#গল্পঃছদ্মবেশে_কে_সে?
#পর্বঃসপ্তম_অর্থাৎ_শেষ।
#লেখাঃShihab Hossain(Tarajul)
মারিয়া রুমে চুপ করে বসে আছে।সে বুঝতে পারছে না তার এখন কি করা উচিত।এই মুহুর্তে ওর পাশে দাড়ানোর মতো এখন আর কেউ নেই।বার বার ইচ্ছা হচ্ছে সে নিজে নিজেকে শেষ করে দিবে।কিন্তু সেটাও সে করতে পারছে না।ইরফান বাইরে কোথায় যেন গেছে।মারিয়ার সামনে বিড়াল রুপি পিশাচটা বসে আছে।সামিউলকে নিয়ে মারিয়ার বেশ চিন্তা হচ্ছে না জানি ছেলেটা এখন কোথায় আর কোন অবস্থায় রয়েছে।নিজে হাতে সে ছেলেটাকে বিপদের হাতে ঠেলে দিয়েছে।এখন যে করে হোক সামিউলকে বাঁচাতে হবে সেই সাথে এই খারাপ কাজের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে।এমন সময় ইরফান ভিতরে এলো।মারিয়া বলল
->সামি কোথায়?আপনি ওর সাথে খারাপ কিছু করেননি তো?
->আপাতত কিছু করিনি।তবে যদি রাজি না হয় তাহলে সে আমার পিশাচের হাতে চলে যাবে।আর তখন কি হবে আমি বলতে পারবো না।
->না এমন করবেন না আপনি।সামিকে আপনি পেলেন কিভাবে?
->ওই যে সে কাল আমার পিছু নিয়েছিলো তখনই রাস্তার মধ্যে ওরে ধরে ফেলি।এখন তুমি পারো ওকে বাঁচাতে।এখন কি করবে সিদ্ধান্ত তোমার।
->আমি রাজি তো আছি।আপনি ওকে ছেড়ে দিন।
->ঠিক আছে আমার সাথে এসো তোমায় কিছু দেখায়।
ইরফান মারিয়াকে নিয়ে সেই বন্ধ রুমের দরজার কাছে আসলো।ইরফান চাবি দিয়ে দরজা খুলে মারিয়াকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো।মারিয়া ভিতরে ঢুকতে দেখলো সেখানে বেশ কয়েকটা মানুষের মাথার খুলি পড়ে আছে।আরো রয়েছে কয়েকটা বাটি সেগুলো কেমন যেন লাল রংয়ের মতো।আর ওর সামনে বিশাল বড় একটা সিংহাসন যেটার ওপর একটা শিং ওয়ালা মূর্তি বসানো।মারিয়া বলল
->আমায় এখানে নিয়ে আসলেন কেন?
->এখানে তো তোমার সামিউল রয়েছে।
->কোথায় সে?
তখন ইরফান গুলো ডান দিকে আঙ্গুল ইশারা করলো আর তখন সেখানকার দরজা খুলে গেলো।মারিয়া দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো সামিউলকে শূন্যে ভাসিয়ে রাখা হয়েছে।ওর নিচে বিশাল বড় বড় সাপ ঘুরে বেড়াচ্ছে।মারিয়া চোখ বড় বড় করে বলল
->ওকে এভাবে রেখেছেন কেন?একটু হলেই তো ওই সাপ গুলো ওকে কামড় দিবে।
->ভয় নেই আমি ইশারা না করা পর্যন্ত ওই সাপগুলো কিছু করবে না।
->দয়া করে ওকে ছেড়ে দেন।
->রাজি হলেই ছেড়ে দিবো।
এই বলে ইরফান ওই দরজার সামনে গিয়ে সামিউলকে বলল
->আমি তোমায় যেটা বলেছিলাম সে কাজ করবে কি না বলো?
->আমি এই কাজ কখনো করবো না কারন মারিয়া এখন অন্য কারো স্ত্রী।আর তাকে আমি বিয়ে ছাড়া কখনো স্পর্শ করতাম না।
তখন ইরফান মারিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল
->তুমি বুঝাও ওকে একটু।
তখন মারিয়া সামনে এগিয়ে গিয়ে বলল
->সামি এই ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই তুমি দয়া করে বুঝার চেষ্টা করো।তুমি রাজি হয়ে যাও।আমায় তো বুঝতে পারো।
মারিয়ার কথা শুনে সামিউল ভাবতে লাগলো,,মারিয়া তো সহজে কোন কিছুতে হ্যাঁ বলে না।নিশ্চয় তার পিছনে কোন কারন থাকে।এখনও হয়তো এমন কোন কারন আছে।কারনটা কি সেটা জানার জন্য সামিউলকে মারিয়ার সাথে আলাদা কথা বলা জরুরি।আর কথা বলার সুযোগ পাওয়ার জন্য রাজি হতে হবে ইরফানের শর্তে।সামিউল বলল
->আমি আপনার শর্তে রাজি।
আর তখন ইরফান হাতের ইশারা করলো সাপগুলো সরে গেলো।সামিউল তখন মাটিতে পড়ে গেলো।মারিয়া দৌড়ে সামিউলের কাছে গেলো।মারিয়া সামিউলকে ধরে তুললো তারপর বলল
->তুমি ঠিক আছো তো?
->হ্যাঁ আমি ঠিক আছি।
তখন ইরফান হাসতে হাসতে বলল
->তোমাদের দুই জনের মধ্যে তো ভালোবাসা অনেক।ভালোবাসা বেশি হলে কিন্তু তাদের থেকে জন্ম নেওয়া সন্তান খুব পরিপুষ্ট হয়।যাই হোক তুমি ওকে নিজের রুমে নিয়ে যাও।
মারিয়া সামিউলকে নিজের রুমে নিয়ে আসলো।মারিয়া দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দিলো।ইরফান সেটা দেখে হাসলো।মারিয়া সামিউলকে বলল
->তোমার ওপর খুব বেশি অত্যাচার করেনি তো?
->না আমি একদম ঠিক আছি।তুমি এসব করতে রাজি হলে কেন?আমি তোমার সাথে বিবাহ ব্যতিত একদম এমন কাজ করতে পারবো না।
->হুম জানি আর আমিও করবো না।শোনো আমি রাজি হয়েছি কারন এছাড়া তোমাকে বাচানোর কোন উপায় ছিলো না আর ইরফান তোমার মা-বাবাকেও আমার পরিবারের মতো মেরে ফেলতো।
->মানে তোমার পরিবারের সদস্যদের ইরফান মেরেছে?
->হ্যাঁ।ওই শয়তানটা আমার কলিজার টুকরোটাকেও ছাড়ে নি।
->কষ্ট পেও না মারিয়া।ওই শয়তান ওর শাস্তি পাবে।
তো এখন কি করবে বলো?
->শোনো ইরফান প্রতিরাতে শয়তানের পুজো করে আর আজ যখন এটা করতে যাবে তখন আমরা এখান থেকে চলে যাবো এটাই একমাত্র পথ আমাদের বাঁচার।
->ও কিছু বুঝতে পারবে না তো?
->না।ওই ভাববে এই রাতের আধারে আমরা মিলনে ব্যস্ত রয়েছি তাই সে কিছু করবে বলে মনে হয় না।
->ঠিক।এখন অপেক্ষা করতে হবে আমাদের।
যখন রাত হয়ে গেলো তখন প্রতিদিনের মতো ইরফান সেই পুজোর রুমে গেলো।আজ ইরফান অনেক খুশি কারন ওর অনেক দিনের সাধনা খুব শীঘ্রই পূরন হতে চলেছে।আর এই সুযোগে মারিয়া আর সামিউল বাড়ির থেকে বের হয়ে গেলো।বাইরে এসে দুইজনে চমকে উঠলো কারন ওদের সামনে অনেক নারী-পূরুষ দাড়িয়ে আছে।প্রত্যেকের চেহারা কেমন যেন বদলে যেতে লাগলো।সবার পা মাটি থেকে উপরে ভাসছে,,হাতে বিশাল বড় নখ,,চোখ থেকে যেন উপচে আগুন বেরিয়ে আসছে।হঠাৎ ওরা ওদের দুইজনের দিকে তেড়ে এলো।তখন সামিউল আর মারিয়া দৌড়াতে লাগলো কিন্তু বেশিদুর দৌড়াতে পারলো না কারন চারদিক থেকে সব পিশাচদের দল ওদের ঘিরে ধরেছে।কয়েকজন পিশাচ মিলে ওদের দুইজনকে টেনে ইরফানের কাছে নিয়ে গেলো।দুইজনে দেখলো ইরফান মাটি থেকে শূন্য বসে আছে চোখ বন্ধ অবস্থায়।হঠাৎ ইরফান চোখ খুলে তাকালো।চোখ থেকে আগুন উপচে পড়ছে ওর।ইরফান রেগে মারিয়াকে বলল
->মেয়ে মানুষের এতটা চালাকি ভালো না।বেশি চালাকি করার কারনে মিহিকে মরতে হয়েছিলো।কি ভেবেছিলে পালিয়ে যাবে তুমি কখনো তা পারবে না কারন এই এলাকায় দিনে যাদের মানুষ হিসেবে দেখো এরা আমার পালিত পিশাচ।এই এলাকার মানুষ তো সেই কবে আমার বলি হয়ে গেছে।
->তোর মতো নরপিশাচ মানুষ মারা ছাড়া আর কি করতে পারে।
->ঠিক বলেছো।এখন যদি তোমরা আমার ইচ্ছা পূরন না করো তাহলে দুইজনই মরবে।
তখন সামিউল বললো
->এবার আমরা না তুই মরবি।
->ঠিক আছে পারলে মেরে দেখা।
সামিউল ইরফানের দিকে যাবে কিন্তু দেখলো সে ওর হাত পা নাড়াতে পারছে না।ইরফান ওর পিশাচ শক্তির দ্বারা সামিউলের হাত-পা অবশ করে দিছে।মারিয়ার অবস্থাও একই রকম।মারিয়া চোখ বন্ধ করলো এমন সময় ও শুনতে পেলো
->আম্মু তুমি ভয় পেও না তুমি না অনেক সাহসি।আর তোমার ছেলে তোমার সাথে আছে।ওই শয়তানের ক্ষমতার চেয়ে তোমার মনের ক্ষমতা বেশি।তোমার পায়ের নিচে শাবল আছে তুমি ওটা তুলে মেরে দাও শয়তানটার বুকে।
মারিয়া বুঝতে পারলো কথাটি তার ছেলের।সে চোখ খুলে ওই শাবল তুলে ইরফানের বুকে মেরে দিলো।ইরফান জোরে চিৎকার দিয়ে মাটিতে পড়ে গেলো।ইরফান বলল
->কাজটা ঠিক হলো না।
->তোর সাথে এমনটা হওয়া উচিত।
তখন আশেপাশে থাকা পিশাচ গুলো মারিয়া আর ইরফানের ওপর হামলা করতে যাবে আর তখন সামিউল ওর সামনে থাকা তেলের বোতল আগুনে ফেলে দিলো ওমনি ইরফানের গায়ে আগুন লেগে গেলো।আর একের পর এক পিশাচ ধ্বংস হতে লাগলো।সামিউল মারিয়ার হাত ধরে বাইরে নিয়ে যেতে লাগলো এমন সময় দেখলো সেখানে মেঘ দাড়িয়ে থেকে হাসছে।এটা দেখে মারিয়ার অনেক খারাপ লাগলো মারিয়া কিছু বুঝে উঠার আগে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে গেলো।সামিউল মারিয়াকে নিয়ে বের হয়ে আসলো।সামিউল আর মারিয়া রাস্তা দিয়ে হাঁটছে।রাত শেষ হয়ে সবে ভোর হতে চলেছে।মারিয়ার মন অনেকটা খারাপ নিজের ছেলের জন্য।সামিউল মারিয়াকে বলল
->মন খারাপ করে আছো?
->কই না তো?
->আমার চোখ কে কিন্তু ফাঁকি দিতে পারবে না।
->আমার তো আর কেউ রইলো না।
তখন সামিউল হেসে জবাব দিলো
->কে বললো তোমার কেউ নেই।তোমার সামি তো তোমার পাশে আছে।তুমি তোমার সামির মিষ্টি বউ হয়ে থাকবে।
মারিয়া মুচকি হেসে জবাব দিলো
->একজন ডিভোর্সি মেয়েকে কি তোমার ফ্যামিলি মেনে নিবে।তাও একবার না দুইবার বিয়ে হয়েছিলো কিন্তু আমার।
->ও নিয়ে ভেবো না।আমার ওপর ছেড়ে দাও।
মারিয়া আর কিছু না সামিউলের পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো।
এরপর সামিউল মারিয়াকে নিয়ে নিজের বাসায় যায় আর সামিউল ওর মা-বাবাকে সবকিছু বলে।প্রথমে সামিউলের বাবা-মা রাজি হয়না কিন্তু সামিউলের জোরাজোরিতে রাজি হতে বাধ্য হয়।দুইজনের বিয়ে হলেও সামিউলের মা-বাবা মারিয়ার সাথে তেমন ভালো ব্যবহার করতো না কিন্তু মারিয়া ধৈর্য ধরে নিজের ভালোবাসা দিয়ে সবার মন জয় করে।তারপর থেকে সামিউলের পরিবারের সবাই মারিয়াকে খুব ভালোবাসে।সবার ভালোবাসায় মারিয়া নিজের পরিবার হারানো কষ্ট ভুলেই গেছে।আর খুব শীঘ্রই মারিয়া আর সামিউলের জীবনে নতুন এক অতিথি আসতে চলেছে।মারিয়ার বিশ্বাস তার এই নতুন অতিথি তার হারিয়ে যাওয়া মেঘ হয়ে ফিরে আসবে।
(সমাপ্ত)
(পুরো গল্পটা ছিলো কাল্পনিক।বাস্তবের সাথে গল্পের কোন মিল নেই।।যাদের গল্প ভালো লাগবে না তারা এড়িয়ে যাবেন কিন্তু বাজে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকবেন)