-নীরা, আসবো?
-জ্বি আসুন।
-তুমি কি মাকে বলেছো দুপুরে খাবে না?
-জ্বি বলেছিলাম।
-কেন খাবে না?
-আমার ক্ষিধে নেই।
-নাকি ইচ্ছে করছে না?
-ইচ্ছে করছে না।
-তাহলে ক্ষিধে নেই বললে কেন?
-আপনি কথার খুঁত ধরেন কেন? কথার খুঁত ধরা মানুষ আমার অপছন্দ।
-এমনিও তো আমি তোমার অপছন্দই। আমার ধারণা তুমি আমাকে সাগর পরিমাণ অপছন্দ করো। তাতে এই এক ফোঁটা পরিমাণ অপছন্দ মিশলে বিশেষ কিছু আসবে যাবে না।
-জ্বি না। ভুল বলেছেন, সাগর না, মহাসাগর।
-কোন মহাসাগর?
-প্রশান্ত মহাসাগর।
-আহ! দৈর্ঘ্য ও গভীরতায় বৃহত্তম। অপছন্দের দৈর্ঘ্য নাহয় কাটানো সময়ের দৈর্ঘ্যের সাথে কমবে, কিন্তু গভীরতা কি করে কমাবো? আমার ভালবাসায় অত পলি নেই যে জমিয়ে ভরাট করে ফেলবো।
-আপনি কি আর কিছু বলবেন?
-না। বলবনা।
-তাহলে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
-তোমাকে দেখছি।
-আমাকে তো রোজ ই দেখেন।
-রোজ দেখি। নিজেরই বউকে দেখি। তাও মনে হয় কোন মেয়ের কলেজ যাওয়ার পথে দাঁড়িয়ে আছি, আর সে শাসানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে পার হয়ে গেলে।
-আপনি মেয়েদের কলেজ যাওয়ার পথে দাঁড়াতেন?
-না। সে কথা রূপক।
-কি করে বুঝবো আপনি সত্যি বলছেন? কি করে বুঝবো আপনি পূর্ণ চরিত্রবান?
-চারিত্রিক সনদপত্র আছে, দেখাবো?
-হিহি। আপনি মিথ্যেবাদী। লেখকরা প্রচন্ড মিথ্যে কথা বলে।
-যারা গদ্য লেখে, তারা মিথ্যে বলেনা। গদ্যে মিথ্যে নেই, তাই তার স্বাদ ঘাসের মতন।
-আপনার গদ্যে বহু নারীর অনধিকার প্রবেশ দেখি, তবে সেসব কি?
-যার প্রবেশাধিকার আছে সে যে চৌকাঠে পা রাখেনা, সে দোষ কার?
-অত নারীর মাঝে আমি যেতে পারবনা।
-নারী নয়, ভ্রম। চৌকাঠে দাঁড়ানো নারীর পূর্ণ অভ্যন্তরীন প্রতিফলন।
-অবশেষে মরীচিকা হয়ে রইলাম?
-আপাতত তাই।
-এত দুর্বল আত্মবিশ্বাস?
-মহাসমুদ্র সমান অপছন্দের হিংস্র জলোচ্ছ্বাস দাঁড় করিয়ে বলছো ডুবছি কেন?
-আপনি তো লেখক। ভেবে নিন, আপনি উড়তে জানেন। হিহি।
-তোমার চুলের মতন উড়তে জানিনা। একেকটি চুল একেকটি ফড়িং, একেকটি রঙিন ঘুড়ি, বিরামহীন উড়োউড়ি।
-ঘুড়ি কাটা পড়ছে খবর রেখেছেন? ঝরছে ক’দিন ধরে খুব।
-সে কি!
-নাটাই ছেড়ে দিয়ে সুতো খুঁজলে হবে? জানেন, এখন আর সূর্যও আমাকে ডাকেনা চুল শুকাতে।
-সূর্য বেচারা প্রেমে পড়েছে তোমার।
-হ্যাঁ। তাইতো কাল পুড়িয়ে দিয়েছিলো একেবারে।
-আমি তো পোড়াই না।
-আপনিও পোড়ান, তার চেয়েও বেশি পোড়ান। চামড়া পোড়ে না, তাও গা জ্বলে যায়।
-কাল যে আমার নতুন শার্ট টা পুড়ে গেল।
-ইস্ত্রি বেশি গরম হয়ে গেছিলো খেয়াল করিনি। স্যরি।
-আমারো যে মেজাজ খানিকটা গরম হয়ে গিয়েছিলো। ইস্ত্রি ভেবে ক্ষমা করা যায়না?
-কাপড় জ্বালানো আর হৃদয় জ্বালানোয় অনেক তফাৎ।
-ভ্যানিলা খাবে?
-আপনার কি ধারণা জ্বলে যাওয়া অংশে ভ্যানিলা ঠান্ডা করার কাজ করবে?
-আলবৎ করবে।
-বলছিনা করবেই, কিন্তু প্রস্তাব লোভনীয়। তাই রাজি হচ্ছি, রাগ বহাল থাকবে।
-পরবর্তী শুনানি কবে?
-কয়েক দিন, কয়েক মাস, কয়েক বছর কিংবা কয়েক যুগ পরও হতে পারে। পারবেন?
-সাজাপ্রাপ্ত আসামী আপিল করে বসে আছে। তার যাওয়ার জায়গা কোথায় আর?
-তাহলে থাকুন, আমি চলি।
আমি পড়ে রইলাম চৌকাঠের এপাশে বদ্ধঘরে, মায়াকন্যা চৌকাঠের ওপাশেই রইল মরীচিকার মতন। মা ডাক দিলেন, “কবিতা শেষ হলে, এবার দুজন খেতে আয়। টাকি মাছের চচ্চড়ি রান্না করেছি”।
-Asif Mahmud