চোরাবালি পর্ব-০৯

0
1260

#চোরাবালি
#পর্বঃ৯
#আহিয়া_আমান_অণু

“দেখুন আম্মা আদ্রিজার কোনো দোষ নেই এটা আমি জানতাম। কিন্তু আপনার নাদান মেয়ে তো, কি বলবো আর! কিছু জানানোর সুযোগ না দিয়েই পালিয়ে চলে গেলো। আমি জানতাম আমার বাবা মানুষের সাথে অন্যায় করে। সেগুলো আমি ঢাকা চলে গেলে আদ্রিজা যে আব্বার অন্যায় কাজের কথা জেনেছিলো সেটা আমাকে বলেছিলো সেটা আপনার মেয়েও ভালো করে জানে। ”

আমার ঘরে বসে আম্মাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলে আমান। আমি বলেছিলাম তো আমানকে। একদিন কথা বলার সময় আমানকে বলেছিলাম আমি; তোমার বাবা এমন করে ঠকায় গ্রামের মানুষকে। সাথে জানিনা কত মানুষকে ঠকায়। আমান বলেছিলো চুপ করে থেকে এই বিষয় নিয়ে। কিন্তু আমি কেনো জানি পারিনি চুপ থাকতে। শ্বশুর মশাইকে বলেছিলাম, আপনি এসব ছেড়ে দিয়ে ভালো হন। গ্রামের মানুষকে সাহায্য করেন, দেখবেন তাদের দুয়া আপনার জন্য কাজে দিবে। কবরের মধ্যে তো এক পা গিয়েই বসে আছে, এবার না হয় একটু আমল করেন। কিন্তু এগুলো বলা যে আমার পক্ষে কাল হয়ে দাড়াবে ভাবিনি। তার একসপ্তাহ পরই আমায় মিথ্যা অপবাদের বোঝা নিয়ে সংসার ছাড়তে হয়েছিলো।

“আচ্ছা আদ্রিজা তুমি কি এমন করেছিলে সব জেনে,যে বেয়াই সাহেব সোজা তোমায় এমন অপবাদে যুক্ত করে পুরো গ্রামে অপমানিত করলো!”

মায়ের ডাকে অতীত বিচরণ বাদ দিলাম। আমান আর মা দুজনই সন্দিগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমি তাই মিনমিন করে বলি,

“তেমন কিছুনা আম্মা।আমান চলে যেতেই সময় কাটাতে সংসারের কাজে বেশি সময় দিতাম। শ্বশুরকে একদিন সকালে উনার নাস্তা ঘরে দিতে গিয়েছিলাম। কারণ উনি তাড়াহুড়োয় ছিলেন দোকানে যাবেন বলে। সেজন্য ওর আম্মা আমার হাতে নাস্তা পাঠায় ঘরে। কিন্তু দরজায় যেতেই শুনতে পাই শ্বশুর মশাই ফোনে কোনো একজনকে বলছে; গ্রামবাসীর জন্য সরকারের যাবতীয় জিনিস যা অধিদপ্তরে এসেছে তা আনার সময় ৮০% যেন সরিয়ে ফেলা হয়। এগুলো নিয়ে উনাকে বলতেই উনি আমায় বলেছিলেন, যেন চুপ থাকি আর সংসার করি। কিন্তু আমি চুপ না থেকে উনাকে বারণ করি এসব করতে। নয়তো আমি সব মানুষকে জানিয়ে দেবো। আমার কথা যে এতটা ফলে যাবে ভাবিনি, একসপ্তাহ পরই উনি আমায় পুরো গ্রামের মানুষের সামনে অপদস্ত করলেন। আমান এই মানুষটা, এনাকে আর কি বলবো! হাহ ইনি তো সব শুনে আমায় সাহায্য করার বদলে আমায় বিচার সভায় বসানোর আয়োজন করেন।আমি চলে যেতাম না তো কি করতাম? সবার সামনে বিচার সভায় মুখে চুনকালি মাখতাম? যা কখনও করিইনি।”

আমি কথাগুলো বলে থামলাম। আম্মা আর আমান দুজনই কেমন ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে। আম্মা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। আমি তাহিফ উঠেছে দেখে ওকে কোলে নেবো বলে উঠে দাড়ালাম।আলিফ বাইরে দাড়িয়ে আছে তাহিফকে নিয়ে। দরজার ফাক গলিয়ে তা দেখেই উঠে দাড়ালামা।কিন্তু আমান তখনই বলে,

” আমায় সময় দিতে একটু! দিয়েছিলে তো? না দাওনি তার আগেই চলে গেলে অজানায়। আমাকে যখন ফোন করে উহাশী এমন বলে যে তুমি দুলা ভাইয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্কে আছো আর ধরা পড়ছো, তখনই আমার মাথায় বজ্রাঘাত পড়েছিলো জানো তুমি? জানবে কিভাবে? কথা বলারই তো সুযোগ দাওনি। অফিসে ছিলাম, সেখান থেকেই ছুটে আসি বাসায়, টাকা নিয়ে বাসের টিকিট কেটে তৎক্ষনাৎ বেরিয়ে পড়ি গ্রামের উদ্দেশ্যে। গ্রামে বাড়িতে পৌছাতে গ্রামের মুরব্বিরা আর বাবা আমায় ধরে বসলে আমি তোমার কাছে যাওয়ার সুযোগই পাইনা। গ্রামের মুরব্বিদের নিয়ে বিচার বসাতে চাইলেন আব্বা। আমি সম্মতি দেইনি, কিন্তু পরে কি মনে করে জানি বললাম বসান সভা। সেটা বলেই তোমার কাছে যাবো সভা বসানোর কারণ জানাতে। কিন্তু গিয়ে দেখি তুমি নেই। তোমার বাবার সাথে চলে আসছো বাড়িতে। রাত হয়ে গিয়েছিলো বিধায় আর আসতে দেয়নি আম্মা তোমার বাড়িতে। সকালে আসবো বলে ভাবলাম কিন্তু কি শুনলাম সকালে! তুমি গ্রামেই নেই। তখন আফসোস করা ছাড়া উপায় ছিলো না৷ কথায় যেখানে আছে ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। আমিও না ভেবে বিচার সভা বসাতে মতামত দিলাম তোমার সাথে আলোচনা না করেই সেটারই ফল ভোগ করলাম এত বছর ধরে। আসলে কি বলোতো আমি বিচার সভাটা মূলত বাবার বিপক্ষে বসাতে চেয়েছিলাম এই উছিলায়। কারণ উনার যে পাপকর্মের ফর্দ; সেটা সবাইকে জানাতে চেয়েছিলান উনার তৈরি করা ফাঁদেই। অন্যের জন্য গর্ত খুড়েছিলেন আব্বা, সেই গর্তে তাকেই ফালাতে গিয়ে তোমায় হারিয়ে ফেলি। আমি আব্বার এই অন্যায়ের কথা বিয়ে করার আগে থেকে জানতাম। দুলাভাই আর আব্বাকে অনার্স লাস্ট ইয়ারে থাকাকালীন ফরম ফিল আপের টাকা নিতে গিয়েছিলাম আব্বার দোকানে। তখন দুলাভাই আর আব্বাকে ওসব নিয়ে আলোচনা করতে শুনি। আব্বা যে গুদামঘরে ওসব জিনিস রাখতেন সেটা আমাদের সিমেন্টের দোকানেই একটা ঘর বানিয়েছিলেন, সেখানে রাখতেন।আর ওখানে যেতে যেতে কথা বলছিলো আর যাচ্ছিলো। আমি পা টিপে টিপে উনাদের পেছনে যাই। উনারা এতটাই নিজেদের কাজে মত্ত ছিলেন আমার উপস্থিতি উনাদের লক্ষণীয় হয়নি। যখন চলে আসবো দোকানের রডের সাথে পা বাজলে আব্বা বুঝতে পারেন কেউ এসেছে। তখুনি ধরা পরে যাই। আব্বাকে শাসাই সব ছেড়ে দিতে বলে।আব্বা আমায় ধমকে বলেন কিছু করলে আম্মার জীবন সংকটে ফেলবেন। আম্মার কথা ভেবে চুপ ছিলাম আমি। আমার কাছে সুযোগ ছিলো সেদিন যে সবাইকে সবটা জানিয়ে দেবো।কারণ সমাজের অনেক বড় বড় মানহষ থাকতেন সেখানে। আব্বা কিছু করতে পারতেন না উঠে এসে। কিন্তু এই কথাটা তোমাকে আর জানানোর সুযোগ দিলেনা আদ্রি। মানছি ভুল করেছিলাম মায়ের কথা চিন্তা করতে গিয়ে তোমায় কিছু জানানোর সুযোগ পাইনি। মা তো কষ্ট কিভাবে সহ্য করি তার।তোমাকেও ফোন করে পাইনি, ফোন বন্ধ ছিলো। কিন্তু তার শাস্তি এতবড়?”

আমি স্তব্ধ হয়ে বসে আছি। এগুলো কি বললো আমান? সে নিজের কথা শেষ করে চুপ করে বসে আছে। চোখের কার্ণিশ বেয়ে পানি পড়ছে তার। আম্মাও কেমন নিস্তব্ধ হয়ে গেলেন। আলিফ বাইরে দাড়িয়ে ছিলো, সেও এগুলো শুনে ঘরে এসে দাড়ায়। তাহিফকে বলে,

“ঐ তোমার বাবা। যাও গিয়ে বাবাকে আদর করে দাও।”

ছেলে আমার সাথে সাথে দৌড়ে এসে বাবার কোলে ঝাপিয়ে পড়ে। আমি কি বলবো ভাষা হারিয়ে ফেলছি। আচ্ছা দোষটা কার আমার নাকি আমানের! চিন্তার অতলে কেমন নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে বুদ্ধি। এই মানুষটার জন্য এত কষ্ট পেয়েছি এতই সহজ কি মাফ করা? ছো মেরে তাহিফকে কেড়ে নিলাম। আমানকে দেখলাম কেমন অসহায় চোখে তাকাতে। এ কেমন দোটানায় পড়লাম খোদা।মনে মনে এসবউ আওড়িয়ে চলছি।

২০
রুহিনা বেগম বেগম ছেলের ঘরে বিছানায় মুখোমুখি বসে আছেন।উনার ছেলে খারাপ জানতেন, কিন্তু এতটা খারাপ এটা জানতেন না। তা আজ উহাশীর থেকেই জেনেছেন। ফখরুল মির্জা আর কাউকে ভয় বা শ্রদ্ধা না করলেও নিজের মা-কে ভয় করেন আর শ্রদ্ধাও করেন সবসময়। মা-কে চুপ থাকতে দেখে নিজেই ভেতরে-ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছেন যে উনার মা না এবার উনাকে ছেলের মর্যাদা দিতে অস্বীকৃতি জানান। রুহিনা বেগম হতাশার সুরে বলে উঠলেন,

“আমার ছেলে খারাপ জানতাম, কিন্তু এতটা খারাপ এটা জানতাম না। টাকার এত লোভ তোমার? অভাবে নাকি স্বভাব নষ্ট! সেই অবস্থা হয়েছে তোমার। তোমার শুধু স্বভাব নয় পুরো চরিত্রটাই খাদে ভরপুর। নিজে পড়াশুনার মর্যাদা বুঝতাম বলে লেখাপড়া শিখালাম আর তার এই প্রতিদন দিলে?”

“আম্মা আপনি অন্তত আমায় ভুল বুঝবেন না।আমি তো এটা চেয়েছি শুধু আমি মারা গেলে যেনো আমার সন্তানরা টাকার অভাব না বোধ করে যেটা আমি আমার বাবা মারা যাবার পর করেছি।”

“টাকা তো সৎ পথেও রোজগার করা যেতো ফখরুল! এভাবে এত মানুষকে ঠকিয়ে নিজের ছেলে মেয়ের জীবন নিয়ে না খেললেও পারতে!”

“আম্মা আপনার মনে আছে বাবা মারা গেলে কতটা অভাবে দিনাতিপাত করেছি আমরা। আমার তো না ছিলো বড় ভাই না ছিলো বোন যারা দেখবে। আপনি গ্রামের কৃষকদের মতো আমাদের একফালি জমিতে চাষ আবাদ করে আমার আপনার অন্ন জোগার করেছেন। আমার দাদা-দাদীও তো বেচে ছিলোনা যে দেখবে!চাচা চাচী যারা ছিলো তারা তো স্বার্থের জন্য বাবা থাকতে ভালো ব্যবহার দেখিয়েছেন আর মারা যেতেই সব শেষ। খারাপ তো কেউ জন্মিয়ে হয়না মা। পরিস্থিতি আর সমাজের লোভাতুর মানুষগুলো আমায় লোভ শিখিয়েছে,খারাপ বানিয়েছে। বাবার জমানো কিছু অর্থ দিয়ে আমার পড়ালেখার খরচ চালাতেই আপনার হিমশিম খেতে হতো। গন্জে গিয়ে কত মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি একটা কাজের জন্য। ছোটো মানুষ চুরি করি যদি এই ভয়ে কাজটাও দেয়নি।উল্টে দুরছাই করেছে। যখনই বাবার রেখে যাওয়া জমি বিক্রি করে ব্যবসা শুরু করলাম।আর তা রমরমা হয়ে উঠলো মানুষের সে কি সম্মান আমার প্রতি।সাহায্যের হাত একেকজনের লম্বা হয়ে যায়।এইরকম যদি আগে করতো তাহলে হয়তো আমি পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরি করতে পারতাম। কিন্তু টাকার অভাবে I.A না পরিক্ষা দিতেই বন্ধ হয়ে গেলো সব।মা আমি চাইনি আমি মরলে আমার ছেলে মেয়ে গুলোও এমন কাজ করুক। কিন্তু তাদের সুখের কথা ভাবতে গিয়ে যে তাদের ঘৃণার পাত্র হয়ে উঠবো কল্পনা করিনি মা। আমি তো এমন ছিলাম না মা। এমন কেনো হলাম আমার জানা নেই। আমার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরপাক খায় আমি যেমন মানুষের লাথি-ঝাটা খেয়েছি আমার সন্তান তার এক সিকি পরিমান না পাক। তাই খারাপ হয়ে গিয়েও আমার হীনমন্যতা কাজ করেনা আম্মা। মনে হয় এই যে অর্থের এত পাহার গড়ে তুলেছি আমি এখন ভেতরে ভেতরে মরে শেষ হয়ে গেলেও আমার সন্তানগুলো স্বাচ্ছন্দ্যে দিন পার করতে পারবে। তাদের কোনো কষ্ট হবেনা, অন্যদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবেনা চাকরির জন্য। ”

“সন্তানের ভালো করতে গিয়ে যে খারাপটা আপনি করেছেন আব্বা ;তার সংশোধন কিভাবে করবেন বলুন তো?যার জীবনে যা ঘটে সেটার ফলাফল শুধুমাত্র সেই বুঝে। আপনার জীবনে কি হয়েছিলো সেটা আমাদের জীবনে ঘটবে এমনটা তো লিখা ছিলোনা নিয়তিতে।ছোটো থেকেই স্বাচ্ছন্দ্যে বড় করেছেন আমাদের। ভাইয়ারও জব হয়েছিলো। বড় আপার সুখের সংসার। আমিও পড়ালেখা করছি। তাহলে আমাদের জীবন কষ্ট কিভাবে আসতো বলুন তো? জীবন সুখ আর কষ্ট মিলিয়ে; আমরা না হয় সুখের দিন সুখে আর কষ্টের দিন কষ্টে পার করে দিতাম, আপনি না হয় একজন আদর্শ পিতা হয়ে আমাদের পাশে থাকতেন। কিন্তু আপনি তো আমাদের ধুলোর সাথে মিশিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। একজন পিতা আর মাতার অহংকার হয় যেমন তার সন্তান, তেমনই একজন পিতা এবং সম্তানের অহংকার হয়। পিতামাতা আদর্শে উজ্জীবিত থাকলে সন্তান মনে করে তারও তার পিতার মতো আদর্শ মানুষ হতে হবে। আর সেই পিতাই যদি এমন হয় তাহলে সন্তান মানসিক ভাবে ভেঙে হাজারও বখাটে আর খারাপ মানুষের আর্বিভাব হয় এই ধরণীর পদদেশে।আপনার কুকর্ম যখন ফাঁস হবে তখন আমরা মানুষের সামনে মাথা তুলে দাড়াবো কি করে ভেবে দেখেছেন কখনও? যাই হোক আমাদের জন্য না হয় এমন করেছেন মানলাম; কিন্তু আমাদের মা কি করেছিলো যদি একটু বলতেন! না মানে আমাদের মায়ের প্রতি আপনার এত অবহেলা কেনো? বুদ্ধি হতেই এসব দেখছি আমি। তাই আগ্রহ জানার।”

উহাশী এসেছিলো তার দাদীকে ডাকতে। তার মায়ের সেন্স হারিয়ে গিয়েছিলো। এমনিই মানুষটা মেন্টালি ভেঙে পড়া একজন মানুষ। তার ভিতর এতসব কথা জেনে উনি নিজের ভারসাম্য ঠিক রাখতে পারেননি।ডাক্তার এসে চেক আপ করে ওষুধ দেওয়াতে উনার সেন্স ফিরে। উনি উঠেই শ্বাশুড়িকে খুজছেন। উহাশী তাই দাদীকে ডাকতে এসে নিজের বাবার বলা কথাগুলো শুনতে পায়।তারপর উক্ত কথাগুলো বলে। রুহিনা বেগম নাতনীর কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ফখরুল মির্জার চোখে পানি। টপটপিয়ে পড়ছে মেঝেতে।টিনশেড বাড়ির প্লাস্টার করা মেঝেতে চোখের পানি চকচক করছে যেন।মেয়ের একেকটা কথা তীড়ের ফলার মতো বিধছপ তার বুকে।ভাঙা গলায় উত্তর দেন,

“আমি চেয়েছিলাম আমার স্ত্রীর নূন্যতম শিক্ষাজ্ঞান থাকুক।কিন্তু তোদের মা হতমূর্খ। তোদের নানা মিথ্যা বলেছিলো বিয়ের সময় যে তোদের মা ইন্টার পাশ করা ছাত্রী। বিয়ের পর অনার্সে ভর্তি করতে চেয়েছিলাম সেই সময়। কিন্তু পরে দেখি সবই মিথ্যা।একজন অশিক্ষিত নারী কিভাবে পারবে তার সন্তানকে সঠিক শিক্ষা দিতে। তাই রাগে আজও তোর মাকে মন থেকে মানতে পারিনি।”

উহশী এবার শব্দ করে হেসে উঠে। ফখরুল মির্জা মেয়ের ব্যবহারে ভেবাচেকা খেয়ে যায়।উহাশী হাসতে হাসতেই বলে,

“আপনার মা তো শিক্ষিত আব্বা, তাহলে শিক্ষিত মায়ের সন্তান হয়ে এত খারাপ কিভাবে হলেন যে আপনার সন্তানরাই আপনাকে ঘৃণা করে! আমাদের মা অশিক্ষিত তবুও তার শিক্ষিত সন্তান হওয়ার চেষ্টায় আছি আমরা।কিন্তু আপনার মতো বাবা থাকতে কি তা আর সম্ভব? তালি বাজাতে তো দুহাত লাগে; তেমনি সন্তানও সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে বাবা মা দুজনকেই প্রয়োজন। আমার মা অশিক্ষিত কিন্তু আপনার শারীরিক চাহিদা মিটাবার জন্য আমার মা কি ব্যবহারের বস্তু ছিলো আপনার বলুন তো? ক্ষমা করবেন মেয়ে হয়ে এসব বলছি। কিন্তু কি বলুন তো জানতে ইচ্ছে হলো খুব, তাই বলে ফেললাম।”

ফখরুল মির্জা উত্তর দিতে পারেন না মেয়ের কথার। মাথা নিচু করে বসে থাকেন।উহাশী তা দেখে স্বশব্দে হাসে। দাদীকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“মাফ করবে দাদী তোমাকেও কত কথা শুনিয়ে দিলাম।যাই হোক মা ডাকে তোমায় দাদী।একবার এসো।”

রুহিনা বেগম নাতনীর কথায় সায় দিয়ে উঠে দাড়ায়। যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই কাজের লোক দরজায় উপস্থিত হয়।রুহিনা বেগম তা দেখে জিগাসা করেন,

“কিছু বলবি?”

“আসলে হ্যা আম্মা বলতাম। বাড়ির বাইরের গেটে একজন খাড়ায় আছে আপনার লগে দেখা করবার চায়।আইতে দিমু? আপাদমস্তক বোরখা পড়া তাই কইবার পারলাম না কেডা ওটা!আর উনিও নিজের পরিচয়ডা দিতাছে না।আপনে একবার চলেন।”

সবাই তা শুনে চিন্তায় পরে যায় এখন আবার কে আসলো?

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে