#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম
৫৩.
মাহতিম বলল,’ কারণ আমি তাকে কখনো সন্দেহই করিনি। যাকে সন্দেহ করিনি তাকে নিয়ে ভাবিওনি। তাই আশিশের কথা কখনো মাথায় আসেনি। আর সেই আমার সেই গোপন শত্রু। যে কাছাকাছি থেকে পিঠে ছু’রি মারল।’
আরিশ মাথা নাড়িয়ে প্রস্থান করে। আরিশ দেরি না করে অহনার কাছে যায়। এই মুহুর্তে অহনার সাপোর্ট দরকার। গাড়ি বের করে অহনার কাছে চলে যায়। মাহতিমও রোস্তমকে খুঁজতে যায়। আরিশকে কথা দিয়েছে সে খুঁজে আনবেই। অহনার মুখের হাসি সে ফিরিয়ে দেবে।
আরিশ অহনার কাছে যায়। অহনা মনে প্রাণে মাহতিমকে চায়, এটা জানা সত্ত্বেও আরিশের ভালোবাসা অহনার প্রতি একটুও কমেনি। আগের মতোই রয়েছে। অহনার কাছে আসলে অনুভূতিরা যেন আরো চাঙ্গা হয়ে উঠে। সাহস পাচ্ছে না অহনার কাঁধে হাত রাখার। অহনা কখনোই তাকে স্পর্শ করার অধিকার দেবে না, আবার মাহতিমের ভয়টাও স্পষ্ট। অহনাকে স্পর্শ করলে না জানি আবার তার উপরেই রেগে যায় কিনা। ভয়ে ভয়ে অহনার কাঁধে হাত রাখতে গিয়েও থেমে যায়। আস্তে করে ডাকে,
‘ অহনা!’
অহনা মাথা উপরে তুলে আরিশের দিকে তাকায়,
‘ আমার বাবাকে পেয়েছেন?’
আরিশ নিশ্চুপ। অহনা পুনরায় বলল,’ আর কতক্ষণ লাগবে? কেন বাবাকে পাচ্ছেন না। একটু তো খুঁজে দেখুন।’
অহনা আর কোনো কিছু না ভেবে বেরিয়ে যায়। আরিশ তাকে আটকাতে চাইলে বলল,’ আমাকেই কিছু করতে হবে। আপনি বলুন আমার বাবা কোথায়?’
‘ আমি জানি না। শুধু এইটুকুই জানি খিলছড়ির বড় বাগানের নেওয়া হয়েছিল ওনাকে।’
অহনা আর কোনো কথা না বলে বেরিয়ে পড়ে। খিলছড়ি অনেকটা দূরে। পায়ে হেঁটে সম্ভব না। আরিশ বলল,’ আমিও তোমার সাথে যাচ্ছি, চলো।’
অহনার জেদের কাছে হার মানল আরিশ। একা যেতে দেবে না তাই নিজেও তার সঙ্গ নিল।
রোস্তমকে খিলছড়ির বড় বাগানের ভেতর একটা ছাউনিতে আটকে রাখা হয়েছে। এই জায়গায় মানুষের চলাচল নেই বললেই চলে। এখানেই আশিশ তার গুপ্ত সব অ’স্ত্র রাখত। এখান থেকেই অ’স্ত্র পাচারের কাজ করত অনায়াসেই।
রোস্তম অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। কিছুক্ষণ পরেই আশিশ প্রবেশ করল। রোস্তমের মুখে এক বালতি পানি ঢেলে দিতেই সে ঝাপসা চোখে তাকাল। সবকিছু খোলাসা হতেই দেখতে পেল সামনে একজন মুখোশধারী লোক দাঁড়িয়ে আছে। রোস্তম প্রশ্ন করল,’ কে তুমি?’
আশিশ এক হাঁটু ভাঁজ করে বসল, বলল,’ দেখার খুব সখ নাকি চাচা?’
‘ আমার বাঁধন খুলে দাও। এখানে কেন আটকে রেখেছ?’
‘ আপনাকে একটু আপ্যায়ন করব তাই এখানে এনেছি। শত হোক, বন্ধুর হবু শশুর বলে কথা। তা, আপনাকে কি দিয়ে আপ্যায়ন করব চাচা?’
আশিশ একখানা ছু’রি বের করে বলল,’ এটা দিয়ে আপ্যায়ন করলে কেমন হয় বলুন তো?’
রোস্তম আঁতকে উঠে,’ এটা সরাও আমার কাছ থেকে, সরাও বলছি।’
‘ কি বলেন চাচা? আপনাকে অনেকদিন পর দেখলাম, একটু তো খাতির করতে দিন।’
‘ কে তুমি?’
আশিশ নিজের মুখোশটা খুলে ফেলল। রোস্তমের চোখ দুটো কোঠর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলো,
‘ তুমি? এসব তুমি করেছ?’
‘ হ্যাঁ, আমি।’
‘ তুমিতো মাহতিমের প্রিয় বন্ধু ছিলে।’
‘ হুম ছিলাম। নিজের স্বার্থের জন্য ছিলাম। তার থেকেই সব খবরাখবর নিতাম। আর একটা গোপন কথা কি জানেন? মাহতিমকে আমি মে’রেছি। ও সেটা জানেই না। বেচারা মাহতিম বুঝতেই পারেনি তার সবচেয়ে বড় শত্রু আমি।’
‘ এমনটা কেন করলে? আজ হয়তো আমার মেয়েটার একটা ভালো সংসার হতো। সব শেষ করে দিলে। কিন্তু এখনো কেন পিছে পড়ে আছ? মাহতিমতো নেই, তাহলে আমাকে দিয়ে তোমার কি কাজ?’
‘ সেটাই তো প্রশ্ন! ঐ মাহতিম আমার ফিরে এসেছে। আমার পাঁকা ধানে মই দিতে আবার ফিরে এলো। শা* মরে গিয়েও শান্তি দেয়নি আমাকে। এখনো আমার পিছে পড়ে আছে।’
‘ কিহ! মাহতিম ফিরে এসেছে?’
‘ হ্যাঁ! অহনার সাথে সাথে থেকেই তাকে রক্ষা করে সবসময়। কিন্তু আমিতো ওকে সুখী হতে দেব না। অহনার চোখের পানি দেখলেই মাহতিম দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই টার্গেট এবার অহনাকে কষ্ট দেব।’
‘ আল্লাহ আছেন! তুমি তোমার পাপের শাস্তি পাবেই। সবাই সবার কর্মফল পায়, তুমিও পাবে নিশ্চিত।’
আশিশ রোস্তমের গলা চেপে ধরে,’ ঐ মাহতিমের বাচ্চা, আমার সব কেড়ে নিয়েছে। তার জন্য আমার সব ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। এখনো সে আমার সব কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওকে আমি শেষ করতে পারব কিনা জানি না। অনেক উপায় খুঁজেছি, পাইনি। তাই ওর সামনে থেকেই ওকে তিলে তিলে কষ্ট দিতে চাই আমি।’
আশিশ রোস্তমের গলায় ছু’রি ধরে। রোস্তম নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে, কিন্তু পারেনা। আশিশ রোস্তমের গলায় ছু’রি চালিয়ে দেয়। ফিনকি দিয়ে র’ক্ত বের হতে থাকে। আশিশ র’ক্তমাখা ছু’রিটার দিকে তাকিয়ে পৈশাচিক আনন্দের হাসি দেয়। হঠাৎ কারো উপস্থিতি টের পেতেই আড়ালে গিয়ে দাঁড়ায়।
মাহতিম এসেছে। রোস্তমকে র’ক্তা’ক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তার বুকটা ধ্বক করে ওঠে। তারাতাড়ি গিয়ে রোস্তমের মাথাটা নিজের কোলে তুলে নেয়। রোস্তম মাহতিমকে দেখে তৃপ্তির হাসি দেয়,’ আমার মেয়েটাকে রক্ষা করো।’
বলেই রোস্তম শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। মাহতিমের কান্না পাচ্ছে খুব। অহনাকে সে কি জবাব দেবে? আর একটু আগে কেন আসতে পারল না? না হয় এতবড় অন্যায়টা হতো না।
আশিশ মাহতিমকে গালি দেয়,’ শা* এখানেও চলে এলো! স্যরি আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম ও একটা আ’ত্মা।’
আশিশ সুযোগ বুঝে পালিয়ে যায়। মাহতিমকে আরেকবার হারাতে পেরে সে শয়তানি খুশিতে গদোগদো। বাড়িতে গিয়েই ছু’রিটা ড্রয়ারে রাখে। গায়ে র’ক্ত লেগে ছিল। কালো পোশাকটা পরিবর্তন করার পরেও দেখল ভেতরে গায়ে দেওয়া শার্টটায় র’ক্ত লেগে ছিল। তারাতাড়ি সেটাও পরিবর্তন করে নেয়। পোশাকগুলো দ্রুত ওয়াশিং মেশিনে দিয়ে দেয়।
জোড়ালো হাসি দিয়ে বলল,’ এবার অহনার পালা। ওকে শেষ করলেই মাহতিম একদম নিস্তেজ হয়ে পড়বে। চলে যাবে এখান থেকে। আমাকে কেউ হারাতে পারবে না কখনো।’
পুরোপুরি সব গুছিয়ে আশিশ যখন মদের বোতলে হাত দেবে তখন কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ পেল। পর্দার আড়ালে কাউকে পর্যবেক্ষণ করল। কতগুলো ফুল পড়ে রয়েছে। কেউ না থাকলে ফুল পড়ল কিভাবে? আশিশ দ্রুত গিয়ে পর্দা সরাতেই অবাক হয়ে যায় হিয়াকে দেখে।
আশিশের আজকে বার্থডে ছিল। হিয়া এসেছিল সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য। কিন্তু এখানে এসে সে নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেল। আশিশের র’ক্তমাখা শরীর দেখে মুখ চেপে ধরে আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিল। এক গাদা ফুল নিয়ে এসেছিল আশিশকে দেবে বলে। ভয়ের তাড়নায় সেটা হাত থেকে পড়ে গেল।
আশিশ হিয়াকে দেখেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে,
‘তুমি এখানে কি করছিলে?’
হিয়ার মুখ থেকে কথা বের হচ্ছিল না। আশিশ ওর মুখ চেপে ধরে,’ তুই সব কথা শুনেছিস তাই না?’
আবারো বলল,’ ওকে, সমস্যা নেই। তাহলে তোর সময়ও ঘনিয়ে এসেছে। এবার তোকেও যেতে হবে। দুনিয়ার শান্তি অনেক নিয়েছিস, তোর সময় শেষ, আর সেটা আমার হাতেই।’
‘ না, তুমি এটা করতে পারো না। আশিশ, আমি তোমার হবু বউ। ভালোবাসি আমি তোমাকে।’
‘ একটু আগে পর্যন্ত ভালোবাসা ছিল। এখন নেই। এখন তুই আমার শত্রু। শত্রুকে বাঁচিয়ে রাখতে নেই। তোকে ম’রতেই হবে।’
আরিশ আর অহনা পৌঁছে গেল খিলছড়ি। খুঁজতে খুঁজতে এক পর্যায়ে পৌঁছে গেল রোস্তমের কাছে।
মাহতিম রোস্তমকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিল। র’ক্ত বন্ধ করার জন্য সে একটা কাপড় দিয়ে রোস্তমের গলা বেঁধে দিল। অহনা দেখতে পেল রোস্তমের নিস্তেজ দেহ। দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল। মাহতিমকে এক ঝটকায় দূরে সরিয়ে দিল,’ কি করছ তুমি? বাবাকে মে’রে ফেলবে নাকি?’
অহনা রোস্তমের নাকে হাত দিয়ে দেখল। মুহুর্তেই আঁতকে উঠে। নিঃশ্বাস চলছে না। নাড়ি পরীক্ষা করে দেখল, র’ক্ত চলাচল বন্ধ। অহনা চিৎকার করে উঠে। ছাউনিটও যেন নড়ে উঠল।
চলবে….
#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম
৫৪.
হিয়ার কাকুতি জড়ানো কন্ঠ আশিশের কান অবদি পৌঁছাচ্ছে না। সে ক্রমশ ছু’রিটা হিয়ার কন্ঠনালি বরাবর নেয়।
‘ এটা কি করছ তুমি? পাগল হয়ে গেলে নাকি? আমিতো তোমার বউ হব তাই না? কেন করছ এমন? পাগলামি করোনা। ফেলে দাও এই অ’স্ত্র।’
‘ তোকে বাঁচিয়ে রাখলে আরেকটা শ’ত্রুর সংখ্যা বেড়ে যাবে। আমি কি করে এটা হতে দেই?’
হিয়া ঝরঝর করে কেঁদে উঠল,’ দোহাই লাগে। আমাকে মেরোনা। আমিতো তোমার ভালোবাসা তাই না? কেন আমার সাথে এমনটা করছ? আমি কাউকে বলবো না তোমার ব্যাপারে। কথা দিলাম, আমি কখনো কাউকে তোমার ব্যাপারে বলব না।’
‘ সত্যি বলছিস?’
‘হ্যাঁ, আমি সত্যি বলছি। আমিতো তোমাকে ভালোবাসি তাই না? তুমিও আমাকে অনেক ভালোবাসো! আমি বলব না।’
‘ আচ্ছা ঠিক আছে, ছেঁড়ে দিলাম তোকে।’
আশিশ হিয়াকে ছেড়ে দেয়। গলায় ছু’রির দাগ বসে গেছে। কিছুটা র’ক্ত বের হয়েছে। হিয়া প্রাণভরে দম নেয়। গা কাঁপছে তার। আশিশ খাটে গিয়ে বসল। হিয়াকে ডাকে,’ এই হিয়া!’
হিয়া অন্যমনস্ক ছিল। আশিশের কন্ঠে সে চমকে উঠে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,’ ক..কি?’
আশিশ আয়েশ করে খাটের উপর পা তুলে বসে,’ পা টিপে দাও।’
হিয়া জায়গায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে। আশিশ ধমক দিয়ে বলে,’ কি হলো? কথা কানে যায় না?’
হিয়া আঁতকে উঠে। দম নিয়ে আশিশের কাছে গিয়ে বসে। পায়ে হাত দিতেই আশিশ আবার বলল,’ আগে ফ্রিজ থেকে বরফ এনে দাও।’
হিয়া যেন প্রাণ ফিরে পায়। অন্য রুমে যায় বরফের জন্য। সুযোগ পেয়ে সে পার্স থেকে মোবাইল বের করে। পুলিশের নাম্বারে ডায়াল করার আগেই আশিশ ওর হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে নেয়,
‘ এই তোমার আমার প্রতি ভালোবাসা? আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে চাও? হিয়ামনি, এটা তোমরা থেকে আসা করিনি। এবার তোমাকে কি করব বলোতো?’
হিয়া ঠোঁট উল্টে কেঁদে উঠে। ধরা পড়ে গেছে ভেবে আরো কষ্ট লাগে। এখন কি করবে? কে ওকে বাঁচাবে? হিয়া আশিশের শার্ট চেপে ধরে। বুকে মাথা রেখে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,’ আমি ভয় পেয়ে গেছি। আর এমন হবে না। আমি তোমাকে ভালোবাসি, আমরা সংসার করবো কিছুদিন পর। আমি কাউকে কিছু বলব না।’
আশিশ ওর চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে নিজের ঘরে এনে ফ্লোরে ফেলে দেয়। হিয়ার চোখ যেন আর বাঁধ মানছে না। অঝোড়ে অশ্রুর করা’ঘাত হচ্ছে ফ্লোরের আনাচে-কানাচে। হিয়া পুনরায় আশিশের পা জড়িয়ে ধরে,’ আমাকে যেতে দাও এখান থেকে। আমি তোমার কথা কাউকে বলবো না। বাবাকে বলে আমি ইউএসএ চলে যাব। আমাকে যেতে দাও।’
‘ কে ধরে রেখেছে। যেতে পারলে যা।’
হিয়ার মুখে হাসি ফুটে উঠে। দরজার সামনে যেতেই দেখল দরজা বন্ধ। সিটকিনি খুলেই দেখল মেইন ভোরে তালা ঝুলানো। হিয়া বোকা বনে গিয়েছে। মুখে হাত চেপে ধরে কেঁদে উঠে পুনরায়,’ আমাকে যেতে দাও আশিশ। আমিতো তোমার কোনো ক্ষতি করিনি।’
‘ এদিকে আসো কলিজা! তুমি আমার ক্ষতি করবে কেন? তুমিতো আমাকে জীবন দাও। তোমার ছোঁয়ায় আমি বেঁচে উঠি।’
হিয়ার পা দুটো কাঁপছে। কাঁপা কাঁপা পায়ে আবার আশিশের কাছে যায়। আশিশ ওকে কাছে টেনে নিয়েই ঠোঁট দুটো দখল করে নিল। হিয়ার ঘৃণা ধরে গেছে। যে ছোয়ায় প্রতিদিন শান্তির নিঃশ্বাস নিত আজ সেটা বিষাক্ত মনে হচ্ছে। আশিশের স্পর্শ তার জ’ঘন্য লাগছে। নিজেকে আশিশের কবল থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় হিয়া। এক পর্যায়ে আর না পেরে সমস্ত ভার ছেড়ে দেয়। আশিশ তার ইচ্ছেমতো ভোগ করে হিয়াকে। এতদিন যেটা ভালোবাসায় হতো আজ সেটা জোরপূর্বক হচ্ছে। হিয়ার মনে হলো এটা বৈধ ধর্ষণ।
রোস্তমকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। অহনা অজ্ঞান অবস্থায় খাটে শুয়ে আছে। পাশেই বসে আছে মাহতিম। অহনার আলতা রাঙা শরীরটা কেমন নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে। সমস্ত রুপ যেন ডুবন্ত, প্রাণ নেই তাতে। মাহতিম কাঁদছে না। বুকের আগুনটা সে ভেতরেই মজিয়ে নিচ্ছে।
ছেলেরা সহজে কাঁদে না। তাদের মন শক্ত। তাইতো তারা কারও সম্মুখে নিজের কান্না দেখায় না। ভেতরে ভেতরে এক আকাশ কান্না লুকিয়ে দিব্যি চলাফেরা করে। তারাই জানে, ভেতরটা কতটা জখম হয়েছে।
মাহতিমের বুকের ভেতরটা ছিঁড়ে যাচ্ছে। কিভাবে, কাকে দেখাবে? কেউ নেই পাশে? কি করবে সে? কিভাবে অহনাকে সামলাবে?
এসব হাজার ভাবনায় বিভোর থাকতেই অহনার জ্ঞান ফিরে। সাথে সাথেই লাফিয়ে বসে যায়,
‘ বাবা! আমার বাবা কোথায়?’
মাহতিম অহনার কাঁধে হাত রাখে,’ শান্ত হও। শান্ত হও তুমি।’
অহনা এক ঝটকায় মাহতিমের হাত সরিয়ে দেয়,
‘ তুমি মেরেছ আমার বাবাকে তাই না? স্বার্থপর! চলে যাও আমার চোখের সামনে থেকে।’
‘ এসব কি বলছ? আমিতো ওনাকে বাঁচাতে গিয়েছিলাম।’
অহনা কেঁদে উঠে,’ বাঁচাতে নয় মা’রতে গিয়েছিলে। মেরে দিলে তুমি আমার বাবাকে। তুমি খু’নি। আমার বাবাকে মে’রে দিলে। কোথায় আছে আমার বাবা? আমাকে নিয়ে চলো।’
‘ এমন পাগলামো করো না। তোমার শরীর ভালো নেই।’
অহনা ছাড়িয়ে নেয় মাহতিমকে,’ ছুঁবে না তুমি আমাকে। তোমার ঐ নোংরা হাতে আমাকে স্পর্শ করো না। কেন এমনটা করলে? আমার বাবাতো তোমাকে কিছু করেনি’
অহনা দু’হাতে মুখ চেপে ধরে আবার বলল,’ ওহ, তুমি ভেবেছিলে বাবা আমাদের সম্পর্ক মেনে নেবে না। তাই বলে মে’রে দিলে। কেন করলে এমনটা? কেন করলে? কেন?’
অহনা মাহতিমের কলার চেপে ধরে,’ আমি কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চোখের সামনে থেকে সরে যাও। ভালোবাসি আমি তোমাকে! আমার ভালোবাসা এতটাও ঠুংকো না যে আমি তোমায় আ’ঘাত করব। চলে যাও বলছি।’
‘ আহি, শান্ত হও। ভুল ভাবছ। আমি তোমার বাবাকে বাঁচাতে ছুটে গিয়েছি।’
‘ মিথ্যে বলছ তুমি। আমি দেখছি, তুমি গলায় কাপড় জড়িয়ে বাবার…..’ অহনা পুরো কথাটা না বলেই মাটিতে থপাশ করে বসে পড়ল,’ চলে যাও বলছি। আমি তোমাকে দেখতে চাই না।’
‘ আহি…’
‘ যাওও!’
অহনার চিৎকারে কয়েকজন মহিলা ঘরে আসে। ওকে মেঝে থেকে তুলে বাইরে নিয়ে যায়। অহনা দেখতে পায় তার বাবার নিথর দেহ। এতে প্রাণ নেই। অহনার মনে হতে থাকে পুরনো স্মৃতিগুলো। সব শেষ, সব শেষ হয়ে গেল এক নিমেষে। হারিয়ে ফেলল অহনা তার বাবাকে। মাহতিম তার বাবার খু’নি, এটা সে বিশ্বাস করতে পারছে না। কিন্তু নিজের চোখকে কি করে অবিশ্বাস করবে? মাথা ধরে বসে পড়ে অহনা। সজ্ঞানে নেই। পাগল পাগল লাগছে তার। মা মরে যাওয়াতেও এত কষ্ট পায় নি। আজ কষ্ট হচ্ছে ভীষণ। অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে। এই কষ্ট কাউকে বুক চিঁড়ে দেখানো যাবে না। অহনা আবার অজ্ঞান হয়ে যায়।
সময় পেরিয়ে যাচ্ছে বলে রোস্তমকে দাফন করা হয়। অহনা শেষবার আর দেখল না। ভালোই হলো, না হয় আরো কষ্ট পেত অহনা।
আশিশ এক হাত দিয়ে নিজের ঠোঁট মুছে হিয়াকে বলল,’ মেয়েদের তেজ এভাবেই শেষ করতে হয়। মেয়েরা নির্জীব ছেলেদের কাছে। ঠিক তোমার মতো। অসহায় তারা, নিজেকেও রক্ষা করতে পারেনা।’
হিয়ার আর কান্না পাচ্ছে না। কেমন পাথর হয়ে গেছে। আশিশ তৃপ্তির হাসি দিয়ে এলোমেলো পায়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। হিয়ার হুঁশ ফিরতেই চোখ বেয়ে জলের স্রোত নামে। শব্দবিহীন কান্না করে। পালানোর আরেকটা চেষ্টা করবে বলে ঠিক করে, না হয় আশিশ বাঁচতে দেবে না। আশিশ ওয়াশরুমে যেতেই হিয়া জানালা দিয়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। অনেক উঁচুতে জানালা, তাই একটু বেগ পেতে হয়। হিয়া জানালার উপর থেকে নিচে লাফ দিতে গেলেই আশিশ তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে,
‘ মা* কোথায় যাচ্ছিলি? যেই আমি আড়াল হই আর তুই পালাতে চাস। তোকেতো এবার শেষ করবোই।’
বলেই আশিশ ছু’রিটা হিয়ার বুক বরাবর বসিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই হিয়ার নিথর দেহ ফ্লোরে গড়াগড়ি খায়। আশিশের মনে চিন্তার ভাঁজ পর্যন্ত নেই। হিয়ার একপাশে থুথু ফেলে একটা ব্যাগ কুড়িয়ে নেয়। ব্যাগে ভরে নেয় ওকে। প্রাণ এখনো যায়নি মনে হচ্ছিল। গড়গড় শব্দ হচ্ছিল হিয়ার গলা থেকে। আশিশ ব্যাগের ভেতর থেকেই ওর গলা চেপে ধরে। এক মিনিটের মধ্যেই তার প্রাণ চলে যায়। আশিশ লা’শটা কোথায় ফেলবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে। কেউ না দেখার আগেই সেটাকে লুকাতে হবে। তাই ছাদে গিয়ে পানির বড় ট্যাঙ্কটিতে ফেলে দেয় লা’শ। নির্দয়ের মতো হাত ঝেড়ে নিচে নেমে আসে।
চলবে…..
#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম
৫৫.
পনেরো দিন পর,
আরিশ সমস্ত প্রমাণ নিয়ে একজন উকিলের সাথে দেখা করে। আরিশের পূর্বপরিচিত ছিল লোকটি। নাম আমিনুল শেখ। মাহতিমের নির্দোষ হওয়ার প্রমাণ পেয়ে আমিনুলের চোখটাও শান্তিতে শীতল হয়ে আসে। তিনি পুরনো কেসটাকে আবার সবার সামনে আনেন। পুনরায় আদালতের আইন পরিবর্তন করা হয়। এত সময় পর মাহতিমের নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় সবাই খুশি। যারা মাহতিমকে ভালোবাসতো তারা এক প্রকার কান্না করেই দেয়। এই খুশির সময়ে তারা মাহতিমকে পাশে দেখতে পারছে না।
দূর থেকে মাহতিম পুরোটাই লক্ষ্য করল। বাংলাদেশ সিক্রেট এজেন্টের লিডার এবং একজন আর্মি অফিসার হিসেবে সে তার দায়িত্ব যথাযথ পালন করেছে। শেষ মুহূর্তে প্রাণটাও দিল। সুপ্রিম কোর্ট তাকে একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে সম্মাননা দিল। তার ছবি খোদাই করে একটা সিলমোহর রেখে দিল ভালোবাসা হিসেবে।
মাহতিমের খুব কষ্ট হয় এসব দেখে। চাইলেও সে সবার সামনে দেখা দিতে পারছে না। এই আনন্দের সময়ে সে কাউকে বলতে পারছে না, ‘আমি এসেছি। আমি ফিরে এসেছি তোমাদের কাছে। এভাবেই মনে রেখো আমাকে। এই দেশকে এবং তোমাদের আমি খুব ভালোবাসি!’ কিন্তু বলা হয়ে উঠেনি। মনের কথা মনেই থেকে গেল। তবুও প্রশান্তিতে আবেগঘন হয়ে উঠে।
আরিশ অহনাকে সাথে করে নিয়ে এসেছিল কোর্টে। কিছুই জানায়নি সে। বলেছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু দেখতে যাচ্ছে সে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও অহনা আসে।
পনেরো দিন অহনা মাহতিমের সাথে কোনো কথা বলেনি। দুজন দুজনের থেকে আলাদা থেকেছে। মাহতিম পনেরো দিন আগে অহনার বাবাকে দাফন করা শেষে রাতের বেলা অহনার কাছে এসেছিল। অহনা তার সাথে কথা বলতে চায় না বলে মুখ গোমরা করে থাকে। আরিশ অহনার সাথেই ছিল। বাবা মা’রা যাওয়ার পর অহনার পাশে আর কেউ ছিল না। আরিশ জানে মাহতিম ওর পাশেই আছে। কিন্তু মোড়লতো আর জানে না। তিনি আরিশকে অহনার কাছে পাঠিয়ে দিল, ওর খেয়াল রাখার জন্য। মাহতিম আর অহনাকে একসাথে দেখে আরিশ কিছুক্ষণের জন্য বেরিয়ে যায়।
মাহতিম অহনার পাশে গিয়ে বসে। কাঁধে হাত দিতেই অহনা সরিয়ে নেয়। মাহতিম কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। তার কাছে এখন ভালোবাসাটা ঠুংকো মনে হচ্ছে। অহনার মনেও দহন চলছে। নিজের চোখে দেখা দৃশ্য সে ভুলতে পারছে না। মাহতিমকে সে অপরাধী বানাতে চায় না। হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠে। নিজেকে আর সামলে রাখতে পারল না। ঝাঁপিয়ে পড়ল মাহতিমের বুকে,’ কেন করলে এমনটা? আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। অথচ আমি নিজের চোখে দেখেছি। এটা কিভাবে আমাকে ফাঁকি দিতে পারে?’
মাহতিম দীর্ঘশ্বাস নেয়। কি বলার আছে তার? বলবেও না। অহনা তাকে অবিশ্বাস করেছে। যাকেই বিশ্বাস করেছে সেই ঠকিয়েছে। ভালো হলেই সবাই ঠকায়। খারাপদের কেউ কখনো ঠকায় না। কারণ তারা কখনো অপরপক্ষকে সেই সুযোগ দেয় না।
অহনা পুনরায় সরে আসে মাহতিমের থেকে,’ চলে যাও তুমি। আমাকে একটু একা থাকতে দাও।’
মাহতিম উঠে দাঁড়ায়। অহনার চোখে চোখ রেখে বলল,’ এই চোখে কি তুমি অপরাধবোধ দেখতে পাচ্ছ?’
অহনা দেখে, ভাবেও। মাহতিমকে তার খু’নি মনে হচ্ছে না। মুহুর্তেই চোখ সরিয়ে নেয়,’ চলে যাও দয়া করে। আমি শান্তি চাই।’
ব্যথিত হৃদয়ে টান পড়ে মাহতিমের। চলে যাওয়ার আগে আরেকবার থমকে দাঁড়ায়। অহনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ওর চোখে চোখ রাখে। নিজের কান্নাভেজা মুখটাকে শীতল করে বলল ,’ ভালোবাসার সবচেয়ে বড় খুঁটি কি জানো?
বিশ্বাস!
বিশ্বাসের উপর ভর করেই প্রতিটি মানুষ ভীষণ সুন্দর করে ভালোবাসে প্রিয়তম মানুষটিকে। তুমি বিশ্বাস করোনি আমায়। আমার সহস্র কষ্ট থেকেও বড় কষ্ট হয়, যখন তোমাকে কষ্ট পেতে দেখি। আমার বুকের করোটির মধ্যে অবস্থান তোমার। এই হৃদয় যেখানে মিলিত হয় সেখানে তোমার বাসস্থান। প্রতিটি স্পন্দনে মিশে থাকো তুমি। তুমি হীনা আমার প্রতিটা সেকেন্ড বিষাক্ত শত বর্ষে পরিণত হয়। আমার মধ্যেই দ্বিতীয় সত্তা হয়ে অনর্গল থাকো তুমি। এতোটা ভালোবাসি তোমায়! তুমি কি করে ভাবলে আমি তোমায় কষ্ট দেব? কেন ভাবলে আমি তোমার প্রিয় বাবার প্রতি অন্যায় করব? ভালোবাসা কি আমাকে সন্দেহ করা শিখিয়েছে তোমায়? আমাদের ভালোলাগা, ভালোবাসা সব মিথ্যে ছিল কি?’
মাহতিম চোখ বন্ধ করতেই দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল শীতল মাটিতে। আবারো যোগ করল,’ চলে যাচ্ছি আমি। নিজের ধারণাকে যখন তুমি বদলাতে পারবে, ডেকো আমাকে, আমি তখনি চলে আসব। কারণ আমার ভালোবাসা মিথ্যে নয়। পৃথিবীতে থাকা সকল ভালোবাসার থেকেও বেশি ভালোবাসি আমি তোমাকে।’
মাহতিম আর এক মুহূর্তও দেরি না করে চলে যায়। আরিশ মাহতিমকে চলে যেতে দেখে থামানোর চেষ্টা করে, কিন্তু সে থামে না। আরিশ অহনার কাছে যায়। দেখল, সে পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আরিশ বেরিয়ে যায়। পাশের বাড়ি থেকে একটি মেয়েকে ডেকে আনে। মেয়েটির নাম মিথিলা। আরিশ মেয়েটিকে রাতে অহনার কাছে থাকতে বলে। সব ধরনের সাহায্য করতে বলে। যতই মোড়ল বলুক। আরিশ কখনোই অহনার কাছে থাকতে পারে না। পুরুষত্ব তাকে বাঁধা দেয়। আরিশ মনে মনে ভেবে নিয়েছে বিয়েটা হবে না। তাই সে অহনার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে। খুব শিঘ্রই সে একটা কিছু করে বিয়েটা ভেঙ্গে দেবে।
অহনা পনেরো দিন কারো সাথে কথা বলেনি। পাথরের মতো ঘরের চৌকাঠে বসে থাকাই ওর একমাত্র এবং প্রধান কাজ ছিল। আরিশ প্রতিদিন নিয়ম করে কয়েকবার দেখে যেত। মাহতিমও আড়াল থেকে দেখত। অপেক্ষা করছিল অহনার ভুল ধারণা ভাঙ্গার। কিন্তু অহনার মানসিক অবস্থা ভালো ছিল না। দিন দিন অবনতি হতে থাকে।
আজ হঠাৎ মাহতিমকে কোর্টে দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারে না। অহনা এগিয়ে আসে মাহতিমের দিকে। এরই মাঝে কোর্টের কার্যপ্রণালী সমাপ্ত করা হলে সবাই বেরিয়ে যায়। বাইরে গিয়েই অহনা মাহতিমের নিকট ছুটে যায়। সবকিছু কেমন গোলমাল লাগছে ওর কাছে। আরিশ পাশ থেকে বলল,’ আমার একটা কাজ আছে। আমি চলে যাই?’
মাহতিম মৃদু হাসে। আরিশ চলে যাওয়ার আগে একবার অহনা আর মাহতিমকে দেখে নেয়। দুজনকে পাশাপাশি অনেক ভালো মানায়। ভেতর থেকে তার দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। অহনাকে না পাওয়ার আশা দিন দিন তার মনকে আরো কষ্টে পতিত করছে। মিথ্যে এক হাসি মুখে নিয়ে আরিশ প্রস্থান করে।
অহনা মাহতিমকে জিজ্ঞেস করে,’ কেমন আছ?’
‘ খারাপ ছিলাম কবে?’
‘ আমার প্রতি অনেক রাগ তোমার?’
‘ ভালোবাসলে রাগ থাকে না।’
‘ আমি বিষন্নতায় থেকে ভুল করেছি। মাফ করবে না?’
‘ এখন কি মনে করে আমাকে তোমরা নির্দোষ মনে হচ্ছে না?’
‘ তুমি এটা করতে পারো না। সত্যিটা এখন তোমার থেকে জানতে চাই।’
‘ আগেই জানতে চাইতে!’
‘ আমার বোধ বুদ্ধি কাজ করছিল না। এখন আমার মনে হচ্ছে তুমি সেটা নও যেটা আমি নিজের চোখে দেখেছি। আমাকে বলবে কি হয়েছিল?’
‘ আমি যাওয়ার আগেই আশিশ তোমার বাবাকে খু’ন করেছিল। আমি তাকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করছিলাম। র’ক্ত বন্ধ করার জন্য কাপড় জড়িয়েছিলাম তার গলায়। আর তখনি তুমি দেখে নাও।’
নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্য অহনা আফসোস করে,’ আগে বললে না কেন? তাহলে এত বড় অন্যায়টা করতাম না তোমার সাথে।’
অহনা কেঁদে উঠে। কোনো কথা না বলেই জড়িয়ে ধরে মাহতিমকে,’ তোমার বুকের স্পর্শ ছাড়া আমার প্রতিটি দিন খুব বাজে কেটেছে। প্রতিটি মুহুর্তে তোমাকে ভেবেছি। তুমি দ্বিতীয়বার ফিরে আসলে না। এত অভিমান কেন করেছিলে?’
‘ পাগলী মেয়ে। আজকে খুশির দিন, কান্না করোনা।’
অহনা পরম আবেশে আরো জোড়ালোভাবে জড়িয়ে ধরে মাহতিমকে। মাহতিমের গরম স্পর্শ তার খুব প্রিয়। বার বার পেতে চায় এই স্পর্শ। দীর্ঘসময় মাহতিমও শান্তিতে অহনাকে আলিঙ্গন করে। সব রাগ, অভিমান কেটে গেছে। আবারো ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হলো দুটি প্রাণ।
অহনা জিজ্ঞেস করল,’ এখনতো সব ঠিক আছে, তাহলে এখনো অদৃশ্য কেন? এবার সামনে আসো, কেউ চিনতেই পারবে না।’
‘, বুঝিনি আমি। ঠিক কি বলতে চেয়েছ?’
‘ তুমি একজন আর্মি অফিসার। অনুজ নামের কেউ তোমাকে দেশ’দ্রো’হী অপবাদ দিয়েছে তাই তুমি পালিয়ে থেকেছ। অদৃশ্য থেকেছ, যেন তোমাকে কেউ দেখতে না পায়, দেখলেইতো আবার পুলিশ ধরে নেবে তাই। কিন্তু এখন কার ভয়ে অদৃশ্য থাকো?’
মাহতিম হেসে ফেলে। সাথে নিজের মাথায় হাত দিয়ে বিষন্ন ভাব প্রকাশ করে,’ সবই বুঝো তুমি। মহাপন্ডিত একেবারে। কি সুন্দর একটা গল্প সাজালে, যদিও এটা সত্যি তবুও ভিন্ন আঙ্গিকে সাজালে। অথচ আমি কিছু বোঝাতে চাইলে তুমি বুঝতেই চাও না। কবে যে সত্যিটা বুঝতে পারবে? মাঝে মাঝে ভয়ও হয়। সত্যিটা জেনে যদি কঠিন কোনো সিদ্ধান্ত নাও?’
‘ আবার বোকা কথা শুরু করলে? এজন্যই তোমার আজগুবি কথা শুনিনা আমি।’
চারিদিকে সুনসান নীরবতা। ভাঙা একটি চেয়ার। খটখট করছে একটু পরপর। ঘরটিতে বিন্দুমাত্র আলো নেই। যেন ধোঁয়ারা ছুটে চলেছে। আশিশের হুঁশ ফেরে। নিজেকে আবিষ্কার করে বন্দি অবস্থায়। ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠে। নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। হঠাৎ সামনে কারো আগমন টের পায়। ধোঁয়াসা অন্ধকারকে ভেদ করে কেউ তার দিকে এগিয়ে আসছে।
চলবে….