ছবির মানুষ
ফাহমিদা লাইজু
(১ম পর্ব)
রুবাইদা একা থাকলে কখনোই লিফটে উঠে না। তিন বছর আগে বান্ধবীর বাসার লিফটে ওঠার পরপরই কারেন্ট চলে গিয়েছিল, মোবাইল বের করে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করেও কাউকে ফোন দিতে পারছিল না নেটওয়ার্কের অভাবে। দুপুরের সময় হওয়াতে সেসময় লোকজনের আসা-যাওয়া কম ছিল, বিশ মিনিটকে মনে হয়েছিল বিশ বছর। এই স্মৃতি মনে হলে এখনো গায়ে কাঁটা দেয়। কিন্তু আজ অন্যমনস্ক ভাবে লিফটে উঠে গেল কিভাবে যেন।
দরজাটা যখন বন্ধ হয়েই যাচ্ছে এমন সময় দৌড়ে এসে উঠে গেল ফয়সাল। লিফটে একা থাকার ভয় দূর হয়েছে ঠিকই কিন্তু এখন অজানা একটা অস্বস্তি হতে লাগল।
কিছুদিন আগে বাড়িওয়ালী, মানে ফয়সালের মা সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন রুবাইদার মা , হাসনাহেনার কাছে। বাড়ি-গাড়ি প্রতিপত্তি সবই আছে, ফয়সাল ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে ভালো চাকরি করে, পাত্র হিসেবে কোন ভাবেই অযোগ্য নয়। তারপরও হাসনাহেনা সময় নিয়েছেন। বিয়ে-শাদীর ব্যাপারে তো আর হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। এভাবে খোঁজখবর নিতে হবে। টাকা থাকলেই তো আর ছেলে ভালো হয়ে গেল না।
—কেমন আছেন রুবাইদা?
—ভাল। আপনি? রুবাইদা যেন পালিয়ে বাঁচে।এর আগেও কয়েক জায়গা থেকে প্রস্তাব এসেছে।কিন্তু পাত্রকে চোখের সামনে এভাবে এতবার করে দেখতে হয় নি। মনে মনে ভাবে ,কেন যে এমন হয়, সে কি বাঘ নাকি ভাল্লুক? তাকে দেখলেই বুকের ভিতরে ধুক ধুক করে আর গলাটা শুকিয়ে যায়।
লিফট তিনতলা পার হয়ে গেলেও ফয়সাল নামলো না।
—আপনার সাথে ফেসবুকে এড হতে পারি?এই বলে নিজের মোবাইলটা অন করে রইল। ভাবটা এমন এখন ই রিকোয়েস্ট পাঠাবে।রুবাইদা সম্পূর্ণ নামটা বলল। লিফট ছয়তলায় পৌঁছে যাওয়াতে রুবাইদা নেমে গেল, পেছন থেকে শুনতে পেল –রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করবেন প্লিজ।
ফরিদা বসে ,শুয়ে একেক সময় একেক ভাবে যথারীতি স্টার প্লাসের সিরিয়াল দেখছেন। তার মেদবহুল শরীর নিয়ে উঠে এসে দরজা খুলতে অনেকটা সময় লাগলো।
—বড় চাচী মা কোথায়?
—তোর চাচাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেছেন তোর বাবা-মা। আমারতো হাটুতে ব্যথা, তাই গেলাম না। টেবিলে চাউমিন বানিয়ে রেখেছে তোর মা, গরম করে খেতে বলেছে।
আসলে ফরিদা যাননি তার সিরিয়াল দেখা হবে না বলে।
রুবাইদা ফ্রেশ হয়ে, চওমিন নিয়ে বসল টিভির সামনে। ছয় দিন থেকে টিভির সামনে বসলে ই দেখতে হয় স্টার প্লাস, স্টার জলসা এই সব।এমনিতেও খুব একটা টিভি দেখা হয় না। রাত দশটার পরে আবার বাবা- চাচা খবর দেখবেন। হাসনাহেনা খুব একটা টিভি দেখেন না। তার মতে টিভি দেখা হলো সময়ের অপচয়। এখন যা দেখায়, শুধু মানুষের সংসার ভাঙ্গা আর কুটকৌশল শেখায়। আহ্ আগের সেই নাটক, সেই ইত্যাদি ।
বড় চাচীর সিরিয়াল ব্রেক এসেছে,এখন মনোযোগ দিলেন রুবাইদার উপর
—কি রে কাল তোর মায়ের সাথে এভাবে জোরে জোরে কথা বল্লি কেন?
—আমাদের গ্রুপের সবাই ঘুরতে যাবে সেন্টমার্টিন। কিন্তু মা আমাকে যেতে দেবে না। এই নিয়ে কথা হচ্ছিল। মাকে কিছুতেই বোঝাতে পারছি না।
—রাইয়ান চাইলে তো ঠিকই দিতো।
—একদম ঠিক বলেছেন চাচী।
—তোকে দেখি সব কিছুতেই না করে। ভার্সিটিতে পড়িস, এত বড় হয়েছিস, নিজের ভালো তো ভালই বুঝতে পারিস। রাইয়ান কে তো এত শাসন করে না।
—রাইয়ান কেউ মানা করে মা। সবকিছু মেনে নেয় না।
একটু গম্ভীর হয়ে, করুন চোখে তাকিয়ে ফরিদা, রুবাইদা যেন শুনতে পায় ততটুকু আস্তে বললেন,
—-নিজের মা হলে এমন করত না তোর সঙ্গে।
—এর মানে কি?
—না না কিছু না।
—কিছু না মানে? মাত্র যে বললেন আমার নিজের মা না?
—কাউকে কিন্তু বলিস না। আমার আবার সবকিছুতেই দোষ ধরে মানুষ।তবে তোর কষ্ট দেখে সহ্য হচ্ছে না আমার, তাই বলছি। জন্মের সময় তোর মা মারা যায়। এরপর তোর খালা মানে হাসনাহেনা কে তোর বাবা বিয়ে করে।
এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো। রুবাইদা যেন নাড়াচাড়ার শক্তি পাচ্ছে না।
রাইয়ান এসে তোড়জোড় শুরু করলো, খুব খিদে পেয়েছে।মা কোথায়? রোবাইদা কোন উত্তর না দিয়ে রুমে চলে গেল। ফরিদা বলে দিলেন টেবিলে খাবার আছে।
কয়েক বার ডাকার পরেও রুবাইদা খাবার টেবিলে আসলো না দেখে, হাসনাহেনা গিয়ে দেখেন রুবাইদার চোখ ফোলা ফোলা লাল হয়ে আছে। বোঝাই যাচ্ছে, সে অনেক কেঁদেছে। হাসনাহেনা অস্থির হয়ে গেলেন, অনেকবার জিজ্ঞেস করলেন কী হয়েছে,
একসময় ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে বলল–
— তুমি নাকি আমার মা না?
চলবে।
দুই পর্বের গল্প
ছবির মানুষ
শেষ পর্ব
এই প্রশ্ন শুনে মনে হলো একটা তীর কেউ বিঁধিয়ে দিয়েছে হাসনাহেনার বুকে। শরীরটা যেন টলে উঠল। রুবাইদা মাথা নিচু করে আছে, সে কিছুই দেখতে পেল না। অন্য সময় অন্য কোন প্রশ্ন শুনলে হাসনাহেনা চেঁচামেচি করতেন কিন্তু এখন তিনি খুব শান্ত স্বরে বললেন-
—যদি পেটে ধরলেই শুধু মা হয়, তাহলে সে হিসেবে আমি তোর মা না।
আর একটা কথা না বলে, ডাইনিং এর কাছে এসে দাঁড়িয়ে ফরিদাকে বলতে লাগলেন-
—-এই বার আপনার আত্মা শান্তি পেয়েছে? সত্যিই একটা অজগর আপনি। আমার শাশুড়ি আপনাকে ঠিকই চিনেছিল। মানুষের সুখ আপনি গিলে খেয়ে ফেলতে চান।ষোল বছর আগের ঘটনা আবার আপনি ঘটিয়ে দেখালেন। এত বছর পরে এসেই আপনার আসল রূপ আবার দেখালেন।
হাসনাহেনা কথা বলতে বলতে কাঁপতে লাগলো রাগে।রাকিব এগিয়ে এসে হাসনাহেনাকে ধরে, কি হয়েছে বার বার জানতে চাইলেন —
—-এই হাসনা কি হলো ,বল
হাসনাহেনা তার স্বামীর বুকে দুই হাত রেখে, ধরা গলায় বলতে লাগলো-
—-এই মহিলা রুবাইদাকে বলেছে, আমি ওর মা না। তুমি শুনছ , ভাল করে শুন। রুবাইদার মায়ের নারী কাটার পর থেকেই আমার ভালোবাসা দিয়ে ওকে পেচিয়ে ধরে ছিলাম। এতগুলো বছর রুবাইদার মনে তো এই প্রশ্ন আসেনি।আজ এই মহিলা রুবাইদার মনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
—তুমি একটু শান্ত হও। প্লিজ শান্ত হও।
—কি বল তুমি?আমি শান্ত হব?এই মহিলা আমাদের মা -সম্পর্কের মধ্যে আগুন লাগাতে এসেছে।
হাসনাহেনা নিজের রুমে চলে গেলেন একা একা কথা বলতে বলতে। রাইয়ান ও বুঝতে পারছেনা কিছু, দাঁড়িয়ে থেকে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
রাকিব আর জুনাইদ এক সঙ্গে ফরিদার দিকে
তাকালো। ফরিদার কোন ভাবান্তর নেই। সে অবলীলায় বলতে লাগলো-
—অন্যায় কি করেছি। কিছুদিন পর বিয়ে দেবে, তখন তো সত্যিটা জানাতেই হবে। আগে থেকে জানলে সমস্যা কি?
—তুমি আর মানুষ হবে না। এক পা কবরে চলে গেছে তবুও কুটনামি কমেনা। জুনায়েদ কথাগুলো বলে ছি ছি করে উঠলেন।
তোমার মায়ের তখন ক্রিটিক্যাল অবস্থা ,আমরা সবাই হসপিটালে খুব অস্থিরতার মধ্যে ছিলাম, হাসনাহেনার কোলে তোমাকে এনে দেয়া হল , এর কিছুক্ষণ পরেই তোমার মা চলে গেলেন। হাসনার সেই বছর অনার্স ফাইনাল দেওয়ার কথা ছিল। ওর কোলে থাকলে তুমি কাঁদতে না, পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে যেতে। ও পরীক্ষা দিতে পারল না সে বছর। আমার মা হাসনার হাতে ধরলেন তোমার মা হওয়ার জন্য। তার বড় বোনের শেষ স্মৃতির কাছে, স্নেহের টানে সেও বাধা পড়ে গিয়েছিল।
এমনটা হতেই পারে কিন্তু অনেক বড় আত্মত্যাগ করেছিল নিজের ভালবাসাকে বিসর্জন দিয়ে, শুধু তোমার জন্য।
তোমাকে আর রাইয়ান কে কখনো আলাদা করে দেখেছে?বরং তোমাকেই বেশি ভালোবাসে।কিভাবে তোমাদের ভবিষ্যত ভালো হবে নিরাপদ থাকবে সারাক্ষণ সেই চিন্তায় শুধু সে করে।
—বাবা আমি মাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য প্রশ্ন করিনি।বড় চাচীর কাছে হঠাৎ কথাটা শোনার পরে আমার কি যে হলো বলতে পারব না। আমার কাছে কেন তোমরা গোপন করলে এত বছর?
—প্রথম থেকে তুমি যদি জানতে তাহলে রাইয়ানের সঙ্গে সব সময় পার্থক্য খুঁজতে।ভালোর জন্য শাসন করলেও মনে মনে ভাবতে সে আমার সৎ মা। সম্পর্কের মাঝে তিক্ততা ছড়িয়ে পড়তো। এসব কোনো প্রশ্ন যেন তোমার মনে না আসে তাই তোমার দাদু এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
কথা বলতে বলতে রাকিব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।
হাসনাহেনা কিছুই খেলেন না রাতে। রাকিব তার পাশে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছেন, আসলে বলার মতো কথা খুঁজে পাচ্ছেন না। হঠাৎ হাসনাহেনা রাকিবের বুকে মাথা রেখে কাঁদে উঠল। রাকিব তাকে গভীর মমতায় জরিয়ে নিল।এত বছরে কখন ও হাসনা এমন করে নি।
সংসারধর্ম , সন্তান সবকিছু ঠিকঠাক পালন করেছে কিন্তু অদৃশ্য একটা পর্দা সবসময় ঝুলতো তাদের মাঝে।
বিয়ের কিছুদিন পরে, রাকিবকে হাসনাহেনা নিজেই জানিয়েছিল শাহেদের কথা। আগে জানলে কি অন্য রকম হতে পারত,হলেও হত, আবার নাও হতো। অপরাজিতার সঙ্গে রাকিবের বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হলেও তাদের তিন বছরের সংসার জীবন আনন্দময় ছিল।তার বিয়োগে হঠাৎ করে অন্য একজনকে জীবনসঙ্গী করা তার পক্ষেও কঠিন ছিল। সবকিছু ছাপিয়ে সবার আগে রুবাইদার চিন্তাটাই সবার সামনে প্রধান ছিল।
ভালোবাসার মানুষ শাহেদেকে ছেড়ে নিজের প্রিয় বোনের স্বামীকে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিতে দিনের পর দিন নিজের সঙ্গে কী পরিমাণ যুদ্ধ করতে হয়েছে তা শুধু হাসনাহেনা জানে। সবকিছু করেছে শুধু রুবাইদার জন্য। আর আজ সেই রুবাইদাই—-
বাসাথেকে বের হওয়ার সময় হাসনাহেনা সবসময় সন্তানদের মাথায় আয়াতুল কুরসি পড়ে ফুক্ দেন,যেন বিপদাপদ না ঘটে। আজ এই প্রথম রুবাইদা বাসা থেকে বের হয়ে গেল কাউকে কিছু না বলে।
গেটের কাছে ফয়সাল দাঁড়িয়ে। সে রুবাইদার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে।
—আমার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করেননি কেন?
রুবাইদা দাঁড়ালো না। হন্ হন্ করে হেঁটেই যাচ্ছে। ফয়সালের কথা তার যেন কানেই ঢোকে নি।
এবার ফয়সাল একেবারে সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
—কি ব্যাপার কথা বলছেন না যে? ক্লাসের কি দেরি হয়ে যাচ্ছে?
রুবাইদা চোখ তুলে তাকাতেই, ফয়সাল কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। চোখ- মুখ ফোলা ফোলা কেমন যেন লাগছে রুবাইদা কে।
—ক্লাসে যাচ্ছি না। কোথায় যাব এখনো বুঝতে পারছি না। সবুজের কাছাকাছি ইচ্ছে করছে যেতে। প্রকৃতির মাঝে কিছুক্ষণ থাকলে ভালো লাগবে আমার।
—-যেতে পারি সাথে?
—অফিস নেই?
বুঝতে পারলো রুবাইদার সম্মতি আছে।
ঘাসের উপর পা ছড়িয়ে বসলো ফয়সাল।রুবাইদার এখন ভালো লাগছে, পা থেকে স্যান্ডেল খুলে ঘাসের উপর খালিপায়ে গোল গোল হয়ে কিছুক্ষণ বাচ্চাদের মত হেটে, বসে পরলো ফয়সালের থেকে এক হাত দূরে।
কিছু একটা হয়েছে বুঝতে পেরেও ফয়সাল কিছু জিজ্ঞেস করছে না , মনে মনে ভয় ও পাচ্ছে যদি তার স্বপ্নটা ভেঙে যায়। এই মেয়েটাকে দেখার পর থেকেই কি যে হলো তার,বার বার একই ভাবনা ,রুবাইদা তার জীবনে না আসলে জীবন অচল হয়ে যাবে। আসলে মেয়েটা তার মনে ঝড় তুলে দিয়েছে।ঠিক যেন টিন এজারদের মত।এই বিষয়টা তার নিজের কাছেই অবাক লাগে।
রুবাইদাদের দোতলা বাড়ি ডেভলপারদের দিয়ে মাসপাঁচেক আগে তাদের বাসায় ভাড়া এসেছে। তাদের ফ্ল্যাট কমপ্লিট হলেই চলে যাবে। অবশ্য ফয়সালের কিছু বলার আগেই তার মা রুবাইদার মায়ের কাছে প্রস্তাব দেন। তার মায়ের ভাষ্য মতে ,এমন মেয়ে নাকি সচরাচর দেখাই যায়না।
অনেকক্ষণ কেউই কথা বলল না।এক ফাঁকে ফয়সাল মেসেজ পাঠিয়ে দিয়েছে, বিশেষ কারণে আজ অফিস যেতে পারবে না।
—আমার জন্মের সময়ই আমার মা মারা যান। পরে আমার খালাকে বাবা বিয়ে করেন।এই কথাটা গতকাল ই আমি জেনেছি বড় চাচীর কাছে।মাকে খুব খারাপভাবে আমি প্রশ্ন করেছি, মায়ের মনে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমাকে মায়ের আদর দেওয়ার জন্য অনেক বড় ত্যাগ স্বীকার করেছেন মা। একদমই এমন করা ঠিক হয়নি। মায়ের দিকে কি ভাবে তাকাবো এটা ভেবেই কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে এসেছি।
—-বাসার সবাই তাহলে তো খুবই চিন্তা করছে। ফোন করে ওনাদের জানিয়ে দাও।
—মোবাইল হাতে নিতেই অনেকগুলো মিসডকল দেখতে পেল। সে বাবাকে মেসেজ করে দিল, আমি ভালো আছি, কিছুক্ষণ পরে বাসায় চলে আসব।
—এখন আমার কি করা উচিত?
যার সঙ্গে কোন দিন ভাল করে কথাই বলেনি আজ তার মতামত চাচ্ছে। কেন যেন ফয়সালের সঙ্গ ভাল লাগছে।
তার সঙ্গে শেয়ার করে হালকা লাগছে।
এই প্রথম রুবাইদা ফয়সালের চোখের দিকে তাকালো। ফয়সালের চোখ খুব সুন্দর কিন্তু বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারলো না, কেমন যেন লজ্জা লাগছে। কি প্রশ্ন করেছে সেটাও ভুলে গেল।
—আন্টিকে সরি বলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো। মা তো মা ই। সবকিছু ভুলে ক্ষমা করে দেবেন। যিনি এত ত্যাগ স্বীকার করেছেন তোমার জন্য, এই সামান্য ভুল ক্ষমা করবেন না? আর তোমার জন্মদাত্রী মা যিনি এই পৃথিবীতে নেই শুধু ছবির মানুষ হয়ে আছেন, তার থেকে তোমার এই মা কোন অংশে কম?
কখন থেকে তুমি বলা শুরু হলো,সেটা কারো নজরে এলো না।
—এখন চল, সকাল থেকে খাওয়া হয়নি বোধহয়?
হাসনাহেনাকে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে রুবাইদা।কত কথা বলবে ,সরি বলবে চিন্তা করেছিল রুবাইদা সেসবের কিছুই বলা হলো না। হাসনাহেনা ও গভীর মমতায় জড়িয়ে রাখলেন মেয়েকে ঠিক যেন ছোট্ট শিশু মায়ের কোলে।
শেষ।।
ফাহমিদা লাইজু