#_ছন্দময়_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_৫_ ( শেষ পর্ব )
–” আজ জামাই এলো,, আর আজই তোরা চলে যাচ্ছিস। আর তুই তো বলেছিলি,, বেশ কিছুদিন থাকবি এইবার।”
তরির দিকে তাকিয়ে অভিমানী কন্ঠে বলে ওঠে আহিয়া বেগম। তরি হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” আসলে,, আম্মু! তোমার জামাইয়ের আগামীকাল অফিস খোলা,, যেতেই হবে। আর ওর বাইরে খেতে সমস্যা হচ্ছে,, তাই আমি চলে যাচ্ছি। আবার আসবো।”
আফজাল রহমান ( তরির বাবা ) এগিয়ে এসে তরিকে একটু কাছে টেনে নিয়ে বলে ওঠে,
–” আহ! আহিয়া! এতো রাগ করো না। ওদের জন্য দোয়া করো,, ওরা যেন এইভাবে সুখে থাকতে পারে।”
আহিয়া বেগম তরির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” সাবধানে থাকিস। আর নানুভাইয়ের দিকে খেয়াল রাখিস।”
আহিয়া বেগম এগিয়ে এসে কুশানের কোলে থাকা শিশিরকে আদর করে। তারপর কুশান,, শিশির আর তরি চলে আসে নিজেদের বাসায়।
…………………….শিশির ঘুমিয়ে গেছে। তরি ডাইনিং টেবিল গুছিয়ে রুমে আসতেই দেখে কুশানের বুকে শিশির ঘুমাচ্ছে। তরি এগিয়ে এসে শিশিরের মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” তুমি ওকে নিয়ে দাড়াও,, আমি বিছানা ঠিক করে দেয়।”
–” হুম!”
কুশান শিশিরকে কোলে নিয়ে উঠে দাড়ায়। তরি বিছানা ঠিক করে শিশিরকে ঠিক করে শুইয়ে দেয়। তরি শিশিরকে ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে কুশান নেই। কই গেলো? ঘুমাবে না? তরি উঠে গিয়ে বারান্দায় উঁকি দিতেই দেখে কুশান ডিভানে বসে আছে। তরি বারান্দার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে ওঠে,
–” ঘুমাবা না?”
তরির কথায় কুশান তরির দিকে তাকায়। তরির হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের কোলে বসায় কুশান। তরির ফতুয়ার নিচ দিয়ে হাত দিয়ে পেট চেপে ধরে কুশান। তরি কিছুটা কেঁপে উঠে। এই ছোঁয়া তার কাছে প্রথম না,, তাও প্রতিবার এই ছোঁয়া যেন তার কাছে নতুনের মতো লাগে।
শিশির তরির খোঁপা করা চুল গুলো খুলে দেয়। তারপর চুলে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে ঘ্রাণ নিতে থাকে কুশান। এই সুগন্ধ যেন সব সুগন্ধ কেও হার মানায় কুশানের কাছে। তরির চুল গুলো একপাশে সরিয়ে দিয়ে তরির কাঁধে কয়েকটা ভালোবাসার স্পর্শ একে দেয় কুশান। কুশানের প্রত্যেকটাহ স্পর্শে কেঁপে উঠে তরি। জোরে নিশ্বাস ফেলতে থাকে। আজ বেশ অনেকদিন পরই কুশান তার এতো কাছে এসেছে,, এইভাবে স্পর্শ করছে তাকে।
কুশান তরির কাধে নিজের থুতনি ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে। তরিও নিজের চোখ বন্ধ করে রেখেছে। কুশানের হাত তরির পেটের উপর বিচরণ করছে। কুশান চোখ খুলে বলে ওঠে,
–” তরি!”
তরি আস্তে আস্তে তার চোখ খুলে বলে ওঠে,
–” হুম!”
–” তুমি তোমার বাবা-মায়ের বাড়িতে গিয়েও কিছু বলোনি যে?”
তরি কিছু সময় চুপ থেকে বলে ওঠে,
–” বাবার ব্লাড প্রেশার। এইসব শুনে যদি কোনো সমস্যা হয়,, এই ভয়ে কিছুই বলতে পারছিলাম না। ভেবেছিলাম,, ডিভোর্স হয়ে গেলে বলে দিবো,, যখন কোনো উপায় থাকবে না।”
কুশান তরির পেটে আর একটু চাপ দিয়ে বলে ওঠে,
–” আই এ্যাম সরি,, তরি! আমি আর কখনোই এরকম কথা বলবো না তোমাকে।”
তরি কুশানের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” এতো সরি বলতে হবে না। আমিও তো দোষ করেছি। সরিতো আমারও বলা উচিত।”
কুশান তরির ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে বলে ওঠে,
–” তুমি সরি বলবে না। আমি তোমার কাছের থেকে সরি শুনতে চাই না। আমি শুধু ভালোবাসি কথাটা শুনতে চাই,, তোমার কাছে।”
তরি হালকা হেসে কুশানের কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি,, কুশান! অনেক ভালোবাসি তোমাকে! এতোটাই ভালোবাসি,, যার কোনো সীমা পরিসীমা হয় না। অনেক ভালোবাসি!”
–” আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি,, পাগলি! আমি তো তোমাকে ছাড়া থাকতেই পারবো না।”
কিছু সময় চুপ থেকে কুশান আবার বলে ওঠে,
–” তরি!”
–” হুম!”
কুশান তরির কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বলে ওঠে,
–” আমাদের মাঝে যতই ঝগড়া,, ঝামেলা হোক না কেন,, আমরা কখনো একে অপরকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাববো না। আমাদের সব ঝামেলা এই ফ্লাটের মাঝেই থাকবে। আমাদের সন্তানকে কখনো বাবা- মা হারা করবো না। আমার জীবনে তোমাকে খুব দরকার তরি! প্রমিস করো কখনো আমাকে ছেড়ে যাবা না।”
তরি কুশানের কপালে একটা চুমু একে দিয়ে বলে ওঠে,
–” প্রমিস! আমি তোমাকে ছেড়ে কখনো যাবো না।”
কুশান হালকা হেসে তরিকে টেনে নিজের আরও কাছে নিয়ে আসে। তরি কুশানের গলা জড়িয়ে ধরে। কুশান কিছু সময় তরির ঠোঁটের দিকে চেয়ে থেকে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় তরির ঠোঁটে। তরি কুশানের চুল আকড়ে ধরে। কতো গুলো দিন পর কুশানের এমন স্পর্শ পাচ্ছে তরি। তরির পুরো শরীর কাঁপছে। মন হারিয়ে যেতে চাচ্ছে কুশানের স্পর্শে।
কিছু সময় পর তরির ঠোঁট থেকে সরে আসে কুশান। তরি জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। তরির গলা কুশান উষ্ণ ছোঁয়ায় ভরিয়ে দেয়। তারপর তরিকে কোলে তুলে নেয় কুশান। তরিকে ঠিক করে শুইয়ে দেয় ডিভানের উপর। তরির উপর আধশোয়া হয়ে কুশান ফিসফিস বলে ওঠে,
–” চলো,, আজ আমাকে একটা রাজকন্যা এনে দাও। একটা রাজপুত্রেই শুধু আমার হবে না,, আমার একটা রাজকন্যাও লাগবে। আমার #_ছন্দময়_সংসার_ এ নতুন সদস্য এনে দাও তরি! তুমি রাজি তো?”
তরি কুশানের কপালে একটা চুমু একে দিতেই কুশান তৃপ্তিদায়ক হাসি দেয়। এগিয়ে যায় তরির দিকে। কুশান নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় তরির ঠোঁটের মাঝে।
হয়তো আর কয়েক মাসের মাঝেই তাদের #_ছন্দময়_সংসার_ এ নতুন এক অতিথির আগমন ঘটবে। কুশানের আশা পূর্ণ করে তাদের সংসারে এক রাজকন্যা আসবে। সুখে থাকুক তারা। আনন্দ,, হাসি,, খুশিতে ভরে উঠুক তাদের #_ছন্দময়_সংসার_।
…………..🌹সমাপ্ত🌹…………….