#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম
৫০.
মাহতিম আরিশকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। কিভাবে জাগাবে বুঝে উঠতে পারছে না। এক পর্যায়ে ডাকল,’ মি. আরিশ!’
কোনো সাড়া পেল না। পুনরায় ডাকল,’ মি. আরিশ। আপনি কি জেগে আছেন?’
আরিশ পিটপিট করে তাকায়। ঝাপসা চোখে মাহতিমকে হালকা হালকা দেখে কিছুটা সচকিত হয়ে উঠে। চোখ কচলে দেখে সত্যি মাহতিম দাঁড়িয়ে আছে। ঘোরের মধ্যে নিজেকেই বলে, আমি কি ভুল দেখছি নাকি ঠিক? অদ্ভুত কান্ড ঘটছে আমার সঙ্গে। একজন মৃ’ত মানুষ কি করে আমার সমানে থাকতে পারে? সারাদিন মাহতিমকে ভাবতে গিয়ে এখন চাক্ষুষ দেখছি। দিনদিন কি যে হচ্ছে?’
মাহতিম তাকে বলল,’ আপনি কিছু ভুল দেখছেন না। আমি আসলেই আপনার সমানে দাঁড়িয়ে।’
আরিশ এবার কিছুটা সিরিয়াস ভাবে ধরে জিজ্ঞেস করল,’ তার মানে আপনি বেঁচে আছেন মি. মাহতিম?’
‘ না! আমি বেঁচে নেই। তবে আপনার সামনে আছি এই মুহূর্তে।’
আরিশ উঠে দাঁড়ায়। মাহতিমকে চারিদিক থেকে পর্যবেক্ষণ করে বলল,’ আপনি কিভাবে মাহতিম হতে পারেন? মুখোশ পড়ে এসেছেন আপনি।’
‘ মুখোশ নয়, এটাই আমি। তবে একজন অদৃশ্য মানব।’ বলেই মাহতিম অদৃশ্য হয়ে যায়। সাথে সাথে আবার দৃশ্যমান হয়ে বলল,’ এবার বিশ্বাস হলো?’
আরিশ কিছুটা ভয় পেলেও সাহস সঞ্চয় করে মাথা নাড়ায়,’ সত্যি! অবিশ্বাস্য। আপনাকে দেখে আমার খুশি হওয়া উচিত নাকি ভয় পাওয়া উচিত সেটাই বুঝতে পারছি না।’
‘ ভয় নয়, বন্ধু ভাবুন। আমি আপনাকে কিছু দেখাতে এসেছি।’
‘ কি?’
মাহতিম অনুজের সেই পেনড্রাইভ এবং কিছু ফাইল আরিশের হাতে দেয়। আরিশ ফাইলগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখল, মাহতিম নির্দোষ। তাকে ফাঁসানো হয়েছিল।ফাইলে স্পষ্ট লেখা ছিল, মাহতিম এবং নিমো ড্রেকো এবং ফ্যাংয়ের সাথে দেখা করেছিল। দেশের বর্ডারে। মূলত দেশকে শত্রু মুক্ত করতে তাদের এই পরিকল্পনা ছিল। আর এটা কিছুদিনের মধ্যেই বাস্তবায়ন হত। তা আর হলো না। এর সূত্র ধরে কেউ তাকে ফাঁসিয়েছে। বিদেশীদের কাছে গোপন খবর পাচার করে বলে তাকে দেশ’দ্রো’হী অপবাদ দেওয়া হয়েছে। আরিশ পেনড্রাইভটা অন করে। দেখল আসল অপরাধী অনুজ, যে দেশকে বিক্রি করতে যাচ্ছিল। মাহতিম তাকে একটা ফোটেজ দিল। যাতে স্পষ্টভাবে অনুজ নিজের দোষ স্বীকার করেছে। সেই এতসব খু’ন এবং তথ্য পাচারের কাজ করত বলে জানিয়েছে। এতসব প্রমাণ একসাথে পেয়ে আরিশের আনন্দের সীমা রইল না। এবার তার প্রমোশন হবেই, তার থেকে বড় কথা যাকে আইডল হিসেবে মেনেছে তাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবে। আরিশ আনন্দে মাহতিমের সাথে হ্যান্ডস্যাক করতে গেলেই দেখল তার হাত মাহতিমের শরীর ভেদ করে বেরিয়ে গেল।
আরিশ অনেকটা কষ্ট পেয়েই বলল,’ আমি কি আপনাকে একবার জড়িয়ে ধরতে পারি?’
মাহতিম নিজে থেকে এসেই আরিশকে আলিঙ্গন করে।
আরিশ আবেগে আপ্লুত হয়ে বলে,’জয়ন্ত স্যার খুব কম কথা বলে, কিন্তু আপনাকে নিয়ে হাজারটা কথা বলেছে। সে থেকেই আপনাকে আমি আইডল হিসেবে মানি। জয়ন্ত স্যার আমাকে বলেছিল, কিছু গড়মিল লাগছে তার কাছে। কিছু অনিয়ম হচ্ছে হয়তো। দেশে বিপর্যয় আসতে চলেছে। আমাকে বলেছিল আর্মি অফিসারদের নিয়ে ভাবতে। কিন্তু যখন আপনার সম্পর্কে কিছুটা জানলাম, তখন জয়ন্ত স্যার আমাকেই আপনার কাজটা দিলেন, কয়দিন আগেই এই নোটিশটা পাই আমি। তারপর থেকেই আমি আপনাকে ভাবি, আপনার মতো হতে চেষ্টা করি।’
‘ আমার মতো নয়। আপনি আমার থেকেও ভালো সুযোগ পাবেন। আমি জীবনে যে সুযোগ পাইনি সেটা আপনি পেয়েছেন, আশা করি দেশমাতৃকাকে হতাশ করবেন না।’
‘ কখনোই না। বুকে প্রাণ থাকতে কখনোই হতে দেব না। শেষ নিঃশ্বাস অবদি লড়ে যাব, শপথ নিলাম।’
আরিশের বলল,’ পনেরো দিন অপেক্ষা করা বোকামি হবে। আমি কাল সকালেই এটা পৌঁছে দেব স্যারের কাছে।’
‘ না, সঠিক সময়ের অপেক্ষা করুন। তাড়াহুড়োতে ভুল হয়।’
আরিশ আনন্দচিত্তে মাহতিমের দিকে তাকিয়ে থাকে। ছেলেরাও বুঝি ছেলেদের দেখে মুগ্ধ হয়! আরিশ মুগ্ধ মাহতিমকে দেখে। কত নিপুন তার চেহারা, শ্যামবর্ণ সে, একদম ধবধবে সাদা নয় বা কালোও নয়, মাঝামাঝি তার অবস্থান।
আরিশ আবারো বলল,’ স্যারকে কালকেই আমি সব ফাইল দেব। আমার মনে হয় যত তারাতাড়ি সম্ভব কাজটা করা দরকার। না হয় কবে, কে, কোথা থেকে আবার হামলে পড়ে।’
মাহতিম আর কিছূ বলল না। যাবার প্রস্তুতি নিতেই আরিশ উশখুশ করে বলেই ফেলল,’ আপনি কি অহনাকে এখনো ভালবাসেন?’
মাহতিম থমকে দাঁড়ায়। এমন প্রশ্ন আসা করেনি সে। কিন্তু কিছুতো বলতে হবে, বলল,’ ভালোবাসা কি কখনো পুরনো হয়ে যায়? সময়টা ফুরিয়ে যায়, ভালোবাসা নয়!’
বলেই মাহতিম চলে গেল। আরিশ কথাটার মানে কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারল। অহনাকে এখনো ভালোবাসে মাহতিম। তার মানে অহনার সাথে তার এখনো যোগাযোগ আছে। আরিশের খুব কান্না পাচ্ছে। জীবনে কোনো মেয়েকে সে মন দিল, সেই অন্যের মনে বসবাস করছে। চোখ ফেটে জল নেমে এলো আরিশের।
ছেলেরা নাকি কাঁদে না। তাদের কান্না পায় না! এটা ভুল! ছেলেরাও কাঁদে, আড়ালে, অগোচরে, কেউ টের পায় না। আরিশও কাঁদছে। চোখ বেয়ে নোনা পানির স্রোত বয়ে নামে। এতক্ষণে সে বুঝতে পারল, অহনা কেন তাকে অবহেলা করে। অহনার প্রতি আরিশের সব অনুভূতি বিষাক্ত হয়ে গেল। হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠে। মুখ চেপে ধরে কান্না করে। এতটাই কষ্ট পাচ্ছিল, অহনা তাকে ভালোবাসে না জেনে। চিৎকার করে কেঁদে উঠে। নিজেকে আর শান্ত রাখতে পারেনি। আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে চিৎকার দেয়। বুকটা ফেটে যাচ্ছে।
আরিশের মা দৌড়ে এলো। ছেলেকে ফ্লোরে গড়াগড়ি দেখে তার কপালে ভাঁজ পড়ে। ছেলেকে আবদ্ধ করে নেয় নিজের সাথে,’ কি হয়েছে বাবা? এমন করছিস কেন?’
‘ আমার কষ্ট হচ্ছে মা।’
‘ কিসের কষ্ট বল আমাকে?’
মোড়ল এগিয়ে এলো। ঘরের প্রতিটি সদস্য ভিড় জমালো। আরিশ মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,’ সে আমাকে ভালোবাসেনি মা। আমাকে কখনোই সে মন দেয়নি। আমি বার বার তার মন পেতে ছুটে গেছি। সে আমাকে ভালোবাসেনি। সে আমাকে ভালোবাসেনি মা, সে আমাকে ভালোবাসেনি।’
মোড়ল চিন্তায় পড়ে যায়। ছেলে তার কার কথা বলছে? কার ভালোবাসা না পেয়ে এভাবে কাঁদছে?’
মোড়ল সবাইকে বেরিয়ে যেতে বলে। এই মুহূর্তে সে অনেক কঠোর। সবাই বেরিয়ে যেতেই বলল,’ কান্ডজ্ঞান লোপ পেয়েছে নাকি? বিয়ে ঠিক করার আগে বলিসনি কেন? কে ঠকালো? আমি জানতেও চাইবো না। বিয়েটা হচ্ছে, এটাই শেষ কথা আমার। লোক হাসানোর মতো বেহায়া কাজ করিসনা।’
‘ বাবা আমি…’
‘ আর একটাও কথা নয়। এটা আমার সম্মানের ব্যাপার। নিজেকে আর ছোট করার কথা ভাববি না। কার সাথে তোর সম্পর্ক ছিল বা কে ঠকিয়েছে সেটা এখন অতীত। তোর ভবিষ্যত অহনা। আমি চাই না আর কোনো তামাশা হোক।’
মোড়ল চলে গেল। আরিশ ঢ্যাবঢ্যাব করে তাকিয়ে থাকে। একটু আগে কি হলো তার খেয়াল ছিল না। একটু আগে কান্না করেছে, মোড়ল কথা শুনিয়েছে, মনে হতেই ভীষণ বিরক্ত লাগে তার। নিজেকে সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।
দরজা লাগিয়ে আবার শুয়ে পড়ে আরিশ। পেনড্রাইভটা সেভ করার জন্য নিজের বুক পকেটে রাখে। দায়িত্বকে সে কখনো অবহেলা করবে না। তার যথাযথ মর্যাদা দেবে।
মাহতিম রাতের বেলায় একবার আশিশের কাছে যায়। সমস্ত কথা বলে দেয় তাকে। আশিশ মুচকি হেসে বলল,’ এটা খুব ভালো খবর। এবার তুই নির্দোষ প্রমাণিত হবি।’
মাহতিম সব কাজ শেষ দিয়ে অহনার কাছে যেতে খুব দেরী হয়ে যায়। অহনা ঘুমিয়ে পড়েছে। তাই না জাগিয়ে তার ঘুমন্ত মুখশ্রীটা একবার পর্যবেক্ষণ করে। কপালে আলতো করে অধর স্পর্শ করিয়ে বারান্দায় চলে যায়। চাঁদের আলোয় নিজেকে নিমজ্জিত করে।
সকাল হতেই অহনার কাছে কল আসে। ইলাশপুর থেকে একটি ছেলে কল করেছে। অহনাদের বাড়ির পাশে তার বাড়ি। ছেলেটির কল পেয়ে অহনা ব্যাক করে। নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে কথাও বলা যাচ্ছে না ঠিক করে। ছেলেটি বলল,’ অহনা আপু কথাটা জরুরী, কিভাবে বলব তোমাকে?’
অহনা কিছুই শুনতে পায় না। ছেলেটা দৌড়ে নদীর পাড়ে চলে যায়। সেখানে ভালোমতো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়,
‘ আপু, শুনতে পাচ্ছ?’
‘ হ্যাঁ বল।’
‘ চাচাকে খুঁজে পাচ্ছি না।’
অহনা আঁতকে উঠে,
‘ কি বলছিস এসব?’
‘ তুমি বাড়ি আসো। কাল রাতে কেউ হামলা করেছিল চাচার উপর। গভীর রাতে কপাট ভেঙে কিছু লোক চাচাকে মুখ বেঁধে নিয়ে গেছে। সফিক চাচা রাতে উঠেছিল, তিনিই সব দেখতে পেলেন। তিনি সবাইকে ডেকেছিলেন বলে একজন তার মাথায় আঘা’ত করেছিল।’
অহনা কল রেখে চিৎকার করে উঠে। ওর আওয়াজে বাকিদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। অহনা সবটা খুলে বলে ইরা রুমিকে। মাহতিমও শুনতে পায়।
চলবে…..
#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম
৫১.
গ্রামে পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগে অহনার। সবাইকে জিজ্ঞেস করেও কোনো সুরাহা পায়নি। কেউ তেমন কিছুই বলতে পারছে না।
অহনা ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে ঘরের মেঝেতে। কি করবে? কোথায় খুঁজবে? কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।
আরিশও ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অহনার চোখের পানি তার বুকের মধ্যে তীরের মত আ’ঘাত করছে। পাশে গিয়ে সান্ত্বনা দিতে পারছে না। অহনা তাকে ভালোবাসে না জেনেও তার প্রতি মনের এই দুর্বলতা বার বার বেড়েই চলেছে।
মাহতিম অহনার কাঁধে হাত রেখে ওর সাথেই বসে আছে। আশ্বাস দিচ্ছে, খুব শিঘ্রই রোস্তমকে খুঁজে পাওয়া যাবে এবং অপরাধীকে শাস্তি দেবে।
অহনা মাহতিমের কাঁদে মাথা রেখে বলল,’ সব আমার জন্য হয়েছে। হয়তো ঐ আগন্তুক কিছু করেছে।’
মাহতিম চমকে উঠে,’ কিসের কথা বলছ তুমি?’
‘ রাতে একজন লোক এসেছিল আমার জানালার কাছে। একটা চিরকুট রেখে গেছে। লেখা ছিল তোমার সাথে সম্পর্কের কারণে আমার প্রিয়জনদের ক্ষতি করবে।’
মাহতিমের মাথায় বাজ পড়ে। বুঝতে আর বাকি রইল না কাজটা কার। মাহতিমের গোপন শত্রুর কাজ এটা। বুঝতে পেরেই তার নিজেকেই দোষী মনে হতে লাগল। তার জন্যই আজ অহনার বাবা বিপদের মুখে। মাহতিম অহনার পাশ থেকে উঠে চলে যায়। এই মুহূর্তে কি করবে বুঝতে পারছে না।
আড়ালে গিয়ে নিজেকে সান্ত্বনা দেয়। কোথা থেকে শুরু করবে রোস্তমকে খোঁজা বুঝতে পারছে না।
হঠাৎ তার মনে পড়ে দিব্য দৃষ্টির কথা। তার একটা অদ্ভুত শক্তি এটা। তবে দিনদিন এই শক্তিটাও কমে যাচ্ছে। আর হয়তো দু’মাস পরেই তার অস্তিত্বের সাথে এটাও মিশে যাবে।
দিব্য দৃষ্টি ব্যবহার করে মাহতিম। চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটা অচেনা জায়গা। রোস্তম বাঁধা অবস্থায় আছে। হাতে পায়ে বাঁধন, চৈতন্য নেই। পাশেই একজন পাহারাদার। জায়গাটা কোথায়, ঠাহর করতে পারছে না মাহতিম। অচেনা জায়গা, শুধু রোস্তমের মুখটা চেনা।
সকাল দশটা বেজে পঞ্চান্ন মিনিট। সময় গুনে চলাই জয়ন্তর কাজ। একবার ঘড়ির দিকে নজর দিয়েই সে খেতে বসে। পাঁচ মিনিটে খাওয়া শেষ করে আরেকবার ঘড়ির দিকে নজর দিয়ে বাইরে বেরুতে ঘরের দরজা খুলতেই সম্মুখে দেখতে পায় কালো মুখোশ পড়া একজন আগন্তুককে। জয়ন্ত হকচকিয়ে উঠে। আগন্তুকটি জয়ন্তর মাথায় বন্দুক তাক করেই তাকে ভেতরে নিয়ে আসে ক্রমশ। পা দিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।
কাজের মেয়েটি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসতেই আগন্তুকের চোখ যায় জয়ন্তর দিকে। খাবারের প্লেট তার হাত থেকে পড়ে যায়। মাটিতে গড়াগড়ি খায় সমস্ত মিষ্টি। মুখোশধারী লোকটি এক পর্যায়ে কাজের মেয়েটিকে শ্যুট করে। মেয়েটা লুটিয়ে পড়ে ফ্লোরে।
জয়ন্তর হাত খালি। এই মুহূর্তে কিছুই করতে পারবে না। কৌশলে কাজ করতে হবে। সে হাত দুটো উপরে তুলে স্যারেন্ডার করে নেয়।
জয়ন্তর ছোট মেয়ে হাফসা স্কুলের জন্য বের হতেই এমন কান্ড দেখে চিৎকার করে উঠে। জয়ন্ত তাকে ঘরে চলে যেতে বলে,’ চলে যাও মামনি, চলে যাও।’
মেয়েটি না গিয়ে তার মাকে ডাকে,’ মম, দেখে যাও। বাড়িতে হামলা হয়েছে। কোথায় তুমি মম?’
জয়ন্ত বার বার না করছে। হাফসা এগিয়ে আসতেই মুখোশধারী লোকটি তাকেও গু’লি করে। জয়ন্তর চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে আসে। ছোট মেয়েটি সিঁড়ি থেকে মুখ থুবরে নিচে পড়ে। ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠে, রক্ত’ক্ষরণ হতে থাকে। গুলিটা তার বক্ষ ভেদ করে বেরিয়ে গেছে। জয়ন্তর পুরো পরিবার বেরিয়ে আসে। লোকটি এক মুহুর্তও দেরি না করে সবাইকে শ্যুট করে। সবাই সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসার আগেই ক্ষ’ত’বি’ক্ষ’ত হয়ে যায়। বড় মেয়েটি শেষবার ড্যাড বলে ডেকেছিল। কলেজ পড়ুয়া বাইশ বছরের ছেলেটিও কিছু করতে পারেনি। বেরিয়ে আসার সাথে সাথেই অচেনা লোকটা তাকেও মে’রে দেয়। লোকটির দুহাতে পি’স্তল। এক হাতে পি’স্তল তাক করে আছে জয়ন্তর দিকে।
জয়ন্তর স্ত্রী বেরিয়ে আসতেই তাকেও মারার জন্য বন্দুক পজিশনে আনতেই জয়ন্ত লোকটির অন্ডকোষ বরাবর লাথি মারে। এক মুহুর্তের জন্য মাটিতে লুটিয়ে পড়ে লোকটি। দ্বিতীয়বার সুযোগ মিস না করে জয়ন্তর উপর গু’লি করে। জয়ন্ত সরে যায়। লোকটি জয়ন্তর স্ত্রীকে আয়ত্বে নিয়ে বলল,’ স্যারেন্ডার কর, না হয় একে মে’রে দেব।’
জয়ন্ত হাতে গু’লি নিয়েছিল। সেটা ফেলে দেয়। ফেলে দেওয়ার সাথে সাথেই লোকটি জয়ন্তর স্ত্রীকেও মে’রে দেয়। জয়ন্ত নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এই অল্প সময়ে তার সাথে কি ঘটে গেল বুঝে উঠতে পারছে না। পুরো পরিবার শেষ হয়ে গেছে। কেউ বেঁচে নেই।
জয়ন্ত লোকটিকে দেখে আঘাত করতে আসলেই তার শ্বাসকষ্ট উঠে যায়। এমন অবস্থায় সাহায্য করার মতোও কেউ নেই। লোকটি এগিয়ে আসে জয়ন্তর দিকে। তার শোচনীয় অবস্থা দেখে তাকে টেনে তোলে, সোফায় বসিয়ে দেয়। বন্দু’কটা তার কপালে স্লাইড করে বলল,’ চিনতে পারলি না? স্যরি, আমার তো বেয়া’দবি হচ্ছে, চিনতে পারছেন না?’
জয়ন্তর মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছে না। শ্বাসকষ্ট আরো বেড়ে গিয়েছে। জয়ন্ত হাজার কষ্টে লোকটার মুখে হাত দেয়। মুখোশটি টেনে খোলার চেষ্টা করে। লোকটি ধরে ফেলে জয়ন্তর হাত,’ আমাকে দেখার খুব সখ বুঝি? এতগুলো মৃ’ত্যুতে বুঝি খুশি হতে পারলেন না? আরো খুশির জন্য আমাকে দেখতেই হবে?’
জয়ন্ত ক্রমশ নিস্তেজ হতে থাকে। শরীরের শক্তি কমে আসে। পরিবারের দিকে একবার তাকায়, সবাই ঘুমিয়ে আছে। করো শরীরে প্রাণ নেই। জয়ন্ত মনে করে একটু আগের সময়টার কথা, সবাই টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছিল। চোখ তার পানি জমা হয়েছে। পরিবারের জন্য সে কিছুই করতে পারেনি। ভেতরের থেকে হাহাকার বেরিয়ে আসে।
লোকটি শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,’ তবে দেখ আমাকে? আজকের পর আর সুযোগ পাবি না এই চোখ দিয়ে কাউকে দেখার, শেষবার তোর খু’নিকে দেখে নে।’
বলেই লোকটি তার মুখোশ এক টানে খুলে ফেলল। জয়ন্তর হৃৎপিণ্ডটা যেন বেরিয়ে আসবে। শেষ মুহূর্তে এসে অস্ফুট স্বরে বলল,’ ত….তুমি..? বিশ্বাস… ঘাতক!’
‘উহুম। তোকে ম’রতে হতো না যদি না পুরনো ফাইল আবার ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করতি। মাহতিমকে তো অনেক আগেই মে’রে দিয়েছি, তুই আবার কেন সেটা সামনে আনলি? আজকে তো সব প্রমাণ তোর কাছে আছে। আমার জানামতে আরিশ তোকে আজকেই সব প্রমাণ এনে দিয়েছে। কোথায় রেখেছিস এগুলো?’
জয়ন্ত বলে না। কিছুতেই বলবে না সে। প্রাণ দিয়ে দেবে তবুও না।
‘ কোনো ব্যাপার না। আমি নিজেই খুঁজে নেব। এই বাড়িতেই আছে সব।’
লোকটি জয়ন্তর বুকে পরপর তিনটি গু’লি করে। ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকে ছয়টি লা’শ।
পুরো ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজেও কিছুই পায় না লোকটি। ঘরে কারো আসার সংকেত পেতেই বেরিয়ে যায়।
আজ সকালেই সমস্ত প্রমাণ জয়ন্তকে দেওয়ার কথা ছিল আরিশের। কিন্ত রোস্তমের বিষয় নিয়ে ভাবতে গিয়ে আর দেওয়া হয়নি।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আরিশের ফোনে কল আসে। কেউ স্বপরিবারে হ’ত্যা করেছে জয়ন্তকে। আরিশ বেরিয়ে পড়ে তৎক্ষণাৎ।
মাহতিম বিষয়টা জানতে পারে। চিন্তার ভাঁজ পড়ে তার কপালে। রোস্তমকে অপহরণ করা, জয়ন্তর মৃ’ত্যু এসবের সাথে কি কোনো যোগসূত্র আছে?
জয়ন্তর মৃ’ত্যু সংবাদটা মাহতিমকে খুব কষ্ট দেয়। তার ফিরে আসায় এসব ঘটছে, না হয় ঘটত না। এসবের জন্য সে বার বার নিজেকেই দায়ী করতে থাকে।
মাহতিম জয়ন্তর লা’শটা দেখল। কি নির্মমভাবে তাকে হ’ত্যা করা হয়েছে। আরিশের চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে সবার আড়ালে। আরিশ নিজেই পুরো কেসটার দায়ভার নেয়। যে করেই হোক, সে খু’নিকে ধরবেই। মনের মধ্যে জেদ চেপে বসেছে আরিশের। মাহতিম পাশ থেকে তার কাঁধে হাত রাখল।
মাহতিম দূরে দেখতে পেল একটি ছেলেকে। মাহতিমের তাকে চেনা মনে হলো। অনেক ভেবে মনে পড়ল, এটা সেই ছেলে, যার সাথে আশিশ দেখা করেছিল। যাকে আশিশ টাকা দিয়ে তার থেকে ব্যাগ নিয়েছে। মাহতিম আরিশকে বলল,’ দূরের ছেলেটিকে কৌশলে ধরুণ। ওকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।’
চলবে…..
#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম
৫২.
মাহতিম অহনার পাশে এসে বসে। অহনার কান্নাভেজা মুখশ্রী তাকে ভেতর থেকে আ’ঘাত করছে। সহ্য করতে পারছে না কিছুতেই। এত এত মানুষ সান্ত্বনা দিচ্ছে অহনাকে তবুও তার মন শান্ত হচ্ছে না।
মাহতিম তার মুখোমুখি ভঙ্গিতে বসে চোখের দিকে তাকায়,’ এতটা ভেঙ্গে পড়লে হবে? তুমিতো স্ট্রং, ভেঙ্গে পড়োনা এভাবে।’
অহনা কিছু বলছে না। মাহতিমের দিকে দেখছেও না। এক পর্যায়ে বলল,’ বাবা ছাড়া আমার আর কে অবশিষ্ট আছে বলো? আমি কাঁদব না? কোথায় খুঁজব আমি বাবাকে? কে এমনটা করল? তুমি আমার বাবাকে খুঁজে দাও না। তুমি ম্যাজিক করে এনে দাও প্লিজ।’
মাহতিম কষ্ট পাচ্ছে এটা ভেবে যে বাবা হারিয়ে যাওয়ায় যতটা কষ্ট পাচ্ছে অহনা ও চলে গেলে কি ঠিক ততটাই কষ্ট পাবে? অহনা কি সহ্য করতে পারবে? মাহতিম প্রশ্ন করেই বসল,’ আমি চলে গেলেও কি কষ্ট পাবে?’
মাহতিমের এমন প্রশ্ন শুনে অহনা কিছুটা নিভলো, বলল,’ মরে যাবো!’
মাহতিমের হৃদয়টা হুঁ হুঁ করে উঠে। অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করে,
‘আহি, আমার প্রেয়সী_
যখনি তোমার ঐ অশ্রুসজল চোখ দেখি, ভেতর থেকে আমি মুছড়ে পড়ি, হৃদয়ের দহনে তলিয়ে গিয়ে তীব্র ব্যথা অনুভব করি।
যখনি মনে হয়, তোমার আর আমার মিলন ইহজগতে সম্ভব নয়, তখনি মনের সব তীক্ততা আমাকে আরো করা’ঘাত করে।
তোমায় হারাতে চাই না আমি, আবারো চাই, নতুন করে, নতুন প্রেমে, নতুন কিছু স্পর্শ মিলে!
প্রেম পরিণয় দীর্ঘ নয়, সময়টাও থেমে নেই, তবুও চাই ক্ষণিকের আবেগে জড়িয়ে ধরো!’
মাহতিমের এই হৃদয়ের কথাগুলো হয়তো অহনা শুনতে পায়নি। কিন্তু ব্যাকুলতা বুঝতে পেরেছে। মাহতিমের গলা জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠে। মাহতিম শক্ত করে অহনাকেও জড়িয়ে নেয়। বিষাদের সময় এই স্পর্শই যেন শেষ সম্বল। ইরা এসেই এক ঝটকায় অহনাকে ছাড়িয়ে নেয় মাহতিমের থেকে,’ তুই আবার জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছিস? জানি তোর মনের অবস্থা ঠিক নেই তাই বলে! যাই হোক, ঘরে চল, একটু বিশ্রাম নিবি। পুলিশতো খোঁজ নিচ্ছে তাই না? আর তোর হবু বর, আরিশ জিজু সব সামলে নেবে দেখে নিস? খুঁজে আনবেই আঙ্কেলকে। চিন্তা করিস না।’
মাহতিম আরিশের কাছে যায়। ছেলেটিকে আরিশ একটা পরিত্যক্ত জায়গায় এনে দাঁড় করালো। মাহতিম আসতেই বলল,’ আপনার যা জিজ্ঞেস করার করুন।
ছেলেটি ভয়ে তটস্থ হয়ে নিচে পড়ে যায়। একটা ছায়াকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে ভূত বলে চিৎকার করতে থাকে। কিন্তু পালাতে পারছে না। আরিশ আগে থেকেই ছেলেটির হাত পা বেঁধে দিয়েছে। আরিশকে চলে যেতে দেখে ছেলেটি খুব ঘাবরে যায়। বার বার বলছিল,’ স্যার, আমাকে ভূতের কবলে রেখে যাবেন না। আমাকেও আপনার সাথে নিয়ে যান। আমি জেলে থাকতে চাই আজীবন তবুও ভূতের হাতে ছেড়ে দেবেন না আমাকে। বাঁচান আমাকে।’
আরিশ তার কোনো কথা কানে না তুলে চলে যায়। মাহতিম সামনে আসতেই ছেলেটি জ্ঞান হারায়। মাহতিম আরিশকে ডেকে আনে। আরিশ তার চোখে মুখে পানি দিয়ে জাগিয়ে তুলে। ছেলেটি চারিদিকে তাকিয়ে দেখল এখনো মাহতিম আছে কিনা? না দেখতে পেয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে বলল,’স্যার, আমাকে নিয়ে চলুন, আমি আর কখনো কোনো খারাপ কাজ করব না। তবুও আমাকে এখানে রেখে যাবেন না। এটা ভূতেদের আস্তানা। আপনি হয়তো দেখতে পারেননি, এখানে একটা ভূত রয়েছে, আমাকে মে’রে ফেলবে। নিয়ে চলুন আমাকে।’
আরিশ হাত উঁচিয়ে মাহতিমকে দেখিয়ে বলল,’ এই কি সেই ভূত?’
ছেলেটি ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আরিশের দিকে তাকায়। বুঝতে পারে আরিশ তার পক্ষ নেবে না। মাহতিম সামনে এগিয়ে আসে। ছেলেটিকে ভয় না দেখালে সে কিছুই বলবে না, তাই নিজেকে আরও ভয়ঙ্কর করে উপস্থাপন করে তার সামনে,
‘ নাম কি তোর?’
ছেলেটি ভয়ে ভয়ে উত্তর দিল,’ রাজ!’
‘ নামটাতো সুন্দর। করিস কি?’
‘ আমি কিছু করিনা।’
‘ মিথ্যে বলবিনা। আমি কোনো মানুষ নই, তোর প্রতি কোনো দয়া দেখাব না।’
‘ ছেলেটি আরো ভয় পেয়ে যায়,
‘বলছি আমি। আমি তেমন কিছু করিনা, শুধু কিছু জিনিস পৌঁছে দেওয়ার কাজ করি। এতে আমার কিছু টাকা হয়।’
‘ কি কাজ?’
‘ একজন লোককে প্রতিদিন ড্রাগ দিয়ে আসি। তিনি আমাকে আমার চাহিদার থেকেও বেশি টাকা দেয়। ঘরে মা অসুস্থ তাই রাজি হয়ে গেছি তার এই কাজে, না হয় কখনো রাজি হতাম না।’
আরিশ পাশ থেকে বলল,’ কাজ করতে পারিস না?’
‘ কাজ পাব কোথায়? কেউ কাজে নেয় না। বাধ্য হয়ে এই কাজ করি।’
‘ কালকে আশিশ তোকে কেন টাকা দিয়েছিল?’
‘ আমি কোনো আশিশকে চিনি না।’
আরিশ তেড়ে এসে বলল,’ দু ঘা না দিলে তুই বলবি না। তোর কি ভয় করছে না মৃ’ত মানুষকে দেখে?’
রাজ ছেলেটি ভয়ে ভয়ে মাহতিমের দিকে তাকায়। লাল চোখ দেখে তার ভেতরের সব হজম হয়ে যাওয়ার জোগাড়,’ সত্যি বলছি, আমি কোনো আশিশকে চিনি না।’
‘ কাল যে লোকটা তোর বাড়ি গিয়ে টাকা দিয়েছিল তারপর সাথে করে একটা ব্যাগ নিয়েছিল তার কথা বলছি।’
‘ ওনার নাম জানি না আমি। আমাকে বলেছে একটা সহজ কাজ করে দিলেই আমাকে অনেক টাকা দেওয়া হবে।’
মাহতিম অবাক হয়ে যায়,’ কি কাজ করিয়েছে তোকে দিয়ে?’
‘ বলেছে একটা মেয়েকে গিয়ে ভয় দেখাতে হবে আর তার বলা কথাগুলো তাকে বলে দিয়ে বেরিয়ে যেতে হবে। এইটুকুই! কাজটা সহজ ছিল এবং টাকা বেশি, তাই করে নিলাম খুব সহজেই।’
‘ কোনো কাজ করার আগে হাজারবার ভাববি, কার কাজ, কেন করছিস?’
‘ আমার ভুল হয়ে গেছে, আর কখনো করব না।’
‘ আর কিছু জানলে বল।’
‘ কাল রাতে আবার বলেছিল মেয়েটাকে একটা চিঠি দিয়ে আসতে। কিন্তু মেয়েটার ঘরে আরো কয়েকজন মেয়েকে দেখে আমি ঘাবরে যাই তাই জানালার গ্লাসের ফাঁকে চিরকুট রেখে চলে আসি।’
‘ তার মানে অহনার কাছে আসা মুখোশধারী লোকটি তুই ছিলি?’
‘ হ্যাঁ! ওনি আমাকে বলে দিয়েছে কি করতে হবে? আর ঐ পোশাকটা আর আমাকে দেওয়া ছু’রি, বন্দু’ক নিয়ে গেছেন সেটাই আপনি দেখেছেন।’
‘ অহনার বাবাকেও তুই কিডন্যাপ করেছিলি?’
‘ জানি না লোকটা কে? আমাকে যেভাবে বলা হয়েছে আমি সেভাবে করেছি। টাকা পেলেই আমি সব করি।’
‘ কোথায় রেখেছে সেটা বল?’
‘ আমি জানি না। তবে খিলছড়ির বড় বাগানের পেছনে আমি রেখে এসেছিলাম। আমাকে বলা হয়েছিল সেখানে রাখতে, পাশে টাকা রাখা ছিল। আমি লোকটাকে রেখে টাকা নিয়ে চলে এসেছিলাম।’
মাহতিম আরিশকে বলল,’ সব রেকর্ড করা হয়েছে?’
আরিশ মাথা নাড়লো,’ হু।’
‘ তবে একে জেলে ডুকাও।’
রাজ কাকুতি মিনতি করে,’ আমিতো সব বলে দিলাম। আমাকে ছেড়ে দিন। আর কখনো এমন ভুল করব না।’
‘ ভুল ক্ষমা করা যায়, অপরাধ নয়। আর তুইতো মহাঅপরাধ করেছিস, এর ক্ষমা হয় না। শাস্তি পেতেই হবে। যেকারণেই তুই অপরাধের সাথে যুক্ত হোস না কেন? অপরাধ অপরাধই। এর বিচার হবে আইনিভাবে।’
আরিশ রাজকে নিয়ে যায়। মাহতিমের চারিদিকটা যেন অন্ধকার মনে হচ্ছে। প্রিয় বন্ধু, ভাই, সমর্থক তাকে ঠকালো। কেন এমনটা করল? ওকে কষ্ট দেওয়ার কি আর কোনো রাস্তা খোলা ছিল না? কেন বন্ধু হয়ে বুকে ছু’রি মারল? বিশ্বাস শব্দটার প্রতিই বিশ্বাস উঠে গেছে মাহতিমের। কাকে বিশ্বাস করবে বুঝে উঠতে পারছে না। আপন মানুষগুলো একে একে বিশ্বাস’ঘা’ত’কতা করল।
বৃষ্টি শুরু হয়েছে হঠাৎ। পানিতে ভিজে টইটুম্বর মাহতিম। অগোছালো লাগছে সবকিছু। সে মেনে নিতে পারছে না আশিশ তাকে ঠকালো। প্রিয় বন্ধু তাকে ঠকালো। মাটি আঁকড়ে ধরে মাহতিম বৃষ্টির ফোঁটায় নিমজ্জিত করে। এতো তাড়াতাড়ি বন্ধু নামের শত্রুর রুপ দেখতে পারবে ভাবেনি সে।
মাহতিমের রাগ আরো বেড়ে যায়। আশিশকে তার কর্মফল দেবে বলেই ঠিক করে নেয়। মাহতিম বুঝতে পারছে না আশিশ তার সেই গোপন শত্রু নাকি তার দলের কেউ। মাহতিম তৎক্ষণাৎ আরিশের কাছে চলে যায়। আরিশকে গিয়েই বলল,’ ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করা হয়নি সে কেন জয়ন্ত স্যারের সমাধিতে এসেছে। ছেলেটি বলল,’ কালো মুখোশধারী লোকটি আমাকে বলেছিল এখানকার সব খবর তাকে নিয়ে দিতে। আমাকে আরো বড়লোক করে দেবে।’
মাহতিম আরিশকে বলল,’ মাদক সাপ্লাই এর জন্য ছেলেটিকে জেলে রাখো। আশিশের বিষয়টা আরো ক্লিয়ার করি। তাকে তার স্টাইলেই শাস্তি পেতে হবে।’
‘ বুঝতে পারিনি।’
‘ আশিশকে কাল রাতে সব কথা বলে দিয়েছিলাম। তাই সে ভেবেছে আপনি জয়ন্ত স্যারকে সব প্রমাণ দিয়েছেন। তাই সে প্রমাণ লোপাট করার জন্য জয়ন্ত স্যারকে হ’ত্যা করে। সে জানেই না প্রমাণ এখনো আপনার কাছে।’
‘ তাহলে এখন কি করব?’
‘ কিছুই না। আপাতত পনেরোদিন অপেক্ষা করুন। তারপর আমি নির্দোষ প্রমাণ হলে সে আর কিছুই করতে পারবে না। আমি তাকে পরপরই তার কর্মফল দেব।’
আপনি সাধারণ মানুষ নন তাহলে কেন এতদিন আশিশের মত লোককে চিনতে পারেননি?
চলবে….