চৈত্রের_রাঙায়_রচিত_প্রণয় পর্ব-১৯+২০

0
508

#চৈত্রের_রাঙায়_রচিত_প্রণয়
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_১৯

ডঃ সাবিনা ইয়াসমিন এর তত্ত্বাবধানে এখন থেকে সারফারাজ শেহদাত থাকবে। কথাটি জানামাত্র সারফারাজ একটু ঘাবড়ে গেল। কারণ সে তো এতোদিন ডঃ শরিফুল ইসলাম এর তত্ত্বাবধানে ছিল কিন্তু কিছুদিন আগেই তিনি দেশের বাইরে গেছেন কোন একটা কাজে। আপাতত এখন তাকে ডঃ সাবিনা ইয়াসমিন এর তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। শুনেছে তিনি অনেকটা রাগী। সে অবশ্য তাকে এখনো দেখেনি যতটুকু লোকজন থেকেই জেনেছে। একটু ভয়েই আছে। সে একা নেই। তার সাথে আরো আছে শাহাদাত আর শুভ। হ্যাঁ, পরীক্ষায় পাস করবে না করবে না বলে ছাগল দুটো ঠিকই এমবিবিএস পাশ করে ফেলেছে আর এখন ইর্ন্টানশিপ ও করছে। আর বেশি দিন বাকি নেই। এই তো ছ’মাস হয়ে গেল। শাহাদাত গলা থেকে স্টেথোস্কোপ নামিয়ে টেবিলে রাখল। সারফারাজ টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে একজন রোগীর ফাইল ঘাটছে। শুভ কফি নিয়ে হাজির। সারফারাজ মুচকি হেসে বলল, “খুব টায়ার্ড নাকি?”

কফির কাপ গুলো টেবিলে রেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল শুভ। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “সে আর বলতে, ইমার্জেন্সিতে আসা পেশেন্ট। কতো কষ্ট করতে হলো বল তো। ভাগ্য ভালো আল্লাহ হায়াত রেখেছিলো।”

শাহাদাত কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলল, “ওই যে দেখে এলাম কান্নাকাটি করছে।

”হ্যাঁ রোগীর আত্মীয়! প্রথমবার হার্ট অ্যাটাক করল। পরিবারের সামলে উঠতে অনেক কষ্ট হবে।

“হুম‌। এ অবধি কতো মৃ/ত্যু দেখলাম কতো প্রিয়জনকে কাঁদতে দেখলাম। এখন এসব শয়ে গেছে।

শাহাদাত স্বরে বিরহের সুর পাওয়া যাচ্ছে। শুভ কিঞ্চিৎ ভেবে বলল, “বেড নং ২১ এর পেশেন্ট কি আর…

বাকি কথা বলতে হলো না। শাহাদাতের মলিন হাসি সমস্ত কিছুই বলে দিলো। শুভ নিশ্চুপ হয়ে কফি কাপে চুমুক দিলো। কিছুক্ষণ চারদিক ছেয়ে গেল নিস্তব্ধতায়। একজন ডাক্তার তার সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করে একজন রোগীর প্রাণ বাঁচাতে। কিন্তু শেষমেশ যখন শেষ রক্ষা আর করতে পারেনা, যখন হেরে যায় তখন হতাশায় ডুবে যায় সবকিছু। সারফারাজ গায়ের এপ্রোন খুলে রাখল। বলে উঠল, “কিছু করার নেই। আমাদের হাতে এতোটুকুই। সৃষ্টিকর্তা এর চেয়ে বেশি শক্তি আমাদের দেননি কি করার।”

“আমার মনে হয়, একজন ডাক্তার হতে হলে প্রথমেই মনটা পাথর করে ফেলতে হয়। পাথর না হলে কিছু করার নেই।”

”তা বটে।”

“সারফারাজ! তোর হাতে ওটা কার ফাইল!”

“নতুন এক পেশেন্ট এসেছে। হার্টের সমস্যা কিন্তু সমস্যাটা কি বোঝা যাচ্ছে না। আপাতত কিছু পরীক্ষা দিয়েছি দেখা যাক রিপোর্ট কি আসে।”

“ডঃ সাবিনা চলে এসেছেন। তাকে গিয়ে রিপোর্ট দেখাও এক ঝটকায় বলে দিবেন।

শাহাদাত তড়িখড়ি করে বলল, “এসে গেছে নাকি।

”হ্যাঁ, চলে এসেছে। কেবিনে আছে। একটু পরেই খবর এলো বলে। সারফারাজ তৈরি হও।”

“আমি একা যাবো নাকি? তোরাও তো যাবি।

“না বাবা, যা শুনলাম তার নামে। তবে এটা বলতেই হয়, তিনি একজন এক্সট্রাঅর্ডিনারি! অসাধারণ ব্যক্তিত্ব।নামকরা একজন কার্ডিওলজিস্ট।”

“তবে নাকি অনেক রাগী!”

”সেটা জানতে হলে তো দেখে আসতে হবে,‌ তাই না!” বলতে বলতে খবর চলেও এলো। প্রথমে ডাক পড়ল সারফারাজ। সারফারাজ এপ্রোন পরে হাতে ফাইল নিয়ে বেরিয়ে গেল। শুভ যাবার আগে বলে উঠল, ”দোয়া করি বৎস!“
“চুপ কর!“
হেসে উঠল তারা দুজন। সারফারাজ ডঃ সাবিনা ইয়াসমিন এর কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে নক করল। অনুমতি পেয়ে ভেতরে ঢুকে চমকে গেল বটে। তার ব্যাপারে শুনে যেমনটা ধারণা করেছিলো সে মোটেও তেমন নয়। নীল রঙের শাড়ির উপর তার সাদা এপ্রোন,‌ গলায় ঝুলছে স্টেথোস্কোপ। এসেই কি পেশেন্ট দেখা শুরু করে দিয়েছে নাকি। হাতে একটা ফাইল ও দেখা যাচ্ছে। চেয়ার ছেড়ে টেবিলের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ফাইল দেখছিলেন। চোখ মেলে এদিকে তাকালেন। চোখের চশমা খুলে শুধালেন, “ডঃ শেহদাত!”

“জি।”

“আসুন , বসুন।”

কণ্ঠস্বর অনেকটাই ধারালো। সারফারাজের খানিকটা অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। ডঃ সাবিনা নিজের চেয়ারে বসে পড়লেন। সারফারাজের হাতে ফাইলের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, “কোন পেশেন্ট?”

সারফারাজ ফাইল এগিয়ে দিল। বলে উঠল, “নতুন পেশেন্ট। একটা পরীক্ষা করেছিলো তার রিপোর্ট। আমি আরো কিছু পরিক্ষা করতে দিয়েছি।”

“আপনার কি ধারণা, কি হয়েছে?”

“সমস্যা টা দেখে মনে হচ্ছে হার্ট ব্লক। ৫০% চান্স আছে। পুরোপুরি শিউর হবার জন্যে রিপোর্টের অপেক্ষা করছি।”

ফাইলের থেকে চোখ সরিয়ে বলে উঠলেন, ”হার্ট ব্লক। আমি ১০০%। যাই হোক, নতুনদের জন্য আরো কিছুটা সময়ের দরকার। আমি বলছি অভিজ্ঞতা থেকে।”

”আপনার অভিজ্ঞতা?”

“৮ বছরের!”

সারফারাজ বিস্ময় প্রকাশ করল। দেখে মনে হয়নি তার থেকে এতোটা বড়। এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। ডঃ‌ সাবিনা মৃদু হেসে বললেন, “ডঃ‌ শরিফুল ইসলামের আন্ডারে আমিও ছিলাম। খুব ভালো একজন ডাক্তার। নিশ্চিত অনেক কিছু শিখতে পেরেছেন।”

“শিখার চেষ্টা করছি।”

”প্ল্যান কি আপনার ডঃ সারফারাজ। যতটুকু জানি আপনি একজন কার্ডিয়াক সার্জন হতে চান। কোথায় যাবেন ঠিক করলেন কিছু? আপনার জন্য কিন্তু ভালো সুযোগ আছে। ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ছিলেন শুনলাম।”

“আমি এখনো ভাবছি?”

“এখনো ভাবছেন? আশ্চর্য। আপনার হাতে সময় আছে সবে ৬ মাস। আমি তো বলব এখন থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে নিন। ইংল্যান্ড কিংবা আমেরিকাতে যাবেন। কমপক্ষে ৪ – ৫ আপনার স্ট্রাগল করতে হবে। আরো কমও হতে পারে কজ আপনি ব্রিলিয়ান্ট। এরপর দেশে ফিরে দেশে নামকরা একজন কার্ডিয়াক সার্জন হিসেবে সবাই চিনবে। কি ব্যাপার অন্যমনস্ক মনে হচ্ছে?”

“না আমি শুনছি আপনার কথা।

”বিবাহিত!”

“জি।

“কয়বছর‌ হলো? সে যতো বছরই হোক না কেন? পুরুষ মানুষের জন্য তা ব্যাপার হলো নাকি? ম্যারিড মেয়েদের নিয়ে অনেক সমস্যা। অনেক ঝামেলা হয় আপনার তো তেমন কিছু নেই। তাহলে ভাবছেন কি?”

সারফারাজ মুখ ফসকে বলে দিল, “এইজন্যই আপনি তাহলে আনমেরিড!”

“ইমপ্রেসিভ। আমার ব্যাপারে একেকটা খবর খুব ভালো ভাবেই নিয়েছেন দেখছি। বাট মিস্টার হ্যান্ডসাম আপনি কিন্তু ম্যারিড!”

সারফারাজ ইতস্তত বোধ করল। ভুল প্রশ্ন করে ফেলেছে সে।‌ ডঃ সাবিনা হেসে উঠলেন। তাকে দেখে কোনভাবেই মনে হলো না সে রাগী একজন।
“ওকে ওকে,‌ মিস্টার শেহদাত। আপনি তো দেখছেন ঘাম ছুটিয়ে ফেলেছেন। ডাক্তাদের এতো তাড়াতাড়ি অস্থির হলে চলে না। আপনাকে একটা কথা বলি ডঃ শেহদাত। কার্ডিয়াক সার্জনের ছড়াছড়ি কিন্তু দেশে তেমন নেই।‌‌ কোন হেলাফেলা নয় এটা। আপনাকে আগে দৃঢ় মনোবল বানিয়ে নিতে হবে। যদি কার্ডিয়াক সার্জন হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চান তো নিজের ক্যারিয়ারের দিক দিয়ে সিরিয়াস হন। আপনাকে একটা ভালো সাজেস্ট দিই, আপনি ইংল্যান্ডে গিয়ে FRCS করতে পারেন। FRCS খুবই লিউক্রিটিভ ডিগ্রী। সর্বদেশে সম্মানিত। কিন্তু এটা এতোটা‌ সহজ না। আপনাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে, প্রচুর ঘাটতে হবে। অথচ আপনি এখনো এক জায়গায় গম্ভীর হয়ে বসে আছেন। ভেরি মাচ ডিসাপয়েন্টিং। আপনার থেকে আরো ভালো আশা করেছিলাম। ডঃ শরিফুল আপনার সম্পর্কে আমায় অনেক বলেছে।”

সারফারাজ মনোযোগে বিঘ্ন ঘটল। হঠাৎ তার মনে পড়ল অর্নিলার কথা। টানা দুই বছর তাকে ছেড়ে ছিলো সে। আবারো কি ছেড়ে চলে যাবে দূরদেশে। ও এবার মেনে নিতে পারবে তো!

“ডঃ শেহদাত।

”জি।

”কথাগুলো কি রিপিটেটিভ মনে হচ্ছে। আগে কোথাও শুনেছেন?

“ডঃ শরিফুল আমায় অনেক আগেই বলেছেন।

“তারপরেও আপনার এই হাল। এ মাই গড।‌ এরপর ডঃ‌ শরিফুল কিভাবে আপনাকে নিয়ে এতো ভাবতে পারেন আমি সেটাই ভাবছি। আমি হলে কবেই হাল ছেড়ে দিতাম!

”সরি ডঃ।

ডঃ সাবিনা বোধহয় বিরক্ত হলেন। পানির গ্লাসে চুমুক দিয়ে বললেন, ”ওপেন হার্ট সার্জারি করেছেন কখনো?”

“হ্যাঁ মানে না।”

“তাহলে তৈরি হন। আপনি এখন বাসায় যান। বিশ্রাম নিন। রাত দেড়টার দিকে একটা ওপেন হার্ট সার্জারি আছে। আপনি সেখানে আমার সাথে যাবেন। ঠিকানা আমি আপনাকে মেসেজ করে পাঠিয়ে দিবো।

“আচ্ছা।”

“ভয় পাচ্ছেন?”

”না, ভয় কেন পাবো?

”হুম।‌ তবে আপনাকে দেখে অনেক অস্থির মনে হচ্ছে। কাজ করুন আপনার এড্রেস আমায় দিয়ে যান।‌ রাত্রির ১১ টার দিকে আপনাকে পিকআপ করতে চলে যাবো। ওকে।

“ওকে ডঃ!

ডঃ সাবিনার রুম থেকে বেরিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সারফারাজ। এখন মনে হচ্ছে তিনি আসলেই অনেকটা ভয়ানক!
.
হাসপাতাল থেকে বের হয়েই প্রথমে সে কল করল অর্নিলাকে। কিছুদিন আগেই নতুন গাড়ি কিনেছে। কিনেছে বললে ভুল হবে বাবা পাঠিয়েছে। এখানে ওখানে যাবার জন্য গাড়ির দরকার ছিলো। তার লাইসেন্স তো আগে থেকেই ছিল। ভাবছে অর্নিলার লাইসেন্স করিয়ে ফেলবে। ভালোই হবে তাহলে। অর্নিলার ক্লাস শেষ হতে ঘণ্টাখানেক বাকি আছে। সারফারাজ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল অর্নিলাকে পিকআপ করতে। তার পৌঁছাতে ঘণ্টাখানেকের মতোই লাগল। ভার্সিটির বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে অর্নিলার জন্য। টানা ১৫ মিনিট পর বের হতে দেখল অর্নিলাকে। সারফারাজ হঠাৎ করেই একটু তটস্থ হয়ে গেল। কয়েকটা ছেলেমেয়ে ঘিরে আছে অনিকে। দেখে মনে হচ্ছে বন্ধুবান্ধব। অর্নিলার ছেলে বন্ধুও আছে। কই? সে তো জানে না। ব্যাপারটা যেনো তার পছন্দ না। তারা দাঁড়িয়ে হাসাহাসি করছে। অথচ সারফারাজের অস্বস্তি হচ্ছে। হুট করে গাড়ির মধ্যে ঢুকে গেল সে। পানির বোতল বের করে এক নিঃশ্বাসে খেতে লাগল। হঠাৎ গাড়ির জানালায় কেউ কড়া নাড়ল। সারফারাজ ফিরে তাকাল। অনি হাত নেড়ে বলছে, “ফারাজ ভাই!”

#চলবে….

#চৈত্রের_রাঙায়_রচিত_প্রণয়
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_২০

সারফারাজ গাড়ি ছেড়ে বের হলো। অর্নিলা তার পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বাহু আঁকড়ে ধরে বলে উঠল, “এই যে আমার বর!” কথাগুলো বলা হলো বন্ধুদের উদ্দেশ্য করে। সকলে সারফারাজ কে দেখছে। সে মৃদু হেসে বলল, “হ্যালো!”

“আরে বাহ অর্নিলা। তোর বর দেখতে তো খুব স্মার্ট। উহুম হ্যান্ডসাম ও বটে।” একটা মেয়ে হেসে বলে উঠল কথাটা। পাশের মেয়েটা মুখ টিপে হাসল। পেছন থেকে একটা ছেলে এসে তার সাথে হ্যান্ডশেক করে বলল, ”আমি রিয়াদ। যাক, আপনার সাথে দেখা করবার ইচ্ছা ছিল আজ হয়েও গেল।”

“দেখা‌ করার ইচ্ছা মানে?”

”কি আর বলব? অর্নিলা আপনার ব্যাপারে এতো বলে কৌতুহল ধরে রাখতে পারছিলাম না। কিন্তু আমার ধারণা ছিল আপনাকে দেখতে আরো বয়স্ক মনে হবে।”

কিছুটা ইতস্তত বোধ করল সারফারাজ। অর্নিলা চোখ রাঙিয়ে মুখ ফুলিয়ে বলে উঠল, ” এ কেমন কথা রিয়াদ?”

”রাগ করছিস কেন? আমি তো শুধু কথার কথা বলছিলাম। ওই আমায় রেহানা বলল তোর বর নাকি তোর থেকে অনেক বড় তাই আমিও ভাবলাম সুগার ড্যাডি কি না?”
রেহানা সহ বাকি সবাই হেসে উঠল। কিন্তু অর্নিলার মোটেও ভালো লাগছে না। তার কেবল মনে হচ্ছে তার বন্ধুরা তার বরকে নিয়ে মজা নিচ্ছে। অস্বস্তি হচ্ছে বটে। সারফারাজ তাদের সাথে তাল মিলিয়ে হেসে বলল, “বন্ধুর জন্য এতো চিন্তা দেখে ভালো লাগল। তবে তুমি নিশ্চিতে থাকো, তোমার বন্ধু কোন সুগার ড্যাডি পায় নি।”

“হ্যাঁ,‌ তা ঠিক। আপনাদের দুজনকে অনেক মানিয়েছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী অর্নিলার খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়াটা বেমানান না!”

“বেমানান কেন হবে? বহু যুগ ধরেই দেশে এমনটা হয়ে আছে। আগে তো আরো কম বয়সেই বিয়ে দেওয়া হত। যেমন ধরো আমার মা, তোমার মা কিংবা তাদের মায়েদের!”

রিয়াদ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠল, “আমার মা এম এ পাশ! এম এ কমপ্লিট করার পর তিনি বিয়ে করেছেন।”

“আর আমার মা ও এম এ পাস করেছেন। বাবা রিটায়ার্ড জজ। মানে আমার পুরো পরিবার শিক্ষিত।” বন্ধু মহল চুপসে গেল হঠাৎ করে। অর্নিলার মুখে মুচকি হাসি। সারফারাজ বলে উঠল, ”কিন্তু তুমি আমার কথাটা বুঝতে পারোনি। আমার মা বিয়ের পর এম এ দিয়েছেন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা যেমন আছে তেমন ঘরের একজন নিপুণা রমনীও বটে। কম বয়সে সব মেয়েদের বিয়ে মানে এই না তাদের জীবন শেষ। সবার ক্ষেত্রে তা ঘটে না। একজন সঠিক জীবনসঙ্গী অবশ্যই তার অর্ধাঙ্গিনীর জীবন বদলে দেয়। বুঝতে পেরেছো!”

রিয়াদের চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে অনেকটাই চুপসে গেছে। তবুও মুখ ফুটে বলে উঠলো, ”কিন্ত এই মর্ডান যুগে?”

“মর্ডান যুগ! থাক বাদ দাও। আমি আর কথা বাড়াতে চাই না। এরপর দেখা যাবে তর্ক লেগে যাবে।

রেহানা রিয়াদ কে চুপ করিয়ে দিয়ে বলল, “থাম,‌তোর দম্ভ শেষ। সত্যিই অর্নিলা তোর হাসবেন্ড স্মার্টের আর হ্যান্ডসাম এর সাথে সাথে ইন্টালিজেন্টও বটে।”

অঙ্কিতা হেসে বলল, “আমার এবার তোকে হিংসে হচ্ছে অর্নিলা।

অর্নিলা সারফারাজের বাহু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, “একদম না। আমার বরের দিকে নজর দিলে চোখ তু লে দেবো।

“বাব্বাহ! কি ভালোবাসা দেখছিস। তো দুলাভাই। শ্যালিকা হিসেবে আমরা তো ট্রিট পাই। দিবেন না!”

সারফারাজ কিছু বলার আগে অর্নিলা ধপ করে বলে উঠলো, “আজ না আরেকদিন। ও সবে মেডিকেল থেকে ফিরেছে। এখন বাসায় গিয়ে ফ্রেস হবে। নেক্সট টাইম ওকে।”
অঙ্কিতা বলে উঠল,
“দেখলি রেহানা সবদিকে কতো নজর অর্নিলার। কিরে, তুই যে একদম পাক্কা ঘরের বউ আগে তো জানতাম না।”

সারফারাজ হেসে বলল,‌”হুম,‌ অনি সবকিছু খুব সুন্দর করে সামলিয়ে নেয়।

”আচ্ছা আচ্ছা। ভালোবেসে অনি ডাকা হয় নাকি আবার!”

অট্টহাসিতে হেসে উঠল সকলে। সারফারাজ খানিকটা লজ্জা পেল বটে। রেহানা বলে উঠল, ”আচ্ছা বাবু,‌ তুই তোর ডাক্তার বর কে নিয়ে বাড়ি ফের গে। আমরা না হয় আরেকদিন ট্রিট নিয়ে নিবো। কি তাই তো।”

সকলে মিলিত কণ্ঠে বলল, ”হ্যাঁ তাই!” সকলে হাসলেও রিয়াদের মুখে তখন হাসি মিলিয়ে গেল। সারফারাজ সেটা লক্ষ্য করল বটে। কে জানে এই ছেলের মনে কি আছে। গাড়ি ড্রাইভ করছে আর ভাবছে, এখনকার ভার্সিটির ছেলেমেয়ে গুলো অনেকটাই উশৃঙ্খল। কিছুদিন আগেই তার এক কলিগ ডা. মাহমুদ সুইসা ইড এটেন্ড করছিলো। ভাগ্যিস সময়মতো তার দেহ থেকে বি ষ বের করা গিয়েছিল। এখনো হাসপাতালে ভর্তি। একজন ডা. যখন সু ইসাইড এটেন্ড করে তখন ধরে নিতে হয় ব্যাপারটা অনেক ভ য়ানক। কারণ ডাক্তারের সব পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে হয়। কিন্তু ডা. মাহমুদের ক্ষেত্রে সব সীমা পার হয়ে গেছে। আশপাশের সবার কথা থেকে যা জানল সেটা হলো, ডা. মাহমুদের স্ত্রী নাকি তাকে তা লাক দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে করেছেন। যদিও তাদের সংসারের দীর্ঘ ৮ বছর। একটা বাচ্চাও নাকি আছে। তাদের বিয়ের সময় তার স্ত্রীর বয়স নাকি কমই ছিলো। কিন্তু বিয়ের পর স্ত্রী পড়াশোনা করতে গিয়ে ভার্সিটির একটা ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। তাকে নিয়েই এখন নতুন ঘর বাঁধার স্বপ্ন। তাদের ছোট ৪ বছরের ছেলেটা রোজ বাবার পাশে বসে থাকে। দেখলে বড্ড মায়া হয় সারফারাজের। সে জানত মেয়েদের মায়া নাকি বেশী থাকে কিন্তু সবার না। কোনো মা কিভাবে পারে তার সন্তান কে ছেড়ে থাকতে এই ব্যাপারটি সে বুঝে না। এমন ঘটনা নাকি এখন অহরহ ঘটছে। হঠাৎ তার বুক কেঁপে উঠল। কেন মনে হলো রিয়াদ তাকে আর অর্নিলা কে একসাথে দেখে সহ্য করতে পারছে না। যখন অর্নিলা তার হাত জড়িয়ে ধরল তখন কেন রিয়াদের বিষা ক্ত চাহনি এসে পড়ল তাদের সম্পর্কের মাঝে। তার কটাক্ষ, বলা কথাগুলো যেন নিছক মজা ছিলো না। ছিলো তাকে ছোট করা, বুঝিয়ে দেওয়া অর্নিলার সাথে তাকেই মানাত তাকে নয়।‌ আচ্ছা, অনি আবার তাকে ছেড়ে চলে যাবে না তো?

অনি মিনমিন স্বরে কিছু বলছে। সারফারাজ বলল, ”কি বলছিস?”

“বলছি আমি আর ওদের সাথে চলব না।

“কেন চলবি না? ওরা না তোর বন্ধু!

“তাতে কি? রিয়াদ কিভাবে আপনাকে অপমান করল দেখলেন। আর কথা না ওর সাথে। আমার বরের অপমান মানে আমারও অপমান। মজা করে বললেও রিয়াদ ঠিক করেনি। ও তো আর বাচ্চা নয়।“

সারফারাজ ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসির রেখা। অর্নিলার কথার মাঝে সে তার উওর পেয়ে বাকরুদ্ধ! অস্ফুট স্বরে কিছু বলল। অর্নিলা ফিরে তাকাতেই তার হাতটা শক্ত করে ধরে নিল। অন্য হাতে গাড়ি ড্রাইভ করছে, দৃষ্টি সামনের দিকে। অর্নিলা মৃদু হেসে লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিল।
.
সারাদিনের সমস্ত গ্লানি মিটে গেল বিকেলের গোসলের মধ্য দিয়ে। রান্না বান্না সব শেষ করে অর্নিলা খেতে বসেছে। পরনে তাল নীল রঙের একটা গোল জামা। বেশিরভাগ সময় বাইরে গেলে এগুলোই তার পরনে থাকে। ঘরে থাকলেই ইচ্ছে করে শাড়ি পরে। শুধুমাত্র তার ফারাজ ভাইকে দেখানোর জন্য। সারফারাজ খাবার টেবিলে বসে বলে উঠল, “গোসল করলি না অনি?”

“করব। অনেক ক্ষুধা পেয়েছে আগে খেয়ে নেই। দেখুন শিং মাছের ঝোল করেছি। আপনার প্রিয় নাহ অনেক!”

ভাতের থালায় খাবার বাড়ল সে। সারফারাজ মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। ঘেমে একাকার অনি, তার চুলগুলো ঘেমে ভিজে গেছে। অথচ চোখে মুখে ক্লান্তির রেশটুকু নেই। খুব আনন্দের সাথে খাবার বেড়ে দিচ্ছে সারফারাজ। সে চাইলেই পারত তাকে খাবার বেড়ে দিয়ে চলে যেতে। কিন্তু এমনটা করবে না। দুজন একসাথে বসে খাবে। সারফারাজ কে খাবার বেড়ে দিয়ে নিজের জন্য খাবার বাড়তে গেলো। অমনি সারফারাজ বারণ করে দিয়ে বলল, “নে হা কর!” ভাতের লোকমা তুলে দিল তার সামনে। সুযোগ পেয়ে অর্নিলা চেয়ারের উপর পা তুলে বসে খাবারের লোকমা মুখে নিল। বহুদিন পর আজ ফারাজ ভাই তাকে খাইয়ে দিচ্ছে। সে না করে এতো সাধ্যি তার কোথায়?
.
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত। আকাশের চারদিক অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। আজ বুঝি রাত্রিটা একটু তাড়াতাড়িই নামল। সবে এখন ৭ টা বাজে অথচ বাইরে দেখলে মনে হচ্ছে কতো রাত। তাদের বাসাটা একটু নির্জন এলাকায়। তাই আশেপাশের শোরগোল কম। এর মধ্যে আজ আকাশে চাঁদ উঠেনি। রাতের আকাশ আজ আগের থেকেও অনেক অন্ধকার লাগছে। সারফারাজ বেলকনি ছেড়ে ঘরে ঢুকল। অর্নিলা এখনো শাওয়ার নিচ্ছে। সারফারাজ বিছানার উপর আধশোয়া হয়ে বসে বই পড়ছে। সময় যেন আগের থেকেও আরো নিশ্চুপ হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করে ঘরের বাতি গুলো নিভো নিভো করে উঠল। বাইরে বিকট শব্দ হলো। ঘরের আলো নিভে গেল। লোডশেডিং! সচরাচর হয় না। বোধহয় কোন সমস্যা! বাথরুম থেকে অর্নিলার চিৎকার। সারফারাজ চার্জার লাইট খুঁজছে। পড়ার টেবিলেই তো থাকে। হ্যাঁ, পেয়ে গেল গেল। আলো জ্বালিয়ে এগিয়ে নিতেই দেখল বাথরুমের দরজা খোলা। অর্নিলা ঘরে ঢুকে গেছে। শাড়ি কোনভাবেই পেঁচানো তার ঠিক করে পরতেও পারেনি। চারদিক অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। আলোর ওই ঝলকানিতে শুধু অর্নিলার মুখস্রী দেখা যাচ্ছে। সারফারাজ বুঝি সম্মোহিত হয়ে গেল। তবু সামলে উঠল। তার কম্পিত কণ্ঠস্বর। ”অনি”! চমকে উঠল সে। কিন্তু মুখ তুলে চাইল না। লজ্জায় তার মুখ নামানো। ভেজা চুল থেকে পানি টপটপ করে গড়িয়ে পড়ছে। সারফারাজ এগিয়ে আসছে। অর্নিলার তার শাড়ি খামচে ধরল। কিন্তু সারফারাজ পাশ ফিরে গেল বিছানায়। টেবিলের উপর চার্জার লাইট রেখে তোয়ালে নিয়ে বাথরুমের দরজা বন্ধ করল। নিস্তব্ধ পরিবেশে দরজা বন্ধ শব্দে অর্নিলা কেঁপে উঠল। সে যেন ঘোরেই ছিল। কি চলছিলো তার মনে। সারফারাজ বিছানার কাছে বসে অর্নিলা কে ডাকছে। অর্নিলা শব্দ করছে না। হঠাৎ কারো উষ্ণ ছোঁয়া পেয়ে লাফিয়ে উঠল সে। আচমকা অনি ফিরে তাকাল। সারফারাজ তার হাত ধরে বলল, “এদিকে বস, চুলগুলো এখনো ভেজা। পানি পড়ছে!”

অর্নিলা অনমনে গিয়ে বসল তার পাশে। সারফারাজ তোয়ালে দিয়ে তার মাথা মুছে দিচ্ছে। কি যত্ন! আর সে কি ভাবছিল! সবসময় অধিক চিন্তা ভাবনা তার মাথায় ঘুরঘুর করে। আবারো চমকে উঠল সে। তার দৃষ্টি স্থির হয়ে গেল। সেই উষ্ণ ছোঁয়া,‌ এই ছোঁয়া তার চেনা।সারফারাজের নরম ওষ্ঠধর ছুঁয়েছে তার পিঠখানা। শরীর ক্রমশ ঠান্ডা হয়ে গেল। তার ভেজা ব্লাউজ চিপকে আটকে আছে পিঠখানায়। সারফারাজ গরম হাত দুটো ছুঁয়েছে তার গলার কাছে। অর্নিলা চোখ বুজে ছিল। অথচ টের পাচ্ছিল তার প্রতিটা ছোঁয়া। আজ হঠাৎ তার কি হলো? সে কি পাগল হয়ে গেল। ধীরে তার শরীরখানা বিছানায় এলিয়ে দিল। কানের পাশে চুমু গেল সারফারাজ। তার নিঃশ্বাসের প্রতিটা শব্দ সে শুনতে পারছে। সবকিছু মুগ্ধ থেকে মুগ্ধতর হয়ে উঠছে। অর্নিলা ধীর স্বরে বলে উঠল, ”ফারাজ ভাই, আপনি কি করছেন? আপনার না একটু পরেই যেতে হবে? অপারেশন আছে।”

কথাবলার মাঝেই সারফারাজ চুমু গেল তার ওষ্ঠাদ্বোরে।‌তার সম্মোহিত কণ্ঠে বলে উঠল, ”জানি,‌ অনেক টেনশন হচ্ছে তাই নার্ভ ঠিক করার চেষ্টা করছি।”
দৃঢ় কণ্ঠে অর্নিলা বলে উঠল,
”এটা কোন কথা হলো ফারাজ ভাই?”

সারফারাজ থেমে গেল। দুজন চেয়ে দেখছে দুজনকে। পলক পড়ছে বার বার। সারফারাজ অন্য হাত দিয়ে তার শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলতে লাগল, ”আমার প্রথম হার্ট সার্জারি। খুব উত্তেজিত হয়ে আছি। এর মধ্যে ভেজা চুলে তোর আগমণ।‌ তোর ভেজা শরীরের ঘ্রাণ আমায় পা গল করে তুলেছে। তুই কি চাস অনি,‌‌ অস্বস্তিতে আমি মা রা যাই?

“ছিঃ ফারাজ ভাই। এ কি কথা? আমায় না পেলে আপনি মা রা যাবেন? এটা কখনো হতে পারে?”

শার্ট খুলে ছুঁড়ে ফেলল মেঝেতে। তার উষ্ণ হাতের স্পর্শ পাচ্ছে তখন অর্নিলার চিবুক। সারফারাজ তার কানের কাছে ফিসফিসয়ে বলছে, ”বছরের চৈত্র মাস ভয়ং কর মাস। এ সময়টা রোদের তীব্র উৎপাতে সবকিছু ঝলসে যেতে শুরু করে। আমার প্রেম, আমার ভালোবাসা সেই চৈত্রের মতোই কিন্তু তার চেয়েও ভয়ান ক। এই ভয়ং কর প্রেমের মাঝে তোর উপস্থিতি বিশাল মরুভূমিতে এক বিন্দু জলের সন্ধান পাবার মতোই। বড় দুর্লভ! চৈত্র মাস সর্বনা শা। চৈত্রের রাঙায় দগ্ধ আমার প্রেম তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠেছে তোকে কাছে পাবার আশায়। অনি, তৃষ্ণা মিটাবি না?”

সারফারাজের কণ্ঠে আজ যেন অন্যকিছুই ছিল। এমনটা অনি আগে কখনো শুনেনি। সারফারাজ সরে গেল একটুখানির জন্য। অর্নিলা চেয়ে দেখল। তার প্রতিটা ঘন ঘন নিঃশ্বাস, আলসতায় ডোবা চোখের চাহনি ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। সারফারাজের বলিষ্ঠ দেহ, উন্মুক্ত বুক সবকিছু আজ টানছে তাকে। অর্নিলা যেন প্রস্তুত হয়ে গেল নিজেকে বিলিয়ে দিতে। চোখ বুজে নিল আবারো।
.
পুরো ঘরে আলোর ঝলকানি। কারেন্ট চলে এসেছে। ট্রান্সমিটার বোধহয় ঠিক করা হয়েছে। লাল রঙের চাদরে আবৃত হয়ে আছে অর্নিলা। বিছানার উপরে উপুড় হয়ে ঘুমিয়ে আছে সে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে তার মুখে। সারফারাজ চুলগুলো সরিয়ে মুখখানি দেখার প্রয়াস করল। তৎক্ষণাৎ নড়েচড়ে উঠল সে। সারফারাজ কাছে টেনে নিল তাকে। অর্নিলা তার উলঙ্গ বুকে মুখ লুকাল। সারফারাজ ঘড়ি দেখার চেষ্টা করছে। চোখ যেন ঝাপসা হয়ে উঠছে। এভাবে চশমা ছাড়া ভালোই দেখতে পারে সে। শুধু বই পড়ার সময়ই চশমার দরকার পড়ে। হাত দিয়ে চোখ কচালে নিল। হ্যাঁ ১১ টা বাজতে চলল। তাকে বের হবে। অর্নিলার গভীর ঘুম। তাকে ডাকল না সে। একটু সরিয়ে নিল। মেঝে থেকে শার্টটা তুলে নিল। তৈরি হওয়া দরকার।

খানিকক্ষণ বাদেই জেগে উঠল অর্নিলা। আশপাশ খুঁজে পাচ্ছে সারফারাজ। তার ঘুম ঘুম চোখে ঠিক করে কিছু্ই দেখতে পারছে না। হঠাৎ হাতের ছোঁয়া মিলল। হেসে উঠল সে। সারফারাজ কে তৈরি দেখে এক ঝটকায় তার ঘুম ভেঙ্গে গেল।

“কয়টা বাজে?”

”১১ টা। আমায় যেতে হবে অনি। তুই ঘুমিয়ে পর।”

”না। আমি ঘুমাবো কি করে? আমি তো চলে যাচ্ছেন…

আরো কিছু বলার ছিলো। তার ললাটে সারফারাজের চুম্বন তাকে থামিয়ে দিল। চোখ মেলে তাকাল ঠিক করে। সারফারাজ মিটিমিটি হাসছে। অর্নিলা লজ্জায় লাল হয়ে উঠল। ফোন বেজে উঠল। সারফারাজ ফোন হাতে বেলকনির দিকে গেল। নিচে গাড়ি দাঁড়ানো। ডা. সাবিনা বোধহয় চলে এসেছেন। ঘরে ফিরে এসে দেখল অর্নিলার তার শার্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে। সারফারাজ এগিয়ে এসে বলল, “আমি আসছি!”

“সাবধানে যাবেন!”

পিছন পিছন এলো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তাকে বিদায় দিয়ে দরজা আটকে দিল সে। বুকে হাত রেখে দেখল তার হৃদস্পন্দন ধকধক করে শব্দে করছে। এক ছুটে সে ঘরে চলে গেল। বিছানায় চাদরের তলায় মুখ লুকিয়ে যেন বাঁচল।
.
সারফারাজ গাড়ির দরজা খুলতে যাবে, অমনি ডা. সাবিনা বলে উঠলেন, “ওখানে না, এখানে বসে বসুন ডা. শেহদাত। আমার পাশে। কি অসুবিধে আছে?”

“না‌ অসুবিধে কি থাকবে?” এসে বসল তার পাশে।

“আপনাকে দেখে অনেক ফ্রেস মনে হচ্ছে। বউ খুব যত্ন করে তাই কি।

সারফারাজ হাসল। তিনি বললেন, “ঠিক আছে, এবার হলো না। পরের বার আপনার বউয়ের সাথে দেখা করে যাবো।”

“অবশ্যই!”

গাড়ি চলতে শুরু করল। এসে থামল মেডিকেলের সামনে। তারা দুজন সহ আরো কয়েকজন ছিল। সকলেই সারফারাজ এর সিনিয়র ডাক্তার। সারফারাজ তৈরি হয়ে অপারেশন রুমের কাছে এলো। ডা. সাবিনাও তৈরি। তার দিকে ফিরে বলল, “কি? ভয় করছে ডা. শেহদাত।?

“না।

“টেনশন করবেন। মাথা ঠান্ডা রাখবেন। আজ আপনি হচ্ছেন হেল্পিং হ্যান্ড। শুধু প্রসেস দেখবেন। জ্ঞানের চেয়ে অভিজ্ঞতা বেশী ইম্পর্ট্যান্ট!”

”জানি।

”বেশ , তবে চলুন!”

তারা সকলে ঢুকল অপারেশন রুমে। এরপর সবকিছু নিস্তব্ধতায় কাটল। এতোজন মানুষ একসাথে থাকার পরেও কেউ টু শব্দ করল না। ইশারায় সব কাজ সারল। সারফারাজ ভালো করেছে। ডা. সাবিনার নজরে ছিল সে। তাকে একটিবারেও ঘাবড়া/তে দেখেনি। হতে পারে শুধু দেখেছে তাই। যখন নিজে কাজ করবে তখন তো ঘাম ছুটে যাবে। তবুও প্রথমবারে এতোটুকু‌‌ সাহস সকলের থাকে না। ডা. সাবিনা ইমপ্রেস হলো বটে।
.
সারফারাজ বাসায় এসে পৌঁছাল সকাল ১১ টার দিকে। দরজার সামনে দু’জোড়া জুতো দেখে খানিকটা খটকা লাগল। কেউ কি এসেছে নাকি? নক করতেই অর্নিলা এসে দরজা খুলে দাঁড়াল।
”আপনি এসে গেছেন?”

“কেউ এসেছে অনি?”
অনি হাসার চেষ্টা করল। একটু সরে দাঁড়াতেই দেখল সোফায় বসে আছে ইয়াতিম শিকদার। সারফারাজের টনক নড়ে গেল নিয়াজ শিকদার কে পাশে বসে থাকতে দেখে। চোখ মুখ থেকে ক্লান্তির রেশ সরিয়ে চোয়াল শক্ত করে নিল সে। ঘরে ঢুকতেই অর্নিলা বলে উঠল, “দয়া করে কিছু বলবেন না। বাবা বলেছে কিছু না বলতে। আমাদের বাসায় তারা মেহমান!”

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে