে খু’ন করা হয়েছে কিন্তু কোনো প্রমাণ ছাড়া! আমার মাথা ঘুরছে! আজ পর্যন্ত কখনো এমন ডেডবডি পাইনি আমি। এটার কথা আমার আজীবন মনে থাকবে।’
রন, রিজুসহ বাকি সবাই তব্ধা মেরে রয়েছে। আরিশ মৃদু হাসছে। কারণ সে জানে, মাহতিম সব প্রমাণ লোপাট করে দিয়েছে। আরিশকে হাসতে দেখে রন ব্রু কুঁচকে ফেলে। রিজুকে উদ্দেশ্য করে বলল,’ নিশ্চয় কোনো ঘাপলা আছে এখানে। আরিশ ছেলেটি সব জানে।’
রিজু রনকে থামিয়ে দিয়ে বলল,’ এই মুহূর্তে আরিশকে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এখন যদি সে কোনো প্রমাণ ছাড়া তাকে ধরে আনার দরুন আমাদের নামে উপরে নালিশ করে তখন কি হবে?’
‘ এখন কি করবেন তাহলে?’
‘ আরিশকে স্বসম্মানে ঘরে পৌঁছে দেব, তার বউয়ের কাছে। তারা একটু পার্সোনাল সময় কাটাক। কিছুদিন পর বিয়ে বলে কথা!’
‘ ঠিক করে কথা বলুন। এখানে ফাজলামো করবেন না, এটা থানা আপনার বাড়ি নয়। আর আপনি একজন ইন্সপেক্টর। তাই কথা বলতে সাবধান, বার বার আমাকে শিখিয়ে দিতে হয় কেন?’
‘ ভাই, এই শাসনটা আর মানতে পারলাম না। সে যাই হোক। কাজের ক্ষেত্রে আমরা যাই হই না কেন? বাস্তবেতো আমরা ভাই তাই না?’
‘ মুখটা বন্ধ রাখুন আর নিজের কাজ করুন।’
আরিশ গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,’ আমি কি এবার যেতে পারি?’
রন সামনে এসে তাকে আপাদমস্তক দেখে নেয়,’ অপরাধী বলে মনে হচ্ছে না। তবুও মনে খচখচ করছে।’
‘ মিথ্যা সন্দেহে আমাকে আটকে রাখার অপরাধে আমিও যে পদক্ষেপ নিতে পারি সেটা নিশ্চয় আপনার জানা আছে?’
এটা বলেই আরিশ নিজের পকেট থেকে নিজের আইডিটা দেখায়। রন থ হয়ে যায়। আরিশ একজন সিআইডি অফিসার।
রনের মুখ থেকে কথা উবে গেল। তবুও বলল,’ কিন্তু আমি এটা বুঝতে পারছি না, আশিশের লা’শ, আপনার বাড়িতে কি করে এলো? আপনি বলেছেন আপনি আপনার পিয়ন্সের সাথে ছিলেন। কিন্তু লা’শটা আপনার বাড়ি থেকে পাওয়া গেল এবং আপনি যে ছেলেটিকে আঁটকে রেখেছেন সেই বলল আপনি এবং কোনো মাহতিম নামের কেউ আশিশকে মা’রতে চায়। ওয়েট! ওয়েট! আচ্ছা, এই মাহতিমটা কে? তার কথা বলায় ছেলেটাকে সবাই পাগল বলল কেন?’
‘ কারণ মাহতিম বেঁচে নেই। কয়েকমাস আগেই তাকে খু’ন করা হয়েছিল। আর সেই খু’নটা করেছিল আশিশ।’
‘ ছেলেটির কথা বাদ দিলাম। সে হয়তো ভুল করে মাহতিমের কথা বলেছিল। কিন্তু আপনার কথা কেন বলল?’
‘ কারণ আমি তাকে জেলে ঢুকিয়েছি। তাই আমার প্রতি তার অনেক রাগ।’
রন আর কোনো কথা না বাড়িয়ে বলল,’ স্যরি স্যার! আমাদের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইছি। আপনি বাড়ি যেতে পারেন। আপনি আগেই বলে দিতে পারতেন, আপনি একজন ইনচার্জ। হয়তো কেউ আপনাকে ফাঁসানোর জন্য খু’ন করে লা’শটা আপনার বাড়িতে ফেলে গেছে।’
‘ সিউর! ভালো থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ।’
‘ আল বিদা।’
রিজুও হাত নাড়িয়ে বলল,’ আল বিদা!’
রাত হয়ে এসেছে। আরিশ অহনার কাছে গেল। আরিশকে দেখে অহনা খুব খুশি হলো। মিথিলা ঘরে আসতেই তাকে কিছুক্ষণের জন্য আরিশ নিজের বাড়িতে পাঠিয়ে দিল। সে চায়নি বাইরের কেউ তাদের ব্যক্তিগত কথাগুলো শুনে নিক। বলে দিয়েছিল রাত দশটার পর যেন সে সময় করে চলে আসে। মিথিলা মাথা নেড়ে সবাইকে সালাম জানিয়ে চলে যায়।
আরিশ, মাহতিম, অহনা তিনজন খুব খুশি আজ। তারা একসাথে খাবার খেতে বসে। মাহতিম বসে কিন্তু খায় না। অহনা জোর করে বলল,’ কি হলো? খাচ্ছ না কেন?’
মাহতিম বলল,’ আমি খাব না। তোমরা খাও। তোমাদের মানুষদের খাবার খেতে হয় আমার না।’
‘ তুমিতো মনে হয় এলিয়েন।’
‘ এলিয়েন না, আ’ত্মা।’
‘ আবার মজা করছ!’
আরিশ খাবার খাওয়া বন্ধ করে বলল,’ ওনি ঠিক বলেছেন।’
অহনা ঠোঁট বাঁকা করে বলে,’ দুজন মিলে প্ল্যান করে আমাকে ভয় দেখাবেন ভেবেছেন তাই না? আমিও ভয় পাই না। কোনো লাভ নেই এসব বলে। মাহতিম, তারাতাড়ি খেয়ে নাও, না হয় আমি জোর করব।’
আরিশ মাথায় হাত দিয়ে কয়েকবার মনে মনে কিছু বিড়বিড় করল। তারপর খাওয়া শুরু করল, তার খুব খিদে পেয়েছে। মাহতিম খাবে না কখনো, তার ক্ষুদাই নেই খাবে কোন দুঃখে! অহনাও ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী না। মাহতিমের মুখের সামনে প্লেট করে বলল,’ পাবদা মাছ তোমার খুব প্রিয় তাই না?’
কথাটা বলেই ঢ্যাবঢ্যাব করে তাকিয়ে থাকে মাহতিমের দিকে। কারণ পাবদা মাছের কথা শুনে মাহতিম নিজেও চমকে গেছে। অহনাকে বলল,’ তুমি কি করে জানলে আমি কি মাছ পছন্দ করি? আমিতো কখনো বলিনি। কে বলেছে?’
‘ আমি জানি না। হঠাৎ মনে আসল। আমি কি ভুল বলেছি? তাহলে বলো কোন মাছ পছন্দ? এটা রেখে দিই।’
‘ তুমি একদম ঠিক বলেছ। কিন্তু কিভাবে?’
‘ বললাম তো হঠাৎ মনে এসেছে। আর একটা কথা, যখন কাল কোর্টে তুমি নির্দোষ প্রমাণ হলে, তখন কিছু লোকের নাম, তোমার পদবি আর ভিডিওতে থাকা লোকটাকে আমার খুব চেনা মনে হয়েছিল। কেন জানি না। ভাবতে গিয়ে আমি আরো বিরক্ত হচ্ছিলাম, দুর্বল লাগছিল। কেন আমি জানি না।’
মাহতিম আনন্দে আরিশকে বলে,’ ওর স্মৃতি ফিরে আসবে খুব শিঘ্রই। তখন সব মনে পড়বে। আমি অপেক্ষায় আছি।’
অহনা মুখের ভঙ্গি পরিবর্তন করে বলে,’ তোমাকে খেতে হবে না। আমার খিদে পেয়েছে আমি খেয়ে নিই।’
‘ খাও, আমি বাইরে থেকে আসি। তোমাকে আমার আর কিছুই বোঝাতে হবে না, এবার আস্তে আস্তে তুমি নিজেই সব বুঝে যাবে।’
‘ কি বুঝবো, তা জেনে কাজ নেই। তবে এখন তুমি খাবে।’
‘ খাব পরে। এটা বলতো, আমার দেওয়া আলবাম তুমি দেখেছ? আর ডায়রিটা পড়েছিলে?’
‘ না, আমি এলবাম দেখিনি। আমার মনেই ছিল না।’
‘ আমি এটা আরিশের ঘর থেকে পেয়েছিলাম।’
আরিশ খাওয়া বন্ধ করে বলল,’ অহনার ঘরে এলবামটা দেখে আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। আমি ভুল করেই এটা নিয়েছিলাম। কিন্তু পরে আর পাইনি।’
‘ ঠিক আছে, আহি, তুমি কালকেই ডায়রিটা পড়বে। সব পরিষ্কার দেখতে পাবে তুমি।’
মাফতিম আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেল বাইরে। বসে থাকলেই আনসার জোর করবে। হয়তো এক পর্যায়ে খাইয়েও দিতে পারে।
বাইরে থেকে ডাক আসে। মোড়ল এসেছে। আরিশ ভেতরে আনে মোড়লকে। অহনা সালাম দেয়। লম্বা ঘোমটা টেনে পাশে দাঁড়ায়। মোড়ল বলল,’ একটা কথা বলার জন্য এতদূর আসা। আজকাল পাগুলোও আর চলতে চায় না। কেমন অকেজো হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। তবুও হালকা ড়ালমি করছ কাঁদা মাটিতে হেঁটে আসলাম।’
অহনা উৎসুক হয়ে তাকিয়ে থাকে মোড়লের দিকে। কি এমন কথা বলতে চায়, যার জন্য এতরাতে চলে এলো? মনের মধ্যে খচখচ শুরু হয় অহনার।
চলবে….