#ছায়াতরু
#পর্ব_০৮ (শেষ পর্ব)
‘ আবার এলো যে সন্ধ্যা,
শুধু দুজনে..
চলোনা ঘুরে আসি, অজানাতে,
যেখানে নদী এসে থেমে গেছে। ’
গিটার আর ভায়োলিনের সুরের তালে তালে, সন্ধ্যা আকাশের নিচে ছাদের ওপর বসে গলা ছেড়ে গান গাইছে স্মরণদের বন্ধুমহল। গিটার চলনসই হলেও ভায়োলিনটা নকিবের অতিরঞ্জিত উদাহরণ হিসেবে ব্যবহৃত মাত্র। সে পারে না তো পিয়ানো সহ নিয়ে আসে।
এদিকে একেকজন গলা ছেড়ে গান গাইছে। হোক কণ্ঠ সুন্দর বা ফাঁটা বাশ। তবুও এতজনের বাহারি সুরের আলিঙ্গনে গানটির আবহ–ই অন্যরকম।
সুর যতই সুমধুর হোক না কেন সেটা বাহারাজের বাঁদুরে কানে কোনো হাঁসের প্যাঁক প্যাঁক আওয়াজের মতোই লাগছে। যেন সন্ধ্যাবেলার গৃহপালিত কতকগুলো হাস একত্রিত হয়ে নিবাসে ফিরে যাওয়ার জন্য এমন শব্দ তৈরি করছে।
“ এরা গান গাইছে ভালো কথা, কিন্তু এত জোরে কেন? আজই প্রথম এই বাসায় উঠলো। আর আজই এমন?’’
অভ্রর কথা শুনে শায়ন ফোনে গেইম খেলতে খেলতে একটা হাসি দিয়ে বললো,“ যেই ভয়েজটা শুনে মনে হবে কোনো কুকুর ঘেউ ঘেউ করছে ওটাই আমার ছোট ভাই’’
অভ্র ফিক করে হেসে উঠলো,“ নয়ন যদি জানতে পারে, তোর হাল ঠিক রাখবে না। তুই নয়নকে ভয় পাস এটা আমরাও জানি।’’
শায়ন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,“ কি বলতে চাস তুই?’’
বাহারাজ উঠে দাঁড়ালো। কাভার্ড থেকে একটা শার্ট বের করে গায়ের শার্ট-টা খুলে বের করা শার্টটা পড়লো।রিয়াদ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো,“ কোথায় যাবি?’’
“ বাহিরে। দরকার আছে। ’’
রিয়াদও উঠে দাঁড়ালো,“ আমিও যাবো চল। তার আগে দাঁড়া উপরে গিয়ে একটু দেখে আসি।’’
বাহারাজ রিয়াদের দিকে তাকালো। রিয়াদ বোকা বোকা হেসে মত পালটে বললো,“ মজা করছিলাম। তোরা মজাও বুঝিস না।’’
স্মরণ পানি আনার জন্য ছাদ থেকে রুমে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো। আর মাত্র ছয় ধাপ সিড়ি বাকি। এমন সময় পা পিচলে গেলো। স্মরণের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো আর একটা চিৎকার দিয়ে চোখ বুজে নিলো। মস্তিষ্ক জানানো দিলো ‘ বিদায় স্মরণ ’। তবে শয়তান কি এত তাড়াতাড়ি মরে? বাহারাজও বাইরে যাওয়ার জন্য তখনই বের হলো রুম থেকে। স্মরণকে এভাবে দেখে দাতে দাত চেপে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে মেয়েটাকে ধরলো। এদিকে নিজের ভার কারও ওপর পড়েছে বুঝতে পেরে চোখ খুলে তাকালো স্মরণ।
বাহারাজ এক হাত দিয়ে স্মরণের কোমরে নিজের শক্তপোক্ত হাত দিয়ে ধরলো। আর অন্য এক হাত দিয়ে স্মরণের হাত ধরলো। দুজনের মুখ খুব কাছাকাছি। একজনের নিশ্বাস একজনের ওপর আছড়ে পড়ছে। বাহারাজ স্মরণের দিকে নিবিড় দৃষ্টে তাকালেও চোখে মুখে বিরক্ত ভাবটা বজায় রাখলো। এদিকে স্মরণ বাহারাজকে এতো কাছে দেখে অস্বস্তিবোধ করলো। লজ্জায় গাঁট হয়ে এলো দেহ। মুখ ফুঁটে অস্ফুট স্বরে আওয়াজ বের হলো। চোখ নামিয়ে নিতে গিয়েও নিলো না বাহারাজের হালকা লালচে চোখের দিকে নজর পড়তেই। চোখের মণির লালচে আভায় লেপ্টে থাকা ক্ষুদ্র বিরক্তি আর মুগ্ধতা স্মরণের জন্যই মনে হলো স্মরণের। অনুভুতিরা দাবানলের মতো সমস্ত জায়গায় শিহরণ বইয়ে দিলো। এদিকে বাহারাজের চোখ গিয়ে পড়লো আবার স্মরণের হালকা লাল রঙা ঠোঁটের ওপর। পুরুষ মন পুলকিত হলো। তবে মস্তিষ্ক ভর্ৎসনা করে উঠলো। দমিয়ে দিলো বাহারাজকে। মুহুর্তক্ষণ একদম ভিন্ন। পরিবেশ শান্ত। শুধু শ্বাস প্রশ্বাসের আওয়াজ জড়ালো। তৎক্ষনাৎ আবার স্মরণ নিজেকে বাহারাজের বাহুডোর হতে বেরোনোর হালকা অপচেষ্টা চালালো। বাহারাজ ছাড়বে এমন সময় কেউ বললো,“ এবার তো অন্তত ছেড়ে দে।’’
রিয়াদের কথা শুনে বাহারাজ হুট করেই ছেড়ে দিলো স্মরণকে। ছেড়ে দিতেই স্মরণ ধপাস করে ফ্লোরে পড়ে গেলো। আর্তনাদ করে উঠলো স্মরণ। রিয়াদ দ্রুত এলো স্মরণকে ধরতে। বাহারাজ তাকিয়ে দেখলো। রিয়াদ স্মরণের হাত ধরতে যাবে এমন সময় স্মরণ থামিয়ে দিলো আর বললো,“ দরকার নেই।’’
থেমে গেলো রিয়াদ। স্মরণ ফ্লোরে এক হাত ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। বাহারাজের রুমের দরজার দিকে চোখ গেলো। অভ্র, শায়ন মুখ টিপে হাসছে। আর বাহারাজ! সে কেমন নিশ্চল চোখে স্মরণেরই দিকে তাকিয়ে আছে। স্মরণ তাকাতেই দৃষ্টি সড়িয়ে নিলো। স্মরণ ধুপধাপ পা ফেলে নিজের রুমের দরজার সামনে গিয়ে তালা খুলে ভেতরে ঢুকে ধরাম করে দরজা লাগিয়ে দিলো। নোমান সাহেব থাকলে আর্তনাদ করে উঠতেন।
বাহারাজ পাগল বলে নিচে নেমে গেলো। রিয়াদ বাহারাজের যাওয়া দেখলো। তার মন খচখচ করে উঠলো। তবে সেসবে খুব একটা গুরুত্ব না দিয়ে নিজেও নেমে গেলো। অভ্র শায়ন দরজায় তালা লাগিয়ে নিজেরাও গেলো পিছু পিছু।
স্মরণ দরজা খুলে আবারও বের হলো। তার মাথা গরম হয়ে আছে এখন। সাহায্য করবি তো আবার আঘাতের কি দরকার ছিলো। আবারও ছাদে উঠে গেলো সে। তুষার জিজ্ঞাসা করলো,“ এতো দেরি হলো যে?’’
“ তোর পানি খেতে মন চায়, তুই গিয়ে নিয়ে আসবি। আমি আর পারবোনা। ’’
স্মরণের এমন রাগ বুঝলো না কেউ। নয়ন জানতে চাইলো,“ মাথা গরম যে?’’
স্মরণ মুখ ফুলিয়ে বললো,“ তোর ভাইয়ের ওই বন্ধুর মতো খারাপ লোক আর পৃথিবীতেই নেই।’’
নয়ন একবার নকিবের দিকে তারপর তুষারের দিকে তাকালো। আবারও স্মরণের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,“ কেন আবার কি হয়েছে?’’
“ আচ্ছা আগে এটা বল, আমি চিৎকার করেছি তোরা শুনতে পাস নি?’’
নকিব বললো,“ আমি ভায়োলিন বাজাচ্ছিলাম। শুনবো কিভাবে? সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো আমার বাজানো সুর শুনছিলো।’’
স্মরণ মুখ ঘুরিয়ে বললো,“ তাহলে বাদ দে।’’
নয়ন হেসে বললো,“ আমি ভাবছি তুই এই বাসায় থাকবি কিভাবে? বাহারাজ ভাইয়ের সাথে তোর সাপে নেউলে সম্পর্ক।’’
স্মরণ চোখ মেরে বললো,“ তুই-ই এনেছিস। ঝামেলা হলে আগে তোর ভয়ানক ব্যবস্থা করবো।’’
এবার জিনিয়া বলে উঠলো,“ আরেহ আমাদের স্মরণ কি ঝগড়ুটে নাকি? যে ঝগড়া হবে?’’
নকিব তাচ্ছিল্য করে বললো,“ ওর ঝগড়ার তেজ এতোই যে স্যাটেলাইট পর্যন্ত পৌঁছে স্যাটেলাইটও খারাপ হয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে।’’
“ তোকে আগে ড্যামেজ করবো। তারপর স্যাটেলাইটের কথা ভাববো।’’ স্মরণ জুস খেতে খেতে কথাটা বললো।
সিমানী বললো,“ নকিব এমনিতেই ড্যামেজ পোলা।’’
নকিব সিমানীর মাথায় গাট্টা মেরে বললো,“ তুই কথা কম বলবি।’’
“ আমি বেশি বলবো।’’
তাদের শুরু হলো। এদিকে ছাদের কার্ণিশ ঘেষে বসায় স্মরণের চোখ গেলো নিচে। বাহারাজরা দাঁড়িয়ে আছে। নোমান সাহেবের সাথে কোনো বিষয়ে হয়তো আলোচনা করছে। হঠাৎ বাহারাজও ছাদের দিকে তাকালো। স্মরণ আর বাহারাজের চোখাচোখি হলো।
~ প্রথম পরিচ্ছেদের সমাপ্তি
→ গল্প শেষ করে দিলাম কারণ আমার সামনে পরীক্ষা। পরীক্ষার জন্য গল্পে মন বসাতে পারছি না। তারওপর ভর্তি এডমিশনের পরীক্ষা। এই জার্নিতে আপাতত কিছুদিন অফলাইন থাকবো। গল্পটা এমনিতেও যেভাবে লিখতে চাইছি সেভাবে ঠিক হচ্ছে না। পরীক্ষা শেষ হলে ফিরবো আবারও স্মরণ বাহারাজকে নিয়ে। মাঝের না থাকার সময়টা হয়তো একটু বেশি হবে। কারণ জানুয়ারির পর থেকেই তো সব পাব্লিকে পরীক্ষা শুরু হবে। তাই অনেকদিন দেখা সাক্ষাৎ হবে না সবার সাথে। তবে খুব দ্রুত ফেরার চেষ্টা করবো। আর বাহারি স্বপ্ন আজ কিংবা কাল শেষ পর্ব দেবো। ফিরে এসে দুটো নিয়েই পুরো উদ্যমে লেখা শুরু করবো।এমনিতে যদি লেখতে থাকি মাঝে দশ বারোদিন গ্যাপ রেখে রেখে তাহলে কাহিনী এলোমেলো হয়ে যাবে।ভালো থাকবেন সবাই।আর একটা কথা— স্মরণ বাহারাজের কেমিস্ট্রি জমজমাট হবে💚🫶
– জুনানী চাকমা