চৈত্রের_রাঙায়_রচিত_প্রণয় পর্ব-১৫

0
500

#চৈত্রের_রাঙায়_রচিত_প্রণয়
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_১৫

অর্নিলা অবশেষে একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। কিন্তু ঢাবিতে চান্স না পাওয়ার দুঃখ তার কখনোই ঘুঁচবে না এরমধ্যে তো আছেই ফারাজের দুরত্ব তার অবহেলা। এই অবহেলা সইতে সইতে সে এখন ক্লান্ত। মাঝে মাঝে মন চায় অভিমান করতে, আর কথা বলবে না ফারাজ ভাইয়ের সাথে। কিন্তু এমনটা করতে পারে না সে। তার মন মানে। বার বার তার কাছে নেতিয়ে পড়ে। বটগাছের মতো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। মন বলে, কার কাছে এতো দম্ভ দেখাবে সে তো তারই জীবনসঙ্গী! যদি ফারাজ ভাই তাকে ছেড়ে অন্য মেয়ের প্রতি আসক্ত থাকত তবু না হয় কিছু বলা যেত। তেমন কোন লক্ষণ ও তো নেই। তাও আজ চুপি চুপি গিয়ে ফারাজ ভাইয়ের ফোনটা তুলে চেক করছিলো। ভাইয়া তখন ঘরে ছিলো না। ভালো করে ফোন চেক করছিলো সে। এতো গভীর মনে চেক করছিলো যে ভাইয়া কখন এসে পাশে বসল তার খেয়াল হলো না। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও যখন কিছু পাওয়া গেল না, তখন তার মন থেকে এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো। হঠাৎ পাশ থেকে ভাইয়া যখন বলে উঠল, “চেক করা হলো? নাকি আরো কিছু বাকি আছে?”

তড়ফড় করে লাফিয়ে উঠল অর্নিলা। হতভম্ব হয়ে ফিরে তাকাল ফারাজ ভাইয়ের দিকে। ভাইয়া কি এতোক্ষণ এখানেই ছিল। ছিঃ ছিঃ, লজ্জায় তার মুখ নিচু হয়ে গেল। ফারাজ ভাই ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে বললেন, “আর কিছু দেখার নেই?” আর সেখানে দাঁড়াতে পারল না অনি। চট করে চলে এলো নিজের ঘরে। দরজা বন্ধ করে বসে রইল। পণ করল, যতক্ষণ না অবধি ফারাজ ভাই ডাকছে ততোক্ষণ সে ঘর ছেড়ে বের হবে না। কিন্তু তার মনস্থির বেশিক্ষণ রইল না। খানিকক্ষণ বাদেই দরজায় কড়া কেউ। অর্নিলা কান পেতে শুনছে। কেউ বোধহয় ঘরে এসেছে। মেয়েলী কণ্ঠ আসছে। অর্নিলা আরো ভালো করে কান পাতল। গলা চেনা চেনা লাগছে। মনে হচ্ছে মেঘলা এসেছে! হ্যাঁ, সেই।

দরজা একটু ফাঁক করে উঁকি মেরে দেখতে লাগল। ফারাজ ভাই হেসে হেসে মেঘলার সাথে কথা বলছে। অ্যাহ হাসির কি বাহার! সবে মনে পড়ল, ফোনে কি আছে? ফোনে তো কিছু থাকার কথা নেই। মেঘলা বদের হাড্ডিটাই তো এখানে। ফোনে আবার কারো থাকার কি দরকার? যেই ভাবল ঘর ছেড়ে আর বের হবে না অমনি মেঘলার আসতে হলো। ধুর! ঠিক করে অভিমান টাও সে করতে পারছে না। একরাশ বিরক্তি নিয়ে বের হলো ঘর থেকে।

মেঘলার দিকে ফিরে একগাল হেসে বলে, ”তা তুমি? কোন কাজে এসেছো নাকি?”

“হ্যাঁ, ওই সারফারাজ ভাইয়ের এসেছি। একটু দরকার ছিল।

”তো দাঁড়িয়ে কেন? বসো না!”

“হ্যাঁ, বসছি!”

অর্নিলা আড়চোখে দেখছে। ঢঙ করে বসছে মেয়েটা। ভালো করে একটু দেখে নিল। চুল গুলো স্টাইল দিয়ে কাটা। নিজের চুল গুলো ছুঁয়ে দেখল। কোমর অবধি তার বেনী করা চুল। পরশু আঁচড়ে বেণী পাকিয়ে রেখেছিলো। ধুয়েছিল কবে তাও মনে পড়ছে না। একটু সংকুচিত হয়ে গেল অনি। আড়চোখে মেয়েটাকে দেখছে। যাতে সে বুঝতে না পারে অনি তাকে দেখছে। ফারাজ ভাই কেমন হেসে হেসে জিজ্ঞেস করছে, ”পড়াশোনার খবর কি তোমার?” কেন? তার পড়াশোনা জেনে আপনার কাজ কি ফারাজ ভাই? এতো কেন জানতে হবে সবকিছু?

মুখ ভেংচি কাটলো। মেঘলা সেজেছে। চোখে লেপ্টে কাজল দিয়েছে। ঠোঁটে ছোঁয়া রঙ। অর্নিলা নিজের ঠোঁট দুটো কামড়ে ধরল। ঠোঁট ফেটে চামড়া বেরিয়ে গেছে। হঠাৎ মনে হলো, মেঘলা অনেক সুন্দরী। টকটকে তার গায়ের রঙ। একটু ফুল ছুঁইয়ে দিলেই যেন লালচে হয়ে উঠে। এমন মেয়ের দিকে নজর পড়বে না তো কোথায় পড়বে। আশপাশ উসখুশ করছে, একটু আয়নাতে নিজেকে দেখে নিতে ইচ্ছে করছে। কেমন লাগছে কে জানে?

সারফারাজ বলে উঠে, ”অনি? একটু চা নিয়ে আসো মেঘলার জন্য!”

অ্যা! এতো সাধ! আমি আনব ওর জন্য চা। অর্নিলা হাসল। শাড়ি কোমরে গুঁজে বলল, ”যাচ্ছি!” এক পা এগিয়ে গিয়ে বলল, “কিন্তু ফারাজ ভাই, ঘরে তো চা পাতি নেই, সকালেই ফুরিয়ে গেছে।” সারফারাজ আশ্চার্যিত ভঙ্গিতে চেয়ে রইল অর্নিলার দিকে। এমনভাবে মেহমানের সামনে এই কথা অনি বলবে তা ধারণার বাইরে ছিল। হাসার চেষ্টা করল। অনি দাঁত বের করে হেসে তাকিয়ে আছে সারফারাজ শেহদাতের দিকে।

মেঘলা হেসে বলল, ”থাক, সারফারাজ ভাইয়া। আমি চা খাই না!”

“ওহ খাও না। যাক ভালো হলো!” বলেই ধপ করে বসে পড়ল সারফারাজের পাশে। সারফারাজ ধীরে স্বরে বলল, ”আচ্ছা‌ ঠিক আছে,‌বিস্কুট নিয়ে আসো!”

”ও তো পরশু শেষ হয়ে গেছে!”

সারফারাজের অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। একটু বিচলিত হয়ে বলল, ”তাহলে মিষ্টি তো আছে। আমি গতকালই এনেছিলাম..

“ফারাজ ভাই, আপনি জানেন না। আমি মিষ্টি কতো পছন্দ করি। দু পিস ই ছিলো। দুপুরেই আমি খেয়ে ফেলেছি।” বলেই গালভর্তি হাসল। সারফারাজ নিশ্চিত হয়ে গেল অর্নিলা পুরোপুরি মিথ্যে কথা বলছে। মেঘলার সামনে কিছু বলতেই পারছে না। এ যেন গলায় কাঁটা বিধবার মতো হলো। মেঘলা হেসে বলল,‌ “থাক না, আমি খেয়েই এসেছি। এখন আর কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।”

সারফারাজ আড়চোখে অনির দিকে তাকাল। অনি এখনো হাসছে। সারফারাজ মুখ ফুটে বলল, “নুডলস..

অর্নিলা চটপট জবাব দিলো, ”আমার হাত অনেক ব্যাথা করছে ফারাজ ভাই। আমি এখন রাঁধতে পারব না।”

দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সারফারাজ উঠে দাঁড়ায়। মলিন মুখে বলে, “তুমি বসো মেঘলা। আমি নুডলস্ রেঁধে আনছি।”

অর্নিলা উৎকণ্ঠে বলে, ”ওই সস্তা নুডলস্!” চোখ রাঙিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে যায় সারফারাজ। তাতে অর্নিলার কিছু যায় আসে না। করুক গে রাগ। মেঘলা বোধহয় কিছু বলতে চাইছে। অর্নিলা বাঁধা দিয়ে বলে উঠে, ”আরে মেঘলা, তোমার টেস্ট এক্সাম কেমন গেলো?”

“ভালো!” বলেই রান্নাঘরের দিকে উঁকি ঝুঁকি মারছে। বার বার উসখুশ করছে। অর্নিলা চোখে মুখে বিজয়ের হাসি। ভালোই হয়েছে ফারাজ ভাই কে রান্নাঘরে পাঠিয়ে। এই মেঘলার থেকে ভাইয়া যত দূরে থাকবে ততোই মঙ্গল! এতোক্ষণ তো ভালোই মুখ দিয়ে গড়গড় করে কথা বের হচ্ছিল এখন আর কথা বলছে না। ইশ, ফারাজ ভাই কে দেখলেই মনে হয় মুখটা শুধু চুলকায়। অর্নিলা আবারো জিজ্ঞেস করল, “আন্টি কেমন আছে?”

“ভালো!”

“আর তোমার আব্বা?”

“সেও ভালো!”

অর্নিলা হাসল মেঘলা কে অস্থির হতে দেখে। ইশ,‌কতোই না সুখ লাগছে না। হঠাৎ সারফারাজের কণ্ঠ। অর্নিলা ঠিক শুনলো, ভাইয়া তাকেই ডাকছে। মেঘলা চট করে দাঁড়িয়ে বলল, “ওই সারফারাজ ডাকছে!” বলেই রান্নাঘরের দিকে চলে গেল। অর্নিশা বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। এই মেয়ের সাহস তাকে হতবাক করে দিল। রে/গে উঠে দাঁড়ায় সে।

রান্নাঘরের সামনে দাঁড়িয়ে মেঘলা। ভেতরে সারফারাজ। সামান্য কিছুক্ষণ রান্নাঘরে থেকেই ঘেমে একাকার সারফারাজ। তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। সেগুলো শার্টের হাতায় মুছে ফেলল। তাকে দেখতে এখন আরো আকর্ষণীয় লাগছিল। সারফারাজ মনে করল অনি এসেছে। তাই বলে উঠলো, “অনি ওই তেলের বোতলটা কোথায়? আরে তুমি?”

মেঘলা হাসে। খোলা চুল গুলো খোঁপা বাঁধে সারফারাজের সামনে। ভ্রু কুঁচকে তাকায় সারফারাজ। কিন্তু মেঘলার দিকে নয়, তার পিছনে অনির দিকে। মেঘলা খুশি খুশি মনে বলে উঠে, “বাহ সারফারাজ ভাইয়া! আপনি এতো ভালো রান্না পারেন। জানেন আমার খুব শখ, আমার বর ও রাঁধতে পারবে!”

“তাহলে এমন বর খুঁজে নেও না মেঘলা, অন্যের বরের দিকে আর নজর নাই বা দিলে!”

মুখ তৎক্ষণাৎ গম্ভীর হয়ে উঠে অর্নিলার জবাবে। অর্নিলা তাকে পেরিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে। থমথমে কণ্ঠে সারফারাজ কে বলে, “ওই তো ওই দিকে তেলের বোতল!”

সারফারাজ নিশ্চুপে মাথা নাড়ে। মনে হচ্ছে ঘরের আবহাওয়া ঠিক নেই। অর্নিলা ফের মেঘলার দিকে ফিরে। হেসে বলে উঠে, “তুমি কেন ছুটে এলে মেঘলা? ফারাজ ভাই তো আমায় ডেকেছিলো। শুনো নি? ইশ, এতো ছোট বয়সেই কান দুটো নষ্ট করে ফেললে। সারাদিন কি হেডফোন গুঁজে গান শুনো নাকি?”

সারফারাজ ইতস্তত বোধ করছে। সে কিছু বলতেও পারছে না মেঘলার সামনে। মনে হচ্ছে,‌ এখন কথা বলাই বিপদ/জনক! মেঘলা ইনিয়ে বিনিয়ে বলল, ”ওই পানি খেতে এসেছিলাম।”

“কিন্তু পানি তো বসার ঘরেও আছে!”

“কিন্তু ফ্রিজ তো এখানে। আমি ঠান্ডা পানির জন্য এসেছিলাম।”

“ঘরের কি কোথায় সব যেন তোমার মুখস্থ!”

”হ্যাঁ, আগে রোজ আসতাম তো তাই!”

”রোজ আসতে?” প্রশ্নটা মেঘলা কে করলেও ফিরে তাকায় সারফারাজের দিকে। অর্নিলার দৃষ্টি যেন ছু/রির চেয়েও ধা/রালো। সারফারাজ ঢোক গিলে।

”হ্যাঁ, সারফারাজ ভাইয়া একা থাকতেন তাই আম্মু মাঝে সাঝেই তার খোঁজ নিতে পাঠাতো তাই!”

অর্নিলা হেসে শুধায়, “জানো? আমার নিচ তলায় একজন নতুন ভাড়াটে এসেছে। বেচারাও একা থাকে। সে কিন্তু আবার মেয়ে! তার খোঁজখবর নিতে যেতেও তো পারো, তাই না। কারণ এখন তো সারফারাজ ভাইয়ার খোঁজ নেওয়ার জন্য তার বউ আছে। তাই এই বাসায় যখন তখন না আসাটাই ভালো!

সোজাসুজি কথাগুলো বলে মেঘলা কে থমকে দিল অর্নিলা। মেঘলা আর এক মূহূর্ত দাঁড়ায় নি। “ভাইয়া, আমি আসি!” বলেই দ্রুত বের হয়ে গেল। অর্নিলা বলে উঠল, “সে কি? ঠান্ডা পানি খাবে না?” কথাখানা তার কানে গেলো কি না জানা নেই কিন্তু পরক্ষণেই ফারাজ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলল। তার রক্ত/বর্ণ দৃষ্টি! অতঃপর চটে বেরিয়ে গেল। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল সে। কোন কিছু না করেও আজ সে এমন বাজে ভাবে ফেসে গেল!

অর্নিলা গরম গরম নুডলস্ মুখে দিচ্ছ। গপ গপ করে খাচ্ছে সে। কাজটা করছে রাগে/র বশে। আবারো চামচ ভর্তি ধোঁয়া উঠা নুডলস মুখে দিল। সারফারাজ গ্লাসে পানি ঢেলে এগিয়ে দিল। অর্নিলা পানির দিকে ফিরেও তাকাল না। আবারো যেই না নুডলস মুখে দিতে যাবে অমনি সারফারাজ তাকে থামিয়ে দিল। অশ্রুসি/ক্ত নয়নে অর্নিলা ফিরে তাকাল সারফারাজের দিকে। সারফারাজ শক্ত কণ্ঠে বলে উঠল, “অনেক হয়েছে! থামো এবার!”

”কেন? কেন থামব? সরুন আমার ক্ষিধে পেয়েছে।”

”তাই বলে এমন রাক্ষ/সের মতো খাবে। আর আমি জানি তোমার মোটেও ক্ষিধে পায়নি। রা/গে তুমি এমনটা করছো।

”বেশ করছি। আপনার কি তাতে?”

“অনি প্লিজ! ও বাচ্চা মানুষ। একটু উড়নচণ্ডী আর চঞ্চল। তাই বলে তুমি তো বাচ্চা নও। তুমিও এমন করবে!“

“ওহ তাই তো। আমি তো এখন বড় হয়ে গেছি ফারাজ ভাই। মেঘলা এখন বাচ্চা, তাই উড়নচণ্ডী। এমন তো করবেই। কই ফারাজ ভাই, যখন আমি এমন করতাম তখন তো আপনি এই কথা বলতেন না। আপনি তো এমন হেসে তখন আমার সাথে কথা বলতেন না। আপনার কাছে ঘেসতেই দিতেন না। দূরে পালিয়ে বাঁচতেন। বলতেন, আমি ছোট। তখন এতো মায়া কোথায় ছিলো? আর এখন বলছেন মেঘলা ছোট। বাহ,‌‌ চমৎকার!” দু চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে। সারফারাজ নিশ্চুপ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। অনির বলা তী’ক্ষ্ণ কথাগুলো তার বুকে এসে বিঁ/ধেছে। অনি চোখদুটো মুছে উঠে দাঁড়াল। দুই পা এগুতেই হঠাৎ মনে হলো সারফারাজ তার বাহু আকড়এ ধরেছে। অনি পিছন ফিরল। ফারাজ ভাইয়ের মলিন দৃষ্টি তার উপর। কিছু বলার আগে ফারাজ ভাইয়ের হেঁচকা টানে তার কাছে ধরা পড়ল অর্নিলা। ফারাজ ভাই হাত রাখল তার কোমরে। রোজ রোজ ফারাজ ভাইকে দেখানোর জন্যই শাড়ি পরে ঘুরে বেড়ায় সে। কিন্তু কখনো এভাবে ফারাজ ভাই তাকে কাছে টেনে নেয়নি। তার হাত দুটো ফারাজ ভাইয়ের বুকের উপর। কেন জানি সে দৃষ্টি মেলাতে পারছে না। আবারো তার চোখে অশ্রু ভরে উঠছে। আজ এই বাড়িতে প্রায় দেড় মাসের কাছাকাছি। কখনো তো ফারাজ ভাই এমন আবেগে তাকে কাছে টেনে নি। তার উষ্ণ হাতের ছোঁয়া কখনোই এভাবেই তাকে ছোঁয়নি। আজ হঠাৎ কি হলো? অশ্রু গড়িয়ে পড়ল চোখ বেয়ে। কানে ভেসে এলো সেই স্বর, “অনি!”‌ সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠে এই কণ্ঠে। তার মনের আবেগ, অনুভূতি সব মিশে একাকার। ফারাজ ভাইয়ের ঠান্ডা হাত তার চিবুকে এসে ঠেকেছে। মুখ তুলে চাইল সে। ফারাজ ভাইয়ের ঝাপসা মুখের দেখা মিলছে। সে বুঝতে পারছে ফারাজ ভাই তার কাছে আসছে, আরো কাছে, অনেক কাছে। আচমকা তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল, নিঃশ্বাস নিতে পারছে না সে। দু হাতে খাম/চে ধরল সারফারাজের শার্ট। চারদিক তখন নিস্তব্ধ, নিরব ঠেকছে তার কাছে। সেই ঠোঁটের স্বাদ,‌ সেই প্রেম, সেই ভালোবাসা তার অস্থির মনকে শান্ত করে তুলছে। সে যেন কোন এক ঢেউ খেলানো সমুদ্র। খানিকবাদে ছাড়া পেলো সে। লজ্জায় মুখ তুলে তাকাতে পারল না। কোমর থেকে হাতটাও আস্তে আস্তে সরে গেল। অনিও ছেড়ে দিল শার্টটা। কি যে বলা উচিত, করা উচিত সারফারাজ সেটা বুঝতে পারল না। চোখের চশমাটা পড়ে এদিক ওদিকে তাকালো সে। হঠাৎ অর্নিলা বলে উঠল, “আরো কিছুক্ষণ চুমু খেতে পারলেন না ফারাজ ভাই? এতো কিসের তাড়া ছিলো আপনার?”

বিহ্বল দৃষ্টিতে অর্নিলার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল সারফারাজ। মেয়েটা কি সহজেই কথাগুলো বলে ফেলল। সে মিনমিনিয়ে বলল, “আমার কাজ আছে!”
বলেই ঘরের দিকে চলে গেল। কিন্তু অর্নিলার হাত থেকে বাঁচা কী এতোই সহজ। সেও নাছড়বান্দা। পিছন পিছন এগিয়ে বলে উঠল, ”এখন কিসের কাজ ফারাজ ভাই? শুনুন না আমার কথাটা। আরেকবার চুমু খান আমায়!”

”অনি চুপ করো!”

”কেন চুপ করব কেন?”

”তোমাকে কিছু বলাই বেকার!” বলেই ধপ করে দরজাটা বন্ধ করে দিল। অনি চমকে উঠল। একি? এটা কেন হলো? ফারাজ ভাই এটা কি করল? কিছুক্ষণ দরজায় কড়া নেড়েও কোন লাভ হলো না। ভাইয়া দরজা খুলে নি। একরোখা ছেলে একটা। রে/গে নিজের ঘরের দিকে চলে গেল।
.
রাতের বেলা ফারাজ ভাইয়ের ঘরের দরজা খোলা দেখতে পেয়েই অনি দরজার গোড়ায় এসে দাঁড়াল। সারফারাজ পিছন ফিরল। চেয়ে দেখে অর্নিলা বড় পরিপাটি হয়ে একটা বালিশ হাতে দাঁড়িয়ে আছে। মুচকি হেসে বলল, “ফারাজ ভাই, আজ রাতে আমি আপনার সাথে ঘুমাই?”

সারফারাজ জবাব দিলো না , আসলে অর্নিলা জবাবের আশাই করে নি। ফট করে ঘরে ঢুকে সোজা বিছানার উপর বসে পড়ল। বালিশ রেখে চাদর টেনে শুয়ে পড়ল। সারফারাজ কিছুক্ষণ হা হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকল। অতঃপর বইয়ের দিকে মনোযোগ দিল। অর্নিলা কিছুক্ষণ পর পরই জিজ্ঞেস করতে থাকল, “ফারাজ ভাই? আপনার পড়া শেষ হয়নি। কখন ঘুমাবেন?”

সারফারাজ জবাব দিলো না।

“ফারাজ ভাই? ও ফারাজ ভাই?”

“আমার দেরি হবে অনি!”

“আচ্ছা!” আনমনে অপেক্ষা করতে লাগল। একটু ফোন নেড়েচেড়ে দেখল। আবারো ফিরে চাইল, ফারাজ ভাই তখনো বই ছেড়ে উঠেনি। এভাবে অপেক্ষা করতে করতেই সে ঘুমিয়ে গেল। সারফারাজ পিছন ফিরল। অর্নিলার ঘুমন্ত মুখের দিকে ফিরে একগাল হাসল সে। উঠে দাঁড়াল। বিছানার কাছে এগিয়ে এসে তার কপালে একটা চুমু খেল। হেসে বলল, “পাগল মেয়ে একটা!” অর্নিলা তখন একটু নড়েচড়ে উঠল। আলো নিভল। সারফারাজ একপাশে শুয়ে পড়ল। অর্নিলার ঘুম তখনো ভাঙেনি!

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে