#চৈত্রের_প্রেম
#লেখিকা_আলো_ইসলাম
অন্তিম পর্ব
❝অস্থিরতার মধ্য দিয়ে সাঁঝির একটা দিন কেটে যায়। হাতে রয়েছে আর মাত্র একটা দিন। সাঁঝি কেসটা কে অনেক ভাবে সাজানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু কোনো প্রমাণ বা খুনির চিহ্ন পাইনি। সাঁঝি অবাক হয় এটা ভেবে যে মানুষ এতোটা নিখুঁত ভাবে খুন কিভাবে করতে পারে। কোনো এভিডেন্সই কোথাও নেই এটাও সম্ভব?
শ্রাবণ রেডি হচ্ছে ঢাকার বাইরে যাওয়ার জন্য। সাঁঝি শ্রাবণের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুলো গুছিয়ে দিচ্ছেন। আজকের রাতটা শ্রাবণ বাইরে থাকবে৷ একটা প্রোগ্রামে তাকে গেস্ট হিসেবে ডাকা হয়েছে তাই সেখানে যাচ্ছে শ্রাবণ। সাঁঝি শ্রাবণের ব্যাগ গোছাতে গোছাতে আনমনে হয়ে কিছু একটা ভাবে। শ্রাবণ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তার ড্রেসাপ দেখছে সব ঠিকঠাক আছে কি-না। তখনই নজর যায় সাঁঝির দিকে। শ্রাবণ বিস্ময় নিয়ে সাঁঝিকে ডাকলে সাঁঝি শুনতে পায়না৷ সে তার ভাবনায় মগ্ন এখনো। শ্রাবণ ভ্রু কুচকে এগিয়ে এসে সাঁঝির কাধে হাত রাখলে সাঁঝি কিছুটা হকচকিয়ে উঠে শ্রাবণের দিকে কৌতুহলী দৃষ্টি রাখে।
কি হয়েছে তোমার সাঁঝি? কি ভাবছো এতো? গতকাল থেকে তোমাকে কেমন উদাস আর অস্থির দেখাচ্ছে৷ কোনো সমস্যা হয়েছে কি? শ্রাবণের কথায় সাঁঝি হাসার চেষ্টা করে বলে সমস্যা? সমস্যা আবার কি হবে? আমি তো এমনি ভাবছিলাম, আপনি রেডি? সাঁঝি কথা ঘোরানোর জন্য বলে।
হ্যাঁ রেডি! কিন্তু আমার তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না৷ কি করবো আমি তো তাদের কথা দিয়ে ফেলেছি। আমি নিশ্চিত কিছু একটা লোকাচ্ছো আমার থেকে। সত্য করে বলো তো কি হয়েছে? শ্রাবণ উত্তেজিত কন্ঠে বলে।
আপনি শুধু শুধু দুঃচিন্তা করছেন। আমার কিছু হয়নি৷ আমি তো জাস্ট এই কেসটা নিয়ে ভাবছিলাম। পুলিশ তো আপনাকে সন্দেহ করছে এখনো তাই না। সাঁঝির কথায় শ্রাবণের মনটা খারাপ হয়ে যায়।
ওহ বলে ছোট করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে শ্রাবণ শারিয়ার।
সাঁঝির ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই বলে আপনার তো দেরি হয়ে যাচ্ছে। গাড়ি চলে আসবে কিছুক্ষণের মধ্যে। শ্রাবণ হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে অয়ন মনে হয় এদিক হয়ে আসবে। আচ্ছা তুমি সাবধানে থাকবে৷ আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে আসবো বলে শ্রাবণ সাঁঝির কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে ব্যাগ নিয়ে রওয়ানা হয়। শ্রাবণ বেরিয়ে যেতেই সাঁঝি ছোট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
অয়নও শ্রাবণের সাথে যাচ্ছে। কারণ তাদের দুজনকেই ইনভাইট করা হয়েছে।
পরের দিন ঠিক সকাল ১০ টা৷ এমন সময় সাঁঝির ফোন বেজে উঠে। হারুন রশীদের ফোন পেয়ে সাঁঝি চটজলদি ফোন তুলে উত্তেজিত কন্ঠে বলে আব্বু উনার ফোন রাত থেকে বন্ধ। আমি কোনো ভাবেই কন্ট্রাক্ট করতে পারছি না উনার সাথে। অয়ন ভাইয়ার নাম্বারেও ট্রাই করেছি বেশ কয়েকবার কিন্তু উনিও ফোন তুলছে না৷ আমি বুঝতে পারছি না কি করবো। উনার কিছু হয়নি তো? কোনো বিপদে পড়েনি তো উনি৷ আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না আব্বু।
সাঁঝিকে থামিয়ে হারুন রশীদ গম্ভীর স্বরে বলে সাঁঝি তুমি জলদি উত্তরার চলে এসো৷ আমি লোকেশন সেন্ড করছি৷ এখানে আসলে তুমি শ্রাবণের খোঁজ পাবে আশা করছি। কথাটা শেষ করা মাত্র হারুন রশীদ ফোন রেখে দেয়৷ সাঁঝি এপাশ থেকে আব্বু আব্বু বলে ডেকেও লাভ হয়না। কিছুক্ষণ ফোনের দিকে চেয়ে থেকে সাঁঝি হম্বিতম্বি করে বেড়িয়ে যায়।
হারুন রশীদ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে, পাশেই একজন মহিলা কান্না করছে৷ একজন মহিলা কনস্টেবল তাকে সামলানোর চেষ্টা করছে। মামুনুর সাহেব লাশের সামনে বসে তল্লাশি করছে। নাকে শক্ত করে রুমাল চেপে ধরেও যেনো লাভ হচ্ছে না৷ রক্তের তীব্র পঁচকাটে গন্ধ বারবারই নাকে এসে ধাক্কা খাচ্ছে। আর ততবারই মামুনুর সাহেবের চোখ মুখের গড়নের পরিবর্তন হচ্ছে। মানুষ এমন জঘন্য ভাবে একজন মানুষকে কিভাবে মারতে পারে এটাই ভাবছে বসে।
এরই মধ্যে সাঁঝি ছুটে আসে প্রায়। সাঁঝিকে দেখে হারুন রশীদ বলেন এসে গেছো।
আরও একটা খুন? সাঁঝি বিস্মিত কন্ঠে বলে।
হ্যাঁ আরো একটা খুন এবং আমরা এবার খুনের সাথে খুনিকেও পেয়েছি৷ হারুন রশীদের কথায় সাঁঝি ভ্রু কুচকে বলে খুনি? কে খুনি কোথায় খুনি?
তোমার সামনে হারুন রশীদ গম্ভীর স্বরে বলেন সামনে ইশারা করে দেখিয়ে। হারুন রশীদের হাতের ইশারা বরাবর তাকাতেই চমকে উঠে সাঁঝি। শ্রাবণ পড়ে আছে মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে। সাঁঝি ছুটে যায় শ্রাবণের কাছে।
কি হ’য়েছে উনার? উনি এখানে এইভাবে পড়ে আছে কেনো? আর উনি এখানেই বা আসলো কিভাবে? সাঁঝি তটস্থ হয়ে উঠে।
আমি তোমাকে বলেছিলাম শ্রাবণ শারিয়ারই এইসব খুন করছে। তুমি আমার কথা বিশ্বাস করোনি আজ হাতেনাতে প্রমাণ পেলে। জীবনে বড় ভুল করেছো তুমি শ্রাবণ শারিয়ারের মতো মানুষকে বিয়ে করে। আমি তোমাকে অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি সাঁঝি কিন্তু তুমি আমার কথা একটিবার বোঝার চেষ্টা করোনি।
প্লিজ আব্বু তুমি চুপ করো৷ এখন এইসব কথা বলার সময় নয়। আর হ্যাঁ, একটা কথা মনে রেখো সাঁঝি কখনো ভুল করিনি আর করবেও না। আমি কোনো ভুল মানুষ চয়েজ করিনি। উনি নির্দোষ। কি হয়েছে আমাকে সম্পুর্ণ খুলে বলো, উনি এখানে কিভাবে এসেছে?
আমি বলছি আপনাকে সবটা, মামুনুর সাহেব এগিয়ে এসে সাঁঝির দিকে তাকিয়ে বলে। আমরা সকালে ফোন পেয়ে এখানে আসি। যিনি খুন হয়েছেন তার স্ত্রী আমাদের ফোন করে জানায় ব্যাপার টা। উনার স্ত্রী গতকাল বাসায় ছিলেন না। বোনের মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। উনার স্বামীরও সেখানে যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু সন্ধ্যার পর নাকি উনার স্বামী উনাকে ফোন করে জানায় যেতে পারবেন না। জরুরি একটা কাজে আটকা পড়েছেন। আজ সকালে মিসেস শায়লা বাসায় এসে দেখেন উনার স্বামীর এই রকম অবস্থা আর তার পাশে শ্রাবণ শারিয়ার অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। আমরা এসে শ্রাবণ শারিয়ারকে এইভাবে পাই এখানে। যত সম্ভব উনাকে মাথায় এই লাঠিটা দিয়ে আঘাত করা হয় যার জন্য উনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। আমাদের ধারণা মিস্টার আসাদ মৃত্যুর আগে নিজেকে রক্ষা করার অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু শেষ রক্ষা তিনি করতে পারেননি।
ওয়েট ওয়েট! আপনার কথা অনুযায়ী শ্রাবণ শারিয়ার যখন মিস্টার আসাদকে খুন করতে যায় তখনই উনি শ্রাবণ শারিয়ারকে আঘাত করে এবং তারপর তিনি অজ্ঞান হয়ে যায়। তাহলে আমার কথা হলো, উনি যদি অজ্ঞানই থাকে তাহলে মিস্টার আসাদকে এমন নৃশংস ভাবে খুনটা করলো কে? উনি নিশ্চয় অজ্ঞান হয়ে এইসব করেনি।
সাঁঝির কথায় হারুন রশীদ আর মামুনুর সাহেব ভাবান্তর হয়ে পড়েন৷ বিস্ময় নিয়ে দুজন দুজনের দিকে তাকায়। সত্যি তো উনারা এইভাবে ভাবেনি৷ এতোটা নির্বুদ্ধিতার পরিচয় কিভাবে দিতে পারলো তারা ভেবে লজ্জা পাচ্ছে।
তাহলে এইসব খুন করেছে কে? আর শ্রাবণ শারিয়ারই বা এখানে আসলো কিভাবে? মামুনুর সাহেবের কথায় সাঁঝি বলে এখুনি জানতে পারবে সবাই খুনি কে? কে এই সকল খুন করেছে। সাঁঝির কথায় হারুন রশীদ কৌতুহলী হয়ে তাকালে সাঁঝি মামুনুর সাহেবকে বলে শ্রাবণের শার্টের বোতামের সঙ্গে একটা গোপন ক্যামেরা আছে নিয়ে আসুন ওইটা। আর একটা ল্যাপটপের ব্যবস্থা করুন জলদি।
সাঁঝি দুদিন আগে যখন এই কেস নিয়ে প্রমাণ জোগাড় করার জন্য উঠে পড়ে লাগে তখনই সাঁঝি শ্রাবণকে টার্গেট করে। সাঁঝি এটা বুঝে গিয়েছিলো যে খুনি শ্রাবণকে ফাঁসানোর জন্য এইসব করছে। আর যে কোনো মূল্যে শ্রাবণ যে দোষী এটা সবার সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করবে৷ যেহেতু পুলিশসহ সাধারণ মানুষও এখন প্রায় বিশ্বাস করতে শুরু করেছে এইসবের পেছনে শ্রাবণই আছে। তাই খুনি এবার চেষ্টা করবে শ্রাবণ যেনো হাতেনাতে ধরা পড়ে সবার কাছে। আর এই অনুযায়ী সাঁঝি এগুতে থাকে। শ্রাবণ শারিয়ার যখন সাঁঝিকে জানায় তাকে একটা প্রোগ্রামের জন্য ঢাকার বাইরে যেতে হবে এবং সাথে অয়নও যাবে তখনই সাঁঝি পরিকল্পনা করে শ্রাবণকে সব সময় নজরে রাখার। আর তার জন্য এই ক্যামেরাটা শ্রাবণের সাথে দিয়ে দেয়। সাঁঝির আরও বেশি সন্দেহ হওয়াতে শ্রাবণের থেকে প্রোগ্রামের ডিটেইলস জেনে নেয় এবং খোঁজ করে সেখানে৷ কিন্তু সেখানে খোঁজ নেওয়ার পর জানা যায় যে আসলে কোনো প্রোগ্রামই সেখানে হচ্ছে না।
ক্যামেরা থেকে ক্লিপ নিয়ে ল্যাপটপে অন করে সাঁঝি। শ্রাবণ বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর কি কি করেছে সবই রেকর্ড হয়েছে।
এরপর সবাই যা দেখে তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না৷ তবে সাঁঝি ভাবভঙ্গি স্বাভাবিক, মনে হচ্ছে উনি আগে থেকে এইটা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন।
অয়ন শ্রাবণকে অজ্ঞান করে দুটো মানুষের সাহায্য নিয়ে এখানে নিয়ে আসে। তারপর শ্রাবণকে মেঝেতে শুয়ে রেখে মিস্টার আসাদকে খুন করে এবং শ্রাবণের মাথায় আঘাত করে একটা লাঠি দিয়ে সেই লাঠি আবার মেঝেতে ফেলে যায় মিস্টার আসাদের হাতের ছাপ নিয়ে । যাতে সবাই ভাবে এটা মিস্টার আসাদ করেছে। এতো কাচা বুদ্ধি নিয়ে অয়ন এতোগুলা খুন কিভাবে করলো ভেবে হাস্যকর লাগছে সাঁঝির।
ডিবি অফিসের জিজ্ঞাবাদ রুমের চেয়ারে বসে এইসব ভিডিও দেখতে ছিলো অয়ন। এইসব দেখে তার চোখ কপালে। শরীর থেকে ঘাম ঝরতে শুরু করেছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে উঠেছে।
সামনে সাঁঝি, শ্রাবণ আর মামুনুর সাহেব দাঁড়িয়ে আছে। অয়নের সামনে চেয়ারে গম্ভীর মুখে বসে আছে হারুন রশীদ। অয়নকে সাথে সাথে বাড়ি থেকে ফোর্স পাঠিয়ে তুলে নিয়ে আসে হারুন রশীদ। এরপর তাকে এই ভিডিও টা দেখায়। সব দেখার পর অয়ন বুঝে গেছে তার আর পালানোর পথ নেই। অয়ন কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে থেকে হঠাৎ করে হো হো করে হেসে উঠে। অয়নের এহেন কান্ডে সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে।
যাহ শালা এতো কিছু করে শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে গেলাম। শ্রাবণ তোর কপাল বড্ড ভালো রে ভাই মানতেই হবে। নাহলে শেষে এসে এইভাবে তরি ডুবে বল। হাসি থামিয়ে বলে অয়ন। উৎসুক চাহনি আগ্রহপূর্ণ ভাবে সবাই অয়নকে পর্যবেক্ষণ করছে।
অয়ন প্রথম থেকে শ্রাবণকে হিংসা করে। তার পাঠকপ্রিয়তা, তার জনপ্রিয়তা এইসব দেখে অয়ন হিংসাপরায়ণ হয়ে উঠে বরাবরই। যার জন্য অয়ন শ্রাবণের বইকে কেন্দ্র করে এইসব খুন করে। আসলে অয়নের মানসিক সমস্যা আছে ছোট থেকে। অয়নের বাবা তার একটা ফিমেল কলিগের সাথে পরোকিয়ায় জড়ায়। যার জন্য অয়নের মায়ের সংসার ভেঙে যায়। অয়নের মা অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন তার বাবার জন্য। অয়ন সেদিন থেকে তার বাবা এবং এই পরোকিয়া সম্পর্কটাকে প্রচন্ড ঘৃণা করে। তার মধ্যে এই ঘৃণা বাড়তে থাকে দিনকে দিন। শেষ শ্রাবণ যখন এই পরোকিয়া সম্পর্কিত একটা থ্রিলার বই রিলিস করে সেখানে থেকে অয়ন প্ল্যান করে পরোকিয়ায় যারা আসক্ত তাদের নিধন করা সাথে শ্রাবণ শারিয়ারের ক্যারিয়ারও ধ্বংস করার।
পুলিশ অয়নের স্বীকারোক্তি নিয়ে তাকে কাউন্সিলের জন্য পাঠায়। আদালত থেকে রায় হয় আগে অয়নের মানসিক সমস্যার চিকিৎসা হবে এরপর এই কেসের রায় দেওয়া হবে।
খোলা আকাশ, অজস্র তারা। পূর্ণ চাঁদ সাথে জ্যোৎস্নার মেলা। দুটি মানব আজ খুবই কাছাকাছি, মুখে নিরবতা কিন্তু বাকবিতণ্ডা চলছে হৃদয়ে হৃদয়।
ছাদের উপর জ্যোৎস্নার আলোয় শ্রাবণ আর সাঁঝি বসে আছে। সাঁঝির দুটো হাত শ্রাবণের হাতের মধ্যে। সাঁঝি লজ্জারাঙা হয়ে আকাশ পাণে চেয়ে আছে আর শ্রাবণ তার কোমল চাহনি রেখেছে তার প্রিয়তমার দিকে।
সত্যি বড় ভাগ্য করে পেয়েছি তোমায় সাঁঝি। আমার জীবনে পাওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার তুমি। অয়নের উপর আমার অভিমান হলেও তার প্রতি কৃতজ্ঞ। কেনো জানো? শ্রাবণের কথায় সাঁঝি ভ্রু কুচকে তাকালে বলে। ওর জন্য তুমি আমার কাছাকাছি এসেছো, আমার সাথে তোমার সম্পর্ক তৈরির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে অয়নকে একটা ধন্যবাদ দেওয়ায় যায়।
সাঁঝি হাসে শ্রাবণের কথায়।
জানো সাঁঝি, নিজেকে বড় অসহায় লাগতো। দম বন্ধ হয়ে আসতো মাঝেমাঝে। এতোগুলা খুনের দায় আমার উপর। অথচ আমি এর কিছুই জানতাম না। তুমি যদি আমার জীবনে না আসতে আমাকে সাহস না দিতে৷ আমাকে প্রটেক্ট না করতে তাহলে হয়তো আজ আমি শেষ হয়ে যেতাম। আমার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতো।
ওইসব কথা থাক এখন। যেহেতু সবটা এখন সবার সামনে চলে এসেছে৷ তোমার পাঠকবৃন্দ, আশেপাশের মানুষ ইনফ্যাক্ট পুরো দেশ জানে এখন কে প্রকৃত দোষী। নিউজ চ্যানেল, সোসাল মিডিয়া সব জায়গায় শুধু একটায় নিউজ। তবে একটা কথা কি জানো! অয়ন তোমাকে ধ্বংস করতে গিয়ে নিজের অজান্তেই সবার উপরে স্থান করে দিয়ে গেলো। যারা তোমাকে চিনতো না৷ তোমার বই কখনো পড়েনি তারাও আজ তোমাকে চিনেছে৷ তোমার বই পড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সাঁঝির কথায় শ্রাবণ মুচকি হেসে বলে তুমি সত্যি খুব বুদ্ধিমতি সাঁঝি। কথাটা বলে শ্রাবণ দাঁড়িয়ে যায়। আকাশের দিকে তাকিয়ে দুই হাত মেলে দিয়ে বলে ❝পৃথিবী তুমি শুনছো? আমার একটা সাঁঝি আছে, যে আমাকে বুঝে,আমাকে বিশ্বাস করে আমাকে ভালোবাসে। আমি তোমার কাছে ঋণী পৃথিবী আমাকে এমন একটা সাঁঝি উপহার দেওয়ার জন্য। পৃথিবী তুমি আরো জেনে রাখো! বয়সের বিভেদ ভুলে ভালোবাসার চাদরে আমরা মোড়ানো। এই ভালোবাসা যে তোমার থেকে শেখা, তোমার থেকে পাওয়া, তুমি শিখিয়েছো নিঃস্বার্থ ভালোবাসা❞।
কি করছেন টা কি পাগল হয়ে গেছেন নাকি? সাঁঝি লাজুক হেসে বললে শ্রাবণ শারিয়ার সাঁঝির হাত ধরে দাঁড় করিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে ❝তুমিতেই মানানসই আমি প্রিয় আপনিতে বড্ড দূর দূর লাগে❞।
সাঁঝি হেসে আকাশ পাণে চেয়ে থাকে সাথে শ্রাবণও তার প্রিয়সীকে আগলে রাখে।
‘সমাপ্তি’
ভুলক্রুটি মাফ করবেন।