ছায়া মানব পর্ব-৪৪+৪৫+৪৬

0
938

#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম

৪৪.
অহনাকে দরজার সামনে দেখে আরিশ কিছুটা হতবাক হয়ে যায়। ক্লাস শেষ হতে অনেক দেরি তাও অহনা বাড়িতে আসলো কেন? নিশ্চয় আবার ভেজাল করেছে, তাই শিক্ষক বের করে দিয়েছে।
রোস্তম বলতে যাচ্ছিল, তখন‌ই আরিশ গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,’ চাচা, অহনা চলে এসেছে।’

রোস্তম পেছন ফিরে তাকায়। অহনা আরিশকে বাড়িতে দেখে খুব অবাক হয়। কাছে এসে বলল,’ কি নিয়ে কথা বলেছিলেন আপনারা। আমি কিছু একটা শুনেছি।’

‘ কি শুনেছ তুমি?’ জিজ্ঞেস করল আরিশ।

‘ পুরোতো শুনতে পাইনি, তবে এটা শুনলাম কোনো কেসের কথা বলছিলেন, কেউ বেঁচে ছিল না তাই কেসটা লড়তে পারেনি‌।’

‘ আর কি শুনেছ?’

‘ আমিতো মাত্র‌ই এলাম। আর কিছু শুনবো আপনারা বললে।’

রোস্তম চলে গেল কফি আনতে। আরিশ অহনাকে বলল,’ ততটাও ইম্পর্টেন্ট কিছু বলছিলাম না। তুমি বাড়িতে নেইতো তাই গল্প করছিলাম।’

আরিশ পুরো কথাটা শুনতে পারল না। মনের মধ্যে খচখচ রয়ে গেল। এখনো সে জানে না অহনার মনে মাহতিম আছে কিনা। শেষে অহনা কি জানতে পেরেছিল মাহতিমের মৃ’ত্যুর কথা, সেটাও জানতে পারেনি।

আজ হয়তো সুযোগ পেল না। কিন্তু আবার কোনো একদিন জেনে নেবে আরিশ। এমন ভাব করে অহনার ঘরে গেল। অহনা নিতে চাইল না। কিন্তু রোস্তম জোর করে দুজনকে তার ঘরে পাঠালো।

মাহতিম আশিশের সাথে রেগে ছিল, কারণ সে ভুল তথ্য দিয়েছিল। সেদিন যখন মাহতিম আশিশকে গায়ে বিষয়টা বলল। তখন আশিশ বলল,’ আমি যা জানতে পেরেছি তাই বলেছি। আমি খবর নিয়ে জানতে পেরেছিলাম সে তোর বিষয়ে খবর নিচ্ছিল। তোর পুরো ডিটেইলস্ খুঁজছিল, তাই ভেবেছি সেই আসল অপরাধী হবে। আমার জানা ছিল না লোকটা ভালো।’

আশিশ আরো বলল,’ যেহেতু অহনার সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে, তাই তাকে মে’রে দেওয়াই উত্তম হবে। অহনার বিয়ে না হলে সে তোর থাকবে সবসময়।’

মাহতিম সোজা না করে দেয়। এভাবে অন্যায় সে কখনোই করতে পারেনা। আশিশ খুব জোর করল। এতে মাহতিম রেগে যায়। এবং রেগে গিয়ে তার সাথে আর দেখা করেনি‌।
এই তিনদিন অহনা আর মাহতিম খুব সুন্দর সময় কাটিয়েছে। তারা এক ঘরে, একই খাটে ছিল। দুষ্টু মিষ্টি কিছু সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাদের। যদিও পদে পদে ঝগড়া করেছে অহনা।

অহনা কোনো কথা বলছে না। দাঁয়সাড়া দাঁড়িয়ে আছে খাটের এক পাশে। আরিশ চারিদিকে দেখে বলল,’ গরুর গোয়াল কি দেখেছ কখনো?’

এমন প্রশ্ন শুনে অহনা কিছুটা অবাক হয়, বলল,’‌ হ্যাঁ দেখেছি। কিন্তু কেন?’

‘ তোমার ঘরটা দেখে কি মনে হচ্ছে না এটা একটা গোয়াল ঘর?’

অহনা রেগে ফুঁসে উঠে,’ আপনাকে বলেছি আমার ঘরে আসতে?‌ আসলেন কেন?’

‘ আমি আসব না কে আসবে? কিছুদিন পর তুমি আমার ব‌উ হবে।’

‘ সেটা পরের ব্যাপার। যখন হব তখন দেখা যাবে। এখন আপনি আমাকে আমার ঘর নিয়ে কিছু বলতে পারেন না।’

‘ এটা ঘর না, গোয়াল হবে।’

অহনা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,’ আপনি কি গোয়ালে কখনো গরু দেখেছেন?’

‘ হঠাৎ এমন প্রশ্ন?’

‘ বলুন না, দেখেছেন কিনা?’

‘ অনেকবার দেখেছি। আমাদের বাড়িতেও আছে।’

‘ আমার ঘরেও আছে। দেখবেন?’

‘ কোথায়?’

অহনা আরিশের দিকে আঙুল দিয়ে বলল,’ এই যে আমার সমানে। জলজ্যান্ত বসে আছে।’

‘ অপমান করছ।’

‘ আপনিও করেছেন।’

‘ ঝগড়া করো তুমি। খুব বেশি ঝগড়ুটে। তোমাকে নিয়ে সংসার করব কি করে?’

‘ বিয়ে ভেঙে দিন।’

মাহতিম এক পাশে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছে। দিনদিন অহনা আরো ঝগড়ুটে হয়ে যাচ্ছে। প্রেমের ভিমরুতি এটা। মাহতিমের প্রেমে পড়ে এই অধঃপতনটা হয়েছে। সবকিছু তাঁর এখন ভালো লাগে বা কিছু নিয়ে ওভার রিয়্যাক্ট করে ফেলে।

আরিশ উঠে দাঁড়ায়। অহনার মুখের কাছে আসে। দু’কদম পিছিয়ে যায় অহনা,
‘ কাছে আসবেন না একদম।’

‘ কি করবে তুমি?’

‘ বাবাকে ডাকব।’

‘ আমার ব‌উয়ের কাছে আমি যাচ্ছি, শশুর কি করবে?’

‘ এখনো হ‌ইনি ব‌উ। বিয়ে হবে কিনা আগে সেটা দেখুন।’

‘ বিয়ে করলেতো এই কাজল চোখের মেয়েকেই করব আমি। যে যাই বলুক, তোমাকে আমি ছাড়ছি না।’

‘ আপনার কপাল পুড়বে।’

‘ এমন কিছুই হবে না। আমি জিতে যাব। সবচেয়ে সুন্দরী ব‌উ হবে আমার। আমার ব‌উয়ের থেকে সুন্দরী পুরো তল্লাটেও কেউ খুঁজে পাবে না।’

অহনা পেছাতে থাকে। বিষয়টা সহ্য হয়না মাহতিমের। কিন্তু এই মুহূর্তে কি করবে সে? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তো আর এই দৃশ্য উপভোগ করতে পারেনা। মাহতিম অহনাকে ডেকে উঠে,’ সরে যাও আহি।’

অহনা আরিশকে বলল,’ আর কাছে আসলে আপনাকে আমি….’

‘ কি করবে?’

‘ কিছু একটা… সরে দাঁড়ান।’

দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেসে যায় অহনার। পালানোর জায়গা নেই। আরিশ তার খুব কাছে চলে আছে। দু হাত অহনার দুই পাশে দেয়ালে রাখে। খুব কাছে চলে আসে। অহনা চোখ বন্ধ করে নেয়। চোখ বন্ধ করলেই মনে হয় আরিশ তাকে দেখতে পাবে না। চোখ মুখ খিঁচে ফেলে।

মাহতিম সময়টাকে কিছুক্ষণের জন্য থামিয়ে দিতে যাবে ঠিক তখন‌ই আরিশ অহনার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,’ ভয় পেয়ো না, কিছুই করব না। সবার মতো না আমি। বিয়ের আগে ব‌উকে ছোঁব না। অধিকার নিয়েই একেবারে কাছে টানব। তৈরি থেকো।’

মাহতিম সরে আসে। অহনা হাফ ছেড়ে বাঁচে। আরিশ অহনাকে ছেঁড়ে দিয়ে আবার ঘরে মনোযোগ দেয়। অহনা ভার্সিটি থেকে এসে ফ্রেস হয়নি। তাই বলল,’ আমি একটু ফ্রেস হয়ে আসি। আপনি অপেক্ষা করুন কিছুক্ষণ।’

মাহতিম আশিশের সাথে দেখা করতে চলে যায়। স্যরি বলে নেবে একবার। যত‌ই হোক, প্রিয় বন্ধু বলে কথা।

অহনা চলে যেতেই আরিশ অহনার বিছানাটা গুছিয়ে দেয়। মনে মনে বলল,’ বিয়ের পর‌ও কি অহনা এসব কাজ আমাকে দিয়ে করাবে? নাহ! তা হবে না। তবে একটু একটু সাহায্য করব। একজন যোগ্য স্বামী হয়ে দেখাব। আমাকে দেখে পাশের বাড়ির ব‌উমনিরাও জ্বলবে। তাদের বরদের থেকেও অনেক ভালো হব আমি। শুধু কাজের চাপটা একটু কম থাকলেই হলো।’

পরক্ষণেই বলল,’ অহনা আমাকে কাজ করতে বলেনি। আমি নিজেই তাকে সাহায্য করছি, তার মানে এটা ভালোবাসা থেকেই হচ্ছে।’ নিজের মনে করা বলতে বলতেই আরিশ পুরো ঘর গুছাতে থাকে। পড়াশোনার তাগিদে একা থেকেছে। নিজের কাজ নিজেকে করতে হয়েছে। রান্নাসহ সব কাজ‌ই করতে হয়েছে। তাই এটা তার কাছে নর্মাল বিষয়।
আরিশ অহনার পড়ার টেবিলটা গুছাতে গিয়েই একটি ছবির এলবাম খুঁজে পায়। অগোছালো ব‌ইয়ের ফাঁকে পড়ে ছিল। এলবামটা খুলতেই তার চোখ স্থির হয়ে যায়। অহনা এবং মাহতিমের অনেক ছবি দেখতে পায়। কত শত ভালোবাসাময় ছবি। আরিশ বুঝে নেয়, তার মানে অহনা সব জানে, সে এখনো মাহতিমকে ভালোবাসে। তাই তাকে পাত্তা দেয় না। আরিশের বুকটা ছিঁড়ে যাওয়ার অবস্থা। বুকে ব্যাথা অনুভব করে। এলবামটা হাতে নিয়ে সোজা বেরিয়ে যায়।

অহনা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখল মাহতিম বা আরিশ, কেউই নেই। রোস্তমের কাছে গিয়েও জিজ্ঞেস করে আরিশ আছে কিনা? রোস্তমকে না জানিয়েও চলে যায়। রোস্তম মনে করে, অহনার সত্যিটা জেনেই হয়তো কষ্ট পেয়েছে, তাই না জানিয়ে চলে গেছে।

অহনা কিছু বুঝতে না পেরে নিজের ঘরে চলে যায়। এতক্ষণে খেয়াল করল তার পুরো ঘরটা গোছানো। কে করেছে এসব? এসব ভাবতে ভাবতেই মাহতিমকে খুঁজল। পেল না। ভীষণ ঘুম পাচ্ছে তাই ঘুমিয়ে পড়ল।

মাহতিম আশিশকে স্যরি বলে। অনেক কষ্টে রাগ গলে আশিশের। পরবর্তীতে কি করবে আমরা বুঝে উঠতে পারছে না। তখন মাহতিম বলল,’ আমাদের আরিশের সাহায্য নিতে হবে। সে আমাদের সাহায্য করতে পারবে। এছাড়া আর কেউ নেই যাকে আমরা বিশ্বাস করতে পারি।’

আশিশ সাঁয় দেয় না,’ আমরা কিভাবে একজন অপরিচিত লোককে বিশ্বাস করতে পারি?’

‘ তাকে খুব কাছ থেকে দেখছি আমি। আমার মনে হয় না সে খারাপ বা বিশ্বাসের যোগ্য না।’

‘ কিসের বিশ্বাস। তুই অনেক সহজ সরল, তাই যে কাউকে বিশ্বাস করতে দেরি করিস না। এই ছেলেটাই তোর গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করতে চলেছে কিছুদিন পর। আর তুই তাকেই বিশ্বাস করার কথা বলছিস?’

‘ এতে তার দোষ কোথায়? সেতো জানে না।’

‘ ঠিক আছে, যা ভালো মনে করিস।’

‘ আমার প্রিয় বন্ধু। তোকে খুব ভালোবাসি রে। তুই আর অহনা ছাড়া এই ছায়া জীবনে আমার আর কেউ নেই।’

‘ আরো একজন আছে। এতো তারাতাড়ি ভুলে গেলি?’

চলবে….

#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম

৪৫.
ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছে। অহনা জানালা খুলে বাইরে তাকিয়ে আছে। দক্ষিণের বাতাস ক্রমশ তার পুরো শরীরে শিহরণ দিয়ে যাচ্ছে। রোস্তম ঘরে এসেই অহনাকে বকা দিয়ে জানালা বন্ধ করে দেয়। বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে ভিজে গেছে অনেকটা‌। রোস্তম একখানা টাওয়াল দিয়ে অহনার মাথা মুছে দেয়। অহনা মৃদু হাসে,
‘ তুমি আমার এত খেয়াল রাখো বাবা, মনেই হয়না আমার মা নেই।’

‘ পাগলী মেয়ে। তোর মা থাকলে হয়তো তোর খেয়াল রাখতে পারত ভালো। তোর মনের কথাগুলো তার সাথে মিটিয়ে নিতি। সুখ-দুঃখের কথাগুলো বলতে পারতি। আমার কাছে তুই বলতে পারছিস না।’

‘তোমার কাছে লুকানোর মতো কিছু নেই বাবা। তুমি আমার মা, তুমিই আমার বাবা।’

রোস্তমের ফোনটা বেজেই যাচ্ছে অনেকক্ষণ হলো। ঘরে গিয়েই দেখল পনেরোটা কল করেছে আরিশ। রোস্তম কল ব্যাক করে। ওপাশ থেকে আরিশ বলল,’ চাচা কেমন আছেন?’

‘ আলহামদুলিল্লাহ ভালো বাবা। তুমি কেমন আছ?’

‘ আলহামদুলিল্লাহ। অহনা কোথায়?’

‘ নিজের ঘরেই আছে। কথা বলবে?’

‘ না, আপনার সাথে আমার কিছু কথা রয়েছে।’

‘ বলো!’

‘ এখন বলা যাবে না। আপনি কি কাল একটু দেখা করতে পারবেন? বাড়িতে গেলে অহনা যেকোনো সময় থাকতে পারে তাই অন্য কোথাও দেখা করতে চাই।’

‘ আমার বাড়িতে এসো একবার। কাল সকালেই আমি চলে যাব। সবকিছু পড়ে আছে। না গেলেই নয়, কে দেখাশোনা করবে সব? এতদিন আক্কাসকে দায়িত্ব দিয়ে রেখেছি, এখন ফিরিয়ে নেওয়ার পালা‌।’

‘ আচ্ছা চাচা।’

রোস্তম নিশ্চিত হলো আরিশ রেগে নেই। সকালের বাসেই ইলাশপুর র‌ওনা দেবে। গোছগাছ করতে থাকে। সকালেই মেয়েকে বলবে, এখন বললে বাঁধা দেওয়ার বেশি চেষ্টা করবে।

সকালে ঘুম থেকে উঠতেই অহনা চিৎকার করে উঠে। মুখোশ পড়া একজন লোক তার ঠিক মুখের উপরে। আগন্তুকটি অহনার মুখ চেপে ধরে‌। কথা বলার শক্তি নেই অহনার। মুখ থেকে কিছু অস্ফুট শব্দ বেরিয়ে আসছে শুধু। কালো পোশাকে আবৃত লোকটির শরীর কালো কাপড়ে জড়ানো, চোখে কালো চশমা, পুরো মুখটাকেও ডেকে রেখেছে কালো কাপড়ে, হাতে কালো গ্লাবস। দেখে মনে হচ্ছে একটা কালো পিন্ড।
লোকটা অহনার মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলল,’ মাহতিমের থেকে দূরে থাকবি। তার সাথে মিশবি না। তাহলে তোর কপালেও শনি ঘুরবে। সাবধান করে যাচ্ছি। আবারো সাবধান করছি, মাহতিমের সাথে যেন তোর কোনো সম্পর্ক না থাকে।’

বলেই আগন্তুক লোকটি জানালা দিয়ে চলে গেল। অহনা হাফ ছেড়ে বাঁচে। এই মুহূর্তে মাহতিম কোথায় গেল? অহনা ভয়ে তটস্থ হয়ে রয়েছে। রোস্তম চিৎকার শুনে অহনার ঘরে আসে,
‘ কি হয়েছে মা?’

অহনা বলতে গিয়েও থেমে যায়। বললে‌ হয়তো রোস্তম চিন্তা করবে। কয়দিন হলো রোস্তমের শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। তাই অহনা তাকে আর বিভ্রান্ত করতে চায়নি। বলল,’ কিছু না বাবা। একটা খারাপ স্বপ্ন দেখেছি।’

‘ আয় তবে, নাস্তা দিয়েছি।’

‘ বাবা, এত সকাল সকাল রান্না করতে কে বলেছে তোমাকে? আজ থেকে সব আমি করব। তোমাকে আর কিছুই করতে হবে না।’

‘ তোকেই করতে হবে। আমিতো তোর কাজ করে দেওয়ার জন্য এখানে থাকব না।’

‘ মানে!’

‘ একটু পরেই আমি গ্রামে চলে যাব। আটটার সময়ের বাসেই চলে যাব।’

‘ না বাবা। তুমি এখন যাবে না।’

‘ ফসল কাটার সময় হয়েছে। যেতেই হবে। আক্কাস কল করেছিল, তার জমিতেও পোকার আক্রমণ শুরু হয়েছে। এখন যেতেই হবে।’

অহনা আর না করেনি। কিন্তু মনে মনে ভেবে নেয়, কোনো একটা কাজ সে জোগাড় করবে। বাবাকে সে আর কৃষিকাজ করতে দেবে না। একা হাতে সামলাতে কষ্ট হয়। মাও বেঁচে নেই যে সাহায্য করবে। অহনা যদি একটা চাকরি জোগাড় করতে পারে, তাহলে একেবারে শহরে নিয়ে আসবে রোস্তমকে। নিজের পারিশ্রমিকে বাবাকে ভালোভাবে রাখতে পারবে।

এতক্ষণ হয়ে গেছে কিন্তু মাহতিম এখনো আসছে না। রাতে কোথায় গিয়েছে জানা নেই অহনার। এখনো আসছে না দেখে চিন্তা হয়। অহনা ভাবে, ম্যাজিক দেখাতে গিয়ে না কোথাও ভেজালে পড়ল।

সাড়ে সাতটা বাজতেই রোস্তম মেয়েকে বিদায় দিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ায়। অহনার মন সাঁয় দিচ্ছিল না রোস্তমকে চলে যেতে দিতে। আবারো বলল,’ যেও না বাবা। তোমায় ছাড়া থাকতে কষ্ট হবে।’

‘ কিছু হবে না। তোর বান্ধবী ইরাকে আসতে বলেছি। আলাদা একটা বাড়িতে ভাড়া থাকে, ভাবলাম এখানে নিয়ে আসি, তোর সাথে থাকবে।’

‘ ওকে আবার বলতে গেলে কেন?’

‘ একা একটা বাড়িতে আমার মেয়েকে রেখে যাব, ততটাও বুদ্ধিহীন হয়ে যাইনি এখনো। তোর ভয় করবে ভেবে ওকে আসতে বললাম। একটু পরেই সে তার জিনিসপত্র নিয়ে চলে আসবে। একসাথে মিলেমিশে থাকিস। আমি যাই তবে।’

রোস্তম চলে যায়। অহনার মনটা খারাপ। ঘরের এক কোণে বসে র‌ইল। একা থাকতে তার সমস্যা নেই, কারণ মাহতিম আছে ওর সাথে। এখন আবার আরেকটা বিষয় নিয়ে খুব ভাবছে। কে হতে পারে, যে মাহতিমকে আর অহনাকে একসাথে দেখতে চায় না? সে কি করে জানল এতকিছু? মাহতিমতো অদৃশ্য, তাহলে কিভাবে দেখল?

এসব ভাবতে ভাবতেই দরজায় টোকা পড়ল। ইরা এসেছে। অহনা দরজা খুলে ভেতরে আনল ইরাকে। ইরা এসেই বলল,’ সাপের পাঁচ পা দেখে নেব এবার?’

‘ কিসের সাপের পাঁচ পা?’

‘ ওহ বেবি, বুঝতে পারলি না?’

অহনা উৎসুক হয়ে বলল,’ তোর কথা আজ পর্যন্ত কখনো বুঝেছি আমি? আজকে কেন তার ব্যতিক্রম হবে?’

‘ বলছি যে, রুমিও একা থাকে, ওকেও নিয়ে আসলে দারুন মজা হবে। আমরা একসাথে মাস্তি করতে পারব, আড্ডা দেব। এমন সুযোগ পেয়েছি বলার বাহিরে। রোস্তম আঙ্কেলকে আনলিমিটেড থ্যাঙ্কস্।’

‘ কোনো মজা হবে না। এমনিতেও মন মেজাজ বিগড়ে আছে। কথা না বলে তৈরি হয়ে নে, ভার্সিটির কথা মনে নেই নাকি?’

রুমিকেও নিয়ে আসবে বলায় অহনার মাথা গরম হয়ে গেল। মাহতিমতো আছেই, এখন আবার ইরা আসল। আবার নাকি রুমি আসবে। অহনার চিন্তা হলো, এরা সবাই থাকলে ও মাহতিমের সাথে সময় কাটাবে কি করে?

ইরা জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে থাকে। অহনা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। দিনটা খুব স্নিগ্ধ হয়ে শুরু হয়েছে। হঠাৎ ঘাড়ে কারো কোমল স্পর্শ অনুভব করে। মুহুর্তেই হাসির রেখা ফুটে ওঠে অধরে। অহনা পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল মাহতিম এসেছে। নিমেষেই জড়িয়ে ধরে অঝোড়ে কেঁদে ওঠে,
‘ কোথায় গিয়েছিলে তুমি?’

‘ আমার এক বন্ধুর সাথে ছিলাম।’

‘ কে সে?’

‘ আশিশ। আমার খুব প্রিয় বন্ধু। এই জগতে আমার দুইমাত্র সমর্থক।’

‘ দুইমাত্র মানে?’

‘ দুইজনের মধ্যে একজন সে একজন তুমি।’

‘ জানো আজ কি হয়েছে?’

‘ তোমাকে বলে যেতে পারিনি, কারণ তুমি গভীর ঘুমে ছিলে। আমার বলে যাওয়া উচিত ছিল।’

‘ এখন আমার কথা শুনো।’

‘ বলো।’ মাহতিম উৎসুক হয়ে অহনার চোখের দিকে তাকায়। দেখতে পায় ওর চোখে এক রাশ ভয় জমাট বেঁধেছে। আতঙ্কে কেঁপে উঠে মাহতিমের হৃদয়।

অহনা থেমে বলল,’ একজন মুখোশধারী লোক আমাকে আক্রমণ করেছিল। তার পুরো শরীর কালো কাপড়ে আচ্ছাদিত ছিল।’

মাহতিম আঁতকে উঠে,
‘ এসব কখন হলো? তোমার কিছু হয়নি তো?’

‘ না, আমি একদম ঠিক আছি। মুখোশধারী লোকটি আমার কোনো ক্ষতি করেনি, কিন্তু করবে বলে ভয় দেখিয়ে গেল।’

‘ কিন্তু তোমার সাথে কার কি শত্রুতা থাকতে পারে?’

‘ হয়তো তোমার সাথে আছে। কারণ সে বলল, তোমার থেকে দূরে থাকতে, তোমার সাথে কোনো সম্পর্ক রাখলে আমার ক্ষতি করবে।’

মাহতিমের আর বুঝতে বাকি র‌ইল না, তার কোনো শত্রু অহনার উপর অ্যাটাক করেছে। মাহতিমের দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে। মাহতিম অহনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। কপালে চুমু খেয়ে বলল,’ আমি থাকতে তোমার কিচ্ছু হবে না। আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবে না‌। কখনোই পারবে না। তুমি শুধু‌ই আমার থাকবে আমৃ’ত্যু।’

অহনা গভীর নিঃশ্বাস নেয়। শান্তিতে মাহতিমের বুকে মুখ লুকিয়ে নেয়। অজানা এক ভালোলাগা তাকে স্পর্শ করে।
মাহতিম ভাবে, পৃথিবীতে তার আপন বলতে অহনা আর আশিশ রয়েছে। অহনার উপর আক্র’মণ করেছে যে, সে হয়তো আশিশের উপরেও আক্রমণ করতে পারে। আশিশকে তার বাঁচাতে হবে। এসব ভাবতে ভাবতে মাহতিম পাশে তাকিয়ে দেখল ইরা দাঁড়িয়ে আছে। অহনাকে নিখুঁত দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছে….

চলবে….

#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম

৪৬.
ইরা অহনার চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখে তাকে। জড়িয়ে ধরার মতো তেমন কিছুই তার চোখে পড়ছে না। চোখ মুখ কচলে পুনরায় দেখে। নাহ! কিছুই চোখে পড়ছে না। ইরার মনে হলো অহনা কাউকে জড়িয়ে ধরার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দুটো কপালে উঠিয়ে অহনাকে ডাক দেয়,’ অহনা, কি হয়েছে‌ তোর?’

ইরার ডাকে হকচকিয়ে উঠে অহনা। মাহতিমের বুকে থেকে মাথা সরিয়ে নিজেকে সামলে নেয়,’ কি হয়েছে? ষাঁড়ের মত চিল্লাচ্ছিস কেন?’

‘ আমি ষাঁড় ন‌ই মোটেও। কিন্তু তুই হতে পারিস।’

‘ বাদ দে, কি বলতে চেয়েছিস?’

ইরা আঙুল কামড়ে বলে,’ উমমম…. তুই কি এখন কাউকে জড়িয়ে ধরেছিলি?’

আচমকা এমন কথা শুনে অহনা ভয় পেয়ে যায়, বলল,’ তুই সব দেখেছিস?’

‘ হ্যাঁ! আমিতো দেখলাম।’

‘ কাউকে বলিস না। ও মনে হয় অদৃশ্য হতে ভুলে গেছে!’

‘ কিসব বলছিস? এটা বল, তুই কি স্বপ্ন দেখছিলি নাকি? মনে হয় স্বপ্নে কাউকে জড়িয়ে ধরেছিস।’

অহনা বুঝতে পারে ইরা কিছুই দেখেনি। এক গাল হেসে বলল,’ হ্যাঁ! আমিতো স্বপ্ন দেখছিলাম।’

‘ বাহ, চেঙ্গিস খানের ব‌উ। তুই আবার কাকে স্বপ্নএ দেখলি? নিশ্চয় জিজুকে?’

‘ হুম।’

‘ ইয়ায়া…আরিশ জিজু অনেক ভাগ্যবান, তুই তাকে স্বপ্নেও মনে করিস।’

‘ আমি কখন আরিশের কথা বললাম?’

‘ থাক, আর ভাব দেখাতে হবে না। আমি সব বুঝি।’

ইরার ফোনে কল আসে। কথা বলার জন্য ইরা চলে যায়। অহনা ইরাকে বোকা বানাতে পেরে খুব হাসে। মাহতিম অবুঝ হাসি দেখে তার দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে।

আরিশের নিজের কাছে কেমন চোর চোর ভাব লাগছে। হোক সেটা অহনার এলবাম, হোক সে কয়দিন পর বিয়ে করবে তাকে। তাই বলে তার এলবাম না বলে নিয়ে আসাটা মোটেও ঠিক করেনি সে। এলবামটার দিকে তাকালে তার প্রচুর রাগ হয়। কত শত আবেগ ঘন মুহুর্তের ছব বন্দি হয়ে আছে এই এলবামটিতে। অহনা আর মাহতিমের সম্পর্কের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তোলা সব ছবি রয়েছে‌। এসব দেখে আরিশ নিজের মাথার চুল খামচে ধরে। নিজেকে তার বোকা মনে হচ্ছে। কিন্তু তবুও সে অহনাকে ভুলতে পারছে না। এত এত ছবি অহনার অন্য পুরুষের সাথে। এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে আরিশের, কিন্তু অহনাকে দোষ দিচ্ছে না। মেয়েটাকে অসম্ভব ভালোবেসে ফেলেছে সে। মাহতিমের থেকে কোনো অংশে কম নয় সে, সেটাই বার বার ভাবছে। অহনা চাইলেই মাহতিমকে ছেড়ে তার কাছে আসতে পারে।

আরিশ আয়নার সামনে বসে। নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে। নিজেকে দেখে নিজেই কেমন সুনাম করছে,’ আমি কত সুন্দর। হাজার মেয়ের রাতের ঘুম হরণ করেছি। কিন্তু কেন অহনাকে পাব না আমি। রিজেক্ট করা মেয়েগুলোর অভিশাপ লেগেছে হয়তো। তারা আমাকে সুখে থাকতে দেবে না।’ চুলগুলোকে চিরুনি দিয়ে হালকা উপরে তুলে আবার বলল,’ কত সুন্দর চুল আমার। কবিগণ আমাকে নিয়ে কবিতা লিখতে পারেন। নিঃসন্দেহে মাহতিমের থেকে সুন্দর এবং স্মার্ট আমি। অহনা পারে না আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে। মাহতিম আর বেঁচে নেই, অহনার সেটা বোঝা উচিত। কেন তার জন্য অপেক্ষা করছে? আমাকে কি তার ভালো লাগেনা? এটা অন্যায় করা হচ্ছে আমার সাথে। আমি ভালোবাসি তোমায় অহনা, মাহতিমের থেকেও অনেক অনেক বেশি। তোমায় না পেলে আর কাউকেই বিয়ে করব না।’

আরিশ অনবরত নিজের সাথে কথা বলছে। এমন সময় কল আসে তার ফোনে। ফোনটা ধরেই বলল,’ জ্বী স্যার, আমি আসছি এক্ষুনি। জাস্ট এক ঘন্টা।’

আরিশ আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে দেখে হাসল,
ওহে হৃদয় হরণী, প্রেমের রানী,
পুরনো সময় ফুরিয়েছে,
মাহতিম নয় আমি তোমায় ভালোবাসি।
মাইন্ড ইট!

মাহতিম আশিশের সাথে দেখা করে অহনার সাথে হ‌ওয়া সব ঘটনা খুলে বলে। আশিশ তাকে ভারমুক্ত করার জন্য সান্ত্বনা দেয়। মাহতিম অনেকটা সময় কাটায় আশিশের সাথে। এখনো তারা জানে না গোপন শত্রু কে। আশিশ বলল,’ জয়ন্ত স্যারের সাথে আমাদের দেখা করা উচিত। ওনি‌ নিশ্চয় কোনো না কোনো উপায় বলে দেবেন আমাদের। তুই ওনাকে দেখা দিতে পারিস। একমাত্র অহনা, আমি আর জয়ন্ত স্যার ছাড়া কেউ তোর মনের কষ্ট বুঝতে পারবে না। তোর উচিত ওনার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।’

মাহতিম না করে দেয়। এই মুহূর্তে জয়ন্তকে সব জানানো মানে শত্রুকে আরো সতর্ক করে দেওয়া। আশিশ বলল,’ আরিশকে আমার সুবিধার মনে হয় না। তুই তার দিকে নজর রাখিস। হয়তো সে তোর বিষয়ে সব জানে। আর সেই মুখোশ পরিধেয় লোকটা হয়তো সেই ছিল। সে তো এমনিতেও অহনাকে ভালোবাসে, তাই চায়না তুই আর অহনা একসাথে থাকিস। এটা হতেও পারে। আমি আমার মেধা থেকে এটা যাচাই করলাম। তুই ভেবে দেখবি।’

মাহতিম আশিশের কথা কিছুটা মাথায় নেয়। তৎক্ষণাৎ আরিশের বাড়ি যাবে বলে ঠিক করে। চলেও যায়।
আরিশের পুরো ঘর তছনছ করতে থাকে মাহতিম। কিছুই খুঁজে পায় না। যদিও মাহতিমের বিশ্বাস হচ্ছিল না আরিশ এমন কিছু করতে পারে। একজন আইনের লোক কখনো এমনটা করতে পারে বলে মনে হয় না মাহতিমের। পরক্ষণেই অনুজের কথা মনে হয়। অনুজতো আইনের লোক ছিল। অনেক বড় পদ ছিল তার। সে চাইলেই নিজের দেশটাকে বাঁচাতে পারত। কিন্তু সেতো দেশকে বিক্রি করতে গেল। মাহতিম তাই সন্দেহ নিয়ে আরিশের ঘরটাকে দেখতে থাকে। হঠাৎ চোখ যায় ড্রেসিন টেবিলের উপর। অহনাকে দেওয়া এলবামটা এখানে দেখে খুব চমকে যায়। অহনাতো বাড়ি গিয়ে একবার‌ও খুলে দেখেনি এটা। সবকিছুতে আগ্রহ অনেক কম অহনার। মাহতিম এলবামটা নিয়ে ভাবতে থাকে, আরিশের কাছে কি করে এলো এটা? অহনা দিয়েছে, নাকি সে নিজে থেকে নিয়েছে? যেভাবেই নিয়ে থাকুক, ছবিগুলো কি দেখেছে? ছবি দেখলে নিশ্চয় এটা বুঝে গেছে অহনা আর মাহতিমের সম্পর্ক ছিল। তাহলে আরিশ কিছু বলল না কেন! মাহতিমের‌ও সন্দেহ প্রখর হয়। সোজা চলে যায় আশিশের কাছে।

আশিশ বলল,’ সে সব জানে। তাই এই এলবামে তার কিছু আসে যায় না। সে তাকেও খুব ভালো করে চেনে। আর অহনার ক্ষতি করতে চায়। সেই আসল অপরাধী।’

‘ হয়তো। তবে আর একটু দেখতে হবে বিষয়টা। আমি এই সামান্য এলবাম থেকেই তাকে দোষারোপ করতে পারি না‌। কেননা তাকে দেখে আমার তেমন মনে হয়নি। আমার মনে হয়েছে সে আমার প্রতিচ্ছবি। আমার মতোই তার ধ্যান ধারণা। সেও দেশকে খুব ভালোবাসে।’

‘ শয়’তানকে কখনো চেনা যায় না। তারা ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে থাকে। ভালোদের সাথে মিশে নিজেকে তাদের বন্ধু বানিয়ে নেয়। তারপর অনায়াসেই ছোবল মারে।’

কথাটা মাহতিমের ভালো লাগে। আশিশের দিকে কয়েক পল তাকিয়ে থেকেই বলল,’ আহির ক্লাসের সময় হয়ে গেছে‌। আমাকে যেতে হবে আর তাকে ডিস্টার্ভ করতে হবে। পুরনো রোলস্।’

‘ চালিয়ে যাও বস।’

আরিশ বারোটা নাগাদ পৌঁছে যায় প্রভাত রেস্টুরেন্টে। কিছু ফাইল সাথে নিয়েছে। জয়ন্ত কুমার আরো ত্রিশ মিনিট আগেই পৌঁছে গেছেন‌। এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন। সময়কে তিনি খুব গুরুত্ব দেন। সময় নষ্ট করা তার রোলস্ এর বাহিরে। কিন্তু আজ করছেন। কারো জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে তার ত্রিশ মিনিট নষ্ট হলো। বার বার ঘড়ির দিকে দেখছেন।

আরিশ এসেই সালাম দিল জয়ন্তকে। জয়ন্ত বলল,’ সিট ডাউন। তুমি ত্রিশ মিনিট সাঁইত্রিশ সেকেন্ড দেরি করেছ। সময়টা খুব মূল্যবান, সেখান থেকে এই সময়টা নষ্ট হয়ে গেল। জানি না কবে এই সময় আবার ফুরিয়ে আনতে পারব।’

‘ স্যরি স্যার। আপনি তো জানেন, গ্রাম থেকে এসেছি আমি।’

‘ ইটস্ ওকে। কাজের কথায় আসা যাক। আমি যে কাজটা দিয়েছিলাম সেটা কি হয়েছে?’

‘ জ্বী স্যার। অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছি আমি। আর কিছুটা বাকি। আশা রাখতে পারেন আর পনেরো দিনের মধ্যে কাজটা শেষ হয়ে যাবে আমার।’

‘ আমি কি তোমার গবেষণা দেখতে পারি?’

‘ সিউর স্যার!’

আরিশ সমস্ত ফাইল এগিয়ে দেয় জয়ন্তর দিকে। জয়ন্ত ফাইলগুলো দেখে। আরিশ মাহতিমের কিছু ছবি দেখায় জয়ন্তকে। কাজের ক্ষেত্রে জয়ন্ত কখনো বাইরের টপিক নিয়ে আলোচনা করতেন না। খুব গম্ভীর লোক তিনি। হঠাৎ মাহতিমের ছবি দেখে তার চোখজোড়া ভিজে আসে। সেটা লুকানোর চেষ্টা করে আরিশের থেকে। কিন্তু এড়াতে পারেনি। চশমাটা খুলে শান্ত হোন তিনি।

আরিশ শ্রদ্ধা জানায় মাহতিমকে উদ্দেশ্য করে। কখনো ভাবতে পারেনি এমন একজন লোকের জন্য জয়ন্ত চোখের পানি ফেলবেন। এমন গম্ভীর লোকটা যদি মাহতিমের জন্য কান্না করতে পারেন, তার স্বজনরা না জানি কিভাবে সহ্য করেছে।

জয়ন্ত বলল,’ আমি আসি এখন। তুমি তোমার কাজ শেষ করেই আমার সাথে দেখা করবে। পনেরো দিন পরেই কোর্টে দেখা হবে। আমি জানি তুমি আমাকে হতাশ করবে না। তোমরা উপর বিশ্বাস আছে আমার।’

‘ আমি বিশ্বাসের মর্যাদা দেওয়ার জন্য নিজের প্রাণ দিতেও প্রস্তুত। আপনার বিশ্বাসকে আরো বিশ্বাসযোগ্য করে তুলব ইনশা’আল্লাহ। ভরসা রাখুন এবং দোয়া করুন।’

‘ জয়ী হ‌ও।’

মাহতিম কাগজ কলম নিয়ে ভার্সিটির সিঁড়িতে বসে। আরিশের কাছে চিঠি লিখবে। আরিশকে কিছু কথা আগে থেকেই জানিয়ে দেবে বলে ঠিক করে মাহতিম…

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে