#চারুলতা
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ৭
বাতাসটা গায়ে লাগতেই অনাকাঙ্ক্ষিত একটা ঘটনার সম্মুখীন হলাম। আমার পেটটা পাহাড়ের মতো উঁচু হয়ে গেল। আমি কিছুটা ভয়ার্ত হয়ে গেলাম। পেটের এমন অস্বাভাবিক ফুলে যাওয়ার কারণটা আমি বুঝতে পারছিলাম না। ভয়ের মাত্রা প্রখর হওয়ার আগেই মৃধা বলে উঠল
– ঘাবড়ে যেও না। তোমার গর্ভে সন্তান প্রবেশ করেছে। ঠিক ১৭ দিন পর রাহু যখন সূর্যকে গ্রাস করবে তখন এ সন্তান জন্ম নিবে। তবে সময়ের ব্যবধান নিয়েই আমি চিন্তিত। এ সন্তান যেন শুভ শক্তির আধার হয়েই জন্ম নেয় সে চাওয়ায় মনে ব্যক্ত করছি।
ঘটনার কোনো সার সংক্ষেপ আমার বোধগম্য হচ্ছে না। বাড়ির ভেতটায় প্রবেশ করার পর আরও বেশি ভয় পেয়ে গেলাম যখন লক্ষ্য করলাম মামা আমাদের সামনে দাঁড়ানো। মামার চোখ গুলো রাগে আগুন হয়ে আছে। রক্ত চক্ষু গুলো আমার দিকেই তাক করা। আমার পাশে এসেই চুলের মুঠিগুলো ধরল। মৃধা ততক্ষণে উধাও হয়ে গেল। আমি বুঝতে পারছি না আমার সাথে হচ্ছে টা কী! মামা আমার চুলগুলো টেনে সামনের দিকে আঁচড়ে ফেলে বলল
– তুই আমার চোখ ফাঁকি দিয়ে পালাতে চেয়েছিলি না? কত বড় বোকা মেয়ে তুই। তোর কী ধারণা তুই পালিয়ে গেলে আমি টের পাব না? কেমন লাগল আমার গোলক ধাঁধা টা? তুই তো বাড়ির বাইরেই যেতে পারিসনি। আমার সাজানো গোলক ধাঁধায় শুধু দৌড়ে দৌড়ে হাঁপিয়েছিস। এই এরিকের চোখ ফাঁকি দেওয়া এত সহজ বিষয় না। আমার চোখ ফাঁকি দেওয়া যদি এতই সহজ হত তাহলে এত শক্তির অধিকারী আমি হতাম না।
মামার কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। তার মানে আমি আমার বাড়ির বাইরেই যেতে পারিনি। এতক্ষণ যা ঘটেছে সব অবাস্তব আর মায়াবল। আমার মাথা ঘুরপাক খাচ্ছে। এ কোন পরীক্ষায় পড়লাম সেটাই চিন্তা করে যাচ্ছি শুয়ে শুয়ে। মামা আমার হাতটা ধরে টেনে তুলে ছেছড়াতে ছেছড়াতে নিয়ে গেল অন্য একটা কক্ষে। সে কক্ষে নিয়ে গিয়ে আমাকে ধরে জোরে আচড়ে ফেলে কক্ষটা বন্ধ করে দিল। ফুলা পেটটা যেন এমন আঘাতে নড়ে উঠল। সবকিছু মায়াবল থাকলেও পেটটা কীভাবে ফুলল বুঝতেছি না। আর মৃধা সেও কী মায়ার তৈরী কেউ ছিল। শরীরটা ক্রমশ খারাপের দিকে যেতে লাগল। এ নরক যন্ত্রণা থেকে কী মুক্তি পাব না? বারবার এ কথায় মনে আসছে। ভীষণভাবে অসহায়ত্ব আমাকে গ্রাস করছে।
অন্ধকার কক্ষে বুঝা যাচ্ছে না এখন দিন নাকি রাত। বাইরে থেকে আলোর সমাগম এ কক্ষে নেই। মাঝে সাঝে শিয়ালের ডাক কানে আসছে আবার কখনও কখনও কুকুরের কান্না। বাচ্চার কান্নাও কখনও কখনও মৃদু হয়ে প্রখর হচ্ছে আবার কখনও কখনও প্রখর হয়ে মৃদু হচ্ছে। ভয়ে গায়ের কাটা লোম দিয়ে দিচ্ছে। আগের ঘটনা গুলো নিয়ে যতই ভাববো ততই ঘটনার আবর্তমানে তলিয়ে পড়ব। কোনো পথেই খুৃঁজে পাব না। সাজানো এ মায়ার শহরে আমি কেবল নিছক একটা কীট। যাকে কিছুক্ষণ পর তার নিজের মামায় ভোগ করবে তারপর বলি দিয়ে দিবে শয়তানের নামে। তবে পেটটা কেন ফুলে আছে। মৃধা কী সত্যিই কোনো সাপ ছিল নাকি মামার মায়ার শহরের এক কাঙ্গালিনি ছিল। মৃধার কথাগুলো কী সঠিক ছিল নাকি সব ভুয়া মিথ্যা ছিল। আমার পেটে কী সত্যিই কোনো শুভ শক্তির আধার লুকিয়ে আছে নাকি এ বাচ্চাটাও মামার স্বার্থ হাসিলের কোনো অধ্যায়। সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। ক্ষুধায় পেটে ব্যথা শুরু হয়েছে। ঠোঁট দুটো ফেটে চৌচির হয়ে আছে। ঠোঁট নাড়ালেই যেন ব্যথা হচ্ছে। জিভে একদম পানি নেই যে জিব দিয়ে চেটে ঠোঁট ভেজাবো।
দম গুলো ভারী হচ্ছে কেবল। নিজেকে সামলে উঠতে পারছি না একদম। চারদিক একদম নিস্তব। পেটের ভেতর নড়াচড়া অনুভব করতেছি। পেট থেকে কেমন অদ্ভুত আওয়াজ আসছে কানে। হালকা ব্যথাও অনুভব করছি পেটে। মনে হচ্ছে কিছু একটা পেট থেকে বের হবে এখন। পেট ফুলে যাচ্ছে শুধু। আমার ভয় যেন আরও বাড়তে লাগল।পেটের ব্যথা সর্বোচ্চ সীমায় চলে যাচ্ছে ক্রমশেই। নিজেকে ধরে রাখতে পারছি না। ব্যথায় কুকরাতে লাগলাম। চোখ গুলো বন্ধও করতে পারছিলাম না কারণ পেটের ফুলা এখনও কমছে না। তাহলে কী পেট ফেটে বাচ্চা বের হবে। আর মৃধার কথা কী সঠিক? সত্যিই আমার গর্ভে কী কোনো শুভ শক্তি আছে নাকি রয়েছে কোনো অশুভ বাচ্চা। উত্তর মেলাতে গেলে আরও বেশি ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছি। প্রশ্ন যেন মাথাটাকে ব্যথা বানিয়ে দিচ্ছে। নিজেকে সামলাতে পারছি না পেটের ব্যথায়। শরীরে একদম শক্তি নেই তাই ব্যথায় চিল্লানোর শক্তিও পাচ্ছি না।
পেটটা মাত্রা অতিরিক্ত ফুলে গেছে। পেটের এক পাশ ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। রক্তটা ফিনকি দিয়ে বের হয়ে জোরে ছিটকে পড়ছে। পেটে ব্যথার সাথে অসম্ভব জ্বলুনী হচ্ছে এবার। দেখতে দেখতেই পেটটা ফেটে মাটির মতো চৌচির হয়ে গেল। ফুলা পেটটা ফেটে দু দিক দিয়ে ভাগ হয়ে গেল। সে ভাগ করা অংশ দিয়ে বের হলো এক কদাকার শিশু। শিশুটি পেট থেকে লাফিয়ে বের হলো। শিশুটার নাক নেই। নাকের জায়গাটা সমতল। কালো কুচকুচে গায়ের রঙ। চোখগুলো রক্তবর্ণ। দুটো হাত বেশ লম্বা শরীরের তুলনায় আর পাগুলো হাতের তুলনায় ছোট। ঠোঁটগুলো দ্বিখন্ডিত করা। কালো মুখের আদলে সাদা দাঁত গুলো ফিক করে ভেসে আছে। এ বাচ্চাটাকে দেখেই যেন আমার ভয়টা বেড়ে গেল। এ বাচ্চাটার গঠন বলেই দিচ্ছে বাচ্চাটা ভয়ংকর রূপ নিবে আরও। এদিকে আমার ফাটা পেটটার দিকে তাকাতেই আরও চমকে গেলাম।
চলবে।