চৈত্রের_রাঙায়_রচিত_প্রণয় পর্ব-২১

0
466

#চৈত্রের_রাঙায়_রচিত_প্রণয়
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_২১

ইয়াতিম শিকদার পায়ের উপর পা তুলে বসলেন। হাতে অর্ধেক বিস্কুট। মুখে বিস্কিট চিবাতে চিবাতে বলছেন, “তা কেমন আছো সারফারাজ? ভালো তো।”

“হ্যাঁ, চাচা ভালো। আপনি ভালো আছেন?” তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফিরে এসে পড়ল নিয়াজের দিকে। নিয়াজের দৃষ্টি তখন মেঝেতে। অর্নিলা চায়ের কাপ নিয়ে ঢুকে বলল, “নিয়াজ ভাইয়ের নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে?” সারফারাজ ভ্রু কুঁচকে নিল। কি আহ্লাদ দেখাচ্ছে অনি? আশ্চর্য! এই হারাম/শয়তান কে ঘরে ঢুকতে দিয়েই তো ভুল করেছে। আবার ঢোল পিটিয়ে বলছে বিয়ের কথা? ও কি ভুলে গেলো ওর সাথে কি হয়েছে? এতো সহজ কেন হচ্ছে অনি? ইয়াতিম শিকদার চায়ের কাপ হাতে তুলে নিলেন। বলে উঠলেন, “হ, পোলা বড় হইছে বিয়া তো করান লাগব। মাইয়া ঠিক করছি, ঢাকা শহরেই থাকে। এখনকার স্থানীয়। নিয়াজ ছবি দেখা তোর বোনরে।”

নিয়াজ পকেট থেকে ছবি বের করছে। সারফারাজ চায়ের কাপ তুলে নিল। ভাবছে, মাথা যন্ত্রণা কম ছিলো না। আরেক য/ন্ত্রণা এসে হাজির হলো। একটা চায়ের কাপ পারবে তো ঠিক করতে? হেসে বলল, “তা চাচা, আমাদের ওখানে কি মেয়ের কমতি ছিলো নাকি? একদম ঢাকাতে চলে এলেন।”

”কি আর করমু কও। ওখানে ভালো মাইয়া পাওন যায় না।”

সারফারাজ মুখ ফুটে হাসল। অ্যাহ, মেয়ে পাওয়া যায় না। তার ছেলের কু-কর্ম পুরো মোহনগঞ্জ জানে। এরপর কে মেয়ে বিয়ে দিবে এই ছেলের কাছে। চরি/ত্রহীন একটা। নিয়াজ ছবি বের করে অর্নিলার দিকে এগিয়ে দিলো। এতো বছর পর এই প্রথম তাদের দুজনের চোখাচোখি! অর্নিলা খুব করে চাইছে সহজ থাকতে পারছে না। জানে ফারাজ ভাই পাশেই আছে, ভয়ের কিছু নেই। তবুও অস্থির হয়ে উঠছে। ছবিটা হাত থেকে নিবে কি না ভাবছে? এই নোং/রা লোকের হাত থেকে কিছু ছুঁয়ে নিতে ঘৃ/ণা লাগে। মনে হয় নিজেও নোং/রা হয়ে যাবে। মিষ্টির প্যাকেট ধরার সময় মনে হচ্ছিল ইচ্ছে করে হাত ছুঁ/তে চায়। নিয়াজ কি তবে বদলায় নি? তবে সবাই যে বলে!

সারফারাজ আচমকা ছবিটা হাত থেকে নিয়ে বলল, “দেখি!”

“দেখো বাবা, মাইয়া কেমন? পছন্দ হইলো কি না।”

সারফারাজ মেয়ের ছবিখানা দেখল। হ্যাঁ ভালোই দেখতে, তবে আফসোস হচ্ছে। এতো ভালো মেয়েটার সাথে এমন বাজে একটা ছেলের বিয়ে হবে ভাবতেই কেমন লাগছে। অর্নিলা আগ্রহ নিয়ে ছবিখানা দেখল। বলল, “বাহ খুব সুন্দরী তো নিয়াজ ভাই! আপনাদের বেশ মানাবে!”

আবারো আহ্লাদি দেখাচ্ছে। সারফারাজের ইচ্ছা করল উঠে একটা চ/ড় বসিয়ে দিক অনির গালে। কানের সামনে ঘ্যান ঘ্যান করছে‌। মাথাও ভন ভন করছে। রাগ সামলাতে পারছে না সে। আবার হেসে হেসে “নিয়াজ ভাই” বলে ডাকা। এই ডাকাই সমস্ত কিছুর মূলে। ইয়াতিম শিকদার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন, “অনেক খোঁজাখুঁজির পর এই একটা মাইয়া মনমতো পাইছি।”

“ভালো চাচা। মেয়ে দেখতে ভালো। বংশ পরিচয় ও ভালো মনে হচ্ছে। তা আপনাদের বংশের খবর জানে তো?”
“কাঁটা গায়ে নুনের ছিটা।” সারফারাজ তীক্ষ্ণ ভাবেই খোঁচাটা মেরেছে। ইয়াতিম শিকদার হো হো করে হেসে উঠলেন। বললেন, “জানি বাপজান, জানি। আমাগো উপর তোমার রাগ। এহন দেহো, যা হইছে অনেক বছর আগে হইছে? দিন পাল্টাইছে। আমার পোলাও এখন পাল্টাইছে। শুয়ো/রটা এখন আগে থেকে ভালো হইছে।”

“কি বলেন চাচা, রক্তের দোষ কি এতো সহজে বদলে যায়?”

”হ জানি, কার কথা কইতাছো? অনির বাপের কথা তো। দেহো সব বংশেই এমন একটু থাকে। আমাগো সময় আছিলো অনির বাপ আর এখন আমার পোলা। তাও আমারটা সময় থাকতে বদলাইছে।”
অনির বাবার কথা তুলে যেন খুব একটা ভালো হলো না। কোন এক ফাঁকে অনি চলে গেল আসর ছেড়ে। ফারাজ ভাই কি তার বাবা কে সত্যিই এতো অপছন্দ করে। কিন্তু অনি যে তার বাবাকে অনেক ভালোবাসে। বাবা কখনো খারাপ হতে পারে না। তার বাবাও ভালো মানুষ ছিলেন।‌অনিকে অনেক ভালোবাসত। অথচ তার চাচা কিভাবে তার বাবার নামে বদ/নাম করছে। অর্নিলার সহ্যের বাইরে এগুলো। সব মেয়েদের কাছে বাবা মানে একটা শান্তির জায়গা। তার বাবা তার আপনজন। মা কে তো পায়নি সে, বাবাকেই পেয়েছে।‌ সেই বাবার নামে খারাপ কথা শুনার ধৈর্য অনির নেই‌।

সারফারাজ চায়ের কাপ রেখে দিল। ইয়াতিম শিকদার বললেন, “যা হইছে ভুইলা যাও। আমরাও ভুইলা গেছি। আমার ছেলে বদলাইছে এখন আমার আর কোন দুঃখ নাই। এই নাও বিয়ার কার্ড। তোমাগো দাওয়াত দিতে আইছি। তোমার বাপের ও গিয়া দাওয়াত দিয়া আসছি। তোমারে দাওয়াত দিতে কেবল ঢাকা আইছি।‌ আইসো কিন্তু বিয়াতে।”

সারফারাজ মাথা নাড়ল।‌ খেয়ে দেয়ে তারা উঠে গেলেন। চলে যাবে। সারফারাজ শুধায়, “মোহনগঞ্জ ফিরবেন?”

“না, কিছু কাজ আছে। শহরে থাকমু এখন। তা তোমার ডাক্তারি কেমন চলে?”

“ভালো।

“সারাদিন মেডিকেলেই থাকো?”

“হ্যাঁ,‌এটাই তো কাজ।”

“আচ্ছা!”

বাপ ছেলে চলে যাচ্ছে। ভদ্রতার খাতিরে সারফারাজের জিজ্ঞেস করা উচিত ছিলো, কোথায় থাকবেন? কিছু ঠিক না হলে এদিকে থাকতে পারেন। কিন্তু বলল না। কারণ নিয়াজ কে তার বিন্দুমাত্র ভরসা নেই। সবাই যাই হোক বলুক না কেন? রক্ত এতো তাড়াতাড়ি বদলে যায় না। এদের রক্তে নেশা ছড়িয়ে গেছে। এর থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ না। যেতে যেতে মনে হচ্ছিল নিয়াজ আড়চোখে অনিকে খুঁজছে। ভালোই হবে এখন অনি না এলে। এই হতচ্ছাড়া মুখে কিছু না বলেই চোখ দিয়েই যেন খেয়ে ফেলে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে চাচা ডাকলেন অর্নিলাকে। সারফারাজ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। কিছুই তার মনমতো হচ্ছে না!
.
অর্নিলা আনমনে রান্নাঘরে কাজ করছে। রান্না বান্না সেই কখন শেষ। এখনো ইচ্ছে করে এখানে পড়ে আছে। চুলোটা পরিষ্কার করছে। সারফারাজ দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। অর্নিলা ফিরেও চাইলো না। সে এগিয়ে আসছে, মুখে কিছু না বললেও চোখে চোখে যেন অনেক কথা হতো। কিন্তু চোখে চোখ পড়ছে না। সে একসময় তার কাছে এসে দাঁড়াল। অনির হৃৎপিণ্ড ধকধক করছে। তবুও সে ফিরে তাকাল না। মুখ ভার! সারফারাজ আদুরে কণ্ঠে বলে উঠল, ”কি হয়েছে অনি?”

“কিছু না।”

সে হাত ধরার চেষ্টা করল। অনি এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নিল। অবাক হলো বটে। অনি তার মানে রেগে আছে। কিন্তু রেগে থাকার কারণ কি? প্রথমবার ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় বার হলো না। ধপ করে হাতটা ধরে নিল।

”ছাড়ুন আমার কাজ আছে!”

“তোর কি মন খারাপ?”

“না‌ মন খারাপ হবে কেন?

“তোর কথা শুনে এমনটাই তো মনে হচ্ছে। কি হয়েছে রেগে আছিস? দেখি, ফের আমার দিকে!”

থিতুনি ধরে মুখ ফিরাল এদিকে। অনির অশ্রুসিক্ত চাহনি সারফারাজের হৃদয় ক্ষতবি/ক্ষত করে দিল।‌ সে নিস্তেজ কণ্ঠে বলে উঠল, ”কি হলো? কাঁদছিস কেন?”

“আপনি‌ আবার বাবা কে পছন্দ করেন না, তাই না ফারাজ ভাই?”

“না করি না। এতে তুই কেন কাঁদবি?

”কাঁদব না!“

“না। কেন কাঁদবি? তোকে তো আমার পছন্দ। খুব পছন্দ। ভালো লাগে তোকে। ভালোও তো বাসি। তোর দুঃখ কোথায়?”

অর্নিলা মাথা নিচু করে নিল। আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না তার। সারফারাজ হাতটা ছেড়ে দিল।‌ কাছে টেনে নিলো না। গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠল, “তোর বাবার চরিত্রে দো/ষ আছে অনি! সে আমার ফুফুর সাথে কি করেছে আমি ভুলে যায়নি। রক্ত কখনো রক্তকে ছাড়ে না।”

অর্নিলা চমকে উঠল। বিস্মিতবিমূঢ় হয়ে চেয়ে রইল সারফারাজের দিকে। অবাক কণ্ঠে বলে উঠল, “আমার রক্তেও তাহলে দো/ষ আছে ফারাজ ভাই? আপনি বলছেন, আমিও আপনাকে ছেড়ে অন্য কারো কাছে চলে যাবো?”

”না, তুই যাবি না।

“এতো সহজে কিভাবে বলছেন। যাবো না কেন? এই না বললেন, রক্ত রক্তকে ভুলে না। আমার শরীরে আমার বাবার রক্ত। আমি তো তার মতোই হবো। কি হবে যদি আপনাকে ছেড়ে অন্য কারো কাছে চলে যাই।”

সারফারাজ রক্ত/বর্ণ দৃষ্টি ধারণ করল।‌ অনি খানিকটা ভয় পেয়ে গেল। গলার তেজ এখন আগের মতো আর নেই। আচমকা তার কোমর হিচড়ে টেনে ধরল সারফারাজ। আঁত/কে উঠল অনি। তার ঘন ঘন নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠছে। সারফারাজ খুব শান্ত গলায় বলল, “মে/রে ফেলব তাহলে।”

শিউরে উঠল অনি। তার ভিতু দৃষ্টি আকর্ষণ করল তাকে। থেমে থেমে শুধালো সে, “কাকে?”

সে তার কানের কাছে চুল গুলো নিয়ে খেলছে। কানে চুল গুঁজে দিয়ে হেসে বলল,
“তাকে! সে তোকে চাইবে। তুই শুধু আমার অনি। এর মাঝে সে আসবে তাকে মর/তে হবে!” কিয়ৎকালের‌ জন্য দম/বন্ধ হয়ে গেল অনির। তার অক্ষিগোলাক দুটি স্থির হয়ে রইল মনিকোঠায়। তার শার্টের উপর হাতটাকে সে খামচে ধরল ভ/য়েছে।‌ ফারাজ ভাই নিছক মজা করছে বলে মনে হলো না। তাকে আজ বড্ড ভয় লাগছে অনির। ডাক্তাররা সর্বকাল ধরে চেষ্টা করে রোগীর প্রাণ বাঁচাতে আর ফারাজ ভাই কি না বলছে মে/রে ফেলবে।‌ কি সাং/ঘাতিক! হাত পা সব ঠান্ডা হয়ে গেল। সে চুমু খেল তার ললাটে। হেসে বলল,‌ “অনি? ভয় কেন পাচ্ছিস? আমি তো তোর কিছু করব না। তুই তো আমার হৃৎপিণ্ড! হৃৎপিণ্ড থেমে গেলে মানুষ বাঁচে না। তোর কিছু হলে আমি কি বাঁচব?”
চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। সারফারাজ তাকে বুকে আগলে নিল।‌ অজান্তেই কেঁদে উঠল অনি!
.
পরদিন শরীরটা ভালো ছিল না বলে অর্নিলা ভার্সিটিতে যায় নি। সারফারাজ সকালবেলা মেডিকেল এ চলে গেলো। এখানে এসেই ডা. সাবিনার কথাবার্তা তাকে পাগল বানিয়ে ছাড়ল। রোজ রোজ তিনি একটা কথাই বলছে। ভাবতে, ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে। সময় কিন্তু হাতে বেশী নেই। এসব শুনে শাহাদাত হেসে বলল, “মনে হচ্ছে ডা. সাবিনা তোকে কার্ডিয়াক সার্জন করেই ছাড়বে।”

শুভ হেসে বলল, “দেখছিস না, রোজ কেমন করে মনে করিয়ে দিচ্ছে। তা বাবা, তুমি তো তার কথাটা শুনলেই পারো।”

”মজা করিস না। আমি জানি আমার কি করতে হবে।“

”তাহলে ডা. সাবিনাকে বলে দিচ্ছিস না কেন? আমার যা মন চাইবে আমি তাই করব। বউয়ের সাথে এখানেই থাকব।”

শুভর কথা শুনে শাহাদাত হো হো করে হেসে উঠলো। বলল, “সিরিয়াসলি সারফারাজ! বউকে এতো ভালোবাসিস! তার জন্য এখন ক্যারিয়ারকে জলাঞ্জলি দিবি?”

”আমাদের ডা. শেহদাত এবার রোমিও হয়ে গেছে। জুলিয়েট ছাড়া তার চলে না বুঝলি তো!”

সারফারাজ গম্ভীর হয়ে কিছুক্ষণ বসে রইল। ওই দুই বন্ধুর কথা তার কানে যাচ্ছে না। গায়ের এপ্রোন খুলে টেবিলে ফেলে বলল, ”আমি যাচ্ছি।”

“যাও যাও, বউয়ের জন্য তর সইছে না আমরা বুঝতে পারছি।”

“ভাবীকে আমার তরফ থেকে সালাম দিয়ে দিস ফারাজ।‌বলিস, একদিন আমরা যাবো রোমিও জুলিয়েট কে দেখতে।”

খোঁচা মেরে কথা বলা দুজনের বহুদিনের স্বভাব। সারফারাজ এসব গায়ে মাখে না। হুলস্থুল করে সে বেরিয়ে গেলো। বাইরে এসে গাড়ি স্টার্ট । ঘামে তার শরীরের শার্ট ভিজে উঠলো। ঘন অন্ধকার রাস্তায় শুধু গাড়ির সামনে দুটো আলো ছাড়া আর কিছুই জ্বলছে না। চারদিক এতো নিস্তব্ধ! এখান এখানে কেউ ম/রে পড়ে থাকলেও কেউ কিছু টের পাবে না। কিন্তু রাস্তা নির্জন। মানুষজন কিছু নেই। এর মধ্যে ঝড়বৃষ্টি। বৃষ্টির পানি পড়ে রাস্তা হয়ে উঠল স্যাঁতস্যাতেঁ। কোন কিছুর ছাপ নেই, প্রমাণ নেই। বৃষ্টির পানিতে সবকিছু ধুয়ে গেল। গাড়ি এসে থামল বাসার সামনে। সারফারাজ গাড়ি ছেড়ে বের হলো। ঘামে তার অর্ধভেজা শার্ট এবার বৃষ্টির পানিতে আরো ভিজে উঠল। কিছুক্ষণ বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়েই ভিজলো সে। পাপ ধুয়ে যেন পবিত্র হতে চায়। নিজেকে শুদ্ধতম বানানোর কি দারুণ ফন্দি। কাকভেজা হয়ে ফিরল। কলিং বেল চাপতেই মনে হলো ওপাশ থেকে কেউ ছুটে আসছে। মনে প্রশান্তি বয়ে গেল। দরজা খুলে দেখল অর্নিলা কে। বৃষ্টিতে ভিজে ঠকঠক করে কাঁপছে সারফারাজ। অস্থির হয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে তার মাথাটা মুছে দিতে লাগল। আরো কতো কথা! “এভাবে ভিজে গেলেন কি করে? আপনি তো গাড়িতে ফিরলেন। ইচ্ছে করে বৃষ্টিতে ভিজতে গেলেন কেন ফারাজ ভাই? বৃষ্টির পানি তো আপনার শয় না। দেখবেন এখুনি সর্দি লেগে যাবে।”

বলতে বলতে হাঁচি শুরু। অর্নিলা হাঁপিয়ে উঠলো। ক্লান্তি ভরা কণ্ঠে বলল, ”বসে থাকবেন না। উঠুন। চেঞ্জ করে আসুন। আমি জামা বের করে দিচ্ছি।”
সে ছেড়ে যেতে চাইলো। অমনি সারফারাজ তার কোমর টেনে জড়িয়ে ধরল। গায়ের পানি টপটপ করে মেঝেতে পড়ছে। সারফারাজের ভিজে কাপড় চোপড়ে জড়িয়ে আছে অনিকে। সেও ভিজে যাচ্ছে। কি অদ্ভুত! ফারাজ ভাই এমন কেন করছে? আদুরে কণ্ঠে বলে উঠল, ”আমায় ছাড়বেন না ফারাজ ভাই?”

“না, তুই থাক এখানে। আমার কাছে। আমার তোকে চাই অনি।”

বড্ড বেদনাদায়ক সেই কথাগুলো। ফারাজ ভাইয়ের কি হলো আবার? কিসের এতো কষ্ট। খারাপ কিছু কি হলো মেডিকেলে! ঝাপসা ঝাপসা চোখে অর্নিলা সামনে তাকিয়ে রইল। সামনের টেবিলের ফুলদানিটা এখানে আর নেই। ফারাজ ভাইয়ের চোখে পড়বে না তো আবার। তাহলে সে সর্বনা/শ হয়ে যাবে। ভয়ে তার বু্ক কাঁপছে। সারফারাজ তাকে ছেড়ে দিল। উঠে দাঁড়িয়ে পিছন ফিরতে যাবে অমনি অনি তাকে আঁকড়ে ধরল আবারো। সে নিশ্চুপ হয়ে রইল। বাইরে বৃষ্টি পড়ছে তো পড়ছে। থামবার নাম নেই। একটু বাদে বাদে বিদ্যুৎ চমকানোর বিকট শব্দ। অনেকক্ষণ ধরে নামল বৃষ্টি। এবার সবকিছু চুপ, নিস্তেজ হয়ে গেল। একটু শীত শীত লাগছে এখন। অর্নিলা গুটিশুটি হয়ে সারফারাজের বুকে এসে আশ্রয় নিল। ঘরে আলো বলতে ওই একটা ল্যাম্পশেড। সারফারাজ আধশোয়া অবস্থায় শুয়ে আছে। তার কোলেতে অনি। এখান থেকে জানালা দিয়ে বাইরে আকাশ দেখছে। আকাশ এখন পরিষ্কার! তাঁরা দেখা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর বুঝি চাঁদও দেখা যাবে। অর্নিলার
ন গ্ন বাহুর জড়িয়ে ধরে আছে সে। চোখ পড়ল পিঠের দিকে। আঁচ/ড়ের দাগ দেখে তার রক্ত টগবগিয়ে উঠল। মুখ খুলে শ্বাস নিচ্ছে সে। স হ্য হচ্ছে না, কিছুতেই স হ্য হচ্ছে না। তার অনিকে অন্য কেউ ছুঁয়ে দেখবে এটা ভাবতেই যেন উন্মা দ হয়ে উঠে। ইচ্ছে করে সবকিছু শেষ করে দিতে। আঁচ ড়ের দাগটা স্পষ্ট। অনির সেটা অবগত ছিলো না। সারফারাজ হাত দিয়ে ঘা পা ছুঁয়ে দেখল। তার ওষ্ঠাদ্বোর ছুঁয়ে দিলো ঘা টুকু। তার অনির সমস্ত ঘা এভাবেই ফুল হয়ে যাক। শুকিয়ে যাক সমস্ত ক্ষ ত। এসব ক্ষ ত নিজের মনে একা নিয়ে সে চলতে পারবে। সারফারাজের আদুরে ছোঁয়ায় অনি নড়েচড়ে উঠল একটু। আবছা ঘুমের মধ্যেই মুচকি হেসে উঠল সে।

ঠিক ঘণ্টাখানেক পর ফোন বেজে উঠল সারফারাজের। ঘুমটা ভেঙে গেল অর্নিলার। আবছা আবছা আলোয় ঘড়ির দিকে ফিরে চাইল। রাত্রির ১ টা বাজে। এতো রাতে আবার কে ফোন করল? বিছানার পাশে ফারাজ ভাই নেই। তাকে হাতড়ে খুঁজছে। ভালো করে চেয়ে দেখল সারফারাজ দাঁড়িয়ে কথা বলছে। চাদরে শরীর ঢেকে নিয়ে অনি উঠে বসল। কথা শেষ করে সে ফিরে তাকাল। ল্যাম্পশেডের অল্প আলোয় তার গম্ভীর মুখ দেখে অনি শুধালো, ”কি হয়েছে ফারাজ ভাই?”

সে বিছানার পাশে এসে বসল। অনির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “তৈরি হয়ে নে। আমাদের বেরুতে হবে।

”কোথায় যাবো?”

”মেডিকেল এ। নিয়াজ নাকি এক্সি’ডে’ন্ট করেছে।”

চোখ মুখ স্থির হয়ে উঠল অর্নিলার। আকস্মিক ঘটনায় সে হত’ভম্ব! হতবাক হয়ে রইল! মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। সারফারাজ তার হাতখানি ধরে বলল, “চিন্তা করিস না। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। চল, উঠে তৈরি হয়ে নে!”

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে