#চৈত্রের_রাঙায়_রচিত_প্রণয়
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_২৮
অর্নিলা নিখোঁজ হয়েছে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় পার হয়ে গেছে। এখন অবদি তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। অথচ অর্নিলার মনে হচ্ছে সে এখানে আটকা পড়ে আছে জনম পেরিয়ে গেছে। একটা খাবারের দানা পড়েনি পেটের মধ্যে। পানির তৃষ্ণায় না সে মা’রা যায়। চোখ বুজে যাচ্ছে , মেলে রাখা কষ্টসাধ্য। এতোক্ষণ তাও যা ছোটাছুটি করছিলো সেই শক্তিও এখন ফুরিয়ে গেছে। কোনমতে যেন দম খুলে শ্বাস নিচ্ছে সে। মাথার উপর লাল রঙের একটা বাতি জ্বলছে। এখন রাত না দিন সেটার খবরও তার কাছে নেই। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে সামনে চেয়ে ফিরল। ঝাপসা ঝাপসা চোখে দেখল একজন ভিতরে আসছে। আবারো দরজা বন্ধের শব্দ। কিছু একটা ছুঁড়ে মা’রল মেঝেতে। অর্নিলা ঠিক করে চেয়ে দেখার চেষ্টা করল। ভাত! শুকনো ঢোক গিলল সে। খাবার দেখে পাগল হবার উপদ্রব।পাগলের মতো একবার এদিক চাইছে একবার ওদিক। লোকটা তার চারিদিকে ঘুরে বাঁধন খুলে দিল। কর্কশ গলায় বলে উঠল, “ভাত দিছি, খাইয়া ল!”
অর্নিলা কাঁপতে লাগল ভয়েতে। সংকোচে মেঝেতে এসে বসল। চঞ্চল দৃষ্টি দুটো এদিক ওদিক বার বা ছোটাছুটি করছে। সে হামলে পড়ল ভাতের উপর। গপগপ করে ভাত খেতে লাগল। খেতে দিয়ে গলায় আঁটকে গেল। লোকটা পানির গ্লাস রাখতেই অর্নিলা কেড়ে দিল। বিশ্রী শব্দে হাসতে লাগল। হাসিতে পুরো ঘর কেঁপে উঠছে। কিন্তু এই ভাত পেটে গিয়ে আর সইলো না। তিনদিনের পঁচা ভাত দেখে অর্নিলা হামলে পড়েছিলো, খেয়াল করেনি। যখন দেখল আর তর সয় না, গড়গড়িয়ে বমি করতে লাগল। ওই লোকটার যেন হাসতে হাসতে পেট ফেটে উপক্রম। একজন ভাত খেতে না পেয়ে বমি করে মরছে এতে তার কিছু যায় আসে না। চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে চিবুক বেয়ে। আজ অবধি কখনো ভাতের জন্য কষ্ট করেনি সে। এই কষ্টের ভয়া বহতা তার জানা নেই। রেগে গিয়ে লোকটার কলার চেপে ধরল অর্নিলা। দুজনের মধ্যে হাতা হাতি শুরু। কিন্তু দুর্বল শরীরে আর কতদূর। চিৎকার চেঁচামেচিতে আরেক লোক এসেও হাজির হলো। দুই হাতে টেনে ধরে অর্নিলাকে সরিয়ে আনল। অর্নিলাও দমে নেই। ইচ্ছে মতো খা মছে দিলো লোকটার মুখ জুড়ে। হিং স্র পশু র মত হয়ে উঠল লোকটা। রে গে এগিয়ে আসল অর্নিলার দিকে। সজোরে এক চ ড় পড়তেই অর্নিলা মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। লা থি মা রতে যাচ্ছিল অমনি ঘরের মধ্যে ওস্তাদের প্রবেশ।
“কিরে ? তোরা কি করোস?”
“ওস্তাদ! দেহেন না, মাইয়াটা অনেক জ্বালা ইতাছে।
“দেহেন ওস্তাদ, আমার মুখে খামচি মাইরা হারা মজাদি কি করছে। ওরে তো…
“ওই থাম।”
“কন কি ওস্তাদ। আমি এখনো কই ওরে মা ইরা বস্তায় ভইরা খালে ফালাইয়া দিয়া আহি।
“কইসি না চুপ করতে। ওরে আবারো বাইন্ধা রাখ। খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ। পানিও দিবি না ওরে। বুঝছোস। দেহি শালি/র দে/মাগ কতোক্ষণ থাহে। কিরে, কি কইলাম?”
শাসিয়ে উঠে কাদের। গনি আর নুরু ধরে উঠিয়ে অর্নিলাকে আবারো চেয়ারে বেঁধে। রাগে কাঁপছে অর্নিলা। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল সে। ফারাজ ভাইয়ের মুখটা বার বার ভেসে উঠছে তার সামনে। কোথায় তিনি?
.
সারফারাজ শহরে এসে পৌঁছাল সকাল ৭ টার দিকে। ৮ টার দিকে সে তার এলাকায় হাজির। হাঁটতে হাঁটতে পুরো এলাকা ঘুরে দেখছে। অংক কষার চেষ্টা করছে। এই সময় দু একজন মুরব্বির সাথে দেখা হলো। কথাবার্তাও হলো খানিকটা। সারফারাজের জীবনে সবচেয়ে বড় এডভান্টেজ ছিলো তাকে দেখতে অনেকটা ইনোসেন্ট মনে মতো। এর সুযোগ সে কয়েকবার নিয়েছে। সবাই তাকে ভালো ছেলে ভাবার সুবাদে খাতির জমাতে সময় নেয় নি। কিন্তু এসব সে এভাবে এভাবেই করছে না। কারণ আছে, তাকে খোঁজ নিতে হবে। যেভাবেই হোক অনির খোঁজ নিতে হবে। যতটুকু পাওয়া সম্ভব এতে। এলাকার মোড়ে একটা চায়ের দোকানের দেখা মিলল। তাদের এলাকায় চায়ের দোকানের কমতি। সেখানে বসে পর পর দু’কাপ গরম গরম চা খেলো। টানা দুদিন পর তার পেটে কিছু তো পড়ল। খেয়াল হলো সবে, এই প্রথম বাড়ি গিয়ে না খেয়ে ফেরত এসেছে। মায়ের কথা দারুণ মনে পড়ছে। আরাফাত কে কল করে মায়ের কথা জেনে নিল। এখন খানিকটা সুস্থ আছে। বাবার সাথে আছে। মায়ের খবর জানার পরপরই ফারাজ ফোন কেটে দিল। সবাই তাকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করছে। এই সান্ত্বনা তার চাই না। চাওয়ালা মামার সাথে খানিকক্ষণ কথা হলো। তবে লাভ হলো না কোন। তিনি নাকি কাউকেই দেখেনি। আশ্চর্য! ওতো গভীর রাত ও ছিলো না। এমন সন্ধ্যে বেলা একটা মেয়েকে কেউ তু/লে নিয়ে চলে গেল অথচ কারো চোখেই পড়ল না।
ধীরে ধীরে হেঁটে হেঁটে সামনের দিকে আগাচ্ছে। আশপাশের ভবন গুলোতে দেখছে। এখানকার কিছু কিছু বাড়িতে সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানো। কোনভাবে জোগাড় করা যেত? শূন্যে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে ভাবতে লাগল সারফারাজ। পরক্ষণেই মনে পড়ল বাবার কথা। বাবা বলেছে, তিনি ব্যাপারটা দেখছে। এতো তুচ্ছ বিষয়টা নিশ্চয়ই তার নজর এড়ায় নি। হাতঘড়ির দিকে চেয়ে দেখল ১০ টা বাজতে চলল। এতোখানি সময় পেরিয়ে গেল অনিকে ছাড়া! ফোনের স্ক্রিনে অনির হাস্য উজ্জ্বল মুখখানি দেখে চোখে অশ্রু জমে উঠল সারফারাজের। চশমা খুলে রেখে হাতার জামা দিয়ে চোখ মুছে ফেলল। অতঃপর চশমাটা পড়ে দ্রুত গতিতে হাঁটতে লাগল সে।
ফ্লাটের সামনে এসে দাড়াতেই দেখল কমিশনার সালাউদ্দিন সাহেব দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। শুধু তাই নয়,তার সাথে আরো একজন আছে বৈকি। সারফারাজ চোখে মুখে ভাবান্তর নেই। ভাবটা এমন যেন এটা হবারই ছিলো। সালাউদ্দিন সাহেব দাঁত কেলিয়ে হেসে বললেন, “আরে ফারাজ সাহেব যে! আপনার জন্যই তো অপেক্ষা করছিলাম। আসুন, এই তো বেরিয়ে যেতাম।”
নিরুত্তর ফারাজ এসে ঘরের দরজা খুলল। সালাউদ্দিন সাহেব বলতে লাগলেন, “দরজায় তালা দেওয়া দেখে ভাবলাম বোধহয় বউকে নিয়ে ঘুরতে গেছেন। তা আপনি একা নাকি? মিসেস অর্নিলা কোথায়?”
সারফারাজ দরজা ধরে দাঁড়িয়ে শান্ত স্বরে বলে উঠল, “ভিতরে আসবেন?”
“হ্যাঁ, হ্যাঁ নিশ্চয়ই!”
দুজনেই ঘরে ঢুকলেন। চারদিক পরখ করলেন পুলিশি চোখে। হা হা পুলিশের চোখে ফাঁকি দেওয়া এতো সহজ না। সারফারাজ নিশ্চুপ হয়ে এসে বসল সোফাতে। তারা দুজনেও এসে বসল।
“তা মিসেস অর্নিলার কথা কিন্তু এখনো বললেন না? আপনার মুখটা এমন করে কেন রেখেছেন? মনে হচ্ছে বউ ঝগড়া করে চলে গেছে।”
“সেটা হলেও আপনি অবাক হবেন বলে মনে হচ্ছে না!”
“হা হা! কি বলছেন মি ফারাজ সাহেব?
সারফারাজ চোখের চশমা খুলে সামনের টেবিলে রাখল। শান্ত দৃষ্টিতে ফিরে তাকালো। অথচ তার চোখ দেখে মনে হচ্ছে র/ক্ত ঝরে পড়ছে। শান্ত কণ্ঠে বলে উঠল ,
“সালাউদ্দিন সাহেব, আমার বউ আমার সাথে ঝগড়া করে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। ঝগড়ার সূত্রপাত আপনি জানেন কিংবা বলা যায় সূত্রপাত আপনিই করিয়েছেন। এখন আপনি বলুন কি জানতে এসেছেন।”
সালাউদ্দিন সাহেব অবাক হলেন না। তার মুখের হাসি এখনো নিমিষ হয়নি। অথচ পাশের লোকের মুখ কালো হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। এভাবে পুলিশের সাথে কথা বলছে মনে হচ্ছে তাকে যেন নিরবে শাসিয়ে দিচ্ছে। সালাউদ্দিন সাহেব মৃদু স্বরে বললেন, “খুব বেশি না, শুধু দুটো মাত্র কথা জানতে এসেছি।”
“বলুন!”
“যেদিন নিয়াজের এক্সি’ডে’ন্ট হয়েছিল সেদিন নিয়াজ আপনাদের বাসায় এসেছিলো। আপনি তা জানতেন?”
”না, আপনার মুখেই শুনলাম।”
“তবুও অবাক হলেন না?”
“অবাক হবার প্রশ্ন আসছে না। সে আমার আত্মীয়, আসতেই পারে।”
“তা পারে। তবে একবার নিয়াজ কে তার বাড়িতেই আপনি শা/সিয়ে এসেছিলেন। শুনলাম মে/রে ফেলার হুমকিও দিয়েছিলেন।”
”দিয়েছিলাম। তবে মে/রে তো আর ফেলেনি।”
পাশে থাকা লোকটা হকচকিয়ে গেল। সালাউদ্দিন সাহেবের ঠোঁটে বাঁকা হাসি। সারফারাজ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,”আপনার প্রশ্ন শেষ হয়েছে। আপনি এবার আসতে পারেন।”
সালাউদ্দিন সাহেব হেসে উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, ”বুঝলেন ফারাজ সাহেব। আপনিও জানেন আমিও জানি, কিন্তু কোন প্রমাণ নেই। তাই আপনাকে ধরতে পারছি না। লুকোচুরি খেলাটা ভালোই জমছে।”
“বেশ তো, প্রমাণ খুঁজতে থাকুন। এবার আসুন।”
“লাস্ট প্রশ্ন, অর্নিলা ম্যাম কবে আসবেন?”
“ব্যক্তিগত প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই। তবুও বলছি, তার রাগ কমে গেলে সে নিশ্চিত ফিরে আসবে।”
.
ঝর্ণার নিচে দাঁড়িয়ে এক নাগাড়ে ভিজে যাচ্ছে সারফারাজ। মাথা ঠান্ডা করার চেষ্টা করছে। মনোযোগ দিয়ে ভাবছে, সেদিনকার কোন কথা বাদ পড়ছে না তো? কিছু হয়তো সে গুলিয়ে ফেলেছিলো? কি হতে পারে? অনি কোথা থেকে হারিয়ে গেল। এখান থেকেই নাকি দূরে কোথাও? চিন্তা করতে লাগল, প্রথম প্রথম অনির ফোন অন ছিলো। সে কল করছিলো, ফোন যাচ্ছিল। হঠাৎ করেই ফোনটা বন্ধ হয়ে গেল। তাহলে কি তখনই! রেগে গিয়ে দেয়ালে সজোর ঘুসি মার/ল ফারাজ। কিন্তু কোন লাভ নেই এসবের। তবুও যেন রাগ কমছে না। হঠাৎ মনে হলো কলিং বেল বাজছে। এখন আবার কে এলো?
দরজা খুলে দাঁড়িয়ে খানিকটা হতভম্ব হয়ে গেল সে। ডাক্তার সাবিনা! ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ডাক্তার সাবিনা একগাল হেসে বললেন, “কি মিস্টার হ্যান্ডসাম! কেমন আছেন?”
“আপনি?”
“হুঁ, ভাবলাম আপনি অসুস্থ একটু দেখে যাই। এর মধ্যে শুনলাম, আপনার বউ নাকি ঝগ/ড়া করে বাপের বাড়ি চলে গেছে। একটা হেল্পিং হ্যান্ড তো দরকার। তাই চলে এলাম। কি দাড় করিয়ে রাখবেন নাকি ঘরের সামনে?”
সারফারাজ শব্দ করে নিঃশ্বাস ফেলল। দরজা সরে দাঁড়াল। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল, রাত ৮ টা বাজে। এতো রাতে এই মহিলা তার বাড়িতে। কি চায় সে আসলে? স্থির দৃষ্টিতে পরখ করতে লাগলো সে। ডাক্তার সাবিনা ইয়াসমিন ভেতরে প্রবেশ করলেন। বেশভুষায় সবসময়ের মতোই। আজ তার পরনে বেগুনি রঙের শাড়ি। পরিপাটি সাজ! সারফারাজ মৃদুস্বরে শুধায়, “হাসপাতাল থেকে এলেন?”
“হ্যাঁ, সেখান দিয়েই!”
সারফারাজ মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। ডাহা মিথ্যে কথা। সে এই মাত্র বাসা থেকে এসেছে তৈরি হয়ে। ব্যাপারটা ধরতে সময় লাগল না। ডাইনিং টেবিল থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে সামনে এসে রাখল সে। ডা. সাবিনা পানির গ্লাস তুলে নিয়ে আড়চোখে ফিরলেন। বললেন, “শাওয়ার নিচ্ছিলেন নাকি?”
সারফারাজের বোধ হলো, সদ্য গোসল সেরে সে এসেছে। তার চুল গুলো এখনো ভিজে। সরাসরি ফিরে তাকাল ডা. সাবিনার চোখের দিকে। তাকেই তো দেখছে। বলিষ্ঠ দেহ, সুদর্শন পুরুষ তার সামনে দাঁড়িয়ে। পরনে অগোছালো একটা টি শার্ট। ইস্ত্রি করা হয়নি। সাথে কি বিচ্ছিরি রঙের একটা ট্রাউজার পরা। তবুও তাকে যেন বিশ্বের সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ বলেই মনে হচ্ছে। হালকা কেশে উঠলেন ডা. সাবিনা।
“তা আপনার বউ কি এমনই নাকি? না মানে, অসুস্থ বর ফেলে চলে গেলো যে?“
“এগুলো আমার পার্সোনাল বিষয় ম্যাম।”
“হ্যাঁ, হ্যাঁ শিউর। আমি আপনাকে অস্বস্তিতে ফেলব না। তা ডিনার না করে থাকলে চলুন, একসাথে কোথাও..
“দরকার নেই। আমি এখানেই ঠিক আছি।”
“আচ্ছা। তা আমায় ডিনারের জন্য সাধবেন না?”
নির্মল নয়নে সারফারাজ দেখে যাচ্ছে। এখানে তার আসার কারণ তার কাছে পরিষ্কার। সারফারাজ ফোন হাতে তুলে নিয়ে বলল, “বসুন। আমি খাবার অর্ডার করছি।”
সাবিনা আচমকা দাঁড়িয়ে গেলেন। বললেন, “না না, আপনি দেখছি সিরিয়াসলি নিয়ে নিলেন।”
“তাহলে আপনি ডিনার করতে আসেননি?”
”না, আমি তো আপনাকে দেখতে এসেছিলাম।”
“দেখা হয়েছে?”
আচমকা হেসে উঠলেন। পা বাড়িয়ে বললেন, ”মনে হচ্ছে আমায় তাড়াতে চাইছেন। কি চলছে আপনার মনে ডাক্তার শেহদাত!”
সারফারাজ নিরুত্তর। জবাব দিচ্ছে না। ডাক্তার সাবিনা ইয়াসমিন তার সামনেই দাঁড়ানো। ফারাজ নির্লিপ্ত নয়নে তাকে দেখছে। চুল থেকে পানি টপটপ করে ঘাড় বেয়ে নামছে। ডাক্তার সাবিনা তার হাত বাড়িয়ে চুল গুলো স্পর্শ করতে চাইলেন। সারফারাজ তার হাতটা আচমকা ধরে বলল, “থামুন ম্যাম!”
শিউরে উঠলেন ডাক্তার সাবিনা। আচমকা সারফারাজের স্প/র্শ পেয়ে হতভ/ম্ব তিনি। হতবু/দ্ধির মতো চেয়ে রইলেন।সারফারাজ হাতটা সরিয়ে বললেন, “আপনি যা চাইছেন তা কখনো সম্ভব না!”
”সম্ভব না হলে আমার হাত ছুঁয়ে দেখলে কোন বাহানায়?“
“আপনাকে ছোঁয়ার জন্য আমার বাহানার প্রয়োজন নেই। আমি বরাবরই স্পষ্টবাদী আপনি জানেন।”
ডাক্তার সাবিনা চোয়াল শক্ত করলেন। রা/গে তার মাথা ভনভন করছে। চোখ দুটো ছোট ছোট করে চেয়ে রইলেন। অথচ সারফারাজের চোখে মুখে কোন ভাবান্তর নেই। আচমকা তিনি হেসে উঠলেন। শুধালেন, “আমায় রিজেক্ট করছো?”
”অবশ্যই! আমার জীবনে অনি ছাড়া আর কেউ নেই। আপনি আসতে পারেন।”
“তাড়িয়ে দিচ্ছেন?”
সারফারাজ আবারো নিরুত্তর। ডাক্তার সাবিনা মাথা দুলিয়ে বললেন, “হুম, ঠিক আছে। কিন্তু আপনি কিভাবে জানলেন আমি কি চাই ডাক্তার শেহদাত! এতোই যখন বউয়ের প্রতি টান তবে অন্য নারীর প্রতি আকর্ষ/ণের কারণ কি?”
“আমি মোটেও আপনার প্রতি আকর্ষিত নই ম্যাম। ভুলটা আপনার। আমাকে বাইরে পাঠানোর জন্য আপনি এতো কেন আগ্রহ দেখাচ্ছেন তা আমি জানি। কিছু মাস পর আপনিও বাইরে চলে যাচ্ছেন। এর বাইরে অনেক খবরই আমার জানা। হ্যাঁ, এটা আমার জন্য এডভাইন্টেজ হতে পারে। আমার জন্য আপনি যা করেছেন যা করছেন তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। তবে আমার ভালবাসা শুধু একজনের জন্য। এর ভাগ আমি কাউকেই দিবো না।”
“আমি তো আপনার হৃদয়ের ভাগ চাইতে আসিনি ডাক্তার শেহদাত।”
“আমি তাঁকে ঠকাতে পারব না ডাক্তার সাবিনা!”
ডাক্তার সাবিনা হকচকিয়ে উঠলেন। এই প্রথম মনে হলো সে তার নাম ধরে ডাকল। মৃদু হেসে ব্যাগ কাঁধে নিলেন। অতঃপর বলে উঠলেন, ”হুমম, আইম ইমপ্রেস ডাক্তার শেহদাত!”
অতঃপর তিনি বেরিয়ে গেলেন। সারফারাজ শব্দ করে দম ফেলল। তার মনে হয়েছিল ডাক্তার সাবিনা কে সে পুরোপুরি বুঝতে পেরেছে। কিন্তু না, সে এখনো তাকে ঠিক করে বুঝে উঠতে পারে নি!
#চলবে….