ছায়াতরু পর্ব-০৩

0
88

#ছায়াতরু
#পর্ব_৩

রাতে চেঁচামেচির আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেলো স্মরণের। স্মরণের শরীর খিঁচুনি দিয়ে উঠলো। শরীরের অতি উষ্ণ তাপমাত্রার অনুভুতিটাই বলে দিচ্ছে গায়ে জ্বর উঠেছে। তীব্র মাথা ব্যথায় ছিড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। বিকেলের দিকে বাসায় আসার পরপরই শরীরটা অসাড় হয়ে এসেছিলো বিধায় বাবাকে কথাটা বলে রুমে এসে শুয়ে পড়েছিলো। নয়তো তামাশা দেখাতো স্মরণ।

তবে এই মাঝরাতে এতো কিসের চেঁচামেচি সেটা জ্বরের ঘোরে বুঝতে পারলো না। মাথাটা যদি কেউ টিপে দিতো তবে হয়তো কিছুটা ভালো লাগতো স্মরণের। মা বেঁচে থাকলে হয়তো সেই ভালো লাগার সুযোগটা হতো। তবে মা তো বেঁচে নেই। মায়ের অনুপস্থিতিতে একজন সন্তানের কষ্ট কেমন সেটা শুধুমাত্র সেই সন্তানই বুঝতে পারবে।

স্মরণ দুহাতে মাথাটা ধরে উঠে বসলো। মাথা থেকে গরম ধোঁয়া বের হওয়ার জোগাড়। এদিকে বাইরে চেঁচামেচির আওয়াজ ততোটাই জড়ালো হচ্ছে। শব্দগুলোর প্রখরতা কানে এসে ধরা দিচ্ছে অবলীলায়। স্মরণ এবার কোনোভাবে উঠে দাঁড়ালো তবে মনে হলো এই মুহুর্তেই পড়ে যাবে সে। শরীরের দূর্বলতা জানান দিলো বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না।

এদিকে বসার ঘরে অনিল সাহেব মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। আর সেই বিকেল থেকেই রাবিনা বেগম চেঁচামেচি করছেন। তবে রাতে এসে সেটা আরও বেশি হলো কারণ রাহা নাকি আজ মন খারাপের জন্য বাড়িতে আসে নি। অনিল সাহেব রাবিনা বেগমকে শুধু এটুকুই জিজ্ঞাসা করেছিলেন একটু আগে রাহার কি কারও সাথে প্রেম করে কিনা? এটা অবশ্য জিজ্ঞাসা করেছিলেন রাহা কখনও রাবিনা বেগমকে নিজের পছন্দের ব্যাপারে বলেছে নাকি সেটা জানার জন্য। অথচ রাবিনা বেগম রেগে এখন চেঁচামেচি করছেন।

“ তোমার গুণধর মেয়ে এমন মুখ বেচে প্রেম করতে পারে আমার মেয়ে নয়। যা তা কথা আমার মেয়ের নামে একদমই জিজ্ঞাসা করবে না আমায় বলে দিলাম। ’’

এরপরই আবার চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন,“ আবার বিয়ে করবে না বলছে মেয়ে, তার বাপও সায় দিলো সে কথায়? কেন তোমার মেয়ে কোন নাগর জুটিয়েছে যে তার জন্য বিয়ে করতে পারছে না এত ভালো একটা সম্বন্ধ হাত ছাড়া করে দিচ্ছে? বাপের হোটেলে বসে বসে খাবে আর নাগরের সাথে সারাদিন হৈ-হুল্লোড় করে ঘুরে বেড়াবে সেজন্য তাই না?’’

এবার রেগে গেলেন অনিল সাহেব। রুষ্ট স্বরে বললেন,“ আর একটাও বাজে কথা বলবে না রাবিনা। আমার মেয়ে কেমন সেটা আমি জানি। ওর বিয়ে আমি কখনোই হিমেলের সাথে দেবো না। ’’

অনিল সাহেব লজ্জায়, আড়ষ্টতায় বলতেও পারছেন না যে রাহা আর হিমেলের হয়তোবা প্রেমের সম্পর্ক আছে। কিভাবে বলবেন তিনি বললেও তো রাবিনা বিশ্বাস করবেন না।

এদিকে রাবিনা আরও বেশি ক্ষেপে গেলেন। ফুঁসে উঠে চেঁচিয়ে বললেন,“ মেয়েকে যে কি শিক্ষা দিছো সেইটা তো দেখতেই পারছি। মাও হয়তোবা এমনই আছিলো এইজন্য উপরওয়ালা উঠাই নিছে।’’

সায়নিকার ব্যাপারে এমন মন্তব্যে অনিল সাহেব এতটাই রেগে গেলেন যে ধমকে বললেন,“ মুখ সামলে কথা বলো রাবিনা। তুমি আর একটা কথা বললে আমি হাত তুলতে বাধ্য হবো।’’

“ হ্যা তাই–তো, বাপে হাত তুলবো আর মেয়ে মুখে মুখে তর্ক করবো।’’

“ তর্ক করি আর যাই–ই করি, অন্তত আপনার মেয়ের মতো চরিত্রহীনা তো নই।’’ কণ্ঠস্বর নরম তবে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ পেলো স্মরণের কণ্ঠে।

ঢুলুঢুলু অবস্থায় দরজার সামনে থেকে কথাটা বললো স্মরণ। চোখদুটো একদম লাল তার। শুধু চোখই নয়। মুখটাও লাল দেখালো। রাগে এমনটা হয়েছে নাকি জ্বরের কারণে সেটা বোঝা না গেলেও এটা বোঝা গেলো রাবিনা বেগমের সমস্ত কথাই শুনেছে স্মরণ। শরীরের দূর্বলতাকে উপেক্ষা করেই উঠে এসেছিলো স্মরণ চেঁচামেচি ঠিক কোন কারণে হচ্ছে সেই মুহুর্ত দেখার জন্য। এসে যে এমন ভয়ানক মধুর বাণী শুনবে সেটা ধারণার বাইরে ছিলো। জ্বরের ঘোরেও শরীরের নিউরনগুলো খুব জ্বলে উঠলো রাবিনাকে কড়া কথা শোনানোর জন্য, যখন রাবিনা বেগম স্মরণের মা–কে নিয়ে বাজে মন্তব্য করছিলো। স্মরণ হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে এই মহিলার জ্ঞান, বুদ্ধি, মানসিকতার কমতি ভারী প্রকট।

মেয়ের বিপক্ষে আজ কথা বলার সাহস পেলেন না অনিল সাহেব। এদিকে স্মরণের মুখে নিজের মেয়ের ব্যাপারে এমন বাজে কথাটা যেন রাবিনা বেগমের কানে আগুন ধরিয়ে দিলো। তেড়ে গেলেন স্মরণের দিকে। এমন কিছুটা আঁচ করতে পেরে অনিল সাহেব থামালেন রাবিনাকে। রাবিনা হুংকার ছুড়লেন স্মরণের দিকে,“ মুখ সামলে কথা বল হারাম–জাদি। কার ব্যাপারে কি বলছিস? তুই আমার মেয়ের নখেরও যোগ্য নোস।’’

স্মরণের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,“ ঠিকই বলেছেন। আমি কি আর আপনার মেয়ের মতো ওমন চরিত্রহীনা নাকি।’’

কথাটা বলে রাবিনা বেগমকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললো,“ বাবা জানিনা বিশ্বাস করবে কিনা? অবশ্য আমার কাছে প্রমাণও আছে তবে তুমি বিশ্বাস করবে কিনা সেটা তোমার ব্যাপার।’’

মাথা ঘুরে উঠলো স্মরণের। মাথায় এক হাত দিয়ে ধরে কোনোরকম আওড়ালো,“ রাহা আর হিমেলের মাঝে অবৈধ সম্পর্ক আছে।’’

রাবিনা বেগম আবারও ধমকে বললেন,“ চুপ কর হারাম–জাদি। আর একটা বাজে কথা বললে তোর জিহ্ব কেটে ছিড়ে ফেলবো বলে দিলাম৷ বিয়ে করতে মন চাইছে না তাই এখন এসব অপবিত্র কথা বলছিস তাই না?’’

স্মরণ পা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ফোন হাতে করে এগিয়ে এলো বাবার দিকে। অনিল সাহেব তখনও রাবিনা বেগমকে আটকে রেখেছেন। চোখ বুজে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ফোনের লক খুলে গ্যালারিতে ঢুকে গ্যালারির প্রথম ছবিটাই তুলে ধরলো অনিল সাহেবের সামনে। রাবিনা বেগমও দেখলেন। আর চমকে গেলেন।

রাহা আর হিমেল নগ্ন অবস্থায় চাদরে মুড়ে চমকে তাকিয়ে আছে। ভাবটা এমন তারাও হয়তোবা ছবিটি তোলার সময় চমকে গিয়েছিলো। অনিল সাহেব একটু দেখেই আর দেখতে পারলেন না। চোখ নামিয়ে নিলেন। তাহলে উনি আজ যেসময় দুজনকে দেখেছিলেন ব্যাপারটা তখনকার। এদিকে রাবিনা বেগমর মেয়ের এমন অবস্থা দেখে চক্ষুস্থির হলো। কথা বলতেও ভুলে গেলেন কিয়ৎক্ষণ।

স্মরণ পাশে থাকা সোফায় ধপ করে বসে পড়লো। মাথায় হাত দিলো আর অতিকষ্টে বললো,“ বাবা আশা করি বুঝতে পারছো।’’
থামলো স্মরণ এরপর কথার পিঠে রাবিনা বেগমের উদ্দেশ্যে বললো,“ বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী! আপনার করা আমার মায়ের বিরুদ্ধের মন্তব্যটা কিন্তু আপনার ওপরেই খেলে যাচ্ছে। তবে আমি সেটা বলে আপনাকে অপমান করবো না।’’

রাবিনা বেগমের মুখে কিছুক্ষণের জন্য কুলুপ এঁটে গেলো। স্মরণের কথার উল্টোপিঠে কিছু বলার মতো ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। থম মেরে মূর্তির মতো দেয়াল ঠেসে দাঁড়িয়ে রইলেন। এরপর অবশ্য মেয়ের পক্ষ নিতে ভুললেন না,“ আমার মেয়ে এমনটা কখনোই করবে না। এইটা স্মরণ তোরই কোনো পরিকল্পনা আমি জানি। এমন মিথ্যে সংবাদ দিয়ে তুই আমাকে মেয়েকে খারাপ বানাতে চাস আমি জানি। এই ছবি তুইই এডিট করেছিস।’’

আরও নানা কথা বলা শুরু করলেন রাবিনা বেগম। অনিল সাহেব মেয়েকে খেয়াল করলেন। মেয়ের যে শরীর ভালো না বুঝে এগিয়ে গেলেন মেয়ের দিকে। তবে স্মরণ নিজেই উঠে দাঁড়ালো। বাবার উদ্দেশ্যে দৃঢ়ভাবে শুধুমাত্র এটুকুই বললো,“ বাবা, তুমি সত্য মিথ্যা যাচাই করে উনাকে জানিও দিও। উনাকে আমাকে বিশ্বাস না করুক আশা করি আজকের জন্য তুমি আমায় বিশ্বাস করবে। কারণ আমি তোমারই অস্তিত্ব।’’

স্মরণ আবারও টলতে টলতে চলে গেলো নিজের রুমে। এদিকে রাবিনা বেগম নানা আহাজারি করে চলেছেন। আর আজেবাজে বকে চলেছেন স্মরণকে। অনিল সাহেব নিজেও সোফায় ধপ করে বসে পড়লেন। এতবছর যাবৎ মেয়েটার দিকে খুব একটা ফিরে তাকাতে পারেন নি তিনি। তবে এখন আক্ষেপে বুক ভেঁসে যাচ্ছে। মেয়েটা আগুনে পুড়তে পুড়তে এখন নিজেই আগুন হয়ে গেছে। মাথা নত করছে না বরং মুখে মুখেই প্রতিবাদ করছে। অসুস্থতা নিয়েও আজ শক্তিশালী হয়ে কথার জবাব দিচ্ছে। মেয়েটা অসুস্থ কিন্তু অনিল সাহেব কিছু করতে পারবেন না। সেবা করতে পারবেন না মেয়ের। কারণ বাবা আর মেয়ের মাঝের দূরত্বটা এখন আকাশ পাতাল ব্যবধানের। এই দূরত্বের অন্ত অনিল সাহেব যেদিন খুঁজে পাবেন সেদিনই মেয়ের সাথে বসে দু–দণ্ড কথা বলবেন বলে ঠিক করলেন অনিল সাহেব। আবার বেশি দেরি না হয়ে যায় এটাও ভাবলেন তিনি। কারণ মেয়ের অভিমানের পাহাড় এতটাই উঁচু হয়েছে যে মেয়ে বাবার বাসায় শুধু থাকে খাওয়া দাওয়া পর্যন্ত করে না। আজ প্রায় সাড়ে তিন বছর হলো মেয়ে তার এমন হয়েছে। এসব ভাবলে নিজেরই খারাপ লাগে অনিল সাহেবের।

অনিল সাহেব আর রাবিনা বেগম বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। নিরবতা ভেঙ্গে অনিল সাহেবই প্রথম বললেন,“ তুমি বিশ্বাস করবে না বলেই তোমার থেকে আমি একটা কথা গোপন করেছি আজ। সেটা হলো আমিও নিজ চোখেই রাহা আর হিমেলকে একসাথে দেখেছি।’’

রাবিনা বেগম কিছু বললেন না। চুপই রইলেন। যেন কথা বলার ভাষা আপাতত খুঁজে পাচ্ছেন না। অনিল সাহেবই পুনরায় বললেন,“ একাকী বড় হলেও আমার মেয়ে কখনোই খারাপ কাজ করে নি রাবিনা। যেখানে তোমার উচিত ছিলো ছোট্ট স্মরণকে নিজের মেয়ে মনে করে ছোট থেকে নিজের মেয়ের মতোই বড় করা সেখানে তুমি তাকে দূরে ঠেলে দিয়েছো। তাকে মারধোর করেছো। আমি জেনেও একটা টু শব্দ করিনি। কেন করিনি এ নিয়ে আমার আজ আফসোস হচ্ছে। হয়তোবা যদি তখন তোমায় বারণ করতাম মেয়ের পক্ষ নিতাম আজ মেয়েটা এমন কঠিন হতো না। তুমি যদি তাকে ছোট থেকে নিজের মেয়ে মনে করতে তাহলে হয়তোবা মেয়েটা আজ তোমার মুখের ওপর কথা বলতে পারতো না। এটা যে তোমার ভুল সেটাও কখনো বলবো না। কারণ তোমার অবস্থাও বুঝতে পারছি। তবুও এতোটা কঠোর আর নির্মম হওয়া উচিত ছিলো না তোমার। আমার মা মরা মেয়েটাকে কিছুটা স্নেহ দিলে হয়তো আজ তোমায় সম্মান না শুধু মাথার ওপর বসিয়ে রাখতো।’’

রাবিনা বেগম একটা টু শব্দও করলেন না। মুখের তিক্ত কথাগুলো আপাতত মুখেই মূর্ছা গেছে। উনার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না নিজের মেয়ের ব্যাপারটা। সবই বানোয়াট আর কাল্পনিক মনে হচ্ছে। অনিল সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। চলে যেতে নিয়েও আবার থেমে গেলেন। পেছনে ফিরে অবিশ্বাস্যভাবে বসে থাকা রাবিনা বেগমকে শান্তভাবে বললেন,“ আমি হিমেলের পরিবারের সাথে আলাপ করে কিছুদিন বাদেই রাহা আর হিমেলের বিয়ের ব্যবস্থা করবো।’’

___________________________

সকালে স্মরণ সময়মতোই ঘুম থেকে উঠলো। ভার্সিটিতে আজ ক্লাস মিস দেওয়া যাবে না। স্মরণ বান্ধবী জিনিয়াকে দিয়ে হলের একটা সিট পাওয়ার চেষ্টা করবে। জিনিয়া বলেছিলো তাকে, হলে নাকি একটা সিট খালি আছে। স্মরণ সেখানেই উঠবে বলে ভেবে রেখেছে। তবে সেটা সামনের মাসে।

মাথা ব্যাথার প্রভাবতা তখনও প্রখর। তবুও উঠে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলো স্মরণ। একদম রেডি হয়ে বের হলো। দরজার বাইরের পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করলো স্মরণ। খুবই শান্ত পরিবেশ মনে হলো। হঠাৎ এই শান্তরূপ স্মরণকে ভাবালো কারণ সকালবেলা তাদের বাসার পরিস্থিতি কখনই শান্ত থাকে না। গতকাল রাতের ডোজটা তবে ঠিক জায়গামতো দেওয়া হয়েছে বলে মনে করলো স্মরণ।

স্মরণ দরজা খুলে বের হলো। কাউকে দেখতে পেলো না। রাহার রুমটা একবার পরখ করলো। রুমের দরজা খোলা। মানে রাহা এখনও বাসায় ফেরেনি। স্মরণ সদর দরজার সামনে গেলো। ব্যাগটা বাম কাঁধে ঝুলিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো।

এ বাড়িতে স্মরণ খাবার খায় না। শুধুমাত্রই থাকে। নিজের খরচ চালানোর জন্য বিকেল থেকে চারটা টিউশনি করায় স্মরণ। টিউশনির এ টাকাগুলো দিয়ে তার মাস চলে যায় খুব ভালোভাবেই। কারণ তার আলাদা বাড়তি কোনো চাহিদা নেই। রাহার মতো রংধং এ অভ্যস্ত নয় সে। সাধারণ ভাবে থাকাতে অভ্যস্ত। কলেজে ওঠার পরপরই নিজের ভালো নিজে বুঝে নিতে শিখে গেছে। নিজের হাল নিজেই ধরে নিয়েছে। বাবা সরকারি চাকরিজীবী হয়েও নিজের ভার, নিজের দায়িত্ব নিজের কাঁধেই নিয়ে নিয়েছে।

রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে বাসের অপেক্ষা করছিলো স্মরণ। সেসময় তার সামনে দিয়ে এক লোক দৌঁড়ে চলে গেলো। স্মরণ তাকিয়ে রইলো। পর পর দুজন যুবকও দৌঁড়ে গেলো লোকটার পিছু পিছু। স্মরণ খুব একটা বুঝতে পারলো না কি হয়েছে? একটা বাস এসে থামলো সেখানে। স্মরণ বাসে উঠতে যাবে সেসময় আরেকজন যুবক হনহনিয়ে যাচ্ছিলো আর স্মরণের সাথে ধাক্কা লেগে গেলো। স্মরণ মাটিতে পড়ে গেলো। বাসে থাকা যাত্রীগুলো কেমন হেসে উঠলো স্মরণকে মাটিতে পড়ে যেতে দেখে। এদিকে সুড়সুড় করে আরও যাত্রী বাসে উঠে পড়লো। মুহুর্তের মাঝেই বাসটা চলে গেলো স্মরণের সামনে থেকে। স্মরণ মাটিতে বসেই শুধু তাকিয়ে রইলো বাসের যাওয়া। মাথা এতটাই গরম হলো যে চেঁচিয়ে বললো,“ মানুষ এতটা কানা হয় কিভাবে?’’

কথাটা বলতে বলতে স্মরণ উঠে দাঁড়ালো। জামাকাপড় ঝাড়তে লাগলো। তবে তার ডেনিম জিন্সের পেছনের অংশে ময়লা লেগেছে যা হাত দিয়ে পরিষ্কার করা যাচ্ছে না। কিছুটা সাইডে গেলো স্মরণ। সাইড ব্যাগ হতে পানির বোতল আর টিস্যু বের করে পরিষ্কার করতে লাগলো।

এদিকে বাহারাজ কিছুটা দূরে এগোলেও পেছন হতে বলা কথাগুলো কিছুটা শুনতে পেয়ে থেমে গেলো। পরিচিত কণ্ঠস্বর। এই স্বর সে আগেও শুনেছে। আর তাকেই যে উদ্দেশ্য করে বলেছে সেটাও সে নিশ্চিত। তবে পেছনে ঘুরে তেমন কাউকে দেখতে পেলো না। কারণ স্মরণের পাশেই একটি ট্রাক ছিলো যার কারণে স্মরণকে আর দেখতে পেলো না বাহারাজ।

“ এই বাহারাজ লোকটার থেকে এই ব্যাগটা পেয়েছি শুধু। কোনো কারসাজি আছে আমি শিওর।’’

শায়নের কথা শুনে তার দিকে তাকালো বাহারাজ। পাশেই একটা কালো মাইক্রো এসে থামলো। তবে বাহারাজ আবারও পেছনে ফিরে তাকালো কে সেই মেয়েটাকে দেখার আশায়। কারণ মেয়েটার ওপর তার ক্ষোভ আছে। সেই ক্ষোভটা যতদিন পর্যন্ত ঝাড়তে না পারবে ততদিন তার পেটের ভাত হজম হবে না।

#চলবে
লেখনী–জুনানী চাকমা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে