চড়ুইভাতি
সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে রাবেয়ার প্রথম কাজ হাঁস মুরগীর খোঁপ খুলে দেওয়া, তারপর একমুঠো ধান বিছিয়ে দেওয়া রান্নাঘরের পাশের আঙিনায়।
ধান খুঁটতে ব্যস্ত হাঁস মুরগী গুলো ভীড় জমায় একসাথে।
হাঁসগুলো অবশ্য ছাড়া পেয়েই হেঁটে চলে যায় দলবেঁধে পুকুরের দিকে।
মুরগী গুলো ধান খুঁটে খায়।
রাবেয়া এই ফাঁকে হাঁস মুরগীর ডিম বের করে ফেলে।
সাতটা মুরগী, দুটো ডিম দেয়, দুটো মোরগ, আর বাকি তিনটি এখনো ডিম দেওয়ার মতো বড় হয়নি।
হাঁস আটটা, দুটো হাঁসি ডিম দেয়।
রোজ সকালে দুই দুই চারটা ডিম পায় রাবেয়া।
সপ্তাহের শেষে মিয়াবাড়িতে দিয়ে আসে।
বিনিময়ে নগদ টাকা পায় রাবেয়া।
ওর গাভীটা পোয়াতি, কয়েকদিন পরেই বাছুর বিয়ানো হলে দুধও বেচতে পারবে, এটা ভাবতেই ভালো লাগে। যদি একটা গাই হইতো! রাবেয়া একা একা চিন্তা করে।
রাবেয়ার স্বামী বাজারে কাঁচা তরকারির ব্যবসা করে।
তবে সিজনাল, জৈষ্ঠ্যমাস এলে আমের ব্যবসা শুরু করে।
দুই বাচ্চা রুমি আর রুবেল প্রাইমারি স্কুলে যায়।
এখনো বাচ্চাদের পড়াশোনার জন্য অতো খরচ হয় না, তবুও রাবেয়া কৃচ্ছ্রতা করে।
কিপটে হিসেবে তার বদনাম আছে আশেপাশে।
পাড়া প্রতিবেশী পেছনে ছোটলোক বলে রাবেয়াকে।
রাবেয়া নিজে অভাবের সংসার থেকে এসেছে।
বাবার বাড়িতে তিনবেলা ভাত খেতেই কষ্ট হতো।
বিয়ের পর খাওয়ার কষ্ট আর নেই কিন্তু টাকা না জমালে যদি আবার কষ্ট করা লাগে, রাবেয়ার মনে খুব ভয়
পেটে খিদের কষ্ট ভয়াবহ, এটা সে ভালোই জানে।
রাবেয়া আস্তে আস্তে এলাকায় বিভিন্ন এনজিওর সাহায্য নিয়ে গাভীটা কিনেছে, হাঁস মুরগী পালছে, মুরগীর বাচ্চা বড় হলে বিক্রিও করে।
তবে সেটা কম।
শীতকালে জোড়া দুয়েক হাঁস বেচতে চায় রাবেয়া।
শীতকালে এলাকায় হাঁসের চাহিদা বাড়ে। দুইটা ছাগল কেনারও ইচ্ছে আছে, এখনো সে টাকা জমে নি।
শীতের শেষে পারবে কিনতে।
আজকে মিয়া বাড়িতে ডিম দেওয়ার কথা আছে।
রুমি আর রুবেল এসে শাড়ি ধরে ঝুলে পড়লো, আশেপাশের কয়েকটা পোলাপান মিলে বনভাত খাইতে চায়, বাড়ি থেকে একটা করে হাঁসের ডিম আর দুই মুঠ করে চাল ডাল লাগবে।
তেল আর নুন দেবে টেপির মা। টুনটুনির মা বলেছে বাকি মশলা দিয়ে দেবে।
রুমি আর রুবেলকে তারা হেঁসে বলেছে, দেখ তগো মায় চাইল ডাইল আর ডিম দেয় কিনা!
তাইলেই হবে।
রাবেয়া কিছুক্ষণ চিন্তা করলো, ডিম দিলে ডজন থেকে কমে যাবে। চাইল ডাইল দেওয়া যায়।
কিন্তু খারাপও লাগছে।
গত সপ্তাহে দেখেছে, ওরা দাউর টোকাইছে , পাতা কুড়াইছে বনভাতের জন্য।
টেপির মা শীতকালে বাইরে চুলা করেছে।
তার পাশে একটা ছোট্ট চুলা করে দিছে পোলাপানডির বনভাতের জন্য, রাবেয়া চিন্তা করে।
উঠে গিয়ে দুটো ডিম এনে দিলো ওদের হাতে।
মুঠ মেপে রুমির টোকরে চাল ডালও দিয়ে দিলো।
ওরা খুশি মনে চলে গেলো।
একটু পরে রাবেয়ার মনে হলো, গিয়ে দেখে আসি কি করতেছে পোলাপানডি।
রাবেয়া ধীরে ধীরে এগোয় ওদের বনভাতের কাছে।
টেপির মা বসে বসে চুলায় কাঠ পাতা দিয়ে ঠিক করছে।
ডিম সেদ্ধ দেবে।
রাবেয়াকে দেখে পিড়ি এগিয়ে দিলো বসতে।
বাচ্চাদের উৎসাহের শেষ নেই।
রুমি টেপি ধরাধরি করে পানি আনছে কলপাড় থেকে।
রুবেল, হালিম, টুনটুনি ফুলকপি, নতুন আলু কাটছে।
চালে ডালে নতুন ওঠা শীতের সবজির খিচুড়ি হবে।
সাথে ডিম সিদ্ধ করে ভুনা করে দেবে টেপীর মা।
রাবেয়ার খুব ভালো লাগছিলো বাচ্চাদের খুশী দেখে।
হঠাৎ দেখলো সালেহার দুই ছেলে পাশে মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে। একজনের বয়স পাঁচ আরেকজনের সাত হবে।
সালেহার অবস্থা একটু খারাপ, ওর স্বামী কিছু করে না।
সালেহা মিয়াবাড়িতে কামলা দেয়।
রাবেয়া জিজ্ঞেস করলো, কি, তগোর কি অইছে?
টেপীর মা বললো, তখন থিকা কইতাছি বাড়িত যা নাইলে মিয়া বাড়িত যা। অরা চাইল ডাইল ডিম কিচ্ছু আনতে পারে নাই।
সালেহা বলছে বনভাত খাওয়া লাগবো না।
রাবেয়ার হঠাৎ কি যেন মনে হলো, হঠাৎ চোখে ভেসে উঠলো এমন আর একটা দৃশ্য, কিছু পোলাপান বনভাতের আয়োজন করেছে, রাবেয়া আর ওর ভাই মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে একপাশে।
এক চাচী ধাবরানী দিলো, যাহ বাড়িত যা, পোলাপানডির খাওনে নজর দিবো।
রাবেয়া উঠে হেঁটে বাড়ি চলে গেলো।
শাড়ির আঁচল ভরে চাল ডাল নিলো, শিকা থেকে ডিম নিলো দুটো, তারপর টেপীর মায়ের কাছে এসে বললো,ভাবী ওগোর চাইল ডাইল ডিম আমি দেলাম, ওই তোরা যা, রুমিগো লগে কাম কর।
দাঁড়াইয়া থাকলে চলবো!!
বাচ্চাদুটো নিষ্পাপ হাসি দিয়ে কাজে লেগে পরলো।
টেপীর মা অবাক হয়ে অন্য রাবেয়াকে আবিষ্কার করলো আজ।
চড়ুইভাতি
লেখিকা : শানজানা আলম
( প্রিয় পাঠক আপনাদের যদি আমার গল্প পরে ভালোলেগে থাকে তাহলে আরো নতুন নতুন গল্প পড়ার জন্য আমার facebook id follow করে রাখতে পারেন, কারণ আমার facebook id তে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গল্প, কবিতা Publish করা হয়।)
Facebook Id link ???
https://www.facebook.com/shanjana.alam