চৈত্রের_রাঙায়_রচিত_প্রণয় পর্ব-২৯

0
480

#চৈত্রের_রাঙায়_রচিত_প্রণয়
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_২৯

অনি বেশ ভয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর পরই চাতক পাখির মতো এদিক ওদিক চেয়ে দেখে। বার বার মনে হয় আশেপাশে কেউ আছে। অথচ পুরো ঘর শূন্য! ভয়ে কুঁকড়ে উঠে সে। আবার গুমড়ে যায়। আচমকা চেঁচিয়ে উঠে। মনে সন্দেহ জাগে, তার কান্নার আওয়াজ আদৌও কেউ শুনতে পারছে তো? ক্লান্ত দেহ নিমিয়ে যায়। মুখ খুলে শ্বাস নিতে থাকে সে। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ। টের পেয়ে তটস্থ হয়ে যায় অনি। কেউ আসছে? মাথা তুলে না সে। নিচু হয়ে থাকে। খানিকক্ষণ বাদে কারো পা জোড়া দেখতে পায়। ভয়ে শিউরে উঠে সে। শুকনো ঢোক গিলে আগের মতোই নিশ্চুপ থাকে। আচমকা লোকটা হাত দেয় তার বুকের মধ্যে। কিৎকর্তব্যবিমূঢ় অর্নিলা সাথে সাথে মুখ তুলে তাকায়। চেঁচানোর আগেই তার মুখ চে/পে ধরে লোকটা। তার রক্ত ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। কি করতে যাচ্ছে লোকটা? অশ্রাব্য গালি দিয়ে বলে, ”চুপ কর শা লি। মুখ থেইকা একটা আওয়াজ বাইর করলে জান নিয়া নিমু।”

এমন ধমক শুনলে গায়ে কাঁটা দেয়। লোকটা দৃষ্টি দেখলেই ভয়ে আঁতকে উঠে। কিন্তু তাতে অনি একদম দমে যায়নি। দমবে না সে। দুজনের মধ্যে ধস্তা ধস্তি শুরু হয়। গনি মিয়া চেষ্টা করছে অনির মুখ বন্ধ করাতে। পারছে না। শেষমেষ অনি তার হাতে কামড় দিয়ে বসে। রাগে সজোরে এক চ ড় মারে। আবারো দরজা খোলার শব্দ। অনি মুচকি হাসে। চড়ের চোটে ঠোঁট কে টে রক্ত পড়ছে। ওস্তাদ ভিতরে এসে জিজ্ঞেস করে, “কি হইছে?”

“দেহেন ওস্তাদ! শা লি আমারে কামড় মার’ছে।”
“তুই এদিকে কি করোস? আমি না কইছি এদিকে কেউ আইবি না। কিরে নূর?”
“ওস্তাদ, আমি তো জানি না।”
গনি একরোশ রাগ নিয়ে আবারো অশ্রাব্য গালি দেয়। বলে, “ওস্তাদ, এই মাইয়ার একটা ব্যবস্থা এবার আপনারে করতেই হইবো!”

কাদের রক্তবর্ণ চোখে গনি কে দেখে একবার অনিকে। নুরু কে হুকুম দেয় ফোনটা আনতে।
.
“আসসালামুয়ালাইকুম স্যার! ভালো আছেন?”
“কে? কাদের?“
“জি স্যার। গলার স্বর দেখি চিইনা গেছেন।”
“কি চাও তুমি কাদের?”
“স্যারের হাতে মনে হয় সময় কম। একেবারে আসল জায়গায় হাত দিছেন। আচ্ছা হুনেন, টাকা লাগব।”
“কতো? বলো।”
“বেশি না স্যার, ৫০ লাখ হইলেই হইবো। আপনে স্যার মানুষ, তাই একটু কমাইয়াই চাইছি।”
“আমার মেয়ে? মেয়ে কেমন আছে?”
“ভালা আছে। আমরা হইলার স্যার ব্যবসায়ি মানুষ। সদাই করি। টাকা পাওয়ার লগে লগে মাইয়া হাতে পাইবেন।”
“আমি মেয়ের সাথে কথা বলতে চাই।”
“কথা কইবেন? হ্যাঁ, কন!“

অনির মুখের সামনে ফোনটা রাখল। অনি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে কম্পিত স্বরে বলল, “বাবা!”
“মা! মা তুমি ঠিক আছো? চিন্তা করো না মা। তোমার বাবা তোমাকে জলদি নিতে আসবে।”

অনি নিরুত্তর। ঠোঁট চেপে কাঁদতে শুরু করে সে। কান্নার আওয়াজ আরিফ হাসান পাচ্ছিলেন। কাদের ফোন নিয়ে একটু দূরে গিয়ে বলে, “টাকা আইজ লাগব। বিকালে। কোথায় পাঠাইবেন পড়ে ফোন কইরা জানামু। এখন রাখি স্যার, আসসালামুয়ালাইকুম!”

ফোনটা কেটে দিল। আরিফ হাসান ফোনের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে মাথা শান্ত করার চেষ্টা করলেন। মিনিট দুয়েক ভেবে সারফারাজ কে কল দিলেন। সারফারাজ ফোন তুলে সমস্তটা শোনার পর বলল, “আমি টাকার ব্যবস্থা করছি। টাকা নিয়ে আমিই যাবো।”

“এসব তোমার ভাবতে হবে না। টাকা তোমার অ্যাকাউন্টে ঘণ্টাখানেক পর পৌঁছে যাবে। তুমি বিকালে তৈরি থেকো সারফারাজ। আর হ্যাঁ, সাবধান!”
ফোন কেটে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন তিনি। এখন শুধু অনি সুস্থ ভাবে ফিরে আসুক এটাই তার চাওয়া। তার হাতের উপর হাত রাখলেন শাহিনুর বেগম। তার চোখে অশ্রু টলমল। আরিফ হাসান কোমল কণ্ঠে বললেন, “তুমি চিন্তা করো না। আমাদের মেয়ের কিছু হবে না।”
“আল্লাহ করুক সুস্থ মতো চলে আসে। ওরা যা চায় তুমি দিয়ে দাও। আমার মেয়েটা যেন ঠিক থাকে। গতরাতে স্বপ্নে ওর মা কে দেখেছিলাম। বেচারি কাঁদছিল! কতদিন পর যে দেখলাম মেয়েটাকে।
”শান্ত হও। বললাম তো ও ঠিক মতো চলে আসবে। কিছু হবে না ওর। সিধু! এই সিধু।”

“জি স্যার!
“যা তোর ছোটভাইকে ডেকে নিয়ে আয়।”
“আচ্ছা‌!”
“আরাফাতকে?”
”হ্যাঁ, আরাফাত আর ফরহাত কে ঢাকায় পাঠাবো। ওদের দুজনের পাশে কারো থাকা দরকার।“
“চলো না আমরা যাই।”
“এখন না, তোমার শরীর অসুস্থ। একটু সুস্থ হও পরে যাবো।”
“সারফারাজ পারবে তো? ওর না কিছু হয়ে‌ যায়। চিন্তা হয় বড্ড!”

আরিফ হাসান এতোক্ষণ চেয়ারে বসা ছিলেন। সেখান থেকে উঠে এসে খাটের কোণায় বসলেন। শাহিনুর বেগম তার বুকে মাথা রেখে কাঁদতে লাগলেন। তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, “সারফারাজ আমার ছেলে। তুমি চিন্তা করো না, ওরা দুজনেই ঠিক থাকবে!”
আরাফাত দরজায় করাঘাত করে বলল, “বাবা আসব?”
.
বিকেল ৪ টা বাজে। ব্যাংক থেকে টাকা তুলে গাড়িতে এসে বসল ফারাজ। টাকার ব্যাগটা গাড়ির পিছনে সিটে রাখল। গাড়ি স্টার্ট দিলো আবারো। ঠিকানা তার চেনা জায়গা নয়। নিশ্চিত নিরিবিলি কোন জায়গা হবে। কোন জঙ্গল ও হতে পারে। ঢাকা শহরে জঙ্গল আবার কোথায়? ম্যাপ দেখে গাড়ি আগাচ্ছে। দেখতে দেখতে রাত হয়ে যাচ্ছে অথচ এখনো তার গন্তব্যে পৌঁছানোর কোন নাম নেই। সারফারাজ এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। না এটা জঙ্গল না। গ্রাম সাইডের মতো খানিকটা সম্পূর্ণ না। তবে আশপাশের লোকজন খুব কম। একজায়গায় হঠাৎ দেখল ভিড়। ওহ, চায়ের দোকান! এসবে ভিড় ভালো হয়। বুক তার ধুকপুক করছে। কে জানে অনি কেমন আছে? ধীর গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে। আর বোধহয় সামনে যাবে না। সামনে সরু গলি। এখানেই থামাতে হবে। এখানে ল্যাম্পপোস্ট নেই। ইয়া বড় একটা বাঁশের মাথায় আলো জ্বলছে। অনি নিয়ে তারা কোথায় এনে রেখেছে? এসব ভাবতেই গায়ে জ্বা/লা দিচ্ছে। টাকার ব্যাগ নিয়ে গাড়ি ছেড়ে নামল। হঠাৎ আকাশে আলোর ঝলকানি। সেকেন্ড পরেই শব্দ। বিদ্যুৎ চমকানোর শব্দ। খোলা আকাশে বিদ্যুৎ চমকাতে দেখে সারফারাজ নিজেও চমকে গেল। এই দৃশ্য মানিকগঞ্জে সচরাচর দেখা যায়। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল সে। পরক্ষণেই ফোনটা বেজে উঠলো।

“হ্যালো!”
“হ বাপজান। টাকা আনছো?”
“হ্যাঁ, সাথেই আছে। কোথায় আসব?”
“আছো কই?”
“রাস্তার মোড়ে আছে। একটু আগেই একটা চায়ের দোকান পড়েছে।”
“হ্যাঁ, জানি জানি। তোমার পিছনে আমাগো লোক রাখাই আছে। বেশি চালাকি কইরো না। শোন..
“হুম!
“সামনে হাঁটতে থাহো। যতক্ষণ না সামনে আরেকটা রাস্তা আইবো ততোক্ষণ। এরপর রাস্তায় বাম দিক দেইখা দশ পা হাটবা। সেখানে একটা তালগাছ আছে। টাকার ব্যাগ ওদিকে রাখবা!”
“আর অনি? অনি কোথায়?”
“সবুর করো। সেখানে যাইয়া আমারে ফোন দিও। আমি কইয়া দিমু।”
“আপনি নতুন কোন চালাকি করছেন?”

বিকট হাসির শব্দ। ওপাশ থেকে স্পষ্ট হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। সারফারাজ কপাল কুঁচকে ফেলল। ধপ করে ফোনটা কেটে গেল। তার মন বলছে, অনির কিছু হয়নি। সে ঠিক আছে। তাকে ঠিক থাকতেই হবে।
সারফারাজ হাঁটতে শুরু করল। তার মনে হচ্ছে সে একাই হাঁটছে কিন্তু লোকটা বলল একজন নাকি পিছনে আছে। সত্যিই বোধহয় আছে। তারা কতোজন জানা হলো না। জানবার দরকার ও নেই। কথা মতো সারফারাজ এসে দাঁড়াল তাল গাছের সামনে। টাকার ব্যাগ এখনো নিচে রাখেনি। এদিক ওদিকে মুখ করে রাস্তার দুদিক দেখছে। ঝি ঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। আশপাশ বোধহয় ফসলের মাঠ ছাড়া আর কিছু নেই। মেঘ ডাকছে। বৃষ্টি আসবে বলে দিচ্ছে। ব্যাগটা রেখে ফোন করল সে। ওপাশ থেকে গড়গড় করে বলল, ”যেখান থেকে বায়ে মোর নিছো সেখান থেইকা ডানে মোড় নিয়া গুইনা গুইনা ১৭ পা হাটো। ছোট ছোট পা ফেইলো না, আমাগো পা বড় কি না। দেখবা তোমার বউ ওইখানেই আছে…

বাকি কথাটুকু শোনা হলো না। সারফারাজ ছুটতে লাগল। রাস্তার মোড়ে এসে থেমে গেল। ভীষণ উত্তেজনা নিয়ে সামনের দিকে হাঁটা ধরল। চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। ১৭ পা আসার পর থেমে গেল সে। এখানে কিছু একটা দোকান মনে হচ্ছে, তবে দোকান বন্ধ। ফোনের আলো জ্বালিয়ে ফিরে তাকাল। কাউকে দেখা যাচ্ছে না। উন্মাদ হয়ে ডাকতে লাগল সারফারাজ, “অনি? এই অনি? অনি!!”

কোন সাড়াশব্দ নেই। কিছুক্ষণের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে গেল সে। বৃষ্টি শুরু হচ্ছে। সারফারাজ আকাশের দিকে ফিরে তাকিয়ে আছে। আচমকা মনে ঠেকল কিছু। কানে ভ্রমের বাজনা। ফোনটা তুলে ধরে বিস্ময় দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে রইল।‌ গায়ে চাদর জড়ানো কেউ। মুখ আড়াল করা।‌ অস্পষ্ট কণ্ঠে সারফারাজ বলে উঠল, “অনি?” মুখের কাপড় সরে গেল। ঝনঝনিয়ে উঠল সারফারাজের শরীর। স্তব্ধ হয়ে চেয়ে রইল শুধু। অর্নিলা ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল তৎক্ষণাৎ। সারফারাজের আঁকড়ে ধরল তাকে। অর্নিলা কাঁদতে কাঁদতে বলছে, “ফারাজ ভাই! ফারাজ ভাই আপনি এসেছেন! আমি খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম। ভেবে ছিলাম আর কখনো আপনাকে দেখতে পাবো না। ওরা খুব খারাপ লোক ফারাজ ভাই। আমায় খুব কষ্ট দিয়েছে। আমি খুব ভয় পেয়েছি, খুব পেয়েছি! ওরা একটুও ভালো না। আমি খুব পেয়েছি!” এই কথাটুকু বার বার বলে কাঁদতে লাগল অনি। সারফারাজ নিশ্চুপ হয়ে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। তার চোখের অশ্রু বৃষ্টির সাথে মিশে গেছে। অর্নিলা যে কেঁদেই যাচ্ছে।তার কষ্ট দেখে সারফারাজের হৃদয় ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। সমান কষ্ট সে যে পাচ্ছে।
.
গাড়ি করে বাড়ি ফিরছে দুজন। বৃষ্টি এখনো পড়ছে। অর্নিলা দুই হাতে ফারাজ কে আঁকড়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ছে। বহুদিন পর আজ যেন সে শান্তির ঘুম ঘুমাবে। সারফারাজ একটু বাদে বাদে তার মুখখানি দেখছে। মৃদু হেসে তাকে আগলে নিচ্ছে। বাড়ি ফিরল মাঝরাতে।‌ আরাফাত আর ফরহাত আগে থেকেই সেখানে ছিলো। আরাফাত অর্নিলা কে দেখা মাত্রই কেঁদে ফেলল। অর্নিলা তার পিঠ চাপড়ে বলল, “ছিঃ ছিঃ এতো বড় ছেলে হয়ে কাঁদছিস তুই!“

ফরহাত দাঁত পাটি বের করে হেসে বলল, “যাক, আমায় কাঁদিয়ে ফেলিস এই অনেক। যা এবার ফ্রেস হয়ে নে। তোকে অনেক ক্লান্ত মনে হচ্ছে।”

সারফারাজ অনিকে খাইয়ে দিচ্ছে আর অনি ভিডিও কলে মা বাবার সাথে কথা বলছে। মা প্রায় কেঁদে ফেললেন। অনি গলা ফাটিয়ে হেসে বলল, “আরে কাঁদার কি হলো? দেখো তোমার মেয়ে অনেক সাহসী। ওরা কিছু করতে পারেনি।”

আরিফ হাসান কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বললেন, “হ্যাঁ, আমার মেয়ে খুব সাহসী!”
.
সারফারাজ ঘরের দরজা বন্ধ করল। অর্নিলা দাঁড়িয়ে থেকে তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বিবরণ দিচ্ছে। এই মেয়েটা কখনো চুপ থাকে না। ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে সারফারাজ তাকে ধরে বিছানায় বসাল। ঠোঁট কা/টা দাগ! আর আছে? সে হেসে মাথা দুলিয়ে না করল। বলল, “একটা মাত্র চ ড় খেয়েছি।” মূহুর্তের মধ্যেই অগ্নি শিখার মতো জ্ব/লে উঠল সারফারাজ। রক্ত প্রবাহ যেন মাত্রা ছাড়িয়ে দেয়। কোমল হাতে স্পর্শ করল ঠোঁট জোড়া। অর্নিলা তার হাতের তালুতে গালটা বাড়িয়ে রাখল। সারফারাজ তাকে কাছে টেনে কপাল চুমু খেলো। হাতে চুমু খেল। অতঃপর হাতে দুটো ঔষধ দিয়ে বলল, “খেয়ে নাও!”

“এই যে, এটাই ভালো লাগল না। এর চেয়ে ভালো আরো দুটো চুমু খান আমায়। আমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবো।”
“এটা তোমার জন্য বেশি দরকার। অনেক ক্লান্ত লাগছে তোমায়। বকবক না করে খেয়ে ফেলো।”
“ইশ ফারাজ ভাই, আমায় হারিয়ে ফেলেও আপনার শিক্ষা হয়নি। এখনো এভাবে বলছেন। যান দেখবেন আবার হারিয়ে যাবো। এবার তো খুঁজে পেয়েছেন এরপর আর খুঁজেও পাবেন না।”

নিবিড় নয়নে সারফারাজ চেয়ে রইল অনির দিকে। অনি এখনো হাসছে। খুব মজার কথা বলেছে সে। আচমকা সারফারাজ তাকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরে নিল। বলে উঠল, “না! এরপর আর না। কখনো না। আমি তোকে আর কখনো হারাতে দিবো না অনি!“
“এই তো ভদ্র ছেলের মতো কথা। হি হি! দেখি এখন একটা চুমু খান তো আমায়!” বলেই ঠোঁট বাড়িয়ে দিলো সে। সারফারাজ শব্দ করে হেসে উঠলো।
.

অর্নিলা যতই দেখাক সে পুরোপুরি ঠিক আছে, সবার সামনে হাসছে বলেই মনের ক্ষ/ত এতো দ্রুত ঠিক হয়ে গেছে এমন কিছুই না। এখনো সেই ভয়ংকর অতীত ভুলতে পারে নি। রোজ রাতেই ভয়ে কাঁপড়াতে থাকে সে। ঘুমের মধ্যে কথা বলতে থাকে। সারফারাজের শার্ট খামচে ধরে গো/ঙানির মতো আওয়াজ করে। যেন স্বপ্নের মধ্যে কেউ তাকে ভীষণ ভাবে কষ্ট দিচ্ছে। যন্ত্রণা/য় কাতড়ায়! তখন একমাত্র সারফারাজ তাকে নিজের আগলে নেয়। অর্নিলার অজান্তেই সারফারাজ সবসময় তার পাশে থাকতে চায়। পাশে থেকেছে বৈকি। তিক্ত সেই অতীতের সবটুকু ভুলিয়ে দিতে চায় সে। জীবনটাকে আবারো গুছিয়ে নিতে চায়। সেই চঞ্চল, অগোছালো, ছটফট করা অনিকে চায় সে! শুধু অনিকেই!

অনিকে উদ্ধা/রের দুদিনের পরের ঘটনা। আরাফাত আর ফরহাত আজ বাইরে থেকে কাচ্চি আনিয়েছে। সারফারাজ নিয়ে এসেছে আইসক্রিম। অর্নিলা এক হাতে কাচ্চির প্লেট অন্য হাতে আইসক্রিম খেতে খেতে বসার ঘরে ঢুকল। সারফারাজের কাছে প্লেট দিয়ে টিভির দিকে ফিরল। খবরের চ্যানেল চলছে। সাংবাদিক উপস্থাপন করছে,
“লোমহর্ষক এক কাহিনির সাক্ষী হলো মধুপুর গ্রামের লোকজন। অজ্ঞাত তিন লোকের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু/তে স্তম্ভিত গ্রামবাসী। আরো আশ্চর্য জনক কথা হচ্ছে মৃ/ত তিন লোকের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে
আছে অনেক অনেক টাকা। পুলিশ সমস্ত কিছু তাদের হেফাজতে নিয়েছে। অজ্ঞাত লোকদের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। গ্রামবাসী ও তাদের চিনে না। পুলিশ ইতিমধ্যেই অভিযান শুরু করে দিয়েছে। এরপর কি হলো জানতে আমাদের সাথেই থাকুন। আমি হচ্ছি শায়লা! সরাসরি বলছি মধুপুর গ্রাম থেকে। নিউজ ২৪!”

খবরের চ্যানেলের দিকে কারো নজর নেই। আরাফাত রিমোট খুঁজে চ্যানেল বদলাতে গেল। আইসক্রিম হাত থেকে মেঝেতে পড়ে গেল! সারফারাজ, আরাফাত, ফরহাত তিনজনই অনিকে দেখছে। অনিকে আতঙ্কিত মনে হচ্ছে। ধপ করে সোফায় বসে পড়ল সে। সারফারাজ ছুটে গেল তার কাছে। ফরহাত শুধালো, “কি হয়েছে অনি! কি হয়েছে?”
আরাফাত শুধালো, “কি হয়েছে বুড়ি? খারাপ লাগছে তোর? কি হলো আবার?”
“অনি!”

অনি শুকনো ঢোক গিলল। জিহ্ব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে হাত তুলে সামনের দিক তাক বলল। অস্ফুট স্বরে বলল, “ওওওরা! ওরা মা/রা গেছে!”
হতভম্ব হয়ে তিনজনই ফিরল। ছোট ছোট চোখ করে সারফারাজ ফিরে চাইল। এরাই তবে তারা, যারা অনিকে কিড/ন্যাপ করেছিলো!

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে