চৈত্রের_রাঙায়_রচিত_প্রণয় পর্ব-০৫

0
510

#চৈত্রের_রাঙায়_রচিত_প্রণয়
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৫

টুরে সবাই গেলো বান্দরবান অথচ সারফারাজের মন অন্য কোথাও পড়ে থাকার কারণে তাকে মোহনগঞ্জ ফেরত আসতে হলো। অর্নিলার ফোন নাম্বার থাকা সত্ত্বেও তাকে ফোন দিতে পারেনি সে। কেন পারে নি? কারণ কখনোই ফোনে আলাদাভাবে তাদের কথা হয়নি। আচমকা এবার ফোন করাটাও কেমন যেন অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। লজ্জায় কাউকে মুখ ফুটে বলতে পারছে না,‌ অর্নিলার খোঁজ নিতে তার বড্ড ইচ্ছে হয়। আর কেউই তাকে সেধে জানাতে চায় না অর্নিলার কথা, সবার কাছেই বিয়েটা নামমাত্র। ফারাজের কাছেও তো তাই হওয়া চাই, হচ্ছে না। কেমন যেন সবটা গুলিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ তার আগমনে সবাই হতভম্ব। শাহিনুর বেগম দরজার কাছে দাঁড়িয়ে অবাক স্বরে বললেন, “কখনো তো ফোন ছাড়া আসো না, আজ হঠাৎ? শরীর ঠিক তো তোমার?“

সারফারাজ হাসার চেষ্টা করল। ব্যাগ হতে ভেতরে পা রাখল। এই ভর দুপুরবেলা দরজায় কে এলো দেখার জন্য বাবাও এগিয়ে এলো। দরজার সামনে সারফারাজ কে দেখতে পেয়ে একটু বিভ্রান্ত হলেন। মৃদুস্বরে বললেন, “সাবধানে এসেছো তো।”

শাহিনুর বেগম ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে জবাব দিলেন, ”দেখো না। কিছু না বলেই হুট করে চলে এলো। বাবা, তোমার শরীর ঠিক আছে তো?“

”একদম ঠিক আছি। পরিক্ষা শেষে সবাই ঘুরতে গেলো। তাই ভাবলাম আমিও যাই।”

“সবার সাথে তুমি গেলে না কেন?”

বাবার প্রশ্নে একটু হকচকিয়ে গেল সারফারাজ। তার হঠাৎ আগমনে সবাই এতো অবাক হবে বুঝতে পারেনি। কে জানে? কে কি ভাবছে। দ্রুতই সামলে নিল। বলে উঠল, “আমার একটু রেস্ট দরকার বাবা। পড়াশোনায় ঠিক করে হচ্ছে না। তাই একটু বাড়ি চলে এলাম।”

“বেশ, যাও ঘরে যাও। ফ্রেস হয়ে নাও। তোমার মা এবার রান্নাঘরে গিয়ে তোমার জন্য রাঁধতে শুরু করবে। সময় নষ্ট করো না।”

অতঃপর বাবা এগিয়ে গেলেন স্টাডি রুমে। এখন তিনি অবসর প্রাপ্ত। সারাটে দিন বসে বসে বই পড়েই কাটিয়ে দেন। এছাড়া টুকটাক কিছু কাজ। সারফারাজ ব্যাগ হাতে নিজের ঘরের দিকে রওনা দিল। পথিমধ্যে একটু থামল। আচ্ছা, তার ঘরে কি আবার অর্নিলা দখল করে নিয়েছে? না নিশ্চিত এমনটা হবে না। আশঙ্কা খুব কম, তা সত্বেও একটু আশা বাধছিল মনে, হয়তো অর্নিলা কে ঘরে দেখবে। কিন্তু কই? কোথায় অর্নিলা? কোথায় কে? তার ঘর আগের মতোই আছে। বিছানা, বইপত্র অন্যান্য জিনিস সবই জায়গামতো। কিছুই বদলায়নি। বিছানার ‌চাদর‌টা অবধি নষ্ট হয়নি। বোঝাই যাচ্ছে,‌তার অনুপস্থিতিতে তার ঘরে বিশেষ কারো আগমণ ঘটে নি। বিশেষ কেউ? হ্যাঁ বোঝাই যাচ্ছে সে কে?

ঘরে ঢুকে ফ্রেস হয়ে নিল সারফারাজ। কাপড় বদলে ঘর ছেড়ে বের হতেই দেখল ডাইনিং টেবিলে বসে আরাফাত খাচ্ছে। পাশেই তার ব্যাগ, এখনি খেয়ে দেয়ে বোধহয় পড়তে যাবে। আরাফাত তার দিকে ফিরে হাসল। কথা বলতে পারল না খাবারের কারণে। তার বোধহয় অনেক তাড়া। শাহিনুর বেগম এসে খাবার বাড়ালেন সারফারাজের জন্য। চেয়ারে বসে এদিক থেকে ওদিক তাকাচ্ছে। অনি কে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। ঘড়ির কাঁটা বরাবর আড়াইটে বাজে। অর্নিলা কি এখনো বাসায় আসেনি। মা না থাকলে আরাফাত কে জিজ্ঞেস করা যেত। কিন্তু মা সরছে না। আরাফাতের খাওয়াও শেষ হয়ে যাচ্ছে। একে পরে আর পাওয়া যাবে না। সারফারাজ বলে উঠল, “লেবু কোথায়?”

“লেবু? লেবু খাবে তুমি! তোমার তো লেবু পছন্দ না ফারাজ।”

“জানি, কিন্তু আজ একটা খেয়ে দেখব।”

“আচ্ছা আমি কেটে নিয়ে আসছি।” রান্নাঘরে চলে গেলেন শাহিনুর বেগম। আরাফাত ঢকঢক করে পুরো গ্লাসের পানি শেষ করে উঠে দাঁড়াল।‌ সারফারাজ মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করল, “কোথায় যাচ্ছিস?”

“কোচিং এ! আজ পরিক্ষা আছে কোচিং এ।”

“ওহ আচ্ছা। এতো জলদিই পরিক্ষা। তোদের তো কলেজ এই সবে শুরু হলো।”

“এই সবে না। অলরেডি চার মাসের মতো ক্রস করে গেছে। আর কলেজেও এক্সাম শুরু হয়ে গেছে।”

“ওহ, তা তোরই শুধু কলেজ আছে। আরেকজন কই?”

”কে? বুড়ি!”

“ও যাবে না তোর সাথে।”

”না‌ ও আমার সাথে যায় না। ওর কোচিং শুরু হয় বিকাল থেকে।”

“তো মেমসাহেব কোথায়? বাড়িতে তো নেই।”

আরাফাত জবাব দিতে যাবে অমনি শাহিনুর বেগম মাঝে এসে শুধালো, ” কে বাড়িতে নেই ফারাজ?”

ফারাজ চুপসে গেল। তার চোখ মুখ শুকনো হয়ে গেল। মনে হলো, খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছে সে। এক লুকমা ভাত মুখে দিল। আরাফাত ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বলল, “বুড়ির কথা জিজ্ঞেস করছে মা। আমি যাই এখন!”

“সাবধানে‌ যেও। রাস্তার মাঝে সাইকেল চালানোর কোন দরকার নেই।” একটু উঁচু স্বরেই কথাগুলো বলল, আরাফাতের কানে তাও কথাগুলো যেন গেলো না। দুটো লেবুর টুকরো ফারাজের পাতে দিয়ে পাশে বসে পড়লেন। গ্লাসে পানি ঢেলে বললেন, ”অর্নিলা তো বাসায় নেই। ওর কোন বান্ধবীর বাসায় আজ দুপুরে দাওয়াত ছিল সেখানেই গেছে। বিকেলে এসে পড়ব।”

ফারাজ গম্ভীর স্বরে বলল, “তা‌ জেনে আমি কি করব মা? জিজ্ঞেস করছিলাম ওর পড়াশোনার কথা!”
অনর্গল মিথ্যা কথাগুলো বলে দিল সে। শাহিনুর বেগম ভাবলেন ছেলে বুঝি অভিমানেই কথা গুলো বলল। মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ”বাবা! আমরা তোমায় বুঝি। সবই বুঝি, বিয়েটা নিয়ে তুমি এখনো রেগে আছো? রেগে থেকো না। দেখবে একদিন অর্নিলা ঠিকই তোমার যোগ্য হয়ে উঠবে। বেচারি এখনো ছোট তো..

ফারাজ কথা কানে নিল না। নিশ্চুপে খেতে লাগল। বেশি রেগে গেলে এমন নিশ্চুপই হয়ে যায় সে। কিন্তু আজ সে চুপসে গেছে ভয়ে,‌ লজ্জায়! তার খুব লজ্জা লাগছে।
এর আগে কখনোই সে অনির কথা জিজ্ঞেস করেনি। পাশাপাশি এক টেবিলে বসে খেলেও তার সাথে একটা কথাও বলেনি। আজ হঠাৎ এভাবে জিজ্ঞেস করতে গিয়ে তার স্বর আটকে যাচ্ছে। শাহিনুর বেগম ও তাই চুপসে গেলেন। এই কারণেই ফোনেও অর্নিলার ব্যাপারে কথা বলেন না তিনি। ভয় হয় ভীষণ আবার অর্নিলাকেও ফে/লে দিতে পারেন না। কি য/ন্ত্রণা!
.
বিকেলের দিকে সারফারাজ বসার ঘরেই সোফাতে বসে বই পড়ছিল। দরজায় কেউ কড়া নাড়তেই ফারাজ উঠে দরজা খুলে দিল। বইয়ের পাতা থেকে মুখ সরিয়ে সামনে তাকাতেই সেকেন্ড কয়েকের জন্য থমকে গেল সে। খোলা চুলে অর্নিলা দাঁড়ানো। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে ফারাজ ভাইয়ের দিকে।‌ পরনে তার লাল কালো রঙের পাতলা একটা শাড়ি। সাজগোজ কিছু না থাকলেও ঠোঁট জুড়ে আছে লাল রঙের আবরণ। এমন সাজ? আশ্চার্যিত দৃষ্টিতে চেয়ে রইল সারফারাজ। বিয়ের দিনেও মেয়েটা বোধহয় এতো সাজেনি। আজ হঠাৎ? কি দরকার? সবকিছু তাল গোল পাকিয়ে গেল। সত্যি সত্যি কোন ছেলের সাথে আবার… সারফারাজ তট/স্থ হয়ে গেল। এতো আগেই কিছু ভেবে ফেলা ঠিক না। অর্নিলা অবাক স্বরে বলল, “ফারাজ ভাই, আপনি? কবে এলেন?”

“আজ! তুই কোথায় গেছিলি অনি? আর এতো সেজেগুজে কি করছিলি?“

অনি দাঁত এক পাটি বের করে হাসল। জুতো খুলতে খুলতে বলল, “ওই আমার বান্ধবীর বাসায় দাওয়াত ছিল না, ওখানে গেলাম।”

“শাড়ি পড়ে গেছিলি?” ভীষণ অদ্ভুত প্রশ্ন। প্রশ্নটা সে নিজেও করে চুপ হয়ে গেল। মনে হলো প্রশ্ন করা ঠিক হয়নি। কিন্তু অনি সহজ গলায় জবাব ও দিয়ে দিল, “না তো! ওই ওদের ওখানে পড়লাম। সবাই শাড়ি পরে ছবি তুলবে তাই আশার আম্মু আমাকেও শাড়ি পরিয়ে দিল।”

অনি সোজা ঘরে ঢুকে গেল। সারফারাজ নিশ্চুপ হয়ে উত্তর শুনলো। অনি কে আরেক দফা দেখে আবার চমকে গেল সে। অনির স্বাস্থ্য একটু ভালো। একটু ভালো না, অনেক ভালোই। তাই ওমন পাতলা শাড়িতে তাকে যেন একটু বেশিই আর্কষনীয় লাগছিল। তবুও চোখ সরিয়ে নিল সে। এদিকে অর্নিলা জিজ্ঞেস করল, “ফারাজ ভাই? আপনি কতোদিন থাকবেন?”

“কেন? এটা কেন জিজ্ঞেস করছিস?”

”আমরা সবাই পিকনিকে যাবো,‌ তাই আপনাকে জিজ্ঞেস করছি। মানুষ গুনতে হবে তো, আপনি গেলে একজন ম্যামবার বাড়বে।”

সারফারাজ জবাব দিল না। হন হন করে ঘরে চলে গেল। অর্নিলা মুখ ভেংচি কাটল। এই ফারাজ ভাই হঠাৎ হঠাৎ কি মনে করে যে রাগ করে সে বুঝতে না। টেবিলের উপর থেকে টিস্যু নিয়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে সে ঘরের দিকে গেল। আর জোর গলায় ডাকতে লাগল,‌ “মামনী! মামনী! আমি এসে পড়েছি।”
.
সারফারাজ এসেছি দিন দুয়েক হলো। তার আসার খবর শুনে ফরহাত এসে হাজির। দুই ভাই জমিয়ে আড্ডা দিবে। এর মধ্যেই খবর আসলো, শিকদার বাড়ি থেকে খবর এসেছে। ইয়াতিম শিকদারের‌ বড় ছেলে তারেক শিকদার খবর নিয়ে এসেছে। সারফারাজ এখানে আসার খবর সেই বাড়িতে ইতিমধ্যে চলে গেছে। তারেক এসেছে অর্নিলা আর তার স্বামী কে দাওয়াতে দিতে। কিছুদিন যেন তাদের বাড়িতে গিয়ে বেড়িয়ে আসে। এমন অদ্ভুত দাওয়াতে সারফারাজ একটু অবাকই হলো। ফরহাত হেসে হেসে বলে উঠল, “আরে তোকে ডাকছে কারণ আছে। তুই গেলে অর্নিলা ওই বাড়িতে যেতে পারবে। নাহলে তো অর্নিলা কে একা ওই বাড়িতে যেতে দেওয়া হয় না।”

“এখন না গেলেই বা কি হয়? যাবার দরকার নেই।”

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আরিফ হাসান সহজ গলায় বললেন, ”যেতে হবে। না গেলে এই নিয়ে পরে আলাপ আলোচনা হবে। সবাই ভাববে আমরা অর্নিলা কে আটকে রেখেছি। তিল থেকে তাল বানাতে বেশি সময় লাগবে না। আমার কথা তুমি বুঝতে পেরেছো ফারাজ!”

বাবার মুখের উপর কথা বলল না ফারাজ। ফরহাত হেসে মিনমিনিয়ে বলল, “ভালোই তো হলো ব্যাটা। বিয়ের পর তো কোথাও ঘুরতে যেতে পারলি না, ধরে নে এটাই তোর হানিমুন!”

”চুপ করবি তুই।”
ফরহাত চুপ করবে কি? মুখ টিপে হাসতে লাগল। বাবা আচমকা জিজ্ঞেস করে উঠ’লেন, “কি ব্যাপার ফরহাত? তুমি হাসছো কেন?“

“কিছু্ না আংকেল, ওই এমনি।”
আরিফ হাসান ছোট ছোট চোখ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বের হয়ে গেলেন। এই ছেলেকে তার পছন্দ আবার পছন্দ ও না। মাঝে মাঝে বড়দের সামনেই বেফাঁস কথা বলে ফেলে।
.
পরদিন অর্নিলা কে সাথে নিয়ে শিকদার বাড়িতে পৌঁছাল সারফারাজ। তারা আসাতে বাড়ির সবাইকে মহাখুশি দেখালো। সায়মা ভাবী এসে অর্নিলার থুতনিতে চুমু খেয়ে আদর করলেন। লাজুক স্বরে বললেন, ”কি ব্যাপার অনি? বর কে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে গেলে?”

অর্নিলা হাসল। সারফারাজের সামনে ইয়াতিম শিকদার। দুজনেই চাচা কে সালাম দিলো। সায়মা অর্নিলা কে নিয়ে ভেতরের ঘরে চলে গেলেন। সারফারাজ কে নিয়ে চাচা বসলেন বসার ঘরে। ফারাজ‌ বার বার আড়চোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। কোনভাবে নিয়াজ কে দেখা যায় কি না সেটাই দেখার চেষ্টা করছে। নিয়াজ কে আশপাশ পাওয়া গেলো না।‌ চাচার সাথে দুটো কথা বলে সারফারাজ ঘরে ঢুকল। দেখল অর্নিলার হাতে আবারও একটা শাড়ি। গোলাপি রঙের জামদানি শাড়ি। সে আবারো খুশিতে আটখানা হয়ে বলল,‌“‌ফারাজ ভাই, দেখেন ভাবী আমায় এই শাড়িটা দিয়েছে। সুন্দর না!“

“হ্যাঁ খুব সুন্দর! যাও ব্যাগে রেখে দাও।“

”কি ব্যাগে রেখে দিবো। এটা পড়ব এখন!”

সারফারাজ ভাবতে লাগল। সেদিন আচমকা অর্নিলা কে শাড়ি পরা দেখে তার মনে যেই অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছিল অন্য কোন ছেলের যে তেমন অনুভূতি হবে না তার গ্যারান্টি সে দিতে পারছে না। অর্নিলা সুন্দরী! মোটাসোটা মেয়েটা শাড়ি পরলেই আরো বেশি সুন্দর লাগে। তখন যেকোন ছেলেরই তাল সামলানো মুশকিল হতে পারে। আর এই বাড়িতে তো নিয়াজ স্বয়ং উপস্থিত। কোনভাবেই অর্নিলা কে শাড়ি পড়তে দেওয়া যায় না। সারফারাজ বারণ করে দিল। বলল, ”তুমি তো শাড়ি পরতে পারো না অনি। এটা এখন রেখে দাও, বাসায় গিয়ে মা পরিয়ে দিবে।” যখন অনি কে বুঝিয়ে কোন কথা বলতে যায় তখন ”তুমি” শব্দটা আপনাআপনি চলে আসে। অর্নিলাও লক্ষ্মী মেয়ের মতো মাথা দুলালো।

সারফারাজ ফ্রেশ হয়ে আবারো বেরিয়েছে। ইয়াতিম শিকদার ডেকে খবর পাঠিয়েছে। সারফারাজের কেবল মনে হচ্ছে ইয়াতিম শিকদার তাকে কিছু একটা বলতে চায় কিন্তু বলতে পারছে না। কিন্তু সেটা কি? অনির সম্পত্তি বিষয় কিছু?

তার খয়েরী রঙের শার্টটার হাতা ফ্লোট করতে করতে সারফারাজ বেরিয়ে গেল। এই বাড়িতেও এর আগে একবার এসেছিল সে। এই বাড়িটাও খানিকটা তাদের বাড়ির মতোই। তবে তাদের বাড়ির মতো বিশাল বড় না। তার চেয়ে একটু ছোটই হবে। আর তাদের বাড়ির পিছনে কোন দিঘি নেই কিন্তু এই বাড়ির পিছনে আছে। এই দিঘি টা তার খুব ভালো লাগে। ভাবছে বাবা কেও বলবে তার বাড়ির পিছনে একটা দিঘি বানাতে। সেখানে ভালোই জায়গা আছে।

চাচার সাথে বসে পড়ল ফারাজ। তার হাতে‌ চায়ের কাপ।‌সামনে‌ নানা ধরণের কেক, মিষ্টি, বিস্কুট। সারফারাজের কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। কিছুক্ষণ আগেই দুপুরের‌ খাবার খেয়েছে।‌ বিকেল ও প্রায় হয়ে গেছে। চাচা কিছু কাগজপত্র নিয়ে তার পাশে এসে বসলেন।‌ এগুলো সারফারাজের হাতে দিয়ে বললেন, “এগুলা সব হইতাছে অর্নিলার সম্পত্তি। কোথায় কি আছে না আছে? কতোটুকু আছে? সবকিছু এই কাগজে লেখা আছে বাবা‌! এতোদিন আমি সব দেখছি এবার তুমি দেখবা!”

”কি দরকার চাচা, আপনি যখন এতোদিন দেখছেন এখনো দেখেন। এসব নিয়ে আমার কোন ইন্টারেস্ট নাই।”

চাচা দাঁত বের করে হাসলেন। ছেলের তারেকের দিকে ফিরে বললেন, ”শুনছোস কথা। না বাবা,‌ এসব এখন তোমাগো দায়িত্ব। তোমরাই বুঝো। দেখি মিষ্টি খাও। খাও না কেন? তুমি এই বাড়ির জামাই। এই তারেক,‌‌তোর বউরে ক, আরো কয়টা মিষ্টি আনতে।”

”দরকার নাই চাচা। আমি অনেক খেয়েছি আর না। এরপর খেলে বদহজম হয়ে যাবে। আমি ঘরে গিয়ে একটু রেস্ট নেই!”

উঠে দাঁড়াল সারফারাজ। চাচার হাতের দিকে তাকাল সে। কাগজপত্র সব যেভাবে শক্ত হাতে ধরে আছে মনে হচ্ছে না তাকে কিছু দিবে। কিন্তু এমনভাবে বলল যেন এই দিয়ে দিচ্ছে। কি অদ্ভুত মানুষ জন। তাদের কি কম কিছু আছে নাকি? অনি কে দেখেশুনে রাখার মতো যথেষ্ট আছে! কথাগুলো ভেবে ঘরের দিকে আগালো সে। কিন্তু একি? ঘরের দরজায় বাইরে এ কেন দাঁড়িয়ে? ঘরে কেমন উঁকিঝুঁকি মার/ছে মনে হচ্ছে।

সারফারাজ দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল। ধরতে সময় না এটা নিয়াজ। কিন্তু ও ঘরে উঁকি দিয়ে কাকে দেখছে? অনি কে! মাথায় র/ক্ত চড়ে গেলো ফারাজের। সে দ্রুত আচমকা নিয়াজের কলার চেপে ধরল। ধপাস করে দরজা খুলে দিয়ে থতমত সে। তার অক্ষিগোলাক দুটি স্থির হয়ে গেল। অর্নিলা হা হয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। দ্রুত দরজা বন্ধ করে দিল সে।‌ ঘন ঘন শ্বাস ফেলে তাকাল নিয়াজের দিকে। নিয়াজের চোখমুখে ইতিমধ্যে শুকিয়ে গেছে। রা/গে ফারাজের মাথা ভন ভন করছে। কয়েকটা চড়ে/র চো/টে নিয়াজ থড়মড়িয়ে মেঝেতে পড়ে গেল। ফারাজে ইচ্ছে করল একটা লা/থি মা/রতে শয়/তানটাকে। এর মধেই ইয়াতিম শিকদার,‌ তারেক আর সায়মাও ছুটে এসেছে। সারফারাজ কোমরের বেল্ট খুলেই বেথ/র পেটা/তে লাগল নিয়াজকে। নিয়াজের আর্ত/নাদ পুরো শিকদার বাড়ি জুড়ে। সকলে হত’ভম্ব হয়ে দেখছে। ফারাজের এই রূ/প কারো জানা ছিল না। সে বে/ঘোরে শুধু মে/রে যাচ্ছে!

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে