#চিরসখা (৫)
অফিসে বসের ঝাড়ি খেয়ে হিরকের মেজাজ খারাপ ছিলো। সইকে কাছে ডেকে বসতে বলায় ডাইনিং এর কাজ শেষ করে আসার অযুহাত শুনে। হিরক সিগারেট খাবে। বাসার নিচে চায়ের দোকানে অনেক রাত পর্যন্ত চা -কফি পাওয়া যায়। হিরক একটা চায়ের সাথে ফুলকপির বড়া অর্ডার করলো। দোকানের ছেলেটা পরিশ্রমী। চিপা দোকান থেকে দুই রুম ভাড়া নিয়েছে৷ পাশের রুমে চাটঘর চালায়৷ চা খেতে খেতে দোকানের ইনকাম শুনে চোখ কপালে উঠলো হিরকের। মাসে ষাট হাজার ! চাকরী ছেড়ে দোকান দিয়ে বসলে ভালো। সই ঘরে বসে থাকে। রান্না করে সাপ্লাই দিলে ও বিক্রি করবে। হাবিজাবি ভেবে ফেসবুক খুলে ধাক্কা লাগে হিরকের। মেধা ওকে রিকোয়েস্ট দিয়েছে। মেধার প্রফাইলে বিয়ের ছবি দেয়া৷ বর হিরকের চেয়ে ইঞ্চি পাঁচেক লম্বা। মাসল আছে৷ মেধার সাথে কথা বলে ঘুষি খেলে হিরক টিকতে পারবে না। ঘাড়ের কাছে অটোমেটিক হাত চলে যায়। কলেজে পড়ার সময় বিনির সাথে প্রক্সি প্রেমিক সাজায় ওর আসল প্রেমিকের হাতে ধোলাই খেয়ে অনেকদিন ঘাড়ে ব্যান্ড পরেছে। গা ঝাড়া দেয়, ম্যারিড মেয়ে স্বেচ্ছায় প্রাক্তনের সাথে যোগাযোগ করেছে। হিরকের দোষ হবে না। দুটো সিগারেট শেষ করে তিন নম্বর ধরতে সই ফোন করলো।
–নিচে আছি।
–উপরে আসো।
–তোমার কাজ শেষ হয়েছে।
–বাচ্চার কাজ শেষ হয় না।
–তাহলে শেষ করো।
–বাবুকে ধরতে হবে, আমি গোসল করব।
–এত রাতে আবার গোসল কেন।
–বমি করে দিয়েছে।
ফোন কেটে ‘ধ্যাত’ বলে হিরক। বমি ঘাটতে হবে৷ হিরক বাসায় থাকলে সই ওকে বাচ্চার কাজে লাগায়। লিফট ছেড়ে সিড়ি দিয়ে হেঁটে ওঠে। এত সময় সই বাচ্চাকে বমি সহ রাখবে না। নিজে পরিষ্কার করে ফেলবে। বেল বাজিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে হিরক। সইয়ের ফোন বন্ধ। চা সিগারেট খেয়ে ভালো হওয়া মেজাজ আবার খারাপ হতে শুরু করে হিরকের। দরজায় হালকা ধাক্কা দেয়৷ পাশের ফ্লাটের মহিলার কৌতুহলী স্বভাব। বাসায় একটা চামচ পরলে দৌড়ে আসে। আরো দশ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর দরজা খোলে সই।
–পা ব্যাথা করে দিসো।
–গোসলে ছিলাম।
–ফোন কোন মড়ায়।
–চার্জ শেষ।
হিরক কথা বাড়ায় না। বাবু ঘুমিয়ে গেছে দেখে পাশে শুয়ে পরে। গোসল করে আসায় সইয়ের শরীর থেকে সুন্দর গন্ধ আসছে। ফর্সা শরীরে লাল টকটকে ম্যাক্সি পরে সইকে লাগছে ফুটন্ত জবা ফুল। প্রটেকশনের প্যাকেট নিয়ে স্ত্রীকে কাছে টানে হিরক। সই স্বামীর বুকে বিলি কাটে। হিরকের মনের ভেতর কখন কি চলে বোঝা মুসকিল। এই ডাকলো নিচ থেকে, বললো আসছে৷ আসতে লাগালো বিশ মিনিট। বাচ্চা অত সময় ফেলে রাখা যায় না। ফিডিং বোতল দিয়ে গোসল ঢুকেছে। বাচ্চা দুধ খেয়ে ঘুমিয়ে গেলো।
–ওর জন্য আম্মাকে আসতে বলবো?
–আম্মা একা আসলে হবে না। রিনাকে লাগবে।
–রিনা এসে ঝগড়া লাগায়।
–এবার হবে না। রিনা বাবুকে অনেক পছন্দ করে।
হিরক সইয়ের চুল খুলে দেয়। বুকের কাছে নাক নিয়ে মুখ উল্টে আসে। বাচ্চাকে দুধ বন্ধ করেনি সই।
–ফিডার খায় এখন। ফিড করাও কেনো।
–আম্মা বলেছে। বাবুর জন্য ভালো হবে।
–আম্মার সাথে না বিয়ে হয়েছে তোমার।
হিরক সোজা হয়ে শুয়ে পরে। সই মুখ ঘুরিয়ে নেয়। হিরক স্বামী হিসেবে ভালো। সইকে হাতখরচ দেয়। বউ বাচ্চা নিয়ে ছুটির দিন ঘুরতে বের হয়। হোটেলে খায়৷ কোন শুক্রবারে সকালে দুপুরে হোটেল থেকে নাস্তা -খাবার আনে। সইকে রাঁধতে দেয় না। রাতে হিরক ডিম দিয়ে আলু কষিয়ে ভুনা করে। সাথে ডাল, খিচুরী। সই সালাদ বানায়। খাওয়া শেষে হিরক চা বানিয়ে বসে সিনেমা দেখে। দোষের ভেতর হিরক উদাসীন, বদরাগী। ঠিক মেধার মতো। দুটো মিললে ভালো ছিলো। সংসার করার তেলে মজা বের হতো।
শুয়ে শুয়ে হিরক অফিসের কথা ভাবে। সইয়ের নাক ডাকার শব্দ হচ্ছে। হিরক উঠে হোয়াটস এপ খোলে। বন্ধুদের গ্রুপে ডার্টি জোকস শেয়ার চলছে। হাসির ইমো দিয়ে কি মনে করে মেধার রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে। মেধার ছবি দেখতে থাকে। বিয়ের পর স্বাস্থ্যবতী হয়েছে। মেধা সইয়ের মতো সুন্দরী না হলেও আকর্ষণীয় ছিলো। ওর চুল, ওর শরীর ভাবতে ভাবতে উত্তেজিত হয়ে ওঠে হিরক। মেধার সাথে পরিচয় বাসে। খুচরো টাকা আদান প্রদানের খুচরো কথায় জানা এক রুটের যাত্রী। অফিস থেকে বের হয়ে মেধার সাথে দেখা করতে যাওয়া। মেধাকে কায়দা করে অল্প জিনিষে খুশী করত হিরক। লাল গোলাপের তোড়া কিনে রোদে অপেক্ষা করা। মেধা ওড়না দিয়ে ঘাম মুছিয়ে ব্যাগ থেকে জুস দিত। মেয়েদের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিলে ওরা খুব খুশী হয়। হিরক ট্রিকস জানে। ঘুমের ঘোরে সই হিরকের শরীরে হাত রাখে। বউয়ের হাত সরিয়ে আবার মেধার কথা ভাবে। একদিন মেধাকে নিতে ওর বাসার কাছে চলে গেলো। দুপুর বেলা, মেধা নাকে মুখে খেয়ে দৌড়ে নিচে নেমে সোজা বাইক নিয়ে হাইওয়েতে। ফিরতে রাত হলো। হিরক সেদিন মেধাকে আড়ং থেকে সিলভারের আংটি কিনে প্রপোজ করে। পুরনো কথা মনে পরে হিরকের মন খারাপ হতে শুরু করে। ফেরার পথে ওরা ফ্রেঞ্চ কিস করলো। মেধা বাধা দেয়নি। হিরক খুশী হয়ে মেধাকে ডাবল চুমু খেয়ে মেসে যেতে বললো। পরদিন মেধা দেখা করেনি। ভয় পেয়ে ছিলো হিরক। তবে, আবার পরের দিন ঠিক হিরকের মেস খুঁজে মেধা হাজির। সেদিন প্রথম মেধাকে নিজের করে পেলো হিরক। ভাবতে ভাবতে শরীর গরম হয়ে যায়। সইকে ঘুমের ভেতর কাছে টানে। বাচ্চাটা জেগে কাঁদা শুরু করেছে। সই এবার হিরককে ধাক্কা মেরে সরায়। বালিশ নিয়ে পাশের রুমে ঘুমাতে চলে যায় হিরক। সই তাকিয়ে বাচ্চা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে। পুরুষ মানুষ সোনার আংটি, বাঁকা হলেও দামী।
পরদিন সকালে অফিস আগে যায় হিরক। সরি বলে বসের সাথে মিটমাট করে। মেধার ফুফাতো ভাই এখানে বদলী হয়ে এসেছে। হিরককে চেনে। এ মেধার পেছনে লাইন দিতো। ছ্যাঁচড়া টাইপ ছেলে। মেধাও এক সময় বেতন তুলে ওকে নাকি অনেক কিছু গিফট করেছে। হিরকের সাথে প্রেম করে একে গিফট দেয়া বন্ধ করে দিয়ে ছিলো। ওর ভাগ এক সময় হিরক খেয়েছে দেখে মনে খুব রাগ। আবার, হিরকের সাথে ঠোঁটের কোনে হাসি তুলে কথা বলে।
–মেধার জামাই অনেক বেতন পায় হিরক ভাই।
–কত।
–আরে, পার নাইট উনসত্তর হাজার টাকার সুইটস এ হানিমুন করে।
–তোমার বোনের বড় কপাল।
— আপনার দিনকাল কেমন যাচ্ছে।
–ভালো।
–রাতে ঘুমান না নাকি।
হিরক সোজা ইগনোর করলো। ছেলেটা খোঁচা মারে। মেধা বলে ছিলো। মেধার সাথে প্রেম করার শখ ছিলো, করেছে। প্রেমের মজা শরিরী খেলায়, খেলেছে। হিরক মুখের ওপর ‘ভালো থাকো’ বলে ডেস্কে আসে। ম্যাসেঞ্জারে মেধাকে নক করে, ‘কেমন আছো। ফিরতি রিপ্লাই আসে একটু পরেই। মেধা একটা মন খারাপের ইমো দিয়েছে। হিরক অবাক হয়। বড়লোকের বউয়ের মনের মতি গতি বাতাসের কোন পালে ওড়ে কে জানে। সুযোগ মিস না করে মেধার নাম্বারে সরাসরি ফোন করে। ফোন ব্লক করে রেখেছে মেধা। ফেসবুকে নক দিয়ে ফোনে ব্লক করা ফাজলামি। কয়েক বার মেধার ফোনে ট্রাই করে হিরক। এবার ফোন ঢোকে। পরপর ফোন করে যায়। মেধা রিসিভ করে না। মেসেঞ্জারে আবার মেধাকে মেসেজ করে হিরক, ‘প্লিজ ফোন ধরো। ‘ এবার ফোন ধরে মেধা। হিরক কিছুক্ষণ হ্যালো, হ্যালো করে। ওপাশে নিরুত্তর। মেধা নিরুত্তাপ অভিমানে হিরকের গলা শুনতে থাকে। এতদিন পর ফোন করে কি বলতে চায় হিরক।
–কথা বলো, মেধা।
–বলো, কি বলবে।
–কেমন আছো।
–ভালো।
–অফিসে আছো
–হু
–আসি?
–না না, ঐ চাকরী নেই। অন্য অফিসে আছি।
–একদিন দেখা করো মেধা, কত কথা বলার আছে তোমাকে।
(চলবে)