চৈত্রের_রাঙায়_রচিত_প্রণয় পর্ব-০৪

0
522

#চৈত্রের_রাঙায়_রচিত_প্রণয়
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৪

আমি সারফারাজ শেহদাত। বয়স ২২ ছুঁয়েছে। ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করছি ঢাকা মেডিকেল এ। পাক্কা দু বছর বাদে আমার ইর্ন্টানশিপ শুরু হবে। তাই পড়াশোনার ভীষণ চাপ। এই চাপের মধ্যেও মোহনগঞ্জ এসেছি পরিবারের সাথে দেখা করতে। যদিও আসা হয় না। তবুও এই বছরের মধ্যে আমার একটু বেশিই আসা হয়েছে। প্রথমবার এসেছিলাম মাস তিনেক আগে। হঠাৎ শামসের শিকদারের মৃ/ত্যু খবর পেয়ে। এসে দেখি তাদের পুরো বাড়ি নিশ্রান্ত। তাদের বাড়ি এ যুগের। এই যুগের কেন বলছি? কারণ আমাদের বাড়ি আদিযুগের। এ বাড়ি বিশাল বড় আর জমিদারি একটা গন্ধ পাওয়া যায়।‌‌আমার বংশের কেউ জমিদার ছিলেন না। আমার দাদা মশাই কোন এক জমিদারের থেকে কম দামে বাড়িটি কিনতে পেরেছিলেন। এরপর আবার সেই বাড়িতে অনেক কাজ হয়েছে। বাইরে দেখে এ যুগের মতো মনে হলেও ভেতরে আদিকালের ব্যাপারট রয়ে গেছে। যেমন আমার চিলেকোঠার সিঁড়ি গুলো এখনো কাঠের সিঁড়ি। বিশাল বড় বড় ঘর। আগের যুগের পুরনো ফার্নিচার। বাড়ির চারপাশে‌ বড় বড় গাছ। গাছের সংখ্যা বেশি নেই তবে যা আছে নেহাত মন্দ না। আর শামসের শিকদারের বাড়ি এ যুগের মানে উঁচু ভবনের বাড়ি। এ ভবনের দ্বিতীয় তলায় তাদের বসবাস বাকি গুলো ভাড়ায় চলে। তিনি বিশাল ধনী ছিলেন, হ্যাঁ আমাদের চেয়েও অবশ্য। তাই মৃ/ত্যু শোকে মানুষের অভাব কম হলো না। তার একমাত্র কন্যা অর্নিলা অথৈ কে দেখছিলাম বাবার লা/শের পাশে বসে কাঁদতে। চিৎকার করে কাঁদে মেয়েটা। আগে কখনো এভাবে কাঁদতে দেখেনি কিংবা ওর ক্ষেত্রে কখনো মনযোগ দেই নি। মাঝে মাঝে মনে হতো মেয়েটা একটু ঢং করেই চিৎকার করে কাঁদে। সেদিন ওর কান্না দেখে মনে হলো ও সত্যিই বড়ো দুঃখ পেয়েছে। মনের গহীনে বিষণ্ণতা ভরে উঠল। মন চাইল, আমি নিজে গিয়ে ওর কান্না থামিয়ে দিই। মেয়েটা ব্যাকুল হয়ে কাঁদছে।

দিন দুয়েক বাদে ফেরত এলাম। ঈদ উপলক্ষে আবার যাওয়া। কুরবানী ঈদ, না গেলেই নয়। নিজের বাড়িতে কুরবানী দেওয়ার একটা বিশাল ব্যাপার থাকে। আত্নীয় স্বজন সবাই আসে। গরুর হাটে যাওয়া, সকলে সেখান থেকে গরু কিনে ফিরে আসা বড় মস্ত ব্যাপার।‌ রোমাঞ্চকর এসব মূহূর্তের লোভ সামলানো সম্ভব হয়নি। অথচ এই সপ্তাহ খানেক বাদেই আমার টার্ম এক্সাম। হেলাফেলা করার সময় নেই একদম। আজ না ফিরলেই নয়।

তবে এবার বাড়ি এসে ভীষণ বড় এক কাণ্ড ঘটল। আমার বিয়ে হয়ে গেল,‌ কি আশ্চর্য ঘটনা। অথচ বিয়ের কয়েক ঘণ্টা আগেই আমাকে জানালো হলো আমার বিয়ে। বিয়ে নিয়ে তেমন কোন উন্মাদনা নেই আমার মাঝে,‌থাকার‌ কথাও না। মনে হলো এটা নামমাত্র একটা বিয়ে। রাত এখন বাজে সাড়ে ১১ টা। ১১ টা ৪৫ এ ট্রেন ছাড়বে। পুরো ট্রেনের কেবিনে আমি একা। একা থাকতে আমার ভালো লাগে, পুরোপুরি ইন্ট্রোভার্ট স্বভাব আমার নেই কিন্তু আবার বেশি মিশতেও ভালো লাগে না। কিছুক্ষণ আগেই আমার বাবা আর চাচাত ভাই ফরহাত আমায় বিদায় দিয়ে বাড়ির জন্য রওনা দিয়েছে। ট্রেনের এক কোনে আমি একা বসে। গরম লাগছে। তবুও ফ্লাক্স থেকে গরম গরম চা বের করে চুমুক দিলাম। বেশি গরম লাগলে গরম চা খেতে হয়। বি/ষে বি/ষে বিষক্ষয়।

একা কেবিনে আধশোয়া অবস্থায় বসে আছি। গায়ে পাতলা একটা চাদর। নিভো নিভো আলো জ্বলছে। অথচ এখন আমার এখানে থাকার কথা ছিলো না। উচিত ছিল একটা সুন্দর ঘরের। যেই ঘর পুরো ফুলের গন্ধে ম ম করবে। সাদা বিছানা জুড়ে নানা রঙের ফুলের সমারোহ। কোন এক রমনী বিছানার মাঝে বসে আমার জন্য অপেক্ষা করবে। আমি তার কাছে যাবো, পাশে বসে গল্প করব। কোনো এক বাহানায় তাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করব, হুট করে তার কোলে মাথা রাখব, প্রেম প্রেম স্বভাব না থাকলেও তখন মন ভরে প্রেম জাগত হবে। খুব দুষ্টু মিষ্টি কথা বলে তাকে হাসাব। মেয়ে হাসলো মানেই ফাঁদে পড়ে গেল। একটা সুন্দর প্রেমের সূচনা আমার হতেই পারত কিন্তু এমন কিছু হলো না। যার সাথে বিয়ে হলো তাকেও আমার বিশেষত পছন্দ নয়। অপছন্দের কারণ সে নয়,‌তার বাবা! তার বাবার চরিত্র কখনোই ভালো ছিল না। বিভিন্ন নারীর সাথে তার অবৈধ মেলামেশা আর সম্পর্ক। বৃহৎ ধনী হবার এই যেন এক লাভ। নিজের ফুফু কে কখনো সুখী দেখতে পাই নি। প্রায়ই দেখতাম আমাদের বাড়িতে এসে মায়ের পাশে বসে কাঁদত। তার কান্না আমায় বড্ড পীড়া দিত।‌ কিছুদিন পর পরই ফুফার সাথে ঝগড়া করে ফুফু আমাদের বাসায় এসে আশ্রয় নিতেন।

ছোট থেকেই আমি ভীষণ লাজুক অথচ আমার ফুফু
কাছে আমি অনেক মিশুকে। ফুফুর সাথে কথা বললে মন ভালো হয়ে যেত। আমার মনে আছে, একবার ফুফু হাসতে হাসতে আমায় বলেছিলো, “শোন বাবা! আমি যদি ম/রে যাই তাহলে তুই বড় হয়ে আমার মেয়ের দায়ভার নিবি!“ কথাটা তখন নেহাত আমি বুঝি নি। পেছন ফিরে দেখি অনি একটা খেলনা গাড়ি নিয়ে আরাফাতের সাথে ঝগড়া করছে। আরাফাত হচ্ছে তার চোখের বালি। কোনদিন তাদের মিশ খায়নি, অথচ দিনশেষে সেই আরাফাতের সাথেই তার অনেক ভাব। সেই ঘটনার পর ফুফু আর একদিন ও বাঁচে নি। রাতেই তার মৃ/ত্যু সংবাদ আমায় নিস্তব্ধ করে দিলো। আমার খুব মনে আছে, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আমি দেখি তখন সবে ১ টা বাজে। মা ঘরের আলো জ্বালাতে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ছোটাছোটি, কান্না কাটির আওয়াজ। ফুফু আমাদের সেই আদিমযুগের বাড়ির একটা কোনের ঘরে ফ্যানের সাথে ঝু/লে ছিলেন। আরাফাত আমার পাশেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। মায়ের কোলে অর্নিলা সেই তার বিখ্যাত ভঙিতে কাঁদছে। মায়ের মৃ/ত্যু কি তখনো বোধহয় সে বুঝে না, তাহলে কেন কাঁ/দছিল? মায়ের কান্না আমার অবাক করেনি, অথচ বাবার চোখে অশ্রুজল আমায় হতবাক করেছিলো। কখনো তাকে কাঁদতে দেখেনি আমি। সেই ঘরটাই আজ বাবার স্টাডি রুম, বিশাল বিশাল কাগজপত্র দিয়ে ভরা সেই ঘর, দিনের বেশির ভাগ সময়ই সেই ঘরে সময় কাটান তিনি। বোনকে কতো ভালোবাসতেন এরপর বোধহয় আর বলার প্রয়োজন নেই। সেই কাঁদো মেয়েটাকে মা আমার বিছানার উপর রেখে চলে গেলেন। দায়িত্ব দিয়ে গেলেন আমাকে। অর্নিলা আমার বিছানার উপর বসে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদছে। সেদিন প্রথমবারের মতো তাকে আমি আগলে নিয়েছিলাম। জড়িয়ে ধরে শান্ত করার চেষ্টা করেছিলাম। সেটাই প্রথম আর সেটাই শেষ। এরপর আর কখনো তাকে আমি অমন আবেগ নিয়ে জড়িয়ে ধরেনি। অমন করে স্নেহ দোরে তাকে আবদ্ধ করেনি। তার উপর আমার অদ্ভুত এক রা/গ জন্মাতে লাগল।

কারণ ছিল তার বাবা! তার বাবা একজন চরি/ত্রহীন পুরুষ। কাপুরুষ! অথচ সেই কাপুরুষের মৃ/ত্যুতে সেই মেয়ে কাঁদছিলো। আমার রাগ হচ্ছিল। আমার জীবনে তার বাবার চেয়ে বেশি ঘৃ/ণা আমি কাউকে করি নি। অথচ অর্নিলা তার জীবনে হয়তো তার বাবার থেকে বেশি ভালো কাউকে বাসে নি। কি অদ্ভুত অমিল আমাদের। বাবার রক্তই তার শরীরে বইছে। আচ্ছা,‌ সেই কি তার বাবার মতোই হবে? তাদের তো একই বংশ! নিয়াজের সৎচরিত্র আমায় অবাক করেনি। জানা ছিল এমনই হবে। তাদের বংশ কলু/ষিত, নিচ, জ/ঘন্য! পুরো একটা বদ্ধ জলাশয়! এই জলাশয়ে কোন পদ্মফুল ফুটতে পারে না। অর্নিলার থেকে এমনটা আমি আশা করি না। তবুও তাকে পুরোপুরি ঘৃণা করতে পারি না। আমি বোধহয় মাঝামাঝি আছি। না পারছি তাকে পুরোপুরি ঘৃণা করতে না পারছি ভালোবাসতে। কারণ দিনশেষে আমিও আমার ফুফুর একটা ছায়া তার মধ্যে দেখতে পাই। তবুও যদি অর্নিলা আমায় ঠকায় তবুও আমি অবাক হবো না। মেনে নিবো, এটা তার বংশের রোগ, ডিএনএ বলেও তো কিছুই আছে! আনমনে হেসে উঠলাম। অনেক ভাবা হয়েছে আর না। ঘুমাতে হবে। ফোনের মধ্যে এলার্ম দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
.
সারফারাজ হলে থাকে না, থাকে ভাড়া বাড়িতে। কলেজ থেকে সেই বাসা দূরে নয়। চিৎকার চেঁচামেচিতে তার পড়া হয় না। যখন সে পড়তে বসে তখন চারদিক থাকতে হবে নিস্তব্ধ। তার সমস্ত মনোযোগ থাকে পড়ার মধ্যে। সেই ঘটনার পর দিন পেরিয়ে গেছে। গেছে মাস পেরিয়ে। পড়াশোনার সাথে অধিক ভাব হবার সুবাধে সবার থেকে তার যোগাযোগ অনেক দূরে। ওই রোজ একবার মা ফোন করে খবর নেয়, বাবা ফোন করে পড়াশোনার কথা জিজ্ঞেস করে। ব্যস, এতেই সমাপ্ত। কখনো অর্নিলা তাকে ফোন করে কিছু জিজ্ঞেস করেনি, কথাও বলেনি। সেও ফোন করেনি। করার দরকার পড়েনি অবশ্য। রেজাল্ট বের হবার পর আরাফাত একবার ফোন করেছিলো। দুজনেই গোল্ডেন পেয়েছে। বেশ, ভালো! এমনটা আশা করেনি। আরাফাত ভালো ছাত্র হলেও অর্নিলা থেকে কখনোই আশা করা যায় না। অর্নিলা কর্মাসের স্টুডেন্ট আর আরাফাত সাইন্সের। পড়াশোনার সাথে আরাফাতের যতোটা ঘনিষ্ঠতা ঠিক ততোটাই দূরত্ব অর্নিলার সাথে। সারফারাজ তো মুখ বাঁকিয়ে মনে মনেই বলল, “এই মেয়ে পেয়েছে গোল্ডেন! নিশ্চিত পাশে কোন ভালো মেয়ে পড়েছিল। দেখে দেখে লিখেই পাশ করেছে। তা আর নয়তো কি?” সারফারাজ তো নিশ্চিত ছিল, এই মেয়ে ডাব্বা মারবে নয়তবা খুব কষ্টে পাশ করবে। তার এই বিরাট অর্জনে সে একটু বিস্মিত!

ভালোই মাস পেরিয়ে যাচ্ছে। সারফারাজের তৃতীয় ফেইজ শেষে এবার চতুর্থ ফেইজে পর্দাপণ। এই তো শেষ বছর। কোনমতে এবার দেড়টা বছর কাটিয়ে দিতে পারলেই বাঁচে। ইদানিং পড়াশোনা থেকেও কেমন এক বিতৃষ্ণা চলে এসেছে। শুভ একথা শুনে ব্যঙ্গ করে হাসল। শাহাদাত তাচ্ছিল্য করে বলল, “বললি বেশ! গ্রেট সারফারাজ শেহদাতের নাকি পড়াশোনায় বিতৃষ্ণা চলে এসেছে। আয় হায়, এ কি কাণ্ড। দেশবাসী তবে যে এক জ্ঞানীর ছায়া থেকে বিতারিত হলো!” শাহাদাত অনেক কটুক্তি করে। অট্টহাসিতে মেতে উঠল সে। যোগ দিল শুভ নিজেও। বলে উঠল, ”দেখবি, বেশিদিন আর দূরে নেই। খুব জলদিই তুই বড় ডাক্তার হয়ে যাবি। কতো বড় সার্জেন্ট! আর আমরা হবো তোর চ্যালাবেলা!”
আবারও কটাক্ষ! তবু যতই কটাক্ষ করুক, সারফারাজের আর বন্ধু নেই এই দুটি কয়েক ছাড়া। তাদের কথা সে হেসেই উড়িয়ে দিল। তারা তিনজনই নীলক্ষেত থেকে বই কিনে বের হলো। শাহাদাত তার ঘাড়ে হাত রেখে বলে উঠল, “কি ব্যাপার ব্রাদার! এই না পড়াশোনায় বিতৃষ্ণা চলে এসেছে। এখন দেখি বইপত্র কিনে ফেললি!“

“তোদের চ্যালাবেলা বানাতে হবে না, তাই এই কাজ!”

শুভ চিকনস্বরে বলল, “ওই বিতৃষ্ণা না ছাই! বাড়িতে নতুব বউ রেখে এসেছে। ব্যাটার তর সইছে না। হয়েছে আমরা সব বুঝি। উত্তেজনায় চেক কর ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেলো কি না!” সারফারাজ কথা বাড়াল না। শাহদাত ফিসফিসিয়ে বলল, “কি হলো? চুপসে গেলি যে!”

“কিছু না। আমার একটু ওয়েদার চেঞ্জ দরকার। এছাড়া আর কিছু না!”

“তাহলে চলে যা বাড়িতে। দেখে আয় বউকে।”

“না, মোহনগঞ্জ যাবো না। অন্য কোথাও যাই। চল!”

“দেখা যাক, সবাই আমাদের ব্যাচের সবাই নাকি কোথাও যাওয়ার প্ল্যান করছে। দেখি কি প্ল্যান করে তারা। আমারও গা ম্যাচ ম্যাচ করছে। একটা টুর দেওয়া দরকার।”

শাহাদাত বলল, “এ কথা স্যার কে বললাম। স্যার বলল হাসপাতাল পুরোটা দর্শন করে আসো। মন না ভরলে মর্গে যাও। মৃত/দেহ দেখলে শরীরের আচমকা যেন আ/গুন ধরে যায়, তোমারও তাই হবে! নারীর মৃত/দেহ দেখো না বটে, আমি সেটা দেখতে বলি নি!”

সারফারাজ হেসে উঠলো। শুভ ও হেসে উঠল জোরে। শাহাদাত মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, “স্যার যে আমায় কি ভাবে, বুঝলাম না!”
.
তিনবন্ধু জট পাকিয়ে গেলো টিএসসির মোড়ে। দুপুরের খা খা রোদ্দুর। রাস্তাঘাটে তেমন লোকজনের ভিড় নেই। একদল কলেজ ড্রেস পড়া মেয়েরা রাস্তার ধারে দিয়ে যাচ্ছে। চোখ পড়ল শহীদ মিনারের দিকে। কয়েক জোড়া ছেলেমেয়ে একসাথে ঘুরছে। মিলেমিশে ছবি তুলছে। ছবি তুলতে গিয়ে গায়ের উপর প/ড়ে যাচ্ছে। আশ্চর্য কারবার। কোন ফাঁকে ছেলেটা মেয়ের কোমরে হাত রেখে ছবি তুলে ফেলল বোঝা গেল না। মেয়ে হাসছে, কিছু বলছে না। সারফারাজ কপাল কুঁচকে ফেলল। শাহাদাত বলল, “এই হচ্ছে নতুন জেনারেশন! কলেজ ফাঁকি দিয়ে ঘুরাঘুরি। বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড, বেস্ট ফ্রেন্ড আর কতো ফ্রেন্ড!”

শুভ বলে উঠল, “কলেজে উঠেই সব উড়নচণ্ডী হয়ে যায়। কলেজে প্রথম বছর তো, উল্লাসে কাটাক। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পড়াশোনার উপর আছাড় খেয়ে পড়বে।”

সারফারাজ ভাবছিলো অন্যকিছু। শাহাদাত আচমকা বলল, ”কিরে ফারাজ! তোর বউ ও তো এবার কলেজে। তা ওর খোঁজখবর নিস তো ঠিক করে। এখনকার যা দিন, দেখিস তোর পিচ্চি বউ না আবার কোন ছেলের ফাঁদে পড়ে যায়।”

সারফারাজ মুখ বাঁকিয়ে বলল, ”সে যাক। জেনেশুনে কেউ নিজেকে বলীর বা/করা বানায় না!”

“কথা শুনে মনে হচ্ছে তোর বউ বহুত ডেঞ্জা/রাস পাবলিক!”

“তা আর বলতে। ছোট মরিচে ঝা/ল বেশি। ওর যা তেজ। ওকে ঘুরাবে কোন ছেলে? এমন সাধ্যি আছে কজনের!”
সহসা কথাগুলো বলে দিলেও মনে একটু ঘটকা লাগল যেন কোথায়। বাসায় ফেরবার পর মনে পড়ল,‌ অর্নিলার কোন ব্যাপারেই তার জিজ্ঞেস করা হয়নি। কোন কলেজে ভর্তি হয়েছে, পড়ালেখা কেমন চলছে এসব কিছু!” বইয়ের স্তূপ গুলো টেবিলে রেখে ফোন হাতে নিল। মায়ের নাম্বার ডায়াল করার পরেও আরাফাত কল করল। আরাফাত ফোন রিসিভ করেই সালাম না দিয়ে বলে উঠল, ”হ্যাঁ বল!”

“বল‌ মানে? সালাম দিতে জানিস না?”

“ওহ আসসালামুয়ালাইকুম ভাইয়া। বল এবার কি হইছে?”

“খুব ব্যস্ত নাকি?”

“হ্যাঁ, কোচিং আছে। আমি এখুনি রেডি হয়ে বের হবো।”

“কলেজ কেমন হচ্ছে তোর?”

“ভালোই হচ্ছে।”

“ভালো মতো ক্লাস করছিস তো। রোজ ক্লাস হয়?”

”হ্যাঁ হয়!”

“অনির পড়ালেখার কি খবর?”

“আমি কি করে জানব ওর পড়ালেখার কি খবর? আমি কি ওর কলেজে পড়ি নাকি?”

“কেন? তুই কোন কলেজে?”

“আমার তো বয়েস কলেজ আর ওর হচ্ছে গার্লস কলেজ। এভাবেও বুড়ির পড়ালেখার খবর আমি জানি না। নতুন ফোন পেয়ে সারাদিন ফোন নিয়ে গুঁতোগুতি করে!”

“ও নতুন ফোন পেয়েছে?”

”হ্যাঁ, কেন তুই জানিস না। আমি নাম্বার মেসেজ করে দিই, ওর খবর ওর থেকে নে। আমি রাখলাম!”

বলেই ধপ করে ফোন কেটে দিল।‌ বাবা মহাব্যস্ত সকলে। সারফারাজ ফোনটা টেবিলে রেখে ভাবতে লাগল, অনি ফোন পেয়েছে! কই? তাকে তো কেউ বলল না। আর সারাদিন ফোন নিয়ে গুঁতোগুতি কিসের? কার সাথে আবার কথা বলে এতো! কই? তাকে তো কখনো ফোন করে নি। এর মধ্যে টুং টুং শব্দ এলো। আরাফাতের মেসেজ এসেছে। অনির নাম্বার পাঠিয়েছে সে!

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে