পর্ব-১
#চৈত্রের_প্রেম
আলো ইসলাম
পনেরো বছরের ছোট একটা মেয়ের সাথে বিয়ে, ব্যাপারটা একটু খাপছাড়া লাগছে না দ্য গ্রেট রাইটার শ্রাবণ শারিয়ার। তার উপর আবার বাড়ির কাজের লোক। আচ্ছা! তোমার বইয়ের চাহিদা তো আকাশ ছোঁয়া মার্কেটে তারপরও এমন পপুলেশন করার কি দরকার পড়লো? আরও কি সিমপ্যাথি চাই?
অয়নের টিটকারি সুলভ কথা শুনে শ্রাবণ কপাল কুচকে ধরলেও মুখে হাসিটা ঠিকই বজায় রাখলো। এদিকে অয়নের কথায় সাথে থাকা কিছু রিলেটিভরা ঠোঁট চেপে হাসছে। বেশ এনজয় করেছে তারা কথাটা।
আফসোস হচ্ছে বুঝি, বয়সের মধ্যপ্রাচ্যে এসে এমন সুন্দরী একটা বউ পাচ্ছি। হিংসা হওয়া টা স্বাভাবিক। তবে কি বলো তো অয়ন, বিয়ের ইচ্ছে একদমই ছিলো না৷ কিন্তু ভাগ্য দেখো! সেই বিয়ের পীড়িতে এনে বসালো তাও আবার সুন্দরী, আমার থেকে বয়সের অনেক গ্যাপ। তবে আফসোস করো না, তোমার বউটা কিন্তু কম না। ভাবি মাশা-আল্লাহ সুন্দর দেখতে৷ আর কি যেনো বললে, পাবলিসিটি! ওইটার আবার নতুন করে কি দরকার আমার৷ আমি তো বোরিং হয়ে গেছি এই পাবলিসিটি ভোগ করতে করতে। আসলে পাঠকের ভালোবাসা এতো গাঢ় যে, আমি যাই লিখি না কেনো পাঠকরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সমাদরে গ্রহণ করে, উপভোগ করে আমার লেখা তারা৷ আশা করি তুমি এইগুলো বুঝবে, আফটার অল তুমিও একজন রাইটার। আমার থেকে কোনো অংশে কম নয়৷ এনজয়, কথাটা বলে চলে আসে শ্রাবণ।
এদিকে শ্রাবণ শারিয়ারের ভদ্র কথার আড়ালে যে অপমান লুকিয়ে ছিলো সেটা হজম করতে বেশ বেগ পোহাতে হলো অয়নের। মুখের উপর হাসি থাকলেও ভেতরে ভেতরে ফুসে উঠলো।
অয়নও একজন লেখক। তবে শ্রাবণ শারিয়ারের পাঠক জনপ্রিয়তা বেশি। যার ফলে অয়ন বরাবরই হিংসা করে শ্রাবণ শারিয়ারকে। শ্রাবণ শারিয়ার একজন থ্রিলার রাইটার। আর অয়ন বরাবরই সামাজিক, প্রকৃতি বিষয়ক নিয়ে লেখালেখি করে। বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে, পাঠকরা থ্রিলারে আগ্রহ প্রকাশ করে বেশি, এবং তারা খুব উপভোগও করে এমন হিম ধরা কাহিনি গুলো। যার ফলে শ্রাবণ শারিয়ারের বইয়ের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি৷ রিডার্সরা অপেক্ষা করে থাকে কখন শ্রাবণ শারিয়ারের নতুন বই মার্কেটে আসবে।
শ্রাবণ শারিয়ার একজন সফল রাইটার। বয়স ৩৩, তবে তার পার্সোনালিটি যে কোনো মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। সব সময় পরিপাটি এবং নিজেকে গুছিয়ে প্রদর্শন করা পছন্দ করে। অনেক মেয়ে পাঠকের ক্রাশও বলা যেতে পারে তাকে। তবে শ্রাবণ শারিয়ার যে আজকের পজিশনে আছে সেখানে আসার জন্য তাকে কম কসরত করতে হয়নি৷ অনেক স্ট্রাগল করার পর আজকের শ্রাবণ শারিয়ার হয়ে উঠতে পেরেছেন তিনি। শ্রাবণ শারিয়ারের পরিবারে শুধু তার মা ছাড়া কেউ নেই। বাবাকে হারিয়েছে ছোট থাকতে। যার জন্য শ্রাবণ শারিয়ার ছোট থেকে উপলব্ধি করতে পেরেছে আসলে জীবন কাকে বলে। কিভাবে সংগ্রাম করে পজিশন তৈরি করতে হয়।
শিরীন আক্তার শ্রাবণ শারিয়ারের মা। তিনি ছিলেন একজন স্কুল টিচার। এখন অবসর নিয়ে ছেলের সাথে থাকেন। শিরীন আক্তারকে দেখাশোনার জন্য একজন গৃহকর্মী রাখা হয়। রাশেদা বেগম হলেন শ্রাবণ শারিয়ারের গৃহকর্মী। তার মেয়ে সাঁঝি। যার সাথে আজ শ্রাবণ শারিয়ারের বিয়ে হচ্ছে। বিয়েটা হচ্ছে ঘরোয়া ভাবে। তবে একদম ঘরোয়া টাইপ বিয়েও বলা যায় না। ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন আর শ্রাবণ শারিয়ারের বন্ধুবান্ধবদের ইনভাইট করা হয়েছে। এত বড় একজন লেখকের বিয়ে এমন ঘরোয়া ভাবে হচ্ছে এটা অনেকে মেনে নিতে পারছে না৷ কেউ মুখে কিছু না বললেও মনে মনে ঠিকই প্রতিবাদ জানাচ্ছে৷ তবে তার পাঠক সমাজ এখনো এই খবর টা পাননি যে তাদের প্রিয় লেখক এমন ঘরোয়া পরিবেশে বিয়ে করছে। যদি জানতো তাহলে হয়তো, নিউজ চ্যানেলে, যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে একদম ঝড় বয়ে যেতো এই একটা খবরে। কত মেয়ে ভক্তের মন ভেঙে যেতো কে জানে।
সাঁঝি এবার ইন্টার পরিক্ষা দেবে। বয়স সবে আঠারো বছর এক মাস যাচ্ছে। সব কিছু এমন ভাবে হয়ে গেলো যে সাঁঝি এখনো ঠিকভাবে নিজেকে সামলে নিতে পারেনি। তার বিয়ে হচ্ছে এমন একজন বড় লেখকের সাথে বিষয়টা ভাবা সত্যি কষ্ট সাধ্য। সাঁঝি নিজেও একজন শ্রাবণ শারিয়ারের ফ্যান। তার সব কয়টা বই সাঁঝি পড়েছে। আর এই গল্পের মাধ্যমে সাঁঝির মনে একটু একটু করে জায়গা করে নিয়েছে শ্রাবণ। কিন্তু সেই ভালোলাগা বা ভালোবাসা এইভাবে পরিনতি পাবে আশা করেনি।
আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক কিভাবে শ্রাবণ শারিয়ার আর সাঁঝির বিয়ের সম্বন্ধ টা পাকাপাকি হলো।
সাঁঝি দেখতে শুনতে মাশা-আল্লাহ। গরীব ঘরের মেয়ে হলেও তার চলাফেরা আর আল্লাহর দেওয়া সুন্দর চেহারা দেখে কেউ সহজে বুঝতে পারবে না যে সাঁঝির জন্ম কোনো কুঁড়েঘরে হয়েছে। সাঁঝির মা মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে মেয়েকে মানুষ করেছে এবং পড়াশোনা শিখিয়েছে। রাশেদা বেগম কিছুদিন অসুস্থ হওয়ায় শিরীন আক্তারের দেখাশোনা করতে আসে সাঁঝি। অল্প সময়ের মধ্যে সাঁঝির সাথে ভাব জমে যায় শিরীন আক্তারের। মনে মনে পছন্দও করেন তিনি সাঁঝিকে। সাঁঝি সব কাজ গুছিয়ে করতেন যার জন্য শিরীন আক্তার আরও বেশি খুশি থাকতো সাঁঝির উপর। ছোট একটা মেয়ে কেমন সব সামলে নেয় একা হাতে ভেবে স্বস্তি পাই শিরীন আক্তার। এরপর যখন রাশেদা বেগম সুস্থ হয়ে কাজে আসে তখন শিরীন আক্তার জানায় সাঁঝিকে নিয়ে আসার জন্য। সাঁঝির পড়াশোনার খরচ তারা দেবে৷ শুধু সাঁঝি মাঝেমধ্যে এসে শিরীন আক্তারের সাথে গল্পগুজব করবে। সাঁঝি আসলে তার খুব ভালো লাগে। শ্রাবণ শারিয়ার এই কথা শোনার পর, মায়ের খুশির জন্য সাঁঝিকে পার্মানেন্ট ভাবে তাদের বাড়িতে থাকার জন্য বলে। এবং সাথে এটাও বলে সাঁঝির জন্যও মাসে আলাদা টাকা দেওয়া হবে৷ সাঁঝির পড়াশোনার খরচ সহ কলেজের খরচও দেবে।
এরপর থেকে সাঁঝি, শ্রাবণ শারিয়ারের বাড়ি এসে থাকা শুরু করে। কিন্তু ঝামেলা হয় এরপর।
সেখানকার মন্ত্রীর ছেলে নয়ন পড়ে সাঁঝির সাথে আর সাঁঝিকে পছন্দও করে। বড়লোকের বখে যাওয়া ছেলে। প্রায় সাঁঝিকে বিরক্ত করে, মাঝে মাঝে পথ আগলে দাঁড়িয়ে নানান বাজে কথা বলে। একদিন সাঁঝি এর প্রতিবাদ করায় রেগে যায় নয়ন। এরপর থেকে সাঁঝিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিতে থাকে সে। সাঁঝি সেটা তার মা রাশেদা বেগমকে জানালে তিনি অনেক ভয় পেয়ে যায় এবং সাঁঝিকে কলেজে যেতে বারণ করে। সামনে সাঁঝির ফাইনাল পরিক্ষা, কলেজ মিস দিলেও চলবে। কিন্তু নয়ন যা শুরু করেছে তাতে রিস্ক নিয়ে কলেজ যাওয়াও ঠিক কাজ হবেনা।
রাশেদা বেগম শিরীন আক্তারকে জানায় সে সাঁঝির বিয়ে দিতে চাই। সাথে এটাও জানায় কলেজে কি হয়েছে। সব শুনে শিরীন আক্তার শ্রাবণ শারিয়ারকে জানালে শ্রাবণ জানায় যে, সে কলেজে গিয়ে প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলবে। দরকার পড়লে লিগ্যালি একশন নেবে নয়নের বিরুদ্ধে। মন্ত্রীর ছেলে বলে কি সব মাফ। শ্রাবণ শারিয়ার কথায় যা কাজেও তাই করেন। প্রিন্সিপালের কাছে নালিশ দেয় নয়নের নামে। শ্রাবণ শারিয়ারকে দেখে প্রিন্সিপাল তো মহা খুশি।এমন একজন গুণী রাইটার তার কদর তো সর্বস্থানে হওয়ার দরকার। সব শুনে প্রিন্সিপাল জানায় তারা নয়নের সাথে কথা বলবে দরকার পড়লে নয়নের বাবার সাথে আলাপ করবে এই ব্যাপারে। এরপর প্রিন্সিপাল শ্রাবণ শারিয়ারকে জিজ্ঞেস করে সাঁঝি কে হয় তার সম্পর্কে। শ্রাবণ শারিয়ার সত্যটা বলতে গিয়েও কিছু একটা ভেবে একটু থেমে বলে, আমার হবু স্ত্রী। কথাটা শুনে প্রিন্সিপাল যেনো একটা শুকনো ঢোকই গিলে। ব্যাপারটা তার কাছে হজম না হলেও মুখে হাসি নিয়ে বলে বেশ ভালো। আমরা বিষয়টা দেখবো চিন্তা করবেন না।
আসলে শ্রাবণ শারিয়ার সাঁঝিকে হবু স্ত্রী বলে এই ভেবে যে, কাজের মেয়ে শুনে প্রিন্সিপাল আগ্রহ না দেখাতে পারে। তাছাড়া যার অর্থ আছে, আধিপত্য আছে তার কদর সর্বস্থানে হয়। যেহেতু শ্রাবণ শারিয়ার একজন ফেমাস রাইটার। তাকে সবাই গণ্যমান্য বলে মানে। সেহেতু সাঁঝি শ্রাবণ শারিয়ারের হবু স্ত্রী শুনলে কাজটা দ্রুত এবং ভালো হবে।
এরপর শ্রাবণ শারিয়ার সাঁঝিকে নিয়মিত কলেজে যেতে বলে।সে যে প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলেছে এইসব বলে আশ্বস্ত করে সাঁঝি এবং তার মাকে। এদিকে সাঁঝি যে শ্রাবণ শারিয়ারের হবু স্ত্রী এটা পুরো কলেজে ছড়িয়ে যায়। সবাই নানান কথাও বলতে থাকে।
প্রিন্সিপাল নয়নকে ডেকে শ্রাবণ শারিয়ারের অভিযোগ গুলো তুলে ধরলে নয়ন প্রথমে সেগুলো অস্বীকার করার চেষ্টা করলেও পরে প্রিন্সিপালের কাছে স্বীকার করে। কারণ নয়ন কেমন উশৃংখল সেটা কলেজের সবাই জানে এমনকি প্রিন্সিপালেরও অজানা নয়৷ প্রিন্সিপাল শাসিয়ে বলে এরপর যদি সাঁঝিকে সে বিরক্ত করে তাহলে নয়নকে কলেজ থেকে বের করে দিতে বাধ্য হবে। এরপর থেকে নয়ন আরও ফুসে উঠে। সাঁঝির থেকে প্রতিশোধ নিতে তৎপর হয়ে উঠে।
একদিন সাঁঝি কোচিং শেষ করে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায়৷ আসলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গিয়ে দেরি হয়ে যায় সাঁঝির। সাঁঝি দ্রুত পা চালিয়ে আসছে৷ রাস্তায় আজ কোনো রিকসা বা সিএনজিও চোখে পড়ছে না৷ শ্রাবণ শারিয়ারের বাড়ি থেকে সাঁঝির কলেজের দুরত্ব প্রায় আধা ঘন্টা মতো। যেহেতু রাত হয়ে যাচ্ছে তাই সাঁঝি রিকশার জন্য অপেক্ষা না করে এগুতে থাকে।
মেইন রোড থেকে সাঁঝি তাড়াতাড়ি ফেরার জন্য শর্টকাট একটা রাস্তা ধরে। কিন্তু কিছুদুর আসার পর সাঁঝির মনে হয় কেউ একজন তাকে ফলো করছে৷ সাঁঝি বারবার পেছনে তাকায় কিন্তু কাউকে দেখতে পাইনা৷ অথচ তার সিক্স সেন্স ঠিকই জানান দিচ্ছে কারো উপস্থিতি। সাঁঝি কোনো রকম রিস্ক নিতে চাইনা বলে আবারও মেইন রোডে চলে আসে। কিছুদূর আগানোর পর নয়নের ডাক শুনে থেমে যায় সাঁঝি। সাঁঝি ঠিক এমন কিছুই আঁচ করেছিলো। পিছু ঘুরে দেখে নয়ন হাসি মুখে দাঁড়িয়ে হাতে একটা কিসের বোতল আছে। সাঁঝি এক পলক দেখে বুঝতে পারে নয়নের হাতে ওইটা এসিডের বোতল। সাঁঝি ভয়ে কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। মুখ দিয়ে যেনো কথা সরে না।
ভয়ে পেয়ে গেলি বুঝি। খুব গৌরব না তোর সুন্দর চেহারার। এই চেহারা দিয়ে তো শ্রাবণ শারিয়ারের মতো একজন ফেমাস বুড়োকে ভুলিয়েছিস। আচ্ছা আমার বাবারও অনেক টাকা আছে, আমি ফেমাস। তাহলে আমাকে কেনো পছন্দ করিস না। নাকি বয়স্ক মানুষ বেশি পছন্দ। আচ্ছা শ্রাবণ শারিয়ার কি খুব সুখ দেয় তোকে৷ শুনেছি তো একই বাড়িতে থাকিস।
নয়নের বাজে কথাগুলো নিতে পারে না সাঁঝি। ভেতরের ভয়টা রাগে পরিনত হয়, তারপরও স্থির চোখে তাকিয়ে থাকে সাঁঝি।
আজ তোর এমন অবস্থা করবো যে সারাজীবন আমার কথা মনে রাখবি৷ তোর চেহারার এমন হাল করবো আমি আজ, যেনো যে কেউ তোকে দেখে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়। কথাগুলো বলে নয়ন এগিয়ে আসতে লাগলে সাঁঝি উল্টো ঘুরে দৌড় লাগায়। সাঁঝিকে ছুটতে দেখে নয়নও ছুটে সাঁঝির পিছু পিছু। সাঁঝি প্রাণপণে ছুটছে। নয়নের থেকে দুরত্ব টা তার ক্রমশ কমে আসছে। হঠাৎ সাঁঝির কিছু একটা মনে হতে কাধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে নয়নের দিকে ছুড়ে মা’রে৷ ব্যাগ গিয়ে লাগে নয়নের হাতে এবং নয়নের হাতে থাকা এ’সিডের বোতলও পড়ে যায়। তবে কিছুটা এ’সিড নয়নের হাতে পড়ে হাত ঝলসে দেয়৷ নয়ন এতে চিৎকার দিয়ে তার যন্ত্রণা জানান দিচ্ছে৷ তখনই শ্রাবণ শারিয়ার হাজির হয়। আসলে একটা ইভেন্ট থেকে ফিরছিলো সে। সাঁঝিকে ছুটতে দেখে থামে সেখানে। সাঁঝি ঘেমে-নেয়ে একাকার অবস্থা। সাথে ক্রমশ হাঁপিয়ে চলেছে৷ ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। এদিকে নয়ন রাস্তার উপর গড়াগড়ি দিচ্ছে হাতের যন্ত্রণার প্রকোপে। কিছু মানুষও জড়ো হয়ে যায় সেখানে। নয়নকে সবাই কম বেশি চিনে। কয়েকজন ধরাধরি করে নয়নকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়৷ আর এদিকে শ্রাবণকে সামনে পেয়ে সাঁঝি ছুটে গিয়ে তার বুকে পড়ে। ভয় আর শারিরীক দুর্বলতা মিটাতে মাথা গুজে ঠাই নেয় শ্রাবণ শারিয়ারের বুকে। শব্দ করে কেঁদে উঠে এবার সাঁঝি। শ্রাবণ শারিয়ার এক হাতে জড়িয়ে নেয় সাঁঝিকে৷ শান্ত করার চেষ্টা।
এরপর বাড়ি এসে সমস্ত ঘটনা শিরীন আক্তারকে খুলে বলার পর তিনি চিন্তায় পড়ে যান সাঁঝিকে নিয়ে। রাশেদা বেগমও অস্থির হয়ে উঠে। শিরীন আক্তার যেহেতু সাঁঝিকে পছন্দ করেন আগে থেকে তাই শ্রাবণ শারিয়ারকে বলে সাঁঝিকে বিয়ে করার জন্য। এমনিতেও শ্রাবণ শারিয়ার আগেই সাঁঝিকে হবু বউয়ের পরিচয় দিয়েছে, এটা নিয়ে মিডিয়া বেশ ভালোই গরম হয়েছিলো৷ এখন যদি শ্রাবণ সত্যি সাঁঝিকে বিয়ে করে তাহলে হয়তো নয়ন বা অন্য কেউ আর সাঁঝিকে বিরক্ত করার সুযোগ পাবে না। তারা হয়তো সাবধান হয়ে যাবে। শ্রাবণ প্রথমে এই বিয়েতে নাকোচ করলেও পরে রাজি হয়ে যায় মায়ের কথায়৷ শ্রাবণ শারিয়ার কখনো বিয়ের পীড়িতে বসবে না এই প্রতিজ্ঞাতে আবদ্ধ ছিলেন৷ কিন্তু ভাগ্য হয়তো অন্য কিছু চাই। নাহলে কেনো তার থেকে ১৫ বছরের ছোট একটা মেয়ের সাথে বিয়ের সম্বন্ধ হবে৷ তাই সে আর দ্বিমত করেনা। এরপর ঘরোয়া ভাবে বিয়ের আয়োজন করে তাদের বিয়েটা দেওয়া হয়।
বিয়ের কার্যকর ভালো মতো মিটে গেছে। সাঁঝি এখন শ্রাবণ শারিয়ারের ঘরে নববধূ সেজে বসে আছে। শ্রাবণ শারিয়ার সন্ধ্যার পর বাইরে গেছে একটা কাজে৷ এখনো ফেরার নাম নেই। সাঁঝি অনেকখন বসে থেকে অধৈর্য হয়ে উঠে দাঁড়ায়। এই প্রথম সে শ্রাবণ শারিয়ারের ঘরে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়েছে। শ্রাবণ শারিয়ার তার ঘরে কাউকে এলাউ করে না৷ নিজ হাতে সবকিছু গুছিয়ে রাখেন৷ যখন ঘর পরিষ্কার করার হয় তখন তিনি নিজে উপস্থিত থেকে পরিষ্কার করিয়ে নেন। তার মতে, ঘরে অন্য কেউ আসুক এটা পছন্দ নয়। সাঁঝি অনেকবার চেষ্টা করেও শ্রাবণ শারিয়ারের ঘরে আসতে পারেনি। শ্রাবণ শারিয়ার বাইরে বেরোলেই ঘর লক করে তবে যেতেন। একদিন শিরীন আক্তারকে সাঁঝি জিজ্ঞেস করে শ্রাবণ এমন কেনো করে, ওকি ছোট থেকে এমন নাকি। সেদিন শিরীন আক্তার জানায় শ্রাবণ খুব গুছালো ছেলে। তাছাড়া নিজের কাজকর্ম নিজে করা পছন্দ করে। তার জিনিসে কেউ হাত দিক এটা পছন্দ নয়। শিরীন আক্তার নিজেও শ্রাবণ শারিয়ারের অনুমতি ছাড়া কখনো নাকি ঘরে আসতে পারেনি৷ আর এটা নিয়ে তার কোনো অভিযোগও নেই।
আজ সুযোগ পেয়ে সাঁঝি ঘরটা ভালোভাবে পরখ করে। বেশ বড়সড় একটা রুম। সাথে বারান্দাটাও বড়। ঘরের মধ্যে একটা বড় সোফা, একপাশে পড়ার টেবিল যেখানে বিভিন্ন ধরনের বইপত্র সুন্দর ভাবে গুছিয়ে রাখা আছে। শ্রাবণ শারিয়ারের নিজের লেখা বইও সেখানে আছে সব গুলো। বড় একটা আলমারি, ড্রেসিং আয়না। শ্রাবণ শারিয়ারের রুচিবোধ প্রখর মানতে হবে। মনে মনে ভাবে সাঁঝি। সাঁঝি খেয়াল করে শ্রাবণ শারিয়ারের রুমের সাথে আরেকটা দরজা আছে। দেখে মনে হচ্ছে এটা আলাদা একটা রুম৷ রুমের সাথে আরেকটা রুম এর মানে সাঁঝি বুঝে না। সাঁঝি সে দরজার কাছে গিয়ে চেক করে। দেখে লক করা আছে। আর এমন যে থাকবে সাঁঝি আগেই আন্দাজ করেছিলো। সাঁঝি আলমারির কাছে এসে একবার আলমারিটাও চেক করে। শ্রাবণ শারিয়ারের শার্ট কর্ণার টা টান দিতে খুলে যায় কিন্তু বাকিসব গুলো লক করা।
গুপ্তধন খুঁজছো কি? হঠাৎ শ্রাবণ শারিয়ারের কথায় চমকে উঠে সাঁঝি…
চলবে…