চাদেঁর আলোয় জোছনা ভাঙ্গে পর্ব ০৬

0
3407

চাদেঁর আলোয় জোছনা ভাঙ্গে পর্ব ০৬

লেখা আশিকা জামান।

” আচ্ছা আপনাকে এর আগে কেউ বলেনি যে আপনি একটা অসভ্যের হাড়ী।”

অনন্যার একটি কথাতেই যেমন মোহাবিষ্টের মত অজানা ঘোরের দ্বারপ্রান্তে পৌছিয়েছিলো ঠিক তেমনি আরেকটি কথার তীক্ষ্ণ বুলেটের আঘাতে নিজের স্বরুপে ফিরে আসতে অঙ্কন দু’মিনিট ও ভাবলোনা।
” না বলেনি। কারণ আপনার মত কেউ নিজেকে রসগোল্লা দাবি করে, অসভ্যের হাড়ীতে ঢুকতে চায়নি।” গলাটা ভারী ঝাজাঁলো শোনালো।

” নিজে বউ বলতে পারবে আর আমি স্বামী বলাতেই অসভ্য হয়ে গেলাম!”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



অঙ্কনের বিড়বিড় করে বলা কথাটা অনন্যা শুনতে পেয়ে গেলো। কিছুক্ষণ থেমে তারপর বললো,
” আ’ম সরি। আসলে আমি কথার পৃষ্ঠে কথা বলতে গিয়েই মুখ ফুঁসকে বলে ফেলেছি। আপনি বোধ হয় ধরেই নিয়েছেন যে আমি আপনার বউ হওয়ার জন্যে হাপিত্যেশ করে মরে যাচ্ছি। যদি আপনি এমনটা ভেবে থাকেন তাহলে এখনো গাধার রাজত্বে বসবাস করছেন।”

অঙ্কনের মাথাটা বড্ড খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এই মেয়ে সাথে আর একমুহূর্ত থাকলে ওকে নির্ঘাত হার্টঅ্যাটাক করতে হবে।
” আপনার মত এরকম একটা ফালতু মেয়ের কথা ভাবার মত সময় বা ইচ্ছে কোনটাই অঙ্কন চৌধুরী নেই। কথাটা মাথায় রাখবেন।”

অনন্যা নিভলো। কথাটার সুক্ষ্ম খোঁচাটা তিরতির করে শরীরের সমস্ত কোষ বেয়ে যেতে থাকলো। তবে চোখ ফিরিয়ে নিলো না। সেই মন খারাপ করা অভিব্যক্তি নিয়ে অঙ্কনের জ্বলন্ত চোখের দিকে একবার তাকালো। নাকের ডগা ফুলে লালচে রং ধারণ করেছে। রাগে ফুসফুস করছে।
অঙ্কন গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। অনন্যাও পেছন পেছন এলো। অঙ্কন ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে লাইটার বের সিগেরেট ধরাতে লাগলো।
” প্লিজ স্মোক করবেন না। আমার অস্বস্তি হয়।”
অনন্যা আকুবিকুলি করে উঠলো। কিন্তু সে পাত্তাও দিলো না। কয়েকটা সুখটান দিয়ে কেমন উদাস হয়ে রইলো।
অনন্যা ফের কিছু বললো না। কেবলি মনে হলো এমন ঘোর আধাঁর আর নির্জনতাকে সঙ্গী করে যেন কিছু হওয়ার ছিলো কিন্তু হলোনা।
নীরবতা কাটিয়ে অঙ্কন সিগেরেটটা ছুড়ে ফেলতে ফেলতে বললো,
” দেখুন মেয়েদের এত জেদ মানায় না। আপনি বাড়ি যান। সেরকম হলে কাল সকালে আমি না হয় খুঁজতে বের হবো।”

কথাটা শোনা মাত্র অনন্যার ঠিক কি যেন হলো হনহন করে সামতে আগাতে থাকলো। অঙ্কন কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থেকে উচ্চস্বরে অনন্যার নাম ধরে বেশ কয়েকবার ডাকলো। কিন্তু সে একদম পেছনে ফিরলো না। কিছুদূর আগাতেই সামনে একটা সি এন জি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলো। অনন্যা চালকের সাথে কথা বললো। সি এন জি তে উঠতে উদ্যত হতেই পেছন থেকে অঙ্কন হাত ধরে আটঁকিয়ে দেয়। রাজ্যের একরাশ বিস্ময় নিয়ে ছুটে এসেছে দূর্বার গতিতে। আরেকটু হলেই সি এনি জিতে উঠে পড়ছিলো। গলাটা হাজার চেষ্টাতেই শান্ত রাখতে পারলো না।।অশান্ত গলায় বলে উঠলো,
” আর ইউ ম্যাড!!কোথায় যাচ্ছিলে?”

” জাহান্নামে।” অনন্যা হাত ছাড়াতে ছটফট করতে লাগলো।
অঙ্কন আরো দ্বিগুন শক্ত হাতে অনন্যাকে টেনে হিচঁড়ে গাড়ির দিকে নিয়ে যেতে থাকে।
” ছাড়ুন বলছি। আমি আপনার সাথে যাবো না। একবার যখন ডিসিশন নিয়েছিতো আমি মধুপুরে যাবো তো। একাই যাবো। প্লিজ ছাড়ুন।” অনন্যা দুই হাত দিয়েও নিজেকে ছাড়াতে ব্যার্থ হয়।

গাড়ির সামনে এনে একরকম হাত ঝাড়া মেরে অনন্যাকে ছেড়ে দেয়। ক্ষুধার্ত বাঘিনীর মত তেড়ে আসতে চাইলে অঙ্কন জোর করে গাড়িতে ঠেলে উঠায়। এরপর গাড়ি স্টার্ট করে ফের অনন্যার দিকে তাকায়। তখনো রাগে বোম্ব হয়ে আছে৷ যেকোন সময় ফেটে পড়তে পারে।

অঙ্কন গাড়ি ঘুরিয়ে অন্য পথ ধরায় অনন্যা আর চুপ থাকতে পারলো না। চিৎকার করে বললো,
” কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? এটাতো বাড়ির রাস্তা নয়।”

” জাহান্নামে যেতে চেয়েছো না, জাহান্নামেই যাচ্ছি।”

” একদম হেয়ালি করবেন না।”

“স্টপ! প্লিজ স্টপ দিজ ননসেন্স!! ”

” দেখুন আমি কিন্তু চিৎকার করবো।”

অঙ্কন কিছু না বলে দুম করে অনন্যার মুখ চেঁপে ধরলো। তারপর ফিসফিস করে বললো,
” চেচাঁও যতো পারো চেঁচাও।”
কিছুক্ষণ হাত পা ছুড়া ছুড়ি করে অনন্যা যখন নিজেকে ছাড়াতে পারলো না। তখন আস্তে আস্তে শরীরের নিস্তেজতা টের পেয়ে অঙ্কন তাকে ছেড়ে দেয়। দু’চোখ ভরা জল তখন টুইটুম্বর করছিলো। এই বুঝি উপচে পড়বে!
অঙ্কন অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে থাকায় জলের আভাস টের পাওয়ার কথা নয়।
গাড়ি চললো আপন গতিতে সঙ্গী হলো চারপাশের নীরবতা। কিছুক্ষণ পর অঙ্কন হঠাৎ উদাস গলায় বললো,
” দেখো ভদ্রভাবে বলছি, একদম সিনক্রিয়েট করোনা। আমাকে আর রাগিয়ে দিও না। এমনিতেও তুমি কাজটা খুব খারাপ করেছো। রাতের বেলা অপরিচিত একটা সি এন জিতে উঠার দুঃসাহস দেখিয়েছো। বুঝতে পারছো কত কিছু ঘটে যেতে পারতো। মাথায় কি কোন বুদ্ধি নাই। আমি মাথা থেকে শত চেষ্টাতেও এই গোটা ব্যাপারটাই সরাতে পারছি না। তাই ওভাবে মুখ চেপে ধরেছিলাম তাও তোমার অতিমাত্রার ছেলেমানুষী দেখে। আ’ম রিয়েলি সরি।”
অঙ্কন একাই গড়গড় করে গেলো। ওপাশে কোন সাড়া পাওয়া গেলো না। মুহুর্তেই কাধের উপর ভারী একটা মাথার অস্তিত্ব টের পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। ভাবওয়ালি বাচ্চাদের মতো কেঁদে কেঁটে ঘুমিয়ে গেছে। নাকের উপর বিন্দুবিন্দু ঘাম জমেছে। কপাল বেয়ে কিছু চুল বারবার মুখের উপর আছড়ে পড়েছে।কানের পেছনে সাবধানে চুলগুলো সরিয়ে দিলো। যেন ঘুম ভেঙ্গে না যায়। কাধের উপর ভারী মাথা চেপে বসায় কষ্টের বদলে সুখ সুখ অনুভূত হচ্ছে। কেবল মনে হচ্ছে এভাবে বাকি রাতটুকু কাটালে খুব একটা মন্দ হয়না। সত্যিই আজকে বোধ হয় ভূতে ভর করেছে। নয়তো এই পাগলীর কথায় ১২৫ কি.মি. যাওয়ার দুঃসাহস অঙ্কন জীবনেও দেখাতো না। আজ যেন সে নিজেই নিজেকে চিনতে পারছে না৷ কিভাবে নাটকীয় ভাবে আপনি থেকে তুমিতে চলে এসেছে এটাও ভাবনায় বিষয় হলেও কেমন মৃদু হেসে উড়িয়ে দিলো। বরংচ গভীর এক রোমাঞ্চকর ভাবনায় ডুবে রইলো।

*************

ঘড়ির কাঁটায় দশটা বাজার ঘন্টা দিচ্ছে। ড্রয়িংরুমে বসা প্রত্যেকটা মানুষ থমথমে মুখ করে বসে আছে। অনিক এতোক্ষণ বেশ লম্ফঝম্প করলেও এখন অনেকটাই চুপ করে গেছে। তবে দুশ্চিন্তাগুলো মাথা থেকে দূর করতে পারছেনা। এই মুহুর্তে মায়ের ছেলেমানুষীগুলো আর টলারেট করার মতো না। কোন মানুষ ঠিক কতোটা অবুঝ হলে মেয়েকে এইভাবে ছাড়তে পারে! অনিকের মাথায় আসে না। তার উপর ছেলে সুপারস্টার হিরো অঙ্কন চৌধুরী ! এই ছেলেকে বিশ্বাস করা আর কচু গাছের সাথে ফাঁস টানানো তো একি কথা। উফ্ এখন ঠিক কোথায় খুঁজতে বেরুবে কোথায় না কোথায় গেছে। আর সব থেকে ভয়াবহ খবর হচ্ছে ফোনটা সুইচড অফ হয়ে আছে। না সেই হিরো সাহেবের কোন খবর পাচ্ছে না পাচ্ছে নিজের বোনের।
” বাবু, অনেকতো হলো এবার একটু লক্ষী ছেলের মতো খেয়ে নে না।”

মায়ের কথা শুনে অনিক চকিত তাকায়। তারপর চোয়াল শক্ত করে বললো,
” তুমি কি মা?”

” কেনরে, আমাকে কি খালা মনে হয়।”

” হ্যাঁ সেটা মনে করতে পারলেতো বেঁচেই যেতাম।”

” আচ্ছা, মা খালা একি কথা একি বাড়িতেই থাকে। তুই বরং একটু খেয়ে নে বাবা। আমি এভাবে আর বসে থাকতে পারছি না।”

” তোমাকে কেউ খাবার নিয়ে বসে থাকতে বলেনি তুমি বরং খেয়ে নাও। আর আমার খিদে নেই আমার বোনের খবর না পাওয়া অব্দি গলা দিয়ে খাবার নামবে না বুঝতে পেরেছো!”

” তুই মিছেমিছিই এত টেনশন করছিস! অঙ্কন খুব ভালো ছেলে এত নেগেটিভ ভাবিস নাতো।”

” তোমার সুপারস্টার অঙ্কন চৌধুরীর চরিত্রের সার্টিফিকেট চেয়েছি! চাইনিতো। তুমি মেয়ের জামাই বানাতে চেয়েছ ব্যাস এটুকুতেই কি যথেষ্ট ছিল না! এরপর মেয়েকে জোর করে রাত বিরেতে সঙ্গ দিতে পাঠানোটা কি হ্যাংলামো নয়!”
কথাটা বলেই অনিক গটগট করে চলে যায়।
আয়েশা হতভম্ব হয়ে স্বামীর দিকে তাকায়। চাপাস্বরে বলে উঠলো,
” দেখলে ছেলে কি বলে গেলো!”
” ভুল কিছুতো বলেনি। আমারতো ইচ্ছে করছে তোমাকে রাস্তায় পাঠিয়ে দিয়ে মেয়েকে খুঁজতে পাঠাই।”
আহনাফ সাহেব ও রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন।
চলবে…

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে