ছায়া মানব পর্ব-১+২+৩

0
2013

#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম
#পর্ব_১

অচেনা নাম্বার থেকে একটি মেসেজ,’ তোমার বয়ফ্রেন্ড আজ তোমাকে গনধর্ষ*ণ করতে যাচ্ছে। নিজেকে বাঁচাতে হলে বাড়ি থেকে বের হয়ো না।’

অহনা সাজগোজ করছিল বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাবে বলে। তখনি মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে উঠে মেসেজটি। সেটাকে উপেক্ষা করে আবারো সাজায় মনোনিবেশ করে। হয়তো কেউ দুষ্টামি করছে তার সাথে, সে ভেবেই তৈরি হয়ে নেয়।

বের হতেই আবার মোবাইলে মেসেজ আসে,’ তারা এগারো জন। গনধর্ষ*ণ থেকে নিজেকে বাঁচাতে এখনি সিদ্ধান্ত বদলাও। না হয় তোমার সম্মান নয় কেবল তুমিও বেঁচে ফিরতে পারবে না।’

অহনার রাগ হয় অচেনা সেই লোকের উপর, যে কিনা ভয় দেখাচ্ছে। মোবাইলটাকে সাইলেন্ট করে দেখা করতে যায় বয়ফ্রেন্ড অর্ণবের সাথে।

পার্কে পৌঁছাতেই অর্ণব বলল,’ চলো এক জায়গায় যাব।’

‘ কোথায়?’

‘ আমার সাথে চলো।’

অহনা কথা না বাড়িয়ে অর্ণবের সাথে চলতে থাকে। পৌঁছে যায় নিজের এলাকা থেকে কিছু দূরে একটি জঙ্গলে। সুনসান নীরবতায় ভয় পায় অহনা। অর্ণবের শার্ট খামচে ধরে বলে,’ এ তুমি কোথায় নিয়ে এলে আমায়?’

‘‌আর একটু বেবি। কিছুক্ষণ পর‌ই দেখতে পাবে আসল মজা।’

‘ এটাতো জঙ্গল। এখানে কি এমন করবে তুমি?‌ বড় কোনো সারপ্রাইজ কি আছে?’

‘ হ্যাঁ, গেলেই দেখবে। অনেক বড় সারপ্রাইজ।’

তারা পৌঁছে যায় একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে‌। চারিদিকে কেমন বিদঘুটে অন্ধকার। পঁচা গন্ধ আসছে অনেকটা। সিড়ি বেয়ে উপরে উঠল। উপরটা পরিপাটি তবে একখানা ভাঙা আয়না আর বিছানা ছাড়া আর কিছুই চোখে পরছে না। অহনা বলল,’ এখানে কি? কিছুতো নেই। আমরা এখানে কেন এলাম? আমার ভয় করছে অর্ণব। প্লীজ চলো বাড়ি চলে যাই।’

‘ একটু পর চমক দেখবে সবুর করো।’

দেখতে পেল একে একে দশজন তরুণ প্রবেশ করল। অহনার আচমকা অচেনা মেসেজের কথা মনে হয়। সেও বলেছিল এগারো জন লোক তাকে গনধ*র্ষণ করবে। বুকটা ধ্বক করে উঠল তার।
‘ অর্ণব, এরা কারা?’

‘ এরা আমার বন্ধু। মজা হবে আজ।’

‘আমি বাড়ি যাব। আর এক মুহূর্তও এখানে না। তুমি গেলে চলো না হয় আমি একা গেলাম।’

একজন লোক এগিয়ে আসে অহনার দিকে,’ কোথায় যাচ্ছ সোনা? তোমার জন্য‌ইতো আমরা এখানে এলাম। তুমি গেলে মজা করব কার সাথে?’

বলেই শয়*তানি হাসিতে ফেঁটে পড়ল তারা। অর্ণব‌ও হাসছে। নিজেকে খুব অসহায় মনে হতে লাগল অহনার। বার বার মনে আসছে অচেনা মানবের কথা। যদি তার কথা শুনে না আসত, তাহলে এতো কিছু ঘটত না।

অর্ণবসহ এগারো জন পুরুষ অহনার দিকে এগিয়ে আসছে। অহনা নিজের হাতের ফোনটার দিকে তাকায়। রাগের বশে অফ করে রেখেছিল। তারাতাড়ি অন করতেই অর্ণব তার হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে বিছানায় ছুড়ে মারে। পরক্ষণেই এগারোজন এগিয়ে আসে আরো কাছে। অহনাকে বিছানায় ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। অহনা পিঠের নিচে মোবাইলের অস্তিত্ব টের পায়। মোবাইল অন করতেই দেখতে পায় একটি মেসেজ,’ তোমার পেছনে, বিছানার পাশে একটি স্প্রে আছে। সবার মুখে স্প্রে করো। আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

অহনা কোনো কিছু না ভেবে আশেপাশে তাকায়। সত্যি সত্যি একটি স্প্রে দেখতে পায়। হাতে নিয়েই তাদের চোখে মুখে স্প্রে করে। তারাহুড়ো হয়ে ঘরটি থেকে বেরিয়ে যেতেই অর্ণব ওর হাত ধরে ফেলে,’ কোথায় যাচ্ছিস? তোকে ভোগ না করে এখান থেকে ছাড়বো না। পালাতে পারবে না।’

অহনা অর্ণবের হাতে কামড় বসায়। ব্যথার চোটে অর্ণব তাকে ছেড়ে দেয়। সিড়ি দিয়ে নামতেই আরেকজন ওর হাত টেনে ধরে। টেনে আবার উপরে নিয়ে যায়। ঠাসস করে একটা চড় বসিয়ে দেয়। অহনা ছিটকে পড়ে বিছানায়। চিৎকার করেও লাভ নেই এখানে। এই পরিত্যক্ত জায়গায় কেউ শুনবে না তার আর্তনাদ। পশুগলো পুনরায় ঝাঁপিয়ে পরতেই পুলিশ এসে হাজির হয়।
পুলিশ দেখে সবাই ভয়ে পালাতে থাকে। অর্ণবের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে,’ শা/লার পুলিশ খবর দিল কোন মা*?’

পুলিশ সবাইকে ধরে নেয়। অহনা বেঁচে যায়। একজন এস‌আই অহনার কাছে এসে বলল,’ ভাগ্য করে এমন হাজবেন্ড পেয়েছেন। আজকালকার হাজবেন্ড ওয়াইফের মনের মিল থাকে না কখনো। আপনার স্বামীতো অফিস থেকেই আমাদের কল করে বলল, তার নাকি আপনাকে মনে পড়ছে, কলটাও ধরছেন না। ওনার মনে হচ্ছিল আপনি বিপদে আছেন। আমাদের বলল, আপনাকে তারাতাড়ি উদ্ধার করতে। কিন্তু উনি আমাদের সাথে আসলেন না। বেষ্ট অফ লাক, এমন স্বামী পেয়েছেন আপনি। এখন আপনি চলে যান। আপনি নিরাপদ, আমাদের গাড়ি আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দেবে।’

অহনা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। মনে মনে ভাবতে থাকে। কে সেই ব্যক্তি, যে নিজেকে অহনার স্বামী পরিচয় দিল? কেন সে সাহায্য করছে? তাকে চিনল‌ই বা কি করে? অনেক প্রশ্ন মনে হতে থাকল।
অহনা ছুটে গেল সেই এস‌আই এর কাছে।
‘স্যার, আপনি কি সেই লোকের নাম্বার দিতে পারবেন, যে আপনাকে বলেছিল আমাকে সাহায্য করতে?’

ইন্সপেক্টর অবাক হয়,’ আপনার স্বামীর নাম্বার আপনার মনে নেই?’

অহনা আমতা আমতা করে বলল,’ আসলে সে নতুন সিম নিয়েছে। নাম্বারটা আমার মনে নেই। আপনি এখন দিলে উপকৃত হতাম। না হয় বাড়ি গিয়ে তাকে জানাবো কি করে?’

ইন্সপেক্টর নাম্বার দিয়ে দেয় অহনাকে। নিজেও কল করে সেই অপরিচিত লোককে। আশ্চর্য ব্যাপার! ফোন বন্ধ বলছে। কয়েকবার ট্রাই করেও কোনো উপায় হয় না।
ইন্সপেক্টর বললেন,’ বাড়ি গিয়ে ওনাকে খবর দিয়ে দেবেন। আমাদের এখানে কল লাগছে না।’

‘ জ্বী স্যার।’

অহনা বাড়ি গিয়েই দেখে এটা সেই নাম্বার, যে নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছিল। কল করে, কিন্তু বন্ধ বলছে। এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে রেখে দেয়। কিন্তু মনে খটকা রয়ে গেল।

অহনা বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই আবার মেসেজ আসে। ফোন ধরে দেখে সেই অজানা নাম্বার থেকে মেসেজ,’ দক্ষিণের জানালাটা বন্ধ করো। বাতাস ব‌ইছে খুব। ঠান্ডা লেগে যাবে।’

অহনা সাথে সাথেই নাম্বারটায় কল করে। বলতে না বলতেই আবার ফোন বন্ধ বলছে। অহনা তারাতাড়ি বাইরে যায়‌। চারিদিকে নিরবতা, কেউ নেই কোথাও। তাহলে সেই অপরিচিত লোক জানল কিভাবে তার জানালা খোলা? উত্তর ছাড়া হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খায় অহনার মাথায়।

বিকেলে উঠে ওয়াশরুমে গোসল করতে যেতেই আয়নায় দেখতে পায়…..

চলবে ইনশা’আল্লাহ…..

#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম

২.
বিকেলে উঠে ওয়াশরুমে গোসল করতে যেতেই আয়নায় দেখতে পায় একটি লেখা,’ ঘরের দরজা বন্ধ করে গোসল করতে আসো।’

অহনা তাকিয়ে দেখে, সত্যি, ঘরের দরজা বন্ধ না করেই সে গোসল করতে চলে এসেছে। মনে মনে সেই অদৃশ্য মানবকে ধন্যবাদ দেয়। পরক্ষণেই চমকে উঠে, সে অপরিচিত লোক কিভাবে জানতে পারল সে গোসল করছে? তার মানে সে তাকে দেখতে পাচ্ছে। গোসল না করেই বেড়িয়ে আসে অহনা।

ভয়ে ভয়ে বিছানায় এসে বসে। চারিদিকে তাকিয়ে দেখে কেউ আছে কিনা। না, কেউ নেই। সব স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। মোবাইলে টুং করে শব্দ হতেই চমকে উঠে‌। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে আরো একটি মেসেজ,’ ভয় পেয়ো না। আমি শুধু তোমায় অনুভব করি, পাশে থাকি, তাই বলে লজ্জা হরণ করব না। তুমি নিশ্চিন্তে শাওয়ার নিতে পারো।’

অহনা কল করে। কিন্তু আবারো নাম্বারটা বন্ধ বলছে। অহনা বিরক্তিতে মোবাইলটাকে খাটের উপর ছুঁড়ে ফেলে গোসল করতে যায়।

রাতে অহনার মোবাইলে কল করে তার বন্ধু হ্যারি। কল করে জানায় তারা সব বন্ধুরা মিলে কালকেই ট্যুরে যাবে। অহনা জানিয়ে দেয়, সে যাবে না। কল রেখে দেয়।

সাথে সাথে মোবাইলে একটা মেসেজ আসে,’ বান্দরবান অনেক সুন্দর একটা এলাকা, তোমার প্রিয় জায়গা,তাই যাও, মন ভালো থাকবে।’

অহনা অবাক হলো। হ্যারি তাকে ট্যুরের কথা বলেছে কিন্তু কোন জায়গা সেটা বলেনি। তাহলে অচেনা লোকটা জানল কি করে?‌ যাই হোক। এখন সে ঠিক করল, সে ট্যুরে যাবে। হ্যারিকে আবার কল করে বলে দেয়।

পরদিন সকালে দশটায় র‌ওনা দেবে, তাই আটটায় অহনা রেডি হতে যায়। সব গুছিয়ে নেয়। কিন্তু বিপত্তি হয় ড্রেস নিয়ে। কোনটা পড়ে যাবে সিলেক্ট করতে পারছে না। অনেকগুলো জামা সামনে রেখে গালে হাত দিয়ে ভাবছে অহনা। এমন সময় মোবাইলে মেসেজ আসে,’ নীলে তোমাকে নীল পরী লাগে। নীল জামাটা পড়ে যাও।’

অহনা কিছুক্ষণ ভাবল, তারপর ঠিক করল সে নীলটাই পড়বে। কিন্তু চেঞ্জ করবে কিভাবে? অদৃশ্য মানব যদি দেখে নেয়। সে তো বার বার মোবাইলে আসে বাস্তবে না। অহনা ভাবল, তারপর মোবাইলটা ড্রয়ারে রেখে দেয়, রাখার সময় মোবাইলে একটা ওড়না পেঁচিয়ে দেয়। মনে মনে বলল,’ ব্যস, এবার আর অদৃশ্য লোকটা আমাকে দেখতে পাবে না।’
নীল জামাটা পড়ে নেয়, সিল্কি চুলগুলো পিঠে ছড়িয়ে দেয়, ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক, এইটুকুই সেজে বেড়িয়ে পড়ে। একটু পর মনে হয় মোবাইলের কথা। ড্রয়ার থেকে মোবাইল বের করতেই দেখল মেসেজ এসেছে,’ আমি বললাম আমাকে ভয় পেয়ো না। আমি সর্বদা তোমার পাশেই থাকি, তুমি দেখতে পাও না।’

সবাই মিলে একটা মাইক্রো বাস নিয়েছে। ছয়জনের টার্গেট বান্দরবান। অহনা, হ্যারি, রুমি, ড্রেক, টিকু আর ইরা।
অহনার মোবাইলে মেসেজ আসে,’ ড্রেক থেকে দূরে থাকবে।’
অহনার রাগ হয় এবার। বন্ধুদের সে অনেক ভালো জানে। তাহলে অদৃশ্য লোকটা কেন দূরে থাকতে বলছে। কিন্তু তাকে কিভাবে জিজ্ঞেস করবে, কল করলেই বন্ধ বলবে। অহনার মাথায় বুদ্ধি আসে। সে ভাবে মেসেজ করলে ভালো হয়, যখন লোকটি মেসেজ করার জন্য তার মোবাইল অন করবে তখন মেসেজটা সেন্ড হয়ে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। একটি মেসেজ করল,’ আপনি কে?’

অনেকক্ষণ ধরে রিপ্লাইয়ের আশায় মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে র‌ইল। কোনো উত্তর পাচ্ছে না।
ড্রেক বলল,’ মোবাইলে কি দেখছিস? আমরা এখানে মজা করতে আসছি। এসব ভং চং চলবে না বলে দিলাম। এবারের গানটা তুই গাইবি।’

অগত্যা অহনা গান ধরল,’ এই সাগর পাড়ে আইসা আমার মাতাল মাতাল লাগে…….’

ড্রেক তার মাথায় চাপড় মেরে বলে,’ তুই কি এখন সাগর পাড়ে নাকি? অন্য গান বল।’

‘ আমি গান পারি না। তোর অন্য গান ভালো লাগলে তুই গা বসে বসে। আমার ইচ্ছা নেই।’

‘ তাহলে আসলি কেন? বাড়িতে বসে বসে আমাদের পোস্টে রিয়্যাক্ট কমেন্ট করলেই পারতি, হুদাই আমাদের মোমেন্টটা নষ্ট করলি।’

‘হ্যারি বলেছিল আমাকে। তুই এসব বলার কে‌?’

পাশ থেকে রুমি বলল,’ ঝগড়া থামা গেন্দার দল। তোদের জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে।’

‘ ঠিক আছে তাহলে তুই গান বল।’

‘ আমি একা না। সবাই মিলে।’

সবাই মিলে গান ধরল,
তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে
হৃদয়ের কোঠরে রাখব_
আর হৃদয়ের চোখ মেলে তাকিয়ে
সারাটি জীবন ভরে দেখব_
আমি নেই, নেই, নেইরে।।
যেন তোরি মাঝে হারিয়ে গেছি……

বান্দরবান এসেই তারা তাবু টানায়। রাতে তারা তুমুল পার্টি করে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে অহনা একচোট ঝগড়া করে নেয় হ্যারির সাথে। বিষয়বস্তু ছিল কে কাল সকালে তারাতাড়ি উঠতে পারবে!

দুটো বেড করা হলো। একটাতে ছেলেরা অন্যটাতে মেয়েরা। অহনার মা কল করল বাড়ি থেকে,
‘ কিরে মা, ক‌ই আছিস?’

‘ আমি একটু ঘুরতে এসেছি মা।’

‘ কোথায় ঘুরতে গেলি?’

‘ বন্ধুদের সাথে বান্দরবান।’

‘ হ্যাঁ, তোর বাবা বলেছিল তো। আজকাল কিছুই মনে থাকে না। বলছিলাম যে এবার ঘুরে এসে বাড়ি আসিস। আমার শরীরটা ভালো নেই, তোকে কাছে দেখতে চাই।’

‘ কি হয়েছে তোমার মা?’

‘ তেমন কিছু না। তোকে দেখতে ইচ্ছে করছে। এবার গেলিযে তো আটমাস হতে চলল।’

‘ আচ্ছা মা। আমি দুই দিন পরেই আসব। তুমি নিজের যত্ন নিও। বাবা কোথায়?’

‘ ঘুমাচ্ছে। কথা বলবি?’

‘ না, সকালে বলব। এখন আর বিরক্ত করব না।’

‘ খেয়েছিস?’

‘ হ্যাঁ মা। তুমি খেয়েছো?’

‘ হ্যাঁ, আচ্ছা তুই ঘুমিয়ে পড়।’

‘ গুড নাইট মা। লাভ ইউ।’

অহনা কল রেখে দিতেই মেসেজ আসে‌,’ রাতে সাবধানে থেকো, একদম ঘুমিয়ে পড়বে না। কেউ আসছে…….’

চলবে ইনশা’আল্লাহ…..

#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম

৩.
মেসেজটা দেখে অহনা ভয় পেয়ে যায়। রাতে ওর সাথে কি ঘটতে চলেছে বুঝতে পারে না। সজাগ হয়ে চোখ বন্ধ করে র‌ইল।

রাত গভীর হতেই ড্রেক উঠে পড়ে। মোবাইলের ফ্লাশ অন করে। সবাই ঘুমিয়ে আছে। অহনাও ঘুমিয়ে পড়েছে। মেসেজের কথা তার মনে নেই। ড্রেক অহনাকে শনাক্ত করে তার শিওরে যায়। কামনায় তার দৃষ্টি স্থির, জিভ লকলক করছে, যেন লোভনীয় কোনো খাবার দেখছে সে। হালকা আলোয় অহনাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। আর এক মুহূর্তও সময় নষ্ট না করে ড্রেক তার গালে হাত স্পর্শ করায়। মুহুর্তেই শিহরিত হয় অহনা।
অহনার মুখে লেপ্টে থাকা চুলগুলো আলতো করে সরিয়ে দেয় ড্রেক। হাতদুটো মিশিয়ে নিতেই অহনা জেগে উঠে। ড্রেক সাথে সাথেই মুখ চেপে ধরে তার। গোঙানির শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না।

চোখের পলক না পড়তেই একটা কালো ছায়া এগিয়ে আসে ওদের দিকে। অহনা এক হাত দিয়ে কালো ছায়াটিকে নির্দেশ করে। ছায়াটি খুব কাছে আসতেই ড্রেকের চোখ পড়ে। সে দিকে আর এক মুহূর্তও সময় নষ্ট না করে ড্রেক তার নিজস্ব কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ছায়াটি কাছে এসেই ড্রেকের কলার চেপে ধরে। ড্রেক অস্পষ্ট উচ্চারণ করে,’ কে রে তুই?’

‘ তোর জম।’
বলেই ছায়া মানবটি তাকে শুন্যে ছুঁড়ে মারে। ড্রেক তাল সামলাতে না পেরে ছিটকে বাইরে গিয়ে পড়ে। তাঁবুর প্রতিটি লোক সজাগ হয়ে যায়। এমন দৃশ্য দেখতে পাবে কেউ তা কল্পনা করেনি। রুমি, ইরা ভয়ে অহনার পেছনে এসে দাঁড়ায়।

টিকু আর হ্যারি বাইরে যায় ড্রেককে দেখতে। ছায়া মানবের রাগ যেন ঝরে পড়ছে। সকল রাগ দেখাচ্ছে ড্রেকের উপর। পুনরায় তাঁর গলা চেপে ধরে। ড্রেকের চোখ দুটো কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। জিব বেরিয়ে আসে, চোখ উল্টে গেছে। টিকু, হ্যারি কেউ সাহস পাচ্ছে না তার সামনে যাওয়ার। এক মিনিটের মাথায় ড্রেকের প্রাণ বেরিয়ে যায়। মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দেয় ড্রেককে।

অহনা বাইরে বেরিয়ে আসে। কিন্তু দেরি হ‌‌ওয়ার দরুন ড্রেককে বাঁচাতে পারল না। আকস্মিক ঘটনায় সবাই হতভম্ব। সবাই ভয়ে তাঁবুতে ফিরে যায়। একজন অন্যজনকে শক্ত করে ধরে ভেতরে থাকে।
ছায়া মানবটি দাঁড়িয়ে আছে ড্রেকের উল্টানো চোখের দিকে তাকিয়ে। ভয়ে অহনার পুরো শরীর ঘামতে শুরু করে। অনবরত ঢোক গিলছে। ভয়ে ভয়ে কদম বাড়ায়, পুনরায় এক কদম পিছিয়ে আসে। পরক্ষণেই সাহস নিয়ে ছায়াটির সামনে এসে দাঁড়ায়।
‘ কে তুমি?’

ছায়া মানব অহনার দিকে তাকায়। তার চোখ জ্বলজ্বল করছিল। অহনা তার চেহারা পুরোপুরি দেখতে পায় না। শুধু একটা শরীরের কাঠামো আর আগুন জ্বলা চোখ ছাড়া আর কিছুই নজরে আসছে না। ভয় আরো বেড়ে যায়। নিজেকে আর সামলে রাখতে পারছে না সে।
‘ কে তুমি? উত্তর দিচ্ছো না কেন?’

আবারো নিস্তব্ধ। অহনা হাত বাড়িয়ে দেয় তাকে ছোঁয়ার জন্য। হাতটি ছায়া মানবের একদম কাছে আনতেই সে উধাও হয়ে যায়। অহনা হাতড়ে খুঁজতে থাকে কিন্তু পায় না। কেমন ঘোরের মতো কাজ করে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে।

সকালে অহনার জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে বাইরে মাটিতে আবিষ্কার করে। উঠে গিয়ে তাঁবুতে যায়। দেখল সবাই গোছগাছ করছে। অহনা জিজ্ঞেস করল,’ কিরে কোথায় যাচ্ছিস সবাই?’

টিকু ওর দিকে ঘৃণার চোখে তাকায়,’ তুই কালো জাদু জানিস তাই না? আমাদের‌ও মেরে দিবি এখানে থাকলে, তাই আমরা চলে যাচ্ছি। থাকব না এখানে আর এক মুহূর্তও।’

‘ আমি কালো জাদু জানি না। বিশ্বাস কর আমাকে, কাল রাতে যা হয়েছিল তা আমার আগে জানা ছিল না।’

হ্যারি তেড়ে আসে,’ ড্রেককে মেরে দিলি, এবার কি আমাদের‌ও মারবি নাকি? একদম কথা বলবি না আমাদের সাথে। আজ থেকে তোর আর আমাদের রাস্তা আলাদা। আমরা আর কেউ বন্ধু ন‌ই। আমাদের থেকে দূরে থাক, এটাই ভালো হবে।’

অহনা তেজ নিয়ে বলল,’ ড্রেক রাতে আমার গায়ে হাত দিয়েছিল। ঘুমন্ত পেয়ে সুযোগ নিচ্ছিল। তাই কেউ সাহায্য করতে এসেছিল, এখানে আমার দোষ কি?’

কেউ আর কোনো কথা বলল না। রুমি এতোক্ষণে মুখ খুলল,’ ড্রেকতো আগেও তোকে পেতে চেয়েছে। কাল একটু বেশি করে ফেলেছিল, তাই বলে তুই তাকে মেরে দিবি?’

অহনা কাঠকাঠ গলায় বলে,’ আর কতবার বলব আমি মারি নি।’

‘ বা* মেয়েখোর, শা* ড্রেকের বাচ্চা মেয়ে দেখলেই খেতে চায়। এবার নিজের প্রাণটাও দিল। শা* ব্রিটিশের দালাল মেয়ে দেখলে হুঁশ থাকে না। জানে না মেয়েগুলা ভয়ঙ্কর। মরল শা* মা*।’ বলল টিকু।

সবাই গোছগাছ শেষে র‌ওনা দেয়। গাড়িতে উঠতেই অহনা আসে,
‘ আমিও রেডি, চল চলে যাই, এখানে সব অস্বাভাবিক।’

হ্যারি গলা বাড়িয়ে বলে,’ তোকে নিয়ে গিয়ে মরব নাকি? কি জানি পরের শিকার কাকে করিস। আমরা গেলাম।’

সবাই অহনাকে রেখে চলে যায়। অহনা একা একা নরম ঘাসে বসে থাকে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে না। মোবাইলটাকে আছাড় মারে। কাঁদতে থাকে। কিছুক্ষণ পর উঠেই মোবাইলটাকে হাতে নেয়, এই মুহূর্তে এটাই সম্বল। হারিয়ে গেলে বাড়িতে যেতে পারবে না। রাস্তাঘাট চেনা নেই তার। হাটতে থাকে বাঁকা কাদামাটির রাস্তা ধরে। পাশেই ঝর্ণা দেখতে পায়। জলপ্রপাত দেখেই আনন্দ হয় তার। ঝর্ণার পানিতে গা ডুবিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর শান্ত হয়ে পোশাক পরিবর্তন করে নেয়। রাস্তার পাশে অসংখ্য ছোট ছোট দোকান। সেখনা থেকে কিছুটা গুড় আর পিঠা নিয়ে নেয়। বাহারী কয়েক প্রকার পিঠা খেয়ে আবারো হাটতৈ শুরু করে। কোথা থেকে কোথায় যাবে তা তার জানা নেই। এক পর্যায়ে রাস্তার ধারে বসে পড়ে। হঠাৎ মনে পড়ে বন্ধুদের কথা। তাকে নিয়ে যায় নি বলে ছায়া মানব যদি আবার তাদের উপর রেগে যায়? যদি ক্ষতি করে বসে?
ঠিক তাই হলো। সাথে সাথে অহনার ফোনে কল আসে।
‘ হ্যালো, হ্যালো অহনা… শুনছিস?’

ইরার কন্ঠ এমন ভয়ানক দেখে অহনা আঁতকে উঠে,’ কি হয়েছে তোর? বল আমাকে? কথা বল!’

‘ ঐ… এ ছায়াটা…..’ইরা বলার সুযোগ পেল না। তার আগেই গাড়িটিতে বিস্ফোরণ হলো।

অহনা চিৎকার দিয়ে উঠে।
‘ ঘেন্না করি তোমাকে ছায়া মানব। কখনো দেখতে চাই না তোমাকে। আর কখনো আমার সামনে আসলেই তোমাকে নিজের হাতে খুন করব।’ ছায়া মানবের প্রতি তার রাগ ঝরে পড়ে। বন্ধুরা একটু ভুল করে ফেলেছে বলে এমন শাস্তি কেন দিল? মনে মনে সেই ছায়া মানবকে মেরে ফেলার ছক কষতে থাকে মনে।

সন্ধ্যা নেমে এলো। চারিদিকে অন্ধকার। একলা একটা মেয়ে মানুষ কি করবে, কোথায় যাবে, বুঝতে পারছে না।
হঠাৎ মনে হলো দূর থেকে কেউ তাকে পর্যবেক্ষণ করছে। এখানে পদে পদে বিপদ, একা থাকায় আরো বেশি। অহনা ভয়ে তটস্থ হয়ে যায়। বাড়িতে অসুস্থ বাবা-মা ছাড়া কেউ নেই। কাকে জানাবে? কি করে বাড়ি যাবে?
আস্তে আস্তে গাছের আড়াল থেকে বেড়িয়ে এলো পাঁচজন যুবক। কামনার দৃষ্টিতে পরখ করে নেয় অহনাকে। অহনার খুব কাছে এসে দাঁড়ায়। বিশ্রী হাসিতে ফেটে পড়ে তারা। তাদের চোখে মুখে অহনার উজ্জ্বল মুখশ্রী ফুটে ওঠে।
তারা এগিয়ে আসতে থাকে অহনার দিকে…….

চলবে ইনশা’আল্লাহ….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে